আঙিনা

দেশ – ১৬

 

– ডঃ গৌতম মুখোপাধ্যায়

কলকাতায় বাড়িতে থেকে সব পড়াশুনো, Day Scholar. পিএইচডিও কলকাতায়। কয়েকবার ট্রম্বে, কালপক্কম কয়েক মাস করে থাকতে হয়েছিল রিসার্চের কাজে। ১৯৮৫ প্রথম চাকরি করতে যাওয়া কলকাতার বাইরে।

ছোটবেলা থেকে খেলাধূলো, রাজনীতিতে আগ্রহ ছিল। ফুটবলটা ভালোই খেলতাম। চূনী, পি কে, বলরাম, থঙ্গরাজ, সনৎ শেঠ, সমাজপতি, রহমান, অরুময়, জার্নেল সিং, আপ্পালারাজু। সব দিকপাল খেলোয়াড় ছিলেন। পরে সুরজিত সেনগুপ্ত, সুধীর কর্মকার, অশোক ব্যানার্জী, সুব্রত ভটচাজ, গৌতম সরকার, তরুন বোস, ভাস্কর গাঙ্গুলি, প্রসূন ব্যানার্জী , শ্যাম থাপা। প্রণব গাঙ্গুলি। প্রণব এক বছর সুধীরকে খুব ঘোল খাইয়ে দু গোল দিয়েছিলেন ইস্ট বেঙ্গল কে। হাবিব, আকবর, জন , পাপ্পানা, মঙ্গল পুরকায়স্ত খুব ভাল খেলতেন।

কেম্পিয়া হাফে খেলতেন। অশোক চ্যাটার্জি। সেসময় ছোট টিম গুলো ভালো ফাইট দিতো। ইস্টার্ন রেল, বি এন আর, বালী প্রতিভা, খিদিরপুর। খিদিরপুর থেকে উঠেছিলেন প্রসূন ব্যানার্জি। পরে বিজয়ন এলেন। জেভিয়ার পায়াস। বিদেশী খেলোয়াড় অনেক এসেছিলেন। তারমধ্যে মজিদ বাসকার, ব্যারেটোর নাম মনে আছে। কয়েকজন নাইজেরীয় খেলোয়াড় ভাল খেলা উপহার দিয়েছিলেন। যেমন চিমা ওকেরি।

ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের ট্রেড ডেক্সটার, কলিন কাউড্রে, বয়কট বিখ্যাত ছিলেন। বথাম অনেক পরের। অস্ট্রেলিয়ার ববি সিম্পসন, বিল লরী। লিলি, টমসন অনেক পরে এসেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফ্রাঙ্ক ওরেল, সোবার্স, সেমূর না্রস, ওয়েলেসলি হল, চার্লি গ্রীফিথ, স্পিনার ল্যান্স গিবস। চার্লি গ্রীফিথের বলে ভারতের ক্যাপ্টেন নরী কন্ট্রাকটরের মাথা ভেঙ্গে গেছিল। উনি আর খেলতে পারেননি। তখন ক্রিকেটে হেলমেট আসেনি। পরে ভিভ রিচা্রডস , গর্ডন গ্রীনিজ, রবার্টস, হোল্ডিং। সাউথ আফ্রিকার ব্যারি রিচার্ডস, পোলক ভাইদের নাম মনে আছে। তখন ওরা সবার সাথে খেলত না।

ভারতীয় প্লেয়ার দের মধ্যে নরী কন্ট্রাকটর, পলি উম্রিগর, চান্দু বোরদে, ফারুক ইঞ্জিনিয়র, জয়সীমা, মনসুর আলি খান, সেলিম দুরানী, বাপু নাদকার্ণী,এরাপল্লী প্রসন্ন, বিষেন সিং বেদী, চন্দ্রশেখর, আবিদ আলি আরো অনেকে। পঙ্কজ রায় ইত্যাদি আমার ছোটবেলার আগে। কপিল, গাভাসকর, বিশ্বনাথ, শ্রীকান্থ পরে এসেছেন।

