তর্পণে প্রণত মসীশক্তিচর্চা

শক্তিসাধক রাধাকান্ত মল্লিক ও হাওড়া বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউটশন –

গুণী মানুষদের আমরা মনে রাখিনা,মনে রাখার কোন প্রচেষ্টা করিনা, বাঙ্গালীর এই ঔদাসীন্য ও নিশ্চেষ্টতার ধারাবাহিকতার শেষ নেই কোন।

ব্যাক্তিগতভাবে, ক্লাস ১-১২ পর্যন্ত আমাদের স্কুলে পড়াকালীন প্রায়ই পাঁচিল গলে পার্শ্ববর্তী আশ্রমে যেতাম। আশ্রমের পুকুরের ধারে বসে থাকতাম। আর আশ্রমের শেষপ্রান্তে অর্থাৎ বড়বাড়ীর ঠিক পেছনেই ছিল এই বিরাট ব্যায়ামাগার।* রাধাকান্ত ব্যায়ামাগার*। কিন্তু কে এই রাধাকান্ত? জানা ছিল না তার পূর্বে। যদিও রাধাকান্ত মল্লিক স্মৃতি ফুটবল কাপ হত ও সেই সূত্রেই প্রথমবারের মতো নামটি শোনা। পরে একটি বইতে ওনার নাম পড়ি। জেনেছিলাম শ্রী রাধাকান্ত মল্লিক ছিলেন ক্রীড়া শিক্ষক ও ব্যায়ামবিদ।

আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের সুপারিশে বিদ্যালয়ে যোগ দেন তিনি। বিদ্যালয়ের সংগঠক শিক্ষকগণ পঠনপাঠনের সঙ্গে ছাত্রদের শারীরিক কল্যাণের প্রতি সজাগ দৃষ্টি দিয়েছিলেন। ১৯২৯ সালে ক্রীড়া-শিক্ষক রাধাকান্তবাবুর যােগদানের ফলে খেলাধূলার ক্ষেত্রে জোয়ার আসে। তিনি ছাত্রদের অত্যন্ত ভালােবাসতেন, ছাত্র দরদী ছিলেন ও বর্তমান কাসুন্দিয়া রামকৃষ্ণআশ্রমের জিমনাসিয়ামের (বর্তমানে রাধাকান্ত ব্যায়ামাগার) একটি ছোট ঘরে বাস করতেন। সম্বল শুধুমাত্র একটি চৌকি,জলের কুঁজো কয়েকটি জামা কাপড়। ঠাকুর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ, স্বামীজীর আদর্শে বিশ্বসী এই বলিষ্ঠ সুপুরুষ চেহারার ও উজ্জ্বল চরিত্রের মানুষটি ছাত্র যুবকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিলেন তাঁর কর্তব্যনিষ্ঠা ও চরিত্রমাধুর্যের জন্য।

স্কুলে ফিজিক্যাল ইনস্ট্রাকটরের পদে তাঁর আবেদনপত্র থেকে জানা যায় যে তিনি তখন থাকতেন কলকাতার ৯ আপার সারকুলার রােডের বাড়ীতে; এ্যাথেনিউ ইনস্টিটিউশন থেকে মাট্রিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন; ১৯২৬ সালে ওয়াই-এম-সি-এর ফিজিক্যাল ইনস্ট্রাকটর এইচসি বেলির কাছে ট্রেনিং নিয়েছিলেন।

আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় তাঁর সুপারিশপত্রে লেখেন, “I have known Sri Radhakanta Mallick for several years. He is strongly built and athlete . I believe he will prove an excellent Physical Instructor. I have been highly impressed by his feats.”

