মাঝে মাঝেই একটা প্রশ্ন অন্তরে জাগে- সুদীর্ঘ 10800 বছরের ইতিহাসে কেন বারবার হিন্দুজাতির উত্থান উর্ধ্বমুখী হয়ে আবার মুখ থুবড়ে পড়েছে? অখণ্ড হিন্দুরাষ্ট্র, একক জাতিসত্তা, অসংখ্য জাতি, অসংখ্য ছোট ছোট রাজ্যে বিভক্ত হয়ে গেছে? 711খ্রীঃ থেকে নাহয় ইসলাম ও খ্রীষ্ট ধর্মাবলম্বীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু যখন অন্য কোন ধর্মের অস্তিত্ব ছিল না, তখনওতো হিন্দুজাতির মধ্যেই বিভেদ- যুদ্ধ- মৃত্যু ঘটেছে। ভারতবর্ষ খণ্ড খণ্ড রাজ্যে বিভক্ত হয়েছে। উত্তরভারত যদি গান্ধার(অধুনা আফগাণিস্তান) থেকে দক্ষিণভারতের গোদাবরী নদী পর্যন্ত 16 টি ছোট রাজ্যে বিভক্ত হয়ে ষোড়শ মহাজনপদ সৃষ্টি করেছিল, দক্ষিণভারতের তামিলাকম রাষ্ট্রও পাণ্ডিয়ানাড়ু( নাড়ু অর্থে দেশ), চোলানাড়ু ও চেরানাড়ু ইত্যাদি তিনটি খণ্ডে বিভক্ত হয়েছিল। তবু দক্ষিণ ভারতের এই তিনটি খণ্ডে সার্বভৌমত্ব মোগলরাজত্বেও ক্ষুণ্ণ হয়নি এবং ব্রিটিশ আক্রমণ পর্যন্ত অটুট ছিল। কিন্তু উত্তর ভারতের ষোড়শ জনপদ? মহাশক্তিশালী পাণ্ডবশাসিত অখণ্ড হিন্দুরাষ্ট্র ভারতবর্ষই পরবর্তীতে ষোড়শজনপদ সৃষ্টি করেছিল।কাশী, কোশল, মগধ, কুরু, পাঞ্চাল, গান্ধার, অঙ্গ, বজ্জি, মল্ল, চেদী, বৎস, মৎস, সূরসেন, অস্মক, অবন্তী ও কম্বোজ এই ষোলটি রাজ্যের অস্তিত্ব মৌর্যসাম্রাজ্যের পূর্ব পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের উত্থানের পর পুনরায় এই ষোড়শজনপদ বিলুপ্ত হয়ে অখণ্ড ভারতবর্ষের মৌর্যসাম্রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গিয়েছিল। সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে দক্ষিণ ভারতের অবশিষ্ট তিনটি রাজ্যও মিলে গিয়ে অখণ্ড ভারতবর্ষের রূপদান করেছিল।
তারপর? গুপ্তরাজত্বের পরে পরে ভারতবর্ষ আবার অনেকগুলি ছোট রাজ্যে বিভক্ত হতে থাকল। ভাঙতে ভাঙতে আর অখণ্ডতা ধরে রাখতে পারল না। 711 খ্রীষ্টাব্দে প্রথম আক্রান্ত হল সিন্ধুদেশ ও পরে মূলস্থান। তারপর থেকে ধারাবাহিক ভাবে আরবিক আক্রমণ আছড়ে পড়তে থাকল। নিজেদের মধ্যে বিদ্বেষ, লড়াই-যুদ্ধ, লোভ, বিশ্বাসঘাতকতার মাশুল দিল হিন্দুজাতি। ভারতবর্ষের একটা করে রাজ্য দখল করতে করতে একসময় সমগ্র উত্তরভারত মুসলিম শাসনাধীনে চলে গেল। পরে ব্রিটিশ রাজত্বে সমগ্র ভারতবর্ষই পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হল।
