শক্তিচর্চাস্বভূমি ও সমকাল

“অগ্নিস্রাবী ইতিকথা”

– শ্রী অনিমিত্র চক্রবর্তী

 

বিনাশকালে বিপরীত বুদ্ধি – বাঙ্গালী সমাজে আবহমানকাল ধরেই এই প্রবাদটি প্রচলিত আছে। সঙ্কটকালেই মানুষের মনের গভীরে ত্রাহিমাম আন্দোলিত হয়; সহসা পরিত্রাণের আকাঙ্খা ব্যতীত সকল লোপ পায়। পরিত্রাতার আবির্ভাবে সে ধন্য, অনুপস্থিতিতে সর্বনাশের আঁচে দগ্ধ। কিন্তু সূক্ষাতিসূক্ষ বিচারে বিপদই মানুষের শ্রেষ্ঠ মিত্র রূপে প্রতিভাত হয়। এ এক অত্যাশ্চর্য মানদণ্ড যা মানুষের মধ্যে ভীতির পার্শ্বে তীক্ষ্ণতার বোধও ঘটায়; তাকে প্রতি ক্ষণে প্রস্তুত করে আগামীর সংগ্রামের বা আসন্ন সর্বনাশের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে। বর্তমানে, পূর্ববঙ্গ তথা বাংলাদেশে হিন্দু জাতির উপর যে কালরাত্রি নেমে এসেছে তাকে ভয় না পেয়ে, প্রতিরোধে পরাস্ত করাই শাস্ত্রসম্মত বিচার। আজি হতে শতবর্ষ পূর্বে যখন বঙ্গভূমি এই প্রকার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় হতো জর্জরিত, শেষ হতো বাঙ্গালী হিন্দুর ভয়াল, ভয়ঙ্কর প্রত্যুত্তরে। ঋষি বঙ্কিমের খেদোক্তির, ” বাঙ্গালী যে পূর্ব্বকালে বাহুবলশালী তেজস্বী ছিল তাহার অনেক প্রমাণ পাই। অধিক নয়, একশত বৎসর পূর্ব্বের বাঙ্গালী পালোয়ানের, বাঙ্গালী লাঠি-সড়কিওয়ালার ও সকল বলবীর্য্যের কথা বিশ্বস্তসূত্রে শুনিয়াছি, তাহা শুনিয়া সন্দেহ হয় যে সে কি এই বাঙ্গালী জাতি?” অবসান হল এই যুগে।

