বিজ্ঞান

-:Big Bang isn’t the start of Universe Theory এবং সনাতনী কালভাবনা:-

– শ্রী সৌম্যদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

 

বিজ্ঞান বিশেষত পদার্থবিদ্যা নিয়ে যারা সামান্য চর্চা করেন বা খবর রাখেন তাঁরা সকলেই বিজ্ঞানী রজার পেনরোজ কে অবশ্যই চেনেন। ২০২০ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী তিনি কৃষ্ণগহ্বর বা Black Hole নিয়ে যুগান্তকারী গবেষণার জন্য সুপরিচিত। তাঁর নোবেল পুরস্কার সাইটেশনে বলা ছিল “for the discovery that black hole formation is a robust prediction of the general theory of relativity”

বিজ্ঞানী পেনরোজ দাবী করেছেন তাঁর গবেষণা মতে আমাদের Universe এর শুরু Big Bang এর থেকে হয়নি!!! তাঁর দাবী এই ইউনিভার্স এর আগেও একটি ইউনিভার্স ছিল যা বিগ ব্যাং এর মাধ্যমে ধ্বংস হয়েছে এবং সেখান থেকেই আমাদের বর্তমান ইউনিভার্স এর সৃষ্টি। পেনরোজের মতে, আমাদের ইউনিভার্স প্রসারিত হয়েই চলেছে (Expanding Universe) এবং ফলস্বরূপ সমস্ত ভর ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে। পেনরোজের থিওরি বা দাবী অনুসারে সেই দূরবর্তী ভবিষ্যত অন্য যুগ অর্থাৎ পরবর্তী ইউনিভার্স এর বিগ ব্যাং এ পরিণত হয়। অর্থাৎ আমাদের ইউনিভার্স এর শেষেও একটি বিগ ব্যাং হবে এবং পরবর্তী ইউনিভার্স সৃষ্টি হবে।

বিগ ব্যাং আসলে আমাদের ইউনিভার্স এর শুরু নয় সেই প্রমাণ সংক্রান্ত ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে পেনরোজ টেলিগ্রাফ কে জানিয়েছেন, “There would have been similar black holes evaporating away, via Hawking evaporation, and they would produce these points in the sky, that I call Hawking Points. We are seeing them. These points are about eight times the diameter of the Moon and are slightly warmed up regions. There is pretty good evidence for at least six of these points.”

[Roger Penrose and His Theory]

বিজ্ঞানী রজার পেনরোজ এর এই দাবী অবশ্য হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে নতুন কিছু নয়। একটি মহাবিশ্ব এবং বিস্ফোরণের মাধ্যমে তার শেষ সেখান থেকে নতুন বিশ্বের সৃষ্টি এবং এই চলমান ঘটনার উল্লেখ আমরা হিন্দুশাস্ত্রে বারবার পাই। আমাদের শাস্ত্র অনুসারে সময়ের কোন শুরু বা শেষ নেই, আমাদের সময় চক্রাকারে চলে যা কালচক্র নামে পরিচিত।

আমাদের সময়ের পরিমাপ হয় যুগের মাধ্যমে। সত্য ত্রেতা দ্বাপর ও কলি এই চারটি যুগ নিয়ে একটি মহাযুগ এবং ৭১ টি মহাযুগ নিয়ে একটি মনবন্তর বা মনুন্তর। প্রত্যেক মনবন্তর এ মনু, বেদব্যাস, সপ্তর্ষি এবং ইন্দ্র পরিবর্তন হয়। প্রত্যেক মনবন্তর এর শেষে একটি মনবন্তর সন্ধ্যা এবং মোট ১৪ টি মনবন্তর নিয়ে একটি কল্প অর্থাৎ ব্রহ্মার একটি দিন তৈরি হয়। প্রত্যেক কল্প শেষে প্রলয় আসে এবং ধ্বংসের পর নতুন কল্প আসে। একটি কল্প ব্রহ্মার একটি দিন, এই রকম ১০০ কল্প বৎসর অর্থাৎ ৩৬০০০ কল্প ও প্রলয় এর মাধ্যমে একটি মহাকল্প তৈরি হয়। মহাকল্পের শেষে আসে মহাপ্রলয়… সমগ্র সৃষ্টি ধ্বংস হয় এবং নতুন সৃষ্টি হয়। মনুস্মৃতি, বিভিন্ন পুরাণ এবং শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার অষ্টম অধ্যায় অক্ষরব্রহ্ম যোগ এ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই একই কথা বলেছেন।

[Hindu Time Concept]

উপরোক্ত বিজ্ঞান ও শাস্ত্র সংক্রান্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সহজেই বলতে পারি হিন্দু শাস্ত্রের কালচক্র বা কল্প ভাবনা এবং রজার পেনরোজ এর বিগ ব্যাং এর মাধ্যমে মহাবিশ্ব ধ্বংস ও নতুন মহাবিশ্বের সৃষ্টি আদতে একই মুদ্রার দুটি পীঠ।

সনাতন যে বিজ্ঞানের রূপভেদ মাত্র তার বহু উদাহরণের মধ্যে এটি একটি। ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলের নাসদীয় সূক্ত যেভাবে সৃষ্টিতত্ত্ব বর্ণিত আছে তা আদতে Astrophysics এর ই সমতূল্য। বহু বিশ্বনন্দিত বিজ্ঞানী বারবার সনাতন শাস্ত্রের শ্রেষ্ঠত্বের কথা স্বীকার করেছেন যা আমাদের গর্বের বিষয়। ভবিষ্যৎ এ সনাতন ও বিজ্ঞানের সমান্তরালতা নিয়ে আবারও আলোচনা হবে।

Comments (1)

  1. এমন আরও প্রবন্ধ প্রকাশিত হোক, এই আশা করি।

Comment here