তারই সূত্র ধরে 1947 এ দেশ স্বাধীন হলেও কিছু মুসলিম নেতা ও ছদ্ম মুসলিম নেতার চাহিদার ভিত্তিতে দেশ দ্বিখণ্ডিত হল। কিন্তু তাদের ভারতীয় ভূমির প্রতি লোভ দূর হল না। এখন কমিউনিস্ট ও তথাকথিত সেকুলার নামধারী আভ্যন্তরীণ শত্রুদের সাথে হাত মিলিয়ে মুসলিম জাতি আবার এক গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। হিন্দুজাতির উদাসীনতা, আলস্য এবং অনৈক্যের সুযোগে ভারতবর্ষে নিজেদের সংখ্যাবৃদ্ধি করে আবার ভারতবর্ষকে দখল করার অপচেষ্টা করে চলেছে। কিন্তু কেন এমন বারবার হয়ে চলেছে? শত্রু যখন ছিল না, তখন নিজেরাই ছিল নিজেদের শত্রু। তারমধ্যেই মাঝে মাঝে হিন্দুজাতি সংগঠিত হয়েছে। মহাভারতের যুগে উত্তর ও দক্ষিণভারত মিলিয়ে 220টির বেশি ছোট রাজ্যের নাম মহাভারতের ভীষ্মপর্বে বর্ণিত হয়েছে। যুদ্ধোত্তর পর্বে তাদের নিয়েই একক হিন্দুরাষ্ট্র গঠিত হয়েছে। তারপর আবার উত্তরভারতে ষোড়শ জনপদ এবং দক্ষিণভারতে পাণ্ডিয়া, চেরা ও চোলি রাজ্য সৃষ্টি হয়েছে। মৌর্যযুগে আবার সমস্ত বিভাজনকে মুছে দিয়ে অখণ্ড হিন্দুরাষ্ট্র।
কেন জাতি কখনো সবল, কখনো দুর্বল হয়ে এই অখণ্ডতা ও খণ্ডতার সৃষ্টি হয়? এর উত্তর খুঁজতে গেলে প্রথমেই যেতে হবে মহাভারতের যুগে , যখন দেশে খণ্ড রাজ্যের সংখ্যা 220 টিরও বেশি। এটি কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধপূর্ববর্তী অবস্থা। মহাভারতে বলা হল, শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাবের কারণ ছিল; অসংখ্য ক্ষুদ্র হিন্দুরাজ্যে বিভক্ত ভারতবর্ষকে এক অখণ্ড রাষ্ট্রে রূপ দেওয়া। তাই কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কুরু ও পাণ্ডব পক্ষে অসংখ্য ক্ষুদ্র রাজ্যের রাজা যুদ্ধে অংশ নিয়ে মৃত্যু বরণ করলেন এবং শ্রীকৃষ্ণের পক্ষে অখণ্ড হিন্দু সাম্রাজ্য গঠন করা সম্ভব হল।
আমরা জানি, মহাভারত একটি মহাকাব্য হলেও মহাভারত বর্ণিত কুরুক্ষেত্রের মহাযুদ্ধটি ইতিহাসের আধারে এবং তার প্রমাণ যুদ্ধে তৎকালীন ভারতবর্ষের 220টির বেশি রাজ্যের অংশগ্রহণ ; যে নামগুলি ভারতবর্ষের ভূগোল ইতিহাসে বর্ণিত। তবে কি ভারতবর্ষকে অখণ্ড হিন্দুরাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষেই শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটেছিল ?
