শক্তিচর্চা

বর্তমান বাংলায় লিঙ্গ-সমীকরণ এবং জাতির ধারক হিসেবে বাঙ্গালী পুরুষদের কর্তব্য

© স্নেহাংশু মজুমদার

বর্তমানে বাঙ্গালী জাতি ধর্মীয় ও জাতিগতভাবে যে বৈষম্য ও সংকটের শিকার হচ্ছে, তার সবচেয়ে গভীর প্রভাব পড়ছে নারী-পুরুষ সম্পর্কের গতিশীলতার ওপর। অনেক বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদী মনে করেন যে, আজকাল বহু বাঙ্গালী মেয়ে অ-বাঙ্গালী বা অ-হিন্দু ছেলেদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়াচ্ছে কিংবা বিয়ে করছে। তবে বিষয়টি যেভাবে প্রচার করা হয়, বাস্তবতা সবসময় তেমন নয়।

খোঁজ নিলে দেখা যায়, যারা অন্য ধর্ম বা ভাষার মানুষের সঙ্গে সম্পর্কে যাচ্ছে, তাদের অনেকের পারিবারিক পটভূমি দুর্বল। চরিত্রগত দিক থেকেও এদের অনেকেই নানা অনৈতিক সম্পর্কের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে। ফলে তারা যখন বাঙ্গালী সমাজে গ্রহণযোগ্যতা হারায়, তখন শেষ পর্যন্ত কোনো বিহারি, উত্তরপ্রদেশি বা মুসলিম ছেলেকে বিয়ে করে।

সবসময় মনে রাখা জরুরি—নারীর রূপ বা জাতিগত পরিচয়ের চেয়ে অনেক বড় বিষয় হলো তার চরিত্র। যে মেয়ে খারাপ চরিত্রের অধিকারী, সে যদি কোনো বাঙ্গালী ছেলেকে বিয়ে করত, তবে তার জীবনকেই ধ্বংস করত। কিন্তু বাস্তবে এমন মেয়েরা বাঙালি ছেলেদের জীবন নষ্ট না করে বরং অন্য জাতিতে মিশে যাচ্ছে—এটা এক অর্থে আশীর্বাদই বলা যায়। আমাদের জাতির আবর্জনা ও অযোগ্য অংশ নিজেরাই ছেঁকে বেরিয়ে যাচ্ছে।

তাই অযথা “লাভ জিহাদ” বা “গুটখা জিহাদ” নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কিছু নেই। এসব ফাঁপা বিতর্কে না জড়িয়ে বরং আমাদের উচিত বুঝতে শেখা—জাতির শক্তি টিকে থাকে চরিত্রবান মানুষ দিয়ে, আর সেই চরিত্র গড়ার দায়িত্ব সবার আগে নিতে হবে বাঙ্গালী পুরুষদেরই।

আরেকটি বিষয় খেয়াল করার মতো হলো—যেসব মেয়েরা ভিন্ন জাতিতে যাচ্ছে, তাদের বড় অংশই আসলে রূপ-গুণের বিচারে অত্যন্ত কুশ্রী। কথাটা শুনতে হাস্যকর মনে হলেও বাস্তবতা অস্বীকার করা যায় না। নারী জীবনে রূপ একধরনের কারেন্সি—অর্থ, সাফল্য বা অন্য সব অর্জনের চেয়েও সঙ্গী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে রূপের মূল্যই সর্বাধিক।

এখন এই মেয়েরা যেহেতু বাহ্যিক সৌন্দর্যের অভাবে বাঙ্গালী পুরুষদের কাছ থেকে তেমন মনোযোগ পায় না, তাই তারা সহজেই ভিড়ে যায় বহিরাগত বা ভিন্ন ধর্মের ছেলেদের দিকে। কারণ এরা খুব সস্তা আনন্দের জন্য এমন মেয়েদের প্রচুর গুরুত্ব দেয়। ফলে মেয়েরা তাড়াতাড়ি সামাজিক মাধ্যমে বহিরাগতদের প্রশংসা গাইতে শুরু করে।