এই সেই যুগ যে মাহেন্দ্রক্ষণে, অর্ধ-শতাব্দী ধরে নিরবিচ্ছিন্ন রূপে চর্চ্চিত হিন্দুত্বের বিস্ফোরণ ঘটে, হিন্দু মেলা-নবগোপাল-বঙ্কিম-ভূদেব-হেমচন্দ্র-রঙ্গলাল- স্বামী বিবেকানন্দ-ভগিনী নিবেদিতা-সরলা দেবী চৌধুরাণীর স্বদেশী বিচারাধারার নির্যাসে সৃষ্ট হয় দেশপ্রেমের এক অকল্পনীয় বাতাবরণ যা ছিল দুর্লভ কিছুকাল পূর্ব পর্যন্ত। স্বামী বিবেকানন্দের উদাত্ত আহ্বান, ‘…‘আশিষ্ঠ দ্রঢ়িষ্ঠ বলিষ্ঠ মেধাবী’ যুবকদের দ্বারাই এই কাজ সম্পন্ন হবে।…এই রকম হাজার হাজার যুবক রয়েছে।…ওঠো, জাগো, জগৎ তোমাদের ডাকছে।…অন্যান্য জায়গায় বুদ্ধিবল আছে, ধনবল আছে, কিন্তু কেবল আমার মাতৃভূমিতেই উৎসাহাগ্নি বিদ্যমান। এই উৎসাহাগ্নি প্রজ্বলিত করতে হবে; অতএব হে…যুবকগণ! হৃদয়ে এই উৎসাহের আগুন জ্বেলে জাগো’ উপস্থাপিত করে এক আলোকবর্তিকা যার প্রত্যেক তরঙ্গে বিমুগ্ধ হয় তৎকালীন বাঙ্গালীর তারুণ্য ও যৌবন। সহসা বিস্মৃত বাঙ্গালীর মননে আবির্ভূত হন পূর্বের সংগ্রামী রাজন্যবর্গ যথা শশাঙ্ক, গণেশ, প্রতাপাদিত্য, কেদার রায়, ভবশঙ্করী, সীতারাম যাঁরা স্বীয় রক্তস্রোতের মধ্যে দিয়ে আমৃত্যু রক্ষা করেছেন মাতৃভূমির স্বাধীনতার মন্ত্র। ১৮৮২ সালে প্রকাশিত ঋষি বঙ্কিমের ‘আনন্দমঠ’ ও তৎপরবর্তী ‘অনুশীলন’ তত্ত্ব রচনা করে যোদ্ধৃবৃত্তির চিরাকাঙ্খিত কিন্তু অনাস্বাদিত লক্ষ্য যা পূরণের জন্য সংঘবদ্ধ হওয়ার একান্ত প্রয়োজন বাঙ্গালীর । পরিপার্শ্বে, দ্রুত রাজনৈতিক পরিবর্তন ও সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশের অধিকতর নিষ্পেষণের প্রতিক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় ‘অনুশীলন সমিতি’, শ্রী প্রমথনাথ মিত্র ও শ্রী সতীশ্চন্দ্র বসুর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়; পুণ্য দিবসের পুণ্য লগ্নে – ১৯০২ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ মার্চ (সোমবার ১০ চৈত্র ১৩০৮)। সমাজ সেবামূলক কাজকর্ম ও শারীরিক উৎকর্ষ লাভের প্রচেষ্টায় প্রারম্ভ হওয়া প্রতিষ্ঠান দ্রুত পরিবর্তিত হল সশস্ত্র বৈপ্লবিক সংগ্রামের পীঠস্থানে, প্রধান সংগঠনে। কালে কালে দেখা দিল আত্মোন্নতি সমিতি, যুগান্তর, মুক্তিসংঘ (বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স), ব্রতী সমিতি, সাধনা সমিতি, শঙ্কর মঠ নাম বিপ্লবী সংগঠন ও বৈপ্লবিক আদর্শে অনুপ্রাণিত অগণিত আখাড়া ও সমিতি। ব্যায়াম, শস্ত্রচর্চার আড়ালে শুরু হল স্বদেশী চিন্তাধারা, দেশপ্রেমের পাঠ।

সুদূর বরোদা হতে সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে প্রত্যাগমন করলেন বঙ্গে শ্রী যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় (স্বামী নিরালম্ব) বা বঙ্গের বিপ্লবের ব্রহ্মা; আবির্ভূত হলেন শ্রী অরবিন্দ ঘোষ, শ্রী উল্লাসকর দত্ত, শ্রী যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, শ্রী অনুকূল মুখোপাধ্যায়, শ্রী বিপিনবিহারী গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ। মহাবরেণ্য শ্রী পুলিনবিহারী দাসের নেতৃত্বে ‘ঢাকা অনুশীলন সমিতি’ দুঃসাহসিকতা ও দেশপ্রেমের ও ব্রিটিশের মধ্যে আতঙ্কের যে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে তা প্রতি দেশেই দুর্লভ।

চরমপন্থী কাগজপত্রের বাণী সকল গভীর প্রভাব সৃষ্টি করে জনমনে। এই অভূতপূর্ব সাফল্যের অন্বেষণে জানতে হয় তৎকালীন ব্রিটিশ রাজত্বের মূল্যায়ন। Sir Lawrence Jenkins, Chief Justice এই প্রসঙ্গে অনুসারী হলেন Sessions Judge of Alipore র ”They exhibit a burning hatred of British race, they breathe revolution in every line, they point out how revolution is to be effected. No calumny and no sacrifice is left out which is likely to instill the people of the country with the same idea or to catch the impressionable mind of the youth”.