মহাভারতে কিন্তু কোথাও শ্রীকৃষ্ণের জন্মবৃত্তান্তের উল্লেখ নেই।বৃন্দাবনলীলা, মথুরায় কংসবধ থেকে শুরু করে তাঁর বংশীধারী রূপ; সবই দ্বাদশ শতাব্দীতে কবি জয়দেবের কবি-কল্পনা। মূল মহাভারতে ব্যাসদেব কৃষ্ণের আবির্ভাবের সূচনা করেছেন পাঞ্চাল রাজকন্যা দৌপদীর স্বয়ম্বর সভায়। সেখানে তিনি জ্যেষ্ঠভ্রাতা বলরামের পাশে বসে পাণ্ডবদের অগোচরে তাদের নিরীক্ষণ করছেন অপরদিকে অর্জুন ধনুর্বাণ গ্রহণের মুহূর্তে কৃষ্ণকে মনে মনে স্মরণ করলেন।কেন? কারণ কৃষ্ণই অর্জুনের ইষ্ট। তিনিই নিয়ম, তিনিই নিয়মের স্রষ্টা। তাই তাঁর নির্দেশেই পাণ্ডবরা পাঁচ ভাই একসাথে দৌপদীকে বিবাহ করলেন। তাঁর সাহায্যেই অর্জুন খাণ্ডবপ্রস্থ দহণ করে গাণ্ডীবধনু ও অক্ষয় তূন লাভ করলেন। এরপর অখণ্ড হিন্দুসাম্রাজ্য গঠন কল্পে যুধিষ্ঠিরকে দিয়ে রাজসূয় যজ্ঞ করালেন। রাজসূয় যজ্ঞে সেই যুগের শ্রেষ্ঠতম বীর ভীষ্মের দ্বারা শ্রীকৃষ্ণ ভগবান রূপে পূজিত হলেন।
মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণ প্রধান চরিত্র, তিনিই ঈশ্বর।তাঁর নাম প্রচারের জন্যই মহাভারত রচনা। অখণ্ড সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা এবং কৃষ্ণনাম প্রতিষ্ঠা, উভয় কর্মই যেন পরস্পরের পরিপূরক। কৃষ্ণনাম প্রচারের জন্য প্রয়োজন পূর্বতন নাম রাম এর অবলুপ্তি,আবার অখণ্ড হিন্দুসাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে হলে হস্তিনাপুরকে পরাজিত করতে হবে ; যাকে রক্ষা করছে রাম উপাসক দুর্যোধন এবং দুর্যোধনের রক্ষার্থে নিয়োজিত আরেক রাম অবতার পরশুরামের তিন প্রবল শক্তিধর শিষ্য-ভীষ্ম, দ্রোণ এবং কর্ণ।
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শুরু হল। কোন প্রকার অস্ত্র না ধরেই শুধুমাত্র পরামর্শ দিয়ে একে একে চার মহাশক্তিশালী রাম উপাসককে নিহত করে অখণ্ড হিন্দুসাম্রাজ্য স্থাপনের প্রধান বাধা দূর করলেন। এটাই হল-‘ ধর্ম সংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে।” অর্থাৎ ঈশ্বরের পূর্বতন রামনামকে হঠিয়ে কৃষ্ণনাম প্রতিষ্ঠিত হল।
একই ভাবে রামের যুগে রামনামও অনেক সাধনা ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করতে হয়েছিল। রামায়ণের কাহিনীতে স্বয়ং রামচন্দ্রকেও লঙ্কাধীশ রাবণ সহ অসংখ্য রাক্ষস নিধন করতে হয়েছিল। মহাভারতে পরশুরামের শিষ্যদের পরাজিত করে বধ করতে হয়েছিল। রামায়ণে রাম হরধনু ভঙ্গ করে স্বয়ং পরশুরামের দর্পচূর্ণ করেছিলেন। রামায়ণের মাধ্যমে রামনাম প্রচার হলেও তারো পশ্চাতে মূল প্রচারক ও রামায়ণ স্রষ্টা বশিষ্ঠের আত্মত্যাগের কাহিণী অনেকেই জানেন না। ঋষি বশিষ্ঠই বাল্মীকি ছদ্মনামে রামায়ণ রচনা করেছিলেন এবং ছদ্মনাম নিতে বাধ্য হয়েছিলেন বিশ্বামিত্র