অন্যদিকে, বাঙ্গালী পুরুষরা এদের কুশ্রী চেহারার জন্য পাত্তা দেয় না। এর প্রতিশোধ নিতে এই মেয়েরা সামাজিক মাধ্যমে এমন এক ন্যারেটিভ ছড়ানোর চেষ্টা করে—যে নাকি বাঙ্গালী ছেলেরা নিজেরাই দেখতে খারাপ, তারা নাকি “ইনসেল”, তাদের নাকি কোনো মেয়ে মেলে না।

এইভাবে, এক শ্রেণির স্বেচ্ছাদাসী মেয়েদের একটি আলাদা কমিউনিটি তৈরি হয়ে যায়, যারা বহিরাগতদের হয়ে কাজ করে বাঙ্গালী পুরুষবিদ্বেষী প্রচারণার “ফুট-সোলজার” হয়ে ওঠে। এরা আসলে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে অন্যকে ছোট করার মধ্যে আনন্দ খুঁজে পায়।

তবে এখানে স্পষ্ট করে বলা দরকার—উপরে যেসব নির্দিষ্ট শ্রেণির নারীর কথা বলা হলো, তারা মোটেও সমগ্র বাঙ্গালী নারী সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে না। বরং তারা একটি বিচ্ছিন্ন ও অপ্রধান অংশ। বাস্তবে বাঙ্গালী নারীর বৃহত্তর অংশই ভদ্র, শিক্ষিত ও সুসংস্কৃত পরিবারে বড় হয়েছে। যারা বাবা-মায়ের শিক্ষা ও মূল্যবোধে বেড়ে উঠে, তারা কখনও নিজেদের জাতির বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ায় না। বরং তারা বাবা-মা ও পূর্বপুরুষকে সম্মান করে এবং বাঙ্গালী সমাজের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকেই জীবনের মূলধারা হিসেবে গ্রহণ করে।

এই নারীরা নিজেরাই স্বজাতির পুরুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেয়, সংসার গড়ে তোলে, এবং বাঙ্গালী সন্তান জন্ম দিয়ে জাতির সংখ্যাবৃদ্ধি ও ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করে। প্রকৃতপক্ষে এঁরাই বাঙ্গালী সমাজের মূল শক্তি এবং জাতিসত্তার প্রধান রক্ষক। তাই আমাদের সম্মান ও শ্রদ্ধা সবসময় এই সিংহভাগ বাঙ্গালী নারীদের প্রতিই নিবেদিত হওয়া উচিত। তাদের হাত ধরেই জাতি টিকে থাকে, বেড়ে ওঠে এবং ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যায়।

এবার আসি নব্য-বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদীদের কথায়। এরা সবসময় ভয় পায় যে বাঙ্গালী নারীরা নাকি বহিরাগতদের বিয়ে করছে। কিন্তু বাস্তবে যদি আপনি দিনাজপুর, মালদা, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, বর্ধমান অঞ্চলের প্রতিটা ঘোষ, সাহা, মণ্ডল, কুণ্ডু ব্যবসায়ী ও দোকানদার পরিবারের বাড়িতে যান, দেখবেন—প্রায় প্রতিটি ঘরেই বিহার, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশের মেয়ে বউ হয়ে এসে সংসার করছে। আর এটা প্রতিটা ঘরেই সত্যি ঘটনা।

এই জেলার বাঙ্গালী ব্যবসায়ী পরিবারগুলোর মধ্যে বহিরাগত বউ আনার একটা লম্বা ঐতিহ্য আছে। কারণ, প্রথমত, বিহার ও উত্তরভারতে বাঙ্গালী জামাই করার একটা বিশেষ ঝোঁক ঔপনিবেশিক আমল থেকেই ছিল। দ্বিতীয়ত, এসব এলাকায় মেয়েদের বিয়ে দিলে প্রচুর পণ পাওয়া যেত। অবশ্যই পণ প্রথা একটি ভীষণ খারাপ সামাজিক বিষয়, আমি একে কোনোভাবেই সমর্থন করি না। তবে অর্থনৈতিক বিচারে দেখলে—যে ছেলে ব্যবসা করবে, তার জন্য এই পণ আসলে ইনভেস্টমেন্ট ক্যাপিটাল হয়ে আসত।