বিপ্লবী সংগঠনসমূহ, বিশেষত ‘ঢাকা অনুশীলন সমিতি’-র প্রসঙ্গে Rowlatt Sedition Committee Report র বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য –

(1) That the Samiti had a jealously guarded secret, and every effort was made to preserve it inviolate. The secret was such that it was not even to be discussed amongst the members themselves.
(2) The members were bound by solemn oaths of secrecy and willingly subjected themselves to semi-military discipline,
(3) The Dacca Samiti was to be the central institution to which societies with the same object and scope were to be affiliated in all parts of the country.
(4) The members themselves were to be admitted to the fraternity only after they had taken the most solemn vows in the presence of an image of the Goddess Kali,
(5) If any outsider without taking the oath, and refusing to take it, obtained entrance into the society, his knowledge was to be destroyed.
(6) The organisation was ultimately to spread all over Bengal; the condition of every village and town to be minutely examined and recorded, geographical information to be embodied in a series of maps.
(7) The object of Pulin Behari Das was plainly to create an imperium in imperio with himself as the leader.
(8) The leader was entitled to complete and unquestioned supremacy and every effort was to be made to prevent the growth of rival institutions even for the promotion of physical culture.
(9) Many of the members of this association entertained feelings of the bitterest hostility towards the British Government.
(10) In addition to gymnastics, drill and other forms of physical exercises, there was a systematic discussion of the objects of the society as set forth in the Paridarshak already mentioned.
(11) That the society was a revolutionary society.
Concluding remarks – From the facts accepted in this case, it is clear that a revolutionary movement of a very dangerous character was started by bhadralok youths of some education. The movement had great personalities for evil. The Dacca Samiti being proscribed, its premises searched, its leading members prosecuted, the growth of the movement was temporarily arrested, but many of the associates escaped and continued their operations. The teaching and the example of the Dacca Anushilan Samiti were responsible for many murders, dacoities and other political crimes during the subsequent 10 years.

এক্ষেত্রে একটি কথা বিশেষরূপে তাৎপর্যপূর্ণ – ‘many of the associates escaped and continued their operations..’ ৩০র দশকে এই দুঃসাহসিক কর্মকান্ডের প্রধান ধারক ও বাহক হয়ে ওঠে ভয়ঙ্কর বিপ্লবী গোষ্ঠী – বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স, ব্রিটিশ নথিতে যার উল্লেখ হয়েছে dreaded রূপে। বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের উৎস ঢাকার মুক্তিসংঘের গর্ভে যা সৃষ্টি করেছিলেন শ্রী হেমচন্দ্র ঘোষ আনন্দমঠ ও স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে। ১১৯০১-এর ডিসেম্বর মাসে বেলুড় মাঠে লোকমান্য বাল গঙ্গাধর তিলককে বলেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ – “বাহুবল বিনা ব্রিটিশকে ভারত থেকে উৎখাত করা যাবে না এবং তা-ই করতে হবে” (স্বামী বিবেকানন্দ:মহাবিপ্লবী হেমচন্দ্র ঘোষের দৃষ্টিতে – স্বামী পূর্ণাত্মানন্দ)। ১৯০১ সালের এপ্রিল মাসে তাঁর শেষ ঢাকা সফরে স্থানীয় যুবকদের (শ্রী হেমচন্দ্র ঘোষ তাঁদের অন্যতম) বলেছিলেন – “পরাধীন জাতির ধর্ম নেই। তোদের একমাত্র কাজ হবে যথার্থ মানুষের শক্তি অর্জন করে পরস্বাপহারীদের এ দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া।”এবং সেই সূত্রপাত। ২৬শে আগস্ট, ১৯১৪ – মুক্তিসংঘ ও আত্মোন্নতি সমিতি (অপর ভয়ঙ্কর বৈপ্লবিক সংস্থা) – র যৌথ নেতৃত্বে সংগঠিত হয় এক অকল্পনীয় দৃষ্টান্ত – রডা অস্ত্র লুন্ঠন যা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের ভিত কাঁপিয়ে বিশ্বব্যাপী এক আলোড়ন সৃষ্টি করে। ১৯২৮ সালের কলকাতায়, জাতীয় কংগ্রেস সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক রূপে উপস্থিত হয় Bengal Volunteers Corps, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে (আজকের ভাষায় fervent paramilitary outfit) এবং তার একের পর এক বিধ্বংসী যাত্রা সূচনা করে নির্মম প্রত্যাঘাতের নবযুগের। ঢাকায় আই-জি লোম্যান হত্যা, ৩০র কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিংয়ে বিনয় বসু-বাদল গুপ্ত-দীনেশ গুপ্তের নেতৃত্বে ঐতিহাসিক অলিন্দ যুদ্ধ হতে অত্যাচারী ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট হত্যা হতে আইএন-এ-র দিনগুলিতে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের রক্তাক্ষয়ী প্রভা, সমর কুশলতা ও বিধ্বংসী মনোবৃত্তি রচিত আছে স্বর্ণাক্ষরে। ১৮ই এপ্রিল, ১৯৩০ এ মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ রচনা করে সংগ্ৰাম ও আত্মবলিদানের অপর এক স্বর্ণ গাথা।

