– রিচার্ড জেনকিন্স আঢ্য
আমি আবেগ আপ্লুত এবং একইসঙ্গে খুবই সম্মানিত এবং গর্বিত বোধ করছি যে ‘কাঞ্জিক’ ওয়েব পোর্টালে শ্রীমতি দোলন ঘোষ দিদি মহাশয়া আমাকে একটা গুরুতর দায়িত্ব দিয়েছেন।
এবার আমার পরিচয়টা একটু দিই, এতো বড়ো একটা দায়িত্ব পাওয়ার নেপথ্যে যা কাজ করেছে। বিগত বিশ বছর ধরে আমার হলিউড এবং ভারতীয় সিনেমা নিয়ে চর্চা যার সিংহ ভাগ বাংলা সিনেমা। আর বাংলা সিনেমা মানেই উত্তমকুমার সেই আকাশের এক মাত্র ধ্রুবতারা। অন্তত আমি তাই মনে করি।
‘পশ্চিমা ক্যানভাসে প্রাচ্যের টান’ সিরিজের প্রথম পর্বে আজ যে বিষয়টা নিয়ে কথা বলব, সেটা যে শুধু মাত্র শিক্ষণীয়, তাইই নয়, সেটা নিজেদের দিকে আরও একবার আমাদের ফিরে তাকাতে বাধ্য করবে, এবং একটা জাতির পক্ষে কতটা লজ্জাজনক ও হতাশার ঘটনা, তা নিয়ে খুব সঙ্গতভাবেই আবার আমাদের ভাবনা জাগাবে।
আজ হলিউডের যে নায়ক কে নিয়ে কথা বলব, ওনার নাম Clark Gable. তবে লেখাটা ওনাকে নিয়ে নয়, লেখাটি পুরোপুরি সংরক্ষণ বিষয়ক।
তবু,শুরুতে Clark Gable র কিছুটা পরিচয় দিয়ে রাখলাম.
Willam Clark Gable
জন্ম- ফেব্রুয়ারী ১,১৯০১
মৃত্যু – নভেম্বর ১৬, ১৯৬০
হলিউডের বিখ্যাত একজন অভিনেতা যাকে বলা হত “KING OF HOLLYWOOD “.
৩৭বছরের কর্ম জীবনে ৬০এর অধিক সিনেমাতে অভিনয় করেছিলেন এবং শেষ জীবন অবধি নিজের দাপট পর্দায় ধরে রেখেছিলেন.
এবারে আমি Clark Gable এবং আমাদের উত্তমকুমারের একটি সিনেমা সংরক্ষণ এর ব্যাপারে কিছু তথ্য তুলনামূলক স্তরে তুলে ধরবো।আর আগামী দিনে এ ধরণের আরও অন্যান্য বিষয় নিউএ আসব যদি আপনাদের ভালো লাগে।
সেদিন একটা সিনেমা দেখলাম, ক্লার্ক গেবল অভিনীত ” Strange Interlude”. সিনেমাটার ১/৩ অংশ জুড়ে ৩১ বছরের ক্লার্ক গেবিল অভিনয় করেন একজন প্রৌঢ় ব্যাক্তির ভূমিকায়। ব্যাবসায়িক সাফল্য সেই অর্থে না পেলেও এই ছবিটির সংরক্ষণ এর গুণগত মান চোখে পড়ার মতন। সিনেমাটি ১৯৩২ সালের; কিন্তু হ’লে কি হবে একেবারে যাকে বলে কাঁচের মতন স্বচ্ছ।