আরেকটি কারণ হলো—এই ব্যবসায়ী পরিবারগুলোর পুরুষদের সকাল থেকে রাত অবধি প্রচুর পরিশ্রম করতে হয় অর্থ উপার্জনের জন্য। আর বিহারের মেয়েরা ছোটবেলা থেকেই এমন পরিশ্রম করতে শেখে। ফলে বিয়ে হয়ে আসার পর ব্যবসা আর সংসার—দুটোই ভালোভাবে চলে। ব্যবসা বাড়ানোর পুঁজি আছে, আবার ব্যবসা সামলানোর উপযুক্ত সঙ্গিনীও আছে। এভাবেই তৈরি হয় যোগ্য সহধর্মিণী।

এবার তুলনা করুন—বহিরাগতরা যদি এখানকার কোনো মেয়ে বিয়ে করে, তারা এর বিনিময়ে কী পায়? এক বিরাট অন্ধকূপ ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ আগে যেমন বলেছি, এদের পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড খারাপ, তাই এর থেকে বিশেষ কিছু মেলে না। বরং তারা পায় এক মধ্যম মানের, নিম্ন নৈতিকতার নারীকে—যার দায়িত্ব কেবলই বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।

এবার আসি বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নারী শাখার কথায়। আশ্চর্যের বিষয় হলো—যখন সিনেমা বা ওয়েব সিরিজে বাঙ্গালী ছেলেদের হেয় করে দেখানো হয়, কিংবা যখন বড় প্রযোজনা সংস্থা যেমন SVF খোলাখুলিভাবে বাঙালি মেয়েদের অবাঙ্গালী ছেলেদের সঙ্গে বিয়ে করতে উৎসাহিত করে, তখন একটিও বাঙ্গালীবাদী সংগঠনের নারী শাখা প্রতিবাদ জানায়নি।

আসলে এই নারী শাখাগুলোর সদস্যরাও অন্য অনেক বাঙ্গালী মেয়ের মতোই একই মানসিকতায় চলে। তারা চায় তাদের হাতে সবসময় দুটি বিকল্প থাকুক—একদিকে বাঙ্গালী ছেলে, অন্যদিকে অবাঙ্গালী ছেলে। এই দ্বৈত বিকল্প থাকায় তাদের দরকষাকষির ক্ষমতা বাড়ে। তাই বাংলায় অবাঙ্গালী আধিপত্য থাকুক—এমন গোপন ইচ্ছে অনেকের মধ্যেই কাজ করে। ফলস্বরূপ, স্পষ্ট হয়ে যায়—এই তথাকথিত নারী শাখাগুলো আসলে বাঙ্গালী জাতির স্বার্থে কাজ করছে না। তারা বাঙ্গালীবাদকে ব্যবহার করছে কেবল ব্যক্তিগত সুবিধা, রাজনৈতিক পরিচিতি আর নেতা হওয়ার হাতিয়ার হিসেবে। অথচ জাতিকে রক্ষা করার সংগ্রামে তাদের কোনো দায়িত্বশীল ভূমিকা নেই।

এখান থেকেই প্রতিটি বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদী ছেলের শিক্ষা নেওয়া উচিত—সংগঠনে যারা কেবল ফুটেজ খাওয়ার জন্য আসে, সেই মহিলাদের মধ্যে না আছে কোনো জাতীয় আদর্শ, না আছে সংগঠনের জন্য আত্মত্যাগের মানসিকতা। তারা আসলে জনপ্রিয়তার আন্দোলনের অংশ, যার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো নিজের জন্য followers জোগাড় করা, সস্তা attention পাওয়া, আর চারপাশে simp তৈরি করা।