মুণির বিরোধিতায়। বিশ্বামিত্র দাবী করেছিলেন, ঈশ্বরের তৎকালীন নাম ‘সবিতা’ এবং ঋকবেদের তৃতীয় মণ্ডলে 62/10 ঋকে ” তৎ সবিতুর্বরেণ্যং ভর্গো দেবস্য ধীমহী। ধীয়ো যো নঃ প্রচোদয়াৎ।” মন্ত্র টি গায়ত্রী ছন্দে লিখে প্রচার করলেন। বাস্তবে সবিতা তৎকালীন নাম ছিল না। ঋষি বশিষ্ঠ স্বীকৃতি দিলেন না। তিনি সঠিক নাম ‘রাম’ প্রচার করলেন। বিশ্বামিত্র ক্রূদ্ধ হয়ে বশিষ্ঠের একমাত্র পুত্র শক্ত্রিকে ( ঋষি পরাশরের পিতা) হত্যা করলেন এবং বশিষ্ঠের নামে অপপ্রচার করে বললেন- রাম কোন রাক্ষসের নাম, ঈশ্বরের নাম কদাপি নয়। এত কষ্ট সহ্য করেও বশিষ্ঠ ঋষি রামনাম প্রচার থেকে হতোদ্যম হলেন না। বাল্মীকি ছদ্মনামে রামায়ণ প্রণয়ণ করে রামনাম প্রচার করলেন। তিনি ঋকবেদে বিশ্বামিত্রের বিরোধিতায় রাম নাম লিখতে না পারলেও সপ্তম মণ্ডলের 104/14-15ঋকে তাঁর ক্ষোভ প্রচ্ছন্ন ভাবে( বিশ্বামিত্রের ভয়ে) প্রকাশ করলেন-
“যদি বাহমনৃতদেব আস মোঘং বা দেবাঁ অপ্যূহে অগ্নে। কিমস্মভ্যং জাতবেদো হৃণীষে দ্রোঘবাচস্তে মির্ঝথং সচন্তাম্।। ১৪।
যো মায়াতুং যাতুধানেত্যাহ যো বা রক্ষাঃ শুচিরস্মীত্যাহ।
ইন্দ্রস্তং হন্তু মহতা বধেন বিশ্বস্য জন্তোরধমস্পদীষ্ট।।১৫।
— যদি আমার দেবতা অসত্যস্বরূপ হত, অথবা যদি আমার দেবার্চনা বৃথা হত; তা হলে হে জাতবেদা অগ্নি!তুমি আমার প্রতি ক্রুদ্ধ হতে।…১৪।
যে আমাকে মিথ্যাজপে যাতুধান(রাক্ষস) বলে সম্বোধন করছে,সে যেন তার দশ জন বীর বন্ধু হতে বিযুক্ত হয়।।১৫।
প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করতে হয়, ঋষি বশিষ্ঠ অযোধ্যার ইক্ষাকু রাজবংশের কুলপুরোহিত ছিলেন। রামায়ণেও তিনি অযোধ্যার রাজা দশরথ ও রামচন্দ্রের কুলপুরোহিত।
রামনাম প্রচারিত হওয়ার পর সমৃদ্ধশালী রামরাজ্য প্রতিষ্ঠিত হল, যার তুলনা আজও সাচ্ছল্য ও সুশাসনের সাথে দেওয়া হয়ে থাকে।
সুতরাং রামনামের মতই বহু কষ্ট করে কৃষ্ণ নাম প্রচার করতে হয়েছিল। কিন্তু যেহেতু একটি নামের যুগ বিষুবমিলন তত্ত্ব অনুসারে কখনই চিরস্থায়ী হয় না, 2448 খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে কৃষ্ণনামের যুগ শেষ হয়ে যেতেই ঈশ্বরের কৃপা থেকে বঞ্চিত হল হিন্দুজাতি। এল উপনিষদের যুগ। অদ্বৈত, দ্বৈত, বহুদেবতার উপাসনা শুরু হতেই আবার অধর্ম গ্রাস করলো ধর্মকে। অখণ্ড হিন্দু সাম্রাজ্য ভেঙ্গে গড়ে উঠল ষোড়শ জনপদ ইত্যাদি। এই অধ্যায়টি প্রায় 400 বৎসরের। আবার এল ঈশ্বরের তৎকালীন নাম হরি ও বুদ্ধের যুগ। হরিনাম প্রচার করলেন চানক্য। মৌর্যসম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করলেন। মাত্র 72 বৎসর স্থায়ী হল। এরপর এল গৌতম প্রচারিত বুদ্ধ নামের যুগ। অনেকের ধারণা, বৌদ্ধ অন্য কোন ধর্মের নাম। বাস্তবে এটিও হিন্দুধর্মে বৈষ্ণব, শাক্ত, শৈব ইত্যাদি উপাসক সম্প্রদায় গুলির মতই একটি উপাসক সম্প্রদায়। হিন্দুধর্মের একটি শাখা মাত্র। পরবর্তীকালে হিন্দুপণ্ডিতদের অজ্ঞতার কারণে বুদ্ধ উপাসকদের নিতান্ত উপেক্ষা ও অশ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখা হয়েছিল।