দেখতে দেখতে আমাদেরই একটি সিনেমার কথা মনে হচ্ছিল; তুলনায় যাকে বলা যেতে পারে এই সেদিনের সিনেমা, ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’; ১৯৬০ সালে নির্মিত। ছবির শেষদিকে ৩৪ বছরের উত্তমকুমারের প্রৌঢ়ের ভূমিকায় অভিনয় আর বক্স অফিসের ফল তুলনামূলক দুটি ছবিতেই প্রায় একই। বলতে গেলে দুটো সিনেমাই সেভাবে সফলতা পায়নি,কিন্তু সংরক্ষণের মাপকাঠিতে বাংলা সিনেমাটি ধারে কাছে আসে না।বর্তমানে লব্ধ এ ছবির প্রিন্টের যে অবস্থা তা থেকে উত্তম কুমারের ঐ ব্যাতিক্রমী অভিনয় অর্থাৎ, ৩৪ বছর বয়সে ঐ ন্যুব্জ বৃদ্ধের অভিনয়,তার দিশাহারা,কাঁপতে থাকা চাউনি আর তেমন ভাল ক’রে দেখাই যায় না।
হলিউড সংরক্ষণের ব্যাপারে কোনোদিন কুণ্ঠাবোধ করেনি, এবং সংরক্ষণ করতে গিয়ে কখনোই ছবির সফলতাকে মাপকাঠি হিসেবে দেখে নি। ছবি হিট হোক বা ফ্লপ হোক, সমাজ আর রাজনৈতিক ইতিহাসের মতনই ওরা পুরোনো চলচ্চিত্রকে বরাবরই ইতিহাসের অঙ্গ হিসেবে দেখে এসেছে; তাই সংরক্ষণের সর্বোত্তম প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে। আর আমাদের?
বহুক্ষেত্রেই এমনও হয়েছে যে পড়ে থাকা একমাত্র সেলুলয়েডের প্রিন্টটিও স্বয়ং ডিরেক্টর বা প্রোডিউসার নিজেই গলিয়ে ফেলেছেন কারণ ওই ফিল্ম গলালে তার থেকে অনেকটা রূপো পাওয়া যেত – সেই কারণে। ঐ রূপোর অর্থমূল্যের কাছে সময়ের দলিল হিসেবে ছবিটির মূল্য নিতান্তই কম ম’নে হয়েছে হয়তো তাঁদের সে সময়ে।
একটা দুটো ছাড়া নির্বাক যুগের সিনেমাও বোধ হয় আর পাওয়াই যায় না। নির্বাক যুগের চলচ্চিত্রে ভাবুন কি সব মণি রত্ন আছে, যেগুলো আর আমাদের দেখার পরিসরে নেই। সবাক যুগের প্রথম দিকের ছবি বলতেও সেই হাতে গোনা গোটা দশেক। কানন দেবী, দুর্গাদাস, পাহাড়ি সান্যাল, প্রমথেশ বড়ুয়া,ছবি বিশ্বাস, জহর, তুলসী – এনাদের প্রথম দিক কার ছবি আদৌ আজ পাওয়া যায়? পেলেও কটাই বা??
হালে উত্তমকুমারের কিছু সফল ছবি সংরক্ষণ করা হলেও দুষ্প্রাপ্য ছবিগুলো পর্দার আড়ালেই থেকে গেলো. অথচ সেগুলো স্বাধীনতা পরবর্তী তো বটেই এমনকি ৬০,৭০,৮০ র দশকেরও বহু ছবি রয়েছে সে তালিকায়।….আবার বেশ কিছু অসম্পূর্ণ ছবিও ক্যান বন্দি হয়ে পড়ে আছে।
এ লেখা দীর্ঘায়িত না ক’রে কেবল জিজ্ঞাসাটুকুই তুলে ধরি-
ভারতবর্ষের সর্ব শ্রেষ্ঠ অভিনেতার প্রতিই যদি এমন দায়সারা মানসিকতা থাকে তাহলে বাকিদের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। চলচ্চিত্র প্রেমী দর্শক হিসেবে বারে বারেই তাই প্রশ্নটি ঘুরে ফিরে আসে – সংরক্ষণের গুরুত্ব না বুঝে, অসচেতন হয়ে, ইতিহাসবিস্মৃতির রোগ ছড়িয়ে কখনও বা খানিক অর্থলোভে আমরা যে সব হারিয়ে ফেললাম- এ লজ্জা কার?
Comment here