ফুটবলের অলিম্পিক্স ও বিশ্বকাপারদের মধ্যে হাঙ্গেরির ফেরেঙ্ক পুসকাস, হিদেকুটি, ব্রাজিলের পেলে, গ্যারিঞ্চা, ডিডি, ভাভা, জাগালো, রাশিয়ার গোলকিপার লেভ ইয়াসিন বিখ্যাত ছিলেন। ইংলন্ডের স্টানলি ম্যাথিউস, চার্লটন ভাই দুজন, ববি মূর, গর্ডন ব্যাঙ্কস ( গোল কিপার)। ব্রাজিলের সক্রেটিস, রোমারিও, রিভেলিনো পরে এসেছেন। পর্তুগালের ইউসোবিও একটি বিশ্বকাপে (১৯৭০ ?) চমক লাগিয়েছিলেন।অধুনা রোনাল্ডো। জার্মানীর ফ্রানজ বেকেনবাওয়ার, মূলার, ফ্রান্সের প্লাটিনি, থিয়েরি হেনরি, জিনেদিন জিদান বিশ্ব কাঁপিয়ে ছিলেন। আর্জেন্টিনার মারিও কেম্পেস, মারাদোনা, ও অধুনা লিওনেল মেসি  পায়ের জাদুতে বিশ্বকে চমতকৃত করেছিলেন। খেলার জগতের কিছু বিবরণ দিলাম পুরোনো জনতার সেই সব দিনের সোনালী মেদুর স্মৃতি উসকে দেওয়ার জন্য। হঠাৎ কানে ভেসে আসবে গ্যালারির চিৎকার। ছোটবেলা ফিরে আসবে। ভাই বোন মা বাবা ফিরে আসবে। যারা সত্যিই আর ফিরবে না।

জীবনটা কি সত্যি অলীকের পেছনে ছুটে মরা? আর একটা কারণ ( কেন লিখলাম) পরের পর্বে আসবে। 

আগের পর্বে খেলার জগতের ফিরিস্তি দিয়েছি। বাড়িতে স্টেটসম্যান পড়তাম। ওতে একদম শেষের ভেতরের পাতায় শেয়ার মার্কেটের খবরাখবর থাকত। কোনদিন উল্টিয়েও দেখিনি। ‘৮৫ তে আমেদাবাদে এসে দেখলাম অনেকের হাতে শেয়ারের কাগজ বা নতুন শেয়ারে apply করার ফর্ম। এখন যেমন SEBI শেয়ার মার্কেট কন্ট্রোল করে, সেইসময় কন্ট্রোল করত CCI. ওদের নিয়ম ছিল যতই নামকরা কোম্পানী হোক না কেন নতুন শেয়ার মার্কেটে ছাড়লে প্রতি শেয়ার ১০ টাকার বেশী নেওয়া যাবেনা। ১০০ শেয়ারের জন্য ফর্মের সাথে ১০০০/- টাকা জমা দিতে হত। না লাগলে ব্যাঙ্কে ফেরত আসত। নাহলে শেয়ার alloted হলে টাকা নিয়ে নিত বদলে শেয়ার সার্টিফিকেট আসত by post. পোস্টে জানাত শেয়ার এ্যালটেড হয়েছে।

সার্টিফিকেট এলে পোস্টম্যান বখশিস পেত। চাঁদখেড়া, সাবরমতী এলাকায় ওনজিসির বিভিন্ন অনেক ডিপার্টমেন্ট ছিল। পোস্টম্যান ছিল একজনই। কয়েক হাজার অফিসার ছিলেন। প্রায় সবাই শেয়ারে apply করতেন। কারো না কারো allot হত। ওনার স্যালারির থেকে বখশিস বেশী ছিল। যাই হোক অনেকের হাতে শেয়ার application form দেখে ভাবলাম ব্যাপারটা কি জানতে হচ্ছে। কয়েকজন সিনিয়রকে জিজ্ঞাসা করলাম, ওনারা বললেন ভালো জানিনা। তবে এসব ভালো নয়। ঠিক সে সময়ে ১৯৮৫ র শেষদিকে একটি শেয়ার সংক্রান্ত সাপ্তাহিক পত্রিকা MONEY বার হতে লাগল।