প্রশ্ন ওঠে এই ক্ষণে – স্বকল্পিত, স্বঘোষিত বিপ্লবী কম্যুনিস্টরা কোথায় এই ইতিহাসে? নিঃসন্দেহে, আন্দামান সেলুলার জেল হতে প্রত্যাগত স্বদেশী বিপ্লবীদের এক বৃহৎ অংশ যোগ দেন কম্যুনিস্ট পার্টিতে; অবশ্য, তার পরে তাঁরা রয়ে গেলেন পার্টি ক্যাডার রূপে কিন্তু বিপ্লবী নয় আর। একথা অনস্বীকার্য, ভারত বিশেষত বাংলার বৈপবিক সংগ্রামে বারংবার প্রতিবন্ধকতার দরুন পথ পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। তৎকালীন সমগ্র বিশ্বে নব ইতিহাসের স্রষ্টা রূপে রাশিয়া তথা সোভিয়েত ইউনিয়নের বলশেভিক বিপ্লব ও তার সূত্র রূপে মার্কসবাদের প্রতি আকৃষ্ট হন বিপ্লবীদের একাংশ। একই সাথে একথাও সত্য, জাতীয় বৈপ্লবিক সংগ্ৰামের জয়যাত্রাকে স্তব্ধ করার জন্য কম্যুনিজমের সাহায্য নিয়েছিল।

স্বাধীনতা সংগ্রামের যুগে ভারতের কম্যুনিস্ট পার্টির জাতীয়-বিরোধী মনোভাব প্রত্যক্ষ করেছে ইতিহাস। গান্ধীজির অহিংস সংগ্রামের বিরোধিতাতেই তাঁরা ক্ষান্ত থাকেন নি; বিদেশি বস্ত্র বয়কটের সময় তাঁরা বিলেতের ল্যাঙ্কাশায়ারের শ্রমিকরা বেকার হয়ে যাবে এই ভয়ে স্যুট পড়া শুরু করেছেন; চৌপাট্টির বালু বেলায় ভবিষ্যতের জাতীয় পতাকা পায়ে মাড়িয়েছেন; ‘জনযুদ্ধ’ পর্বে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের পক্ষে থেকে জাতীয় বিপ্লবীদের পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন; সুভাষচন্দ্রকে দেশদ্রোহী ও ‘কুইসলিং’ নামে নিজেদের পত্রিকায় প্রতিনিয়ত অকথ্য ভাষার প্রয়োগ করেছেন; মুসলিম লীগের পাকিস্তান আন্দোলনের প্রতি স্বতঃস্ফুর্ত সমর্থন জানান নি শুধু, দ্বিজাতিতত্ত্বের thesis ও ‘৪৬র ঐতিহাসিক নির্বাচনে মুসলিম লীগের political manifesto ও রচনা করেছেন।

ব্যতিক্রমও রয়েছে। শ্রী সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা RCPI বা Revolutionary Communist Party of India চলল আদ্যন্ত স্তালিন ও কমিন্টার্ন-বিরোধী যা জাতীয় ধারার শটে সম্পৃক্ত ছিল চিরকাল। ‘৪২র ভারত ছাড়ো আন্দোলনে তাঁরা বন্দী ও অশেষ নির্যাতন ভোগ করেছিলেন ব্রিটিশের কারাগারে। অপর দুই বামপন্থী সংগঠন – আরএসপি ও ফরওয়ার্ড ব্লকের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। কিন্তু সিপিআই, যা মূলধারা রূপে পরিচিত বিশ্ব জুড়ে তার বিশ্বাসঘাতকতা সীমাহীন। আরও একটি বিতর্কিত বিষয় রয়েছে – মূলধারা ভারতীয় কম্যুনিস্ট কদাপি নয়, ভারতের কম্যুনিস্ট পার্টি। যদিও সেই নামকরণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল কম্যুনিস্ট পার্টির অভ্যন্তরে যা গৃহীত হয়নি। সি.পি.আই-র প্রাক্তন সদস্য সতীন্দ্র সিংহের কথায়, “Ahmed and his comrades rejected the suggestion on the plea that the Comintern would ot approve of it’ (The Communists by Satindra Singh: Illustrated Weekly of India : January 9-15, p. 13). উল্লেখ্য, সতীন্দ্র সিংহ কম্যুনিস্ট পার্টি হতে বিদায় নেন ১৯৪৮ সালে)।