বিদ্যালয়ে যোগদানের পূর্বে রাধাকান্তবাবু কলকাতার রামকৃষ্ণ আদর্শ ব্যায়ামাগারের প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক ছিলেন। বেলুড়মঠের সাধু-সন্ন্যাসীদের সঙ্গে তাঁর পরিচিতির ফলে বন্যা বা দুর্ভিক্ষে সেবাকার্যে তাঁর ডাক পড়তাে সর্বাগ্রে। তিনি তাঁর কর্মীদল নিয়ে চলে যেতেন গ্রামের সেবাকার্যে। মঠ মিশনের কয়েকটি কেন্দ্রে তিনি ক্রীড়াশিক্ষক হিসাবে কাজ করেছিলেন। হাওড়ার নানা স্কুলেও তিনি ব্যায়াম ও ড্রিল শিক্ষক ছিলেন।আশ্রম চত্বরে প্রতি দুর্গাপুজার মহাঅষ্টমীতে বীরাষ্টমী পালিত হত। সামনের খোলা প্রাঙ্গনে হত লাঠি, ছুরি ও তলোয়ার খেলা। সর্বশেষে আসতেন পাঠান যুবকের ন্যায় সাড়ে ৬ ফুট উচ্চতা ৫৭ ইঞ্চি ছাতির ( যা বাঙ্গালীর ক্ষেত্রে ভাবাই যায়না) রাধাকান্ত মল্লিক। মাথায় ফেট্টি কষে বেধে মাঠিতে শুয়ে পড়তেন।বুকের ওপর তক্তা পেতে চালিয়ে দেওয়া হত বোঝাই দুটো ঠেলা গাড়ি। হাততালিতে ফেটে পড়ত সেই চত্বর। নিজে উদাহরন হয়ে দেখাতেন শরীরচর্চার প্রয়োজনীয়তা।সেই প্রয়োজনীতা বোঝাতে আশ্রমের শেষ ভাগে ছিটেবেড়ার ঘরে গড়ে তোলেন ব্যায়ামাগার। ব্যায়ামাগারে আসেন গোবর গুহ। আসেন নজরুল ইসলাম। নজরুল এসে স্বকন্ঠে নিজের লেখা গান শোনান ছাত্রদের। গুজরাট থেকে শেখা লেজিম ড্রিল,ও সেকশন ড্রিল ভারতে প্রথম চালু করেন হাওড়া বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউশনে।

নূতন ক্রীড়াশিক্ষক সম্বন্ধে বিদ্যালয় পত্রিকায় লেখা হয় “বিবেকানন্দ আর্দশে নিবেদিত  প্রধানশিক্ষক আচার্য সুধাংশুশেখর স্বাস্থ্যোন্নতির জন্য বিদ্যালয়ে নিয়মিত ব্যায়ামচর্চার ব্যবস্থা করিয়াছেন। বর্তমান সময়ে যে সমস্ত নূতন নূতন ব্যায়াম পদ্ধতি বাহির হইয়াছে সেইমত শিক্ষা দিবার জন্য একজন উপযুক্ত ব্যায়াম শিক্ষক নিযুক্ত হইয়াছেন। অল্প খরচে এবং উন্নত ও বৈজ্ঞানিক প্রণালী মতে যাহাতে সকলেই ব্যায়াম চর্চায় মনােযােগী ও যত্নবান হয় তদ্বিষয়ে বিদ্যালয়ের ব্যায়াম শিক্ষক শ্রী রাধাকান্ত মল্লিক মহাশয় সচেষ্ট ও যত্নবান। সম্প্রতি তিনি কলিকাতা ওয়াই এম সি এর তত্ত্বাবধানে যে Physical Training Class আরম্ভ হইয়াছে তাহাতে শরীরশিক্ষা বিষয়ক জ্ঞানলাভে পারদর্শিতা লাভ করিবার জন্য যােগদান করিয়াছেন।”

১৯৩১ সালে ৯ এপ্রিল, বিদ্যালয়ের ক্রীড়ানুষ্ঠানে এসে সভাপতি ক্যাপ্টেন জিতেন্দ্র ব্যানার্জি ( পুর্বের বাঙ্গালীর শক্তি সাধনায় দেখুন) রাধাকান্ত মল্লিকের প্রশংসা করে লেখেন: “The Physical Instructor Babu Radhakanta Mallick to whose attention and industry the success of the sports is mainly due is an acquisition of the School. He is as devoted a teacher as to be rarely met with.”