এবং এটিও হিন্দুধর্মে বিভেদের অন্যতম বড় কারণ। এই বিরোধের আগুনে শেষ আহুতি দিলেন শঙ্করাচার্য, যিনি হিন্দুধর্মে বহুদেবতা, গুরুপূজার প্রবর্তন করে অদ্বৈতবাদের অস্ত্রে বৌদ্ধপণ্ডিতদের পরাস্ত করে বৌদ্ধসম্প্রদায়কে সমাজে অপাংক্তেয় করে দিলেন। ফলে হিন্দু সমাজে হিন্দুসমাজেরই অংশ বৌদ্ধ সম্প্রদায় নিদারুণ অত্যাচারিত হতে থাকলেন। অবশেষে মুসলিম শাসন শুরু হতেই অশিক্ষিত অত্যাচারী হিন্দু পণ্ডিত ও সমাজপতিদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে বৌদ্ধরা দলে দলে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করলেন। অল্প কিছু আরবিক মুসলিম ভারতবর্ষে খুব অল্প আয়াসেই লক্ষ লক্ষ হিন্দুকে ইসলাম ধর্মে convert করতে পেরে জনশক্তির আধার তৈরি করে ফেললো।
এটাই হল হিন্দুজাতির বারবার পতনের কারণ। যখনই ঈশ্বরের তৎকালীন নাম বিস্মৃত হয়েছে, তখনই অখণ্ড হিন্দুসাম্রাজ্য বহুখণ্ডে বিভক্ত হয়েছে।একটা বিষয় পরিষ্কার, ধর্মে যত বিভেদ আসে জাতির ঐক্যেও তত ফাটল ধরে । ফল- জাতি ও ধর্ম দুর্বল হয়।
একমাত্র হিন্দুধর্মই শাস্ত্রবিরুদ্ধ বহুদেবতার উপাসনা করতে গিয়ে বৈষ্ণব, শৈব, শাক্ত, সৌর,গাণপত্য, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ, মনসা, শীতলা, এবং কয়েক হাজার গুরুসম্প্রদায়ে বিভক্ত হওয়ার সাথে সাথে হিন্দুজাতিও অসংখ্য ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল । এটাই হিন্দুধর্মের দুর্বলতার কারণ। ফলস্বরূপ, প্রাচীনতম হিন্দুজাতি নিজভূমেই অন্যধর্ম দ্বারা অধীকৃত ও অত্যাচারিত হয়েছে। এখন আবার সময় এসেছে, ঈশ্বরকে একটি নামে ডাকার। কারণ অয়নচলন তত্ত্ব অনুসারে 1998 থেকে ঈশ্বরের নাম এখন অজন। আবার ফিরে যেতে হবে প্রাচীন বৃষ্ণিসংঘ বা বৌদ্ধসংঘের মত সংঘভিত্তিক ঈশ্বর উপাসনায়। তাহলেই হিন্দুধর্মে আসবে ঐক্য। হিন্দুজাতি সংহত হবে, শক্তিশালী হবে। সমগ্র ভারতবর্ষ ব্যাপী স্থাপিত হবে অখণ্ড হিন্দুরাষ্ট্র।
জয় ভারতমাতা
জয় অজন ।।
শ্রী তপন আচার্য , শৈশবাবধি ঈশ্বরচেতনার সন্ধানে যুক্ত। হিন্দুধর্মের উপর মৌলিক গবেষণার ভিত্তিতে রচিত তাঁর কিছু গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে ও পাঠকমহলের শ্রদ্ধা, মুগ্ধতা অর্জন করেছে। 2015 সালে আমেরিকায় বিশ্বধর্মসম্মেলনে হিন্দুধর্মের বক্তা হিসাবে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন।
Comment here