প্রতি
পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী,
শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়,
নবান্ন(চতুর্দশ তল)
৩২৫ শরৎ চ্যাটার্জি রোড,মন্দিরতলা,
শিবপুর,হাওড়া-৭১১১০২
বিষয়-
২০শে জুনকেই কেন দলমত নির্বিশেষে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত; তার জ্ঞাতার্থে কিছু সত্য ও ঐতিহাসিক তথ্য মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর গোচরে আনা।
মহাশয়া,
প্রথমেই আপনাকে স্বশ্রদ্ধচিত্তে প্রণাম জানাই।আমি প্রতীক মুখার্জ্জী,২৪ বছর বয়স্ক,পশ্চিমবঙ্গের অধিবাসী ও ভারতীয় নাগরিক।সম্প্রতি ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’পালন করার প্রেক্ষিতে মতামত সংগ্রহের জন্য বিদ্যজনদের নিয়ে আপনি একটি সর্বদল বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন।বৈঠকটি সম্পর্কে আমিও অবগত ছিলাম এবং অনেক বিদ্যজনের মতামত শুনেছি।যেহেতু আমি ইতিহাস অনুরাগী এবং এই বিষয়ে আগেও লেখালিখি করেছি তাই অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম আপনার ডাকা এই বৈঠকে বেশ কিছু বিদ্যজন ২০শে জুন সম্পর্কে এমন কিছু অর্ধসত্য তথ্য পেশ করলেন যা এককথায় বিভ্রান্তিকর ও ভুল পথে চালনা করে।তাঁদের দেওয়া তথ্যগুলি আপাতদৃষ্টিতে দেখলে সঠিক এবং ২০শে জুন দিনটিকে কালো দিন হিসেবে মনে হলেও আদতে তা একদমই নয়।বরাবর বাংলার শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের কাছে এই দিনটি বিজয় দিবস হিসেবেই স্মরণীয় হয়ে থেকেছে।বঙ্গভঙ্গ বা ভারত ভাগ আমরা কেউই চাই না।আমরা যা চিরন্তন সত্য সেই ভারতবর্ষের অখন্ডতার উপরে বিশ্বাসী।কিন্তু ১৯৪৭ সালে বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ সৃষ্টি অপরিহার্য হয়ে উঠেছিল শুধুমাত্র ভারতবর্ষের অখন্ডতার স্বার্থে।
স্বাধীনতা অর্জনের প্রাক্কালে মুসলিম লীগের ‘লাহোর প্রস্তাব’কে মাথায় রেখে পাঞ্জাব ও বাংলা ভাগের দাবিতে একরকম অলিখিত সিলমোহর পড়েই গিয়েছিল।ঠিক সেই সময় ‘চতুর’ মুসলিম লীগ নেতারা দেখলেন বাংলা প্রদেশকে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করলে কলকাতা সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ভারতের ভাগে চলে যাবে।এই সমস্যা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সহ বেশ কিছু মুসলিম লীগ নেতা ষড়যন্ত্র করে ‘অখন্ড বাংলার’ দাবি উত্থাপন করলেন।তাতে শামিল হলেন বাংলার গুটিকয় কংগ্রেস নেতা যেমন শরৎ বসু(অনেকে বলে থাকেন শরৎবাবু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদের লোভে এই প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়েছিলেন।যদিও তাঁর বিষয়ে আমি কিছু বলতে ইচ্ছুক নই), কিরণশঙ্কর রায় প্রমুখ।এই অখন্ড বাংলা নামক ষড়যন্ত্রের মূল উদ্দেশ্য ছিল ধর্মের ভিত্তিতে বাংলা প্রদেশকে ভাগ না করে পুরো বাংলাকেই ভারতবর্ষ থেকে বিচ্ছিন্ন করা।এই জঘন্য ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন বাংলার জনসাধারণ।
ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়,তৎকালীন বাংলার অধিকাংশ কংগ্রেসের নেতা,তৎকালীন বাংলার প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব যথা-কাশিমবাজারের ও বর্ধমানের মহারাজ সহ পন্ডিত জওহরলাল নেহরু,সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল প্রত্যেকেই অখন্ড বাংলার নামে বৃহত্তর দেশভাগ অর্থাৎ সমগ্র বাংলাকে ভারতবর্ষ থেকে বিচ্ছিন্ন করার কুৎসিত ষড়যন্ত্রকে ধিক্কার জানান।বাংলার জেলায় জেলায় ভারতবর্ষ থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্রের মুখোশ খুলে দিতে আয়োজন করা হয় জনসভার।সেই সময় অমৃতবাজার পত্রিকা বাংলার মানুষের অভিমত জানতে একটি গ্যালপ পোলের আয়োজন করে।সেই গ্যালপ পোলের ফলাফল বের হলে দেখা যায় শতকরা ৯৮ শতাংশেরও বেশি বাঙালি(হিন্দু ও মুসলমান নির্বিশেষে)ভারতবর্ষের অখন্ডতার স্বার্থে ও বাংলা প্রদেশের যতখানি সম্ভব ভারতবর্ষে রাখা যায় তার প্রেক্ষিতে বঙ্গভঙ্গকে সমর্থন করলেন।এরই সঙ্গে বাংলার মানুষের দাবি অনুযায়ী ২০শে জুন বিধানসভার এক অধিবেশনে বাংলা প্রদেশের পশ্চিম অংশের বিধায়কদের ভোটের দ্বারা পশ্চিমবঙ্গ গঠনের প্রস্তাব ৫৮-২১ ভোটে জয়লাভ করে।
তাই পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসেবে ২০শে জুন পালন করা কোন নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের ‘এজেন্ডা’ নয়,বরঞ্চ এই দাবি পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের।আপনার ডাকা বৈঠকে যেভাবে কিছু ব্যক্তি এই বিষয়টি সম্পূর্ণ ভুলিয়ে দিয়ে ২০ শে জুন সম্পর্কে সকলকে ভুল পথে চালিত করলেন তা ভীষণ দুঃখজনক।ভারতবর্ষের অখন্ডতার স্বার্থে সেই সময় বঙ্গবিভাগ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছিল।তাই আপনার কাছে আমার বিনীত আবেদন ২০শে জুন পশ্চিমবঙ্গ গঠনের দিবস হিসাবে এবং ভারতবর্ষের অখন্ডতার স্বার্থে বাংলার মানুষের প্রচেষ্টাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য উদ্যোগ নিন।আমি আমার বক্তব্যের স্বপক্ষে তৎকালীন বাংলার সংবাদপত্রের কিছু অংশ আপাতত এই ই-মেইলের সঙ্গে জুড়ে দিচ্ছি।যাতে বঙ্গভঙ্গের পক্ষে তৎকালীন বাংলার মানুষের অকুন্ঠ সমর্থন সম্পর্কে আপনি অবহিত হন।
নমস্কারান্তে,
ইতি
বিনীত,
শ্রী প্রতীক মুখোপাধ্যায়