তাদের কাছে কখনও কাম্য হবে না যে বাঙ্গালী পুরুষরা এককেন্দ্রিকভাবে শক্তিশালী হোক কিংবা বাংলার মাটিতে বহিরাগতদের প্রভাব খতম হোক। কারণ তাতে তারা হারাবে বহিরাগতদের কাছ থেকে পাওয়া সস্তা ফুটেজ এবং নিজেদের বাজারমূল্য বাড়ানোর যে চালাকি—নিজেকে সস্তায় তুলে ধরে দরকষাকষির ক্ষমতা বৃদ্ধি—সেটা মুহূর্তেই ভেঙে পড়বে।

জাতি নির্মাণ করে পুরুষেরা। তাই জাতির দুঃসময়ে প্রকৃত ক্ষতির ভার বহন করতে হয় পুরুষকেই। সেই ক্ষতের ফাঁক দিয়েই তথাকথিত নারী-স্বাধীনতার আলো দেখা দেয়। কিন্তু একবার যদি বাঙ্গালী পুরুষ শক্তিশালী হয়ে জাতির নিয়ন্ত্রণ হাতে নেয়, তবে এই দরকষাকষির পথ চিরদিনের মতো বন্ধ হয়ে যাবে।

আরও এক ধরনের নারী আছে, যারা সরাসরি নয় বরং আড়ালে বসে covert propaganda চালায়। কয়েক বছর আগেও এরা প্রকাশ্যে ভিনজাতি পুরুষদের দালালি করত। কিন্তু সময়ের সঙ্গে কৌশল বদলেছে—এখন এরা হিন্দু সংস্কৃতি, বাঙ্গালী সংস্কৃতি নিয়ে জ্ঞান বিলিয়ে নিজেদেরকে ভীষণ pro-Bengali হিসেবে সাজাতে চায়। কিন্তু এই মুখোশের আড়ালে চলছে এক ভয়ংকর খেলা। যখনই কোথাও বাঙ্গালী পুরুষদের হেয় করা হয়, বা মেয়েদের শ্রেষ্ঠ দেখিয়ে ছেলেদের হীন করে তোলা হয়—এই নারীরা বাইরে বাইরে সেটার বিরোধিতা করার ভান করে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা সেই বিষয়কেই প্রচার করে, ছড়িয়ে দেয়, আর ভেতরে ভেতরে আনন্দ নেয় যখন বাঙ্গালী ছেলেরা ট্রোলড হয়। এরা হিন্দুত্বের নামে আসলে অবাঙ্গালী বাজারে নিজেদের দর বাড়ায়। একইসঙ্গে বাঙ্গালী পুরুষদের নারীবাদী জ্ঞান শোনায়। ফলে বাইরে থেকে মনে হয় তারা জাতি ও সংস্কৃতির রক্ষক, কিন্তু বাস্তবে তারা এক ভয়াবহ গোপন শত্রু। এদের চিনে ফেলার জন্য প্রয়োজন সূক্ষ্ম বুদ্ধি এবং গভীর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা।

ইতিহাসে দেখা যায়, যখনই কোনো জাতি পরাজিত হয়েছে, তখন প্রথম আঘাত নেমে এসেছে পুরুষদের ওপর—তাদের হয় হত্যা করা হয়েছে, নয় দাসে পরিণত করা হয়েছে। অপরদিকে নারীরা বিজয়ী জাতির পুরুষদের দ্বারা অধিকৃত হয়েছে, এবং ধীরে ধীরে সেই বিজয়ী পুরুষকেই শ্রেষ্ঠ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বিজিত জাতির নারীদের এখানে এক বিশেষ সুবিধা থাকে। তারা একইসঙ্গে বিজিত জাতির পুরুষের দিকেও যেতে পারে, আবার বিজয়ী পুরুষের সঙ্গেও যেতে পারে। ফলে তাদের দরকষাকষির ক্ষমতা বহুগুণ বেড়ে যায়। তারা দুই দিক থেকেই লাভবান হয়।

