আমার ইতিহাস

কোড়কদী – ৭

(পূর্বের অংশের পর)

– শ্রী অলোক ভট্টাচার্য

 

বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ও তৃতীয় দশকে গ্রামে বাসরত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী মানুষের সংখ্যা প্রায় ত্রিশ। বেশিরভাগই কলকাতা বা অন্য শহরে সরকারি ও কলকাতায় বেসরকারি কোম্পানির চাকুরে। শনিবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতেন দল বেঁধে ; সোমবার ভোরে বেরিয়ে অফিসে হাজিরা দিতেন। ট্রেনের সময়ও তেমনি ছিল। কলকাতার সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ থাকায় ভাষা ও সংস্কৃতিতে কোড়কদীর মানুষরা কলকাতার সাথে একাত্মতা বোধ করতেন শিক্ষা, সাহিত্য, অভিনয়, ক্রীড়া সংস্কৃতিতে কোরকদী একটি অনন্য গ্রাম হতে পেরেছিল। এই ব্যাপারে কিছু খ্যাতনামা মানুষের কথা বলি যাদের অবদান বিংশ শতাব্দীতেই পেয়েছি।

হরিপদ চক্রবর্তী: ইংরেজিতে এমএ পাস করে অন্য কোন পেশায় গেলেন না। শিক্ষকতাকে আদর্শ করে স্থানীয় স্কুলের হেডমাস্টার হলেন; কিন্তু 1937 সালের ম্যালেরিয়া তাকে ছিনিয়ে নিল তাঁর পৌত্র বুদ্ধদেব (ভেষজ বিজ্ঞানে ডক্টরেট) কলকাতাবাসী ও বন্ধু।

রাধিকা মোহন লাহিড়ী : ব্রিটিশ ভারতের প্রথম পোস্টমাস্টার জেনারেল হয়েছিলেন। রায় বাহাদুর খেতাব নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত হয়ে গ্রামেই বাস করতেন। ম্যালেরিয়া উচ্ছেদ কল্পে কাজ করতে করতে ম্যালেরিয়াতেই ১৯৩৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

অমল সান্যাল : শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক।’নিশীথ সূর্যের দেশ’ ও ‘কনকদ্বীপ’ তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে তার নেতৃত্বে কোরকদী স্কুলকে কেন্দ্র করে যে  বিশাল প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ ফেটে পড়েছিল, তা জেলার মধ্যে তীব্রতম বলে স্বীকৃত হয়।

অবন্তী সান্যাল:( ১৯২৬ -২০০৭) শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক।  বর্ধমান রাজ কলেজের বাংলার বিভাগীয় প্রধান ও অধ্যক্ষ ছিলেন। অসাধারণ ভাষা পন্ডিত। হওয়ার্ড ফাস্ট, মিখাইল সোলোকভ, কিশান চন্দ্র, মপাঁসাঁ্র বেশ কিছু রচনার অনুবাদকারী। অনেক প্রবন্ধের সংকলক; যেমন,’ প্রাচীন নাট্য প্রসঙ্গ’,’ বাংলা নাটকের প্রথম পাঠ ‘,’ভারতীয় কাব্যতত্ত্ব’,’রবীন্দ্রনাথের গদ্যরীতি ‘কবির অভিনয়’।রমাঁ রোঁলা, বিঠোফেন, মাইকেল এঞ্জেলোর উপরেও তার গ্রন্থ রয়েছে।’ হাজার বছরের প্রেমের কবিতা’ খুব জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। অবন্তী কুমারের অত্যন্ত স্নেহভাজন ছিলাম বলে গর্ববোধ করি। তাঁর পুত্র কল্যাণ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতির অধ্যাপক ছিলেন। দ্বিতীয়নপুত্র সুনন্দ যুক্তরাষ্ট্রের বস্টনে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক।

সুলেখা সান্যাল : অবন্তী কুমারের ছোট বোন। ইনি কোরকদি স্কুলের প্রথম মহিলা মেট্রিকুলেট।চারের দশকে ;তাও প্রাইভেটে। রাজেন্দ্র কলেজ ও পরে কলকাতায় লেখাপড়া করেন। বাংলায় লেখিকাদের মধ্যে তাঁর নামটি প্রথম তালিকা তে আছে। ছোট গল্প উপন্যাস লেখিকা তিনি। তাঁর লেখা ‘সিঁদুরে মেঘ’ চিত্রায়িত হয়েছিল।কোড়কদীর পটভূমিতে লেখা উপন্যাস ‘নবাঙ্কুর’, তাঁকে খ্যাতির শিখরে নিয়ে যায়। ১৯৬২ সালে মাত্র ৩৪ বছরেই তিনি প্রয়াতা হন।

 

 

(ক্রমশঃ)

Comment here