এর থেকে শেয়ার বিষয়ক অনেক কিছু শিখলাম। Earning per share, Book, Value, Profit after tax , sales কি জিনিস বুঝলাম। এগুলো শেয়ার মার্কেটের ফান্ডামেন্টাল বিষয়। এগুলো ভাল বুঝলে কোম্পানির হেল্থ সম্পর্কে জানা যায়। Money র দুটো উপকার মনে আছে। একটা হল Appollo tyre র ওপর একটা তুলনামূলক আর্টিকল। তার আগে Appollo Tyre র নাম শুনিনি। ওই শেয়ার বেশ কয়েকশো কিনে তিন চার গুন দাম পেয়েছিলাম কয়েক মাসের মধ্যে।

আর একটা একটু বিস্তারিত ভাবে লিখছি। সে সময় ধীরুভাই অম্বানী Reliance কোম্পানীর তরফে Convertible Debenture মার্কেটে ছেড়েছিলেন। আমরা যারা যারা এ্যাপ্লাই করেছিলাম প্রায় সবাই পেয়েছিলাম আমেদাবাদে। Debenture হল মার্কেট থেকে টাকা ধার নেওয়া। তিন বা পাঁচ বছর পর ফেরত দেয়। ভালো সুদ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি থাকে। খারাপ কোম্পানি কথার খেলাপ করে। ডিবেঞ্চার হল কোম্পানীর লায়াবিলিটি।

রিলায়েন্স র ধীরুভাই অম্বানী Fully Convertible Debenture ছাড়লেন মার্কেটে। আমি apply করে কিছু পেয়েছিলাম। এক বছর পর Money পত্রিকা লিখল convertible part B and C Ambani Share e convert করার কথা ভাবছে। ডিবেঞ্চারের সাথে কিছু শেয়ার ও দিয়েছিল। তখন ডিবেনচারগুলো ইস্যু প্রাইসের নীচে মার্কেটে মিলছিল। সিনিয়ররা বললেন এরকম হয়না। বাজে খবর। আমি আর এক বন্ধু জোসেফ জেমস অনেক B r C part কিনে রাখলাম। ৭-৮ মাস পর B and C part fully share e convert korlo. এগুলো বিক্রি করিনি।

১৯৯৩ তে কলকাতায় ট্রান্সফার হলাম। ব্যাপারটা একটু ধরাাধরি করে হল। কলকাতায় এসেই ফ্লাট কিনব বলে বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখতে থাকলাম। শেষে কসবায় বুক করলাম ১০০০ স ফুট। ৬ লাখ। ৩ লাখ অফিস থেকে লোন পেলাম। বাকিটা প্রধানত রিলায়ন্স শেয়ার বেচে যোগাড় হয়েছিল। তা কলকাতায় এসে বেহালায় ৬ মাস ছিলাম। ‌অফিসে জিজ্ঞেস করলাম কোথায় শেয়ার বিক্রি করা যায়। একজন বলল জানাশোনা ব্রোকার আছে ডালহৌসিতে। সেখানে গিয়ে ১০০ রিলায়েন্স শেয়ার বিক্রি করলাম। আরো করব প্রতি সপ্তাহে। দুদিনের মধ্যে অফিসে খবর রটে গেল। সাধারণত ৫ টা ১০ টা রিলায়েন্স বিক্রি করে। সেখানে শয়ে শয়ে।