এই মানসিকতা থেকেই বোঝা যায় কেন বহু নারী অচেতনভাবে চাইবে যে বাঙ্গালী পুরুষেরা কখনো শক্তিশালী না হোক, বরং বাঙ্গালী জাতি দুর্বল বা গোলাম জাতি হিসেবেই থাকুক। কারণ তাতে নারীরা সর্বোচ্চ সুবিধা পায়। তারা একদিকে সমাজে নারীতান্ত্রিক সংস্কৃতির নামে বিশেষ প্রিভিলেজ ভোগ করে, দায়িত্ব ছাড়াই ক্ষমতা ধরে রাখে, আবার অন্যদিকে নানা জাতির পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের স্বাধীনতাও পায়। বাঙ্গালী পুরুষ তখন কেবল তাদের ব্যাকআপ হিসেবে থেকে যায়।

অপরদিকে যদি বাঙ্গালী পুরুষরা সত্যিই শক্তিশালী ও ক্ষমতাশালী হয়, তাহলে তারাও অন্য জাতির নারীদের নিজেদের সমাজে নিয়ে আসতে পারবে। আর সেখানেই ভাঙবে বাঙ্গালী নারীদের একচেটিয়া আধিপত্য—তাদের মৌরসিপাট্টা। তাই পুরুষশক্তির উত্থানকে এরা অন্তর থেকেই ভয় পায়।

নারীদের এক স্বাভাবিক প্রবণতা আছে—তারা সবসময় চায় নিজের জাতির পুরুষদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়াতে। এজন্যই দেখা যায়, ভিন্ন জাতির পুরুষরা যতই নীচু মানসিকতার, কুৎসিত বা অশিক্ষিত হোক না কেন, তাদেরও নারীসমাজ কিছুটা জায়গা দেয়। এতে তাদের নিজস্ব জাতির পুরুষদের মধ্যে “scarcity” বা অভাবের পরিবেশ তৈরি হয়, ফলে নারী নিজে বাজারে মূল্যবান হয়ে ওঠে।

এই মনস্তত্ত্বই ব্যাখ্যা করে কেন আজকাল অনেক নারী এমনকি নিচুস্তরের বহিরাগত—যেমন কিছু অশিক্ষিত বিহারি বা হিন্দস্তানী পুরুষদের সঙ্গেও সম্পর্ক গড়ছে। অথচ বাস্তবচিত্র সম্পূর্ণ উল্টো—বাঙ্গালী পুরুষ রূপে, গুণে, দেহসৌষ্ঠবে, শিক্ষায়, নাগরিক বোধে এবং অর্থনৈতিক সক্ষমতায় বহিরাগতদের বহু গুণে শ্রেষ্ঠ। তবুও এই বিকৃতি ঘটছে সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক খেলায়, যেখানে বাঙালি পুরুষের সম্মান ও আত্মবিশ্বাসকে ধীরে ধীরে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে।

এই অবস্থায় বাঙ্গালী পুরুষদের করণীয় একটাই—নিজেদের ওপর বিনিয়োগ করা। শারীরিকভাবে ফিট থাকা, পরিপাটিভাবে নিজেকে গড়ে তোলা, আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হওয়া এবং মানসিকভাবে দৃঢ় থাকা—এই চারটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়াক নতুন বাঙালি পুরুষের পরিচয়।

একইসঙ্গে প্রয়োজন একটি ঐক্যবদ্ধ, গর্বিত ও জাতিসচেতন পুরুষসমাজ গড়ে তোলা—একটি উগ্র বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদী পুরুষসমাজ, যারা নিজের জাতির মর্যাদা ও অস্তিত্ব রক্ষাকে নিজের ব্যক্তিগত সম্মানের সমান মনে করবে। কারণ জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে সেইসব পুরুষদের ওপর, যারা নিজেদের গড়ে তুলতে জানে, এবং জাতির সম্মান রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে পারে।