১৯৩২ সালে দু-বছরের জন্য তিনি স্কুলে Beginners’ Physical Training Course আরম্ভ করেছিলেন।

মানুষ রাধাকান্ত কেমন ছিলেন? কেনই বা তার এত প্রভাব ছিল কিশোর ও যুবকদের মধ্যে? 

স্বামী পাবনানন্দের কথায়, “ বৎসরান্তে ফিরে-আসা বসন্তের মতই রাধাকান্ত মল্লিক আবির্ভূত হতেন স্কুলে অর্থাৎ আমাদের বিবেকানন্দ ইনস্টিটিশনে।  প্রতি বৎসর পুরস্কার বিতরণী উৎসবের কয়েকদিন আগে এবং ঐ বসন্তের মতই তার আবির্ভাব সকলের প্রাণে আনন্দ উদ্দীপনা ডেকে আনত।এর মূল ছিল তার চরিত্র মাধুর্য।  যোগদানের পনের বছর কিংবা আরাে বেশী সময় এই কাজগুলি তিনি চালিয়ে গেছেন। যখনি ছাত্রদের মধ্যে হাজির হতেন, তখনি এক প্রচণ্ড হুল্লোড় পড়ে যেত, ছেলেরা সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু ছেড়ে দৌড়ে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করবেই। রাধাকান্ত মল্লিক একজন সত্যিকার বড় মানুষ ছিলেন—বড় এই কারণে, তিনি অন্যের মধ্যে তাদের বড়কে জাগিয়ে তুলতে পারতেন। এটিই তার অন্যতম গুণ ছিল।তার শরীরটা,বুকের ছাতিটার মত হৃদয় টাও ছিল বড়।”

“বছর চৌদ্দ আগে হবে, একদিন এক সন্ধ্যেবেলায় আমি জনকয়েক শরীরচর্চায় উৎসাহী যুবকদের কতকগুলি শারীরিক কসরৎ দেখছিলাম।….

রাধাকান্ত মল্লিককে আমি সেই প্রথম দেখলাম। সেই দৃঢ়-কঠিন খেলােয়াড়ী চেহাবা, নিখুঁতভাবে সাজান সাদা ঝকঝকে দাঁতের সারি, খর্ব ঋজু নাক, অপ্রশস্ত কপাল, ছােট করে ছাটা চুল, চিরপরিচিত গোঁফ, ভারী কাঁধ এবং তার উপর সােজা খাড়া সুছাঁদ ঘাড় ও মাথা—এ সবই চোখের উপর ভেসে উঠছে। ভগবান তাঁকে প্রচুর শারীরিক শক্তি, অফুরন্ত প্রাণশক্তি এবং উচ্চ আত্মিক ঐশ্বর্যে ভূষিত করেছিলেন। তবু তিনি জীবনে আতিশয্যকে পবিহার করে চলতেন। এত আশ্চর্য সদগুণের অধিকারী তিনি—সংসারে নাম রেখে যাওয়া তার পক্ষে শক্ত ছিল না, কিন্তু তিনি নিজেকে গােপন রাখতেই চাইলেন। তাঁর ছােট ছােট ছাত্রবন্ধুবা যখন তাঁকে ঘিরে থাকত, সেইটাই ছিল তাঁর সবচেয়ে আনন্দের ক্ষণ। আর তিনি এটা জানতেন এই ছোট নবগত প্রাণ, প্রস্ফুটিত ফুলের মত জীবনগুলোকে যদি স্বাস্থ্যে, চেতনায়,শিক্ষায় উদীপ্ত করা যায় ভবিষ্যতে এরাই অনেক দুর এগিয়ে যাবে। অটুট স্বাস্থ্য, অনুরাগতপ্ত প্রাণ এবং শরীরচর্চার প্রতি আন্তরিক প্রীতি-সহায়ে শত শত তরুণ জীবনকে তিনি আকর্ষণ করে গেছেন।