ফিরি আমেদাবাদে।

1990 তে পরপর দুটো শেয়ার পাক্ষিক পত্রিকা বের হল। প্রথমে Dalal street. এর কিছুদিন পরে Capital Market. দুটোই বেশ ভাল টিপস দিত কোন কোন শেয়ার কেনা উচিত। দালাল স্ট্রীটে কোম্পানীদের ফাইনানসিয়াল খবরাখবর থাকত। EPS sales book value P/E etc. কিন্তু থাকত Alphabetical order e.যেমন ACC Cement, Tarpor Asian paints, Ambuja Cement. কিন্তু Capital Market e Industry wise financial data দেওয়া হত। যেমন ফার্মেসি কোম্পানী গুলোকে বড় মেজ ও ছোট গ্রুপে ভাগ করে খবর দিত। স্টীল কোম্পানী গুলিকেও তাই করা হত। একটা ইন্ডাস্ট্রীজের সাথে অন্য ইন্ডাস্ট্রীজের তুলনা হয়না। P/E ratio ta খুব ইম্পর্টান্ট। P/E যত কম হবে , সেই কোম্পানীর শেয়ারের দাম তত বাড়ার সম্ভাবনা থাকবে। P/E Industry to Industry vary করে। তাই Capital Market is more scientific and reliable. এছাড়া ক্যাপিটালে কিছু রেকমেন্ডেশনও থাকত। নতুন শেয়ার মার্কেটে আসার আগে এরা সবাই নাম্বারিং দিত। তাতে বোঝা যেত আসন্ন শেয়ার টিতে এ্যাপ্লাই করা যাবে নাকি। পরে মার্কেটের কন্ট্রোল SEBI র হাতে এসেছে।

নামকরা কোম্পানিগুলো নতুন শেয়ারে যা খুশী Premium নিতে পারে। যেমন প্রায় ১০-১২ বছর আগে NTPC মার্কেটে শেয়ার ছেড়েছিল ২০০/- প্রতি শেয়ার। অনেকে এ্যাপ্লাই করেছিল। NTPC এখনো ১৫০/- ক্রশ করতে পারেনি।Now crossed 220.
কয়েকদিন আগে LIC 950 করে শেয়ার ছাড়ল। আমি ফব লিখলাম এটা হয়ত 600/- টাকাতেও কিনতে পাওয়া যাবে। আমি এ্যাপ্লাই করিনি। এখন ৬৫০ এ পাওয়া যাচ্ছে। সরকারী শেয়ারের credibility নেই। CCI র আমলে প্রচুর ভালো নতুন শেয়ার পেয়েছিলাম; গুজরাট পাওয়ার টরেন্ট ফার্মা, গুজরাট লিজ। 

এগুলো সব ১০ টাকা/ শেয়ার পেয়েছিলাম। দুজনের নামে ২০০ শেয়ার পেয়েছিলাম। এরপর রাইট বোনাস দিয়েছিল, অনেক টাকা পেয়েছিলাম শুধু GLF বিক্রি করে। ওখানে আমাদের অফিসের কাছেই কয়েকটি শেয়ারের অফিসে নতুন শেয়ারের এ্যাপ্লিকেশন ফর্ম পাওয়া যেত। ফিল আপ করে জমা দিতে হত।

একটা অফিস এখনো আছে। ব্যাঙ্গালুরু থেকে ফোন করে শেয়ার কেনা বেচা করি। ওরা ভয়েস চেনে।

১৯৯২ তে আমাদের GM Pal সাহেব আমেদাবাদে এসেছিলেন। ওনাকে আমার কথা বলা হল। উনি বললেন আর দু বছরের মধ্যে রিটায়ার করব , তোমাকে নেক্সট ইয়ার কলকাতায় ট্রান্সফার করব। কোথায় টাকা রাখব বলে দিও। তখন মার্কেটে অনেক ভাল ভাল স্কীম ছিল। ইউনিট ট্রাস্ট ১৪% ইন্টারেস্ট দিত একটা স্কীমে।

 

(লেখক পরিচিতি – অবসরপ্রাপ্ত পেট্রফিসসিস্ট: ব্যাঙ্গালোরের প্রেসিডেন্সী বিশ্ববিদ্যালয়ে পেট্রোলিয়াম বিভাগের প্রাক্তন ফ্যাকাল্টি)

(ক্রমশঃ)