জাতির উদ্দেশ্য কখনোই হওয়া উচিত নয় এইসব তুচ্ছ চিন্তায় সময় নষ্ট করা যে কোন নিচু চরিত্রের মেয়ে কোথায় গেল বা কার ঘরে গেল। বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের মূল চেতনা হওয়া উচিত অন্য জায়গায় — সেই চেতনা হলো প্রতিটি যোগ্য বাঙ্গালী পুরুষ যেন আর্থিকভাবে স্বনির্ভর, প্রভাবশালী ও আত্মনির্ভরশীল হয় এবং সুচরিত্রের ভদ্র কন্যা বিবাহ করে উপযুক্ত পরিমাণ সন্তানসংখ্যা জাতির অন্তর্ভুক্ত করতে পারে ।

প্রতিটি বাঙ্গালী পুরুষের কর্তব্য হলো সচ্চরিত্র ও ভদ্র পরিবারের মেয়েদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। এই বিবাহ যেন কেবল পারিবারিক নয়, জাতীয় দায়িত্বের অংশ হয় — যেন প্রতিটি পরিবার কমপক্ষে তিন বা ততোধিক সন্তান গ্রহণ করে, এবং সেই সন্তানদের মাধ্যমে বাংলার জনসংখ্যাগত ভারসাম্য ও সাংস্কৃতিক অধিকার রক্ষা পায়।

বাংলা ভাষা অনেক দিন ধরেই “মায়ের ভাষা” হিসেবে আবেগের বিষয় হয়েছে, কিন্তু এখন সময় এসেছে বাংলা ভাষার প্রকৃত অবস্থান “পিতার ভাষা”র উত্তরাধিকার – সোজা বাংলায় “বাপের ভাষা” বলার — কারণ ভাষার মূল শক্তি আসে বংশের ধারায়, পিতার রক্তে। বাঙ্গালীত্ব কেবল আবেগ নয়, এটি এক পবিত্র উত্তরাধিকার; এবং সেই উত্তরাধিকার টিকে থাকে পিতার মাধ্যমে বংশানুক্রমে।

একজন বাঙ্গালী ব্যক্তির মা কাশ্মিরী, পাঞ্জাবি, তামিল, গুজরাটি, ফরাসি, ব্রিটিশ, চীনা, রুশ বা ইরানি—যে কোনো জাতিরই হতে পারেন, তাতে বাঙ্গালীত্বের সমস্যা নেই। কিন্তু তার পিতা বাঙ্গালী হওয়াই সর্বাধিক আবশ্যক। কারণ বাঙ্গালী পুরুষদের ঔরসজাত সন্তানরাই প্রকৃত বাঙ্গালী—তাদের মাধ্যমেই টিকে থাকবে জাতির রক্ত, ভাষা ও ভবিষ্যৎ।

“বাংলা ভাষা বাপের ভাষা” — এই কথার মানে কেবল উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া এক টুকরো পরিচয়ে গর্ব করা নয়। এর অর্থ আরও গভীর। বাঙালিত্ব কোনো আবেগ বা সংস্কৃতির অলঙ্কার নয়, এটি উত্তরাধিকার—এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে সঞ্চারিত জীবনীশক্তি।

একজন মানুষ তার পিতার কাছ থেকে তিনটি প্রধান উত্তরাধিকার লাভ করে — জিন, ধর্মভাষা। এই তিনটি উপাদানই মিলে গড়ে তোলে জাতির ভিত্তি। পিতার সম্পত্তি যদি কেউ বিস্তার না করে, তবে একসময় উত্তরাধিকার হারায়; ঠিক তেমনি, যদি বাঙালি জাতি নিজের জিনগত স্বাতন্ত্র্য, ধর্মীয় শিকড় এবং ভাষাগত আধিপত্য রক্ষা না করে, তবে জাতিসত্ত্বা বিলীন হয়ে যাবে।