পরিশেষে, একটি বির্তকের কথা উল্লেখ করতে হয়। ‘নন্দন’-এর এক পূজা সংখ্যায় মুজফ্ফর আহমেদ ‘সন্ত্রাসবাদী বিপ্লবীরা কম্যুনিস্ট এলেন’ নামা এক প্রবন্ধে লেখেন, “১৯৩৪ সালে ভারত সরকার কম্যুনিস্ট পার্টিকে বে-আইনী ঘোষণা করে। অতএব যাঁরা সন্ত্রাসবাদী রূপে পরিচিত ছিলেন তাঁরা প্রবল বিপদের ঝুঁকি নিয়েই কম্যুনিস্ট পার্টিতে এলেন।” এই মন্তব্যের উপর “যুগান্তর” দলের বিশিষ্ট বিপ্লবী নেতা শ্রী ভূপেন্দ্র কুমার দত্ত মহাশয় বলেন, “কাদের সম্বন্ধে কথাটা বলছেন মুজফ্ফর সাহেব? ফাঁসির দড়িকে লোভের বস্তু বলে যাঁরা বিপ্লবী দলে আসতেন এবং দুই জনের ভিতর বাছাবাছির প্রশ্ন উঠলে যাঁরা আমি যাবো আমি যাবো বলে কাড়াকাড়ি লাগাতেন তাঁদের সম্পর্কে? পাঁচিলে বে-আইনী দলের ইস্তাহার সাঁটার জন্য পনের দিন কি এক মাসের কারাগারের সম্ভাবনা তাঁদের কাছে এক প্রবল বিপদের ঝুঁকি!” (সন্ত্রাসবাদী বনাম কম্যুনিস্ট: শ্রী ভূপেন্দ্র কুমার দত্ত)।

বঙ্গের সশন্ত্র বৈপ্লবিক আন্দোলনের উৎস ঊনবিংশ শতাব্দীর Masculine Hinduism র মধ্যে: হিন্দু মেলা হতে যার সূত্রপাত, ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের অনুশীলন-তত্ত্ব ও Militant Nationalism যার পরিমার্জন করে ও স্বামী বিবেকানন্দের প্রেরণায় যার বিস্ফোরণ ঘটে ও জগৎ প্রকম্পিত হয়। তার ধ্যানমন্ত্র দেবী কালীর বিধ্বংসী রূপ, লক্ষ্য ‘আনন্দমঠ’ এ বর্ণিত – ‘এই মা যা হইবেন। দশ ভুজ দশ দিকে প্রসারিত – তাহাতে নানা আয়ুধরূপে নানা শক্তি শোভিত, পদতলে শত্রু বিমর্দিত, পদাশ্রিত বীরকেশরী শত্রুনিপীড়নে নিযুক্ত।’ ‘দিগভুজা – নানাপ্রহরণধারিনী শত্রুবিমর্দিনী-বীরেন্দ্র-পৃষ্ঠবিহারিণী-দক্ষিণে, লক্ষ্মী ভাগ্যরূপিণী-বামে বাণী বিদ্যাবিজ্ঞানদায়িনী – সঙ্গে বলরূপী কার্তিকেয় – কার্যসিদ্ধিরূপী গণেশ’ ‘ “মা যা হইবেন”। কিন্তু ‘মা’ হন নাই; সমগ্র দেশ, জাতি আজ বিপর্যস্ত, নিপীড়িত, লাঞ্চিত, ধর্ষিতা – মুলে তার বাঙ্গালীর সমূহ অধঃপতন; অতএব বাঙ্গালীকে তার মূলে প্রত্যাগমন করতে হবে – ইহাই ললাটের বিধান। প্রত্যেক রক্তবিন্দু শোধন করবে গ্লানি।

“বন্দেমাতরম”

 

(লেখক – সাধারণ সম্পাদক – বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স ও সম্পাদক – ‘কাঞ্জিক’)