তাই আমাদের কর্তব্য শুধু ভাষাকে ভালোবাসা নয়, বরং তার বিস্তার ঘটানোবাংলা হবে রাজনীতির ভাষা, শাসনের ভাষা, বাণিজ্যের ভাষা, জ্ঞানের ভাষা। বাংলা হবে শক্তির ভাষা, কর্তৃত্বের ভাষা, আত্মপরিচয়ের ভাষা।

কারণ বাংলা ভাষা কেবল এক যোগাযোগের মাধ্যম নয়—এটি এক মহাশক্তিধর উত্তরাধিকার, যা আমাদের রক্তে, চেতনায় এবং ইতিহাসে বয়ে চলে। এই ভাষাকে তার প্রাপ্য স্থানে পৌঁছে দেওয়া মানেই বাঙ্গালী জাতির পুনর্জাগরণ।

স্বজাতি-চেতনায় উজ্জীবিত বাঙ্গালী নারীদের মনে রাখতে হবে—নারী হিসেবে প্রকৃত সম্মান তারা তখনই পাবে, যখন বাঙ্গালী পুরুষরা শক্তিশালী হবে, ক্ষমতায় উঠবে এবং নিজেদের প্রভাব বিস্তার করবে। পুরুষের শক্তি ও মর্যাদা থেকেই জাতির নারীর মর্যাদা জন্ম নেয়।

যেসব নারী নিজের জাতির পুরুষদের হেয় করে, অন্য জাতির পুরুষদের সামনে তাদের নিচু করে দেখায়, তারা বুঝুক—বহু বছর ধরে সেইসব পতিতা মানসিকতার কারণেই সমগ্র বাঙ্গালী নারীমণ্ডলের ভাবমূর্তি কলঙ্কিত হয়েছে। এখন সময় এসেছে সেই অপবাদ মুছে ফেলার, নিজের এবং জাতির নাম রক্ষার।

বাঙ্গালী নারীরা এগিয়ে আসুন—প্রতিটি বাঙ্গালী নারীর মনে বাঙ্গালী পুরুষদের প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধা ও সহযোগিতার মনোভাব গড়ে তুলুন। বাঙ্গালীদের পুরুষত্ত্ব, বীর্যবল ও আত্মমর্যাদা প্রচার করুন।

যখনই কোনো সিনেমা, ওয়েব সিরিজ বা জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে বাঙ্গালী পুরুষ এবং নারীদের নিচু চরিত্রে দেখানো হয়, বা নারীদের কোনো অবাঙ্গালী পুরুষের সাথে সম্পর্কে দেখানো হয়, তখনই আপনারা সোচ্চার হোন।

এই অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে তুলুন—জনসচেতনতা, প্রচার ও আন্দোলনের মাধ্যমে এই বিকৃত মানসিকতা থামান। কারণ, জাতির নারীরা যদি নিজের জাতির পুরুষদের মর্যাদা রক্ষা না করে, তবে সেই জাতির স্বাধীনতা ও সংস্কৃতি কোনোদিন টিকে থাকতে পারে না।

এখন সময় এসেছে বাঙালি নারীশক্তির সম্মানকে নতুন অর্থে প্রতিষ্ঠিত করার—যে সম্মান জাতিকে একত্র করে, জাতির পুরুষদের শ্রদ্ধা দেয়, আর জাতির ভবিষ্যৎকে রক্ষা করে।

 

লেখক পরিচিতি:


শ্রী স্নেহাংশু মজুমদার, স্নাতকোত্তর, একজন সামরিক ঐতিহ্য-অনুরাগী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক, যিনি ইতিহাস, জাতিতত্ত্ব এবং সমকালীন ভূরাজনৈতিক সংযোগস্থল নিয়ে চর্চা করেন। তিনি “গৌড়ীয় ওয়ারিয়র্স” নামক এক ঐতিহাসিক গবেষণা চিন্তনকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা, যা বাঙ্গালী সামরিক ঐতিহ্য, সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার এবং বর্তমান সময়ে বাঙ্গালার রাজনৈতিক প্রবাহের নির্মোহ বিশ্লেষণ নিয়ে কাজ করে।