হাওড়ার রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ আশ্রমের মনোরম পরিবেশের মধ্যে একদম শেষে দেখা যায় একটি বিরাট জিমনেশিয়াম এবং তারি পাশে যে ছােট মাঠটি, তাতে ছেলেরা বিকালে খেলতে আসত। এমন পরিবেশেই—তার ব্যক্তিত্ব প্রকাশের উপযােগী এহেন পারিপার্শ্বিকেই—রাধাকান্ত মল্লিক তাঁর জীবনের শেষ দশ বছর কাটিয়ে গেছেন। এখানে গুটি তিনচার প্রিয় সহকর্মীর সহযােগিতায় তিনি ছাত্রদের খেলাধূলা, স্পোর্টস ও শরীর-শিক্ষায় অনুপ্রাণিত করতেন এবং আপন অসামান্য চরিত্রশক্তির প্রভাবে তাদের অন্তরে দেশের প্রতি সেবা এবং ঈশ্বরের প্রতি নির্ভরের ভাব জাগিয়ে তুলতেন।

আমাদের বিদ্যাপীঠ ছাড়া রাধাকান্ত মল্লিক আরাে অনেকগুলি প্রতিষ্ঠানের ব্যায়ামশিক্ষক ছিলেন। কিন্তু এই বিদ্যাপীঠের প্রতি তাঁর একটা বিশেষ আকর্ষণ ছিল। এখানে থাকলে তিনি সবসময় খুবই আনন্দ বােধ করতেন এবং ছাত্রদের সঙ্গে কাটানাে—সে যেন তাঁর কাছে অবসর বিনােদনের মতই ছিল। অন্যান্য বারের মতই গত ১৯৪৪ সালে তিনি প্রাইজের ড্রিলের জন্য ছেলেদের তৈরি করে দিতে বিদ্যাপীঠে এলেন। কিন্তু এই শেষ বার। সম্ভবত, রাধাকান্তবাবু জানতেন নিয়তির কালাে ছায়া তাঁর জীবনের উপর ঘনিয়ে আসছে। এই অনুভূতিকে তিনি দূরে সরিয়ে দিতে চেয়েছেন। কর্তব্য-কর্মের প্রতি তাঁর একটা তীব্র বিতৃষ্ণা এসে গিয়েছিল এবং সব ছেড়েছুড়ে কোনাে এক আশ্রমে গিয়ে নিছক সাধুসঙ্গে জীবন কাটাবার জন্য তীব্র আকুতির সঞ্চার হয়েছিল। প্রত্যাশিতভাবেই তিনি মাসকতক কাশীবাস শুরু করলেন। অথচ তার সহকর্মীরা তাঁকে দীর্ঘদিনের জন্য ছেড়ে দিতে পারেন না।আবার তাঁকে পুরানাে কাজের মধ্যে ফিরে আসতে হােল। ।

যখন কাশী যাবেন তখন ছুটির সময়। কাশী যাবার দিনের কথা, খুব ভােরেই বিদ্যাপীঠ ছেড়ে যাবেন। তিনি জিনিসপত্র বাঁধাছাদা করছেন। হঠাৎ রাধাকান্ত যেন রাগে ফেটে পড়লেন, গভীর আক্ষেপ করে বলতে লাগলেন যে, আমাদের মধ্যে এমন কারাে এটুকু সাহস বা শক্তি নেই যে তাকে ধরে রাখতে পারে। কি আকুতি।কি ভালোবাসা সবার প্রতি ভেতর ভেতর। তার এই অদ্ভুত ভাবান্তরের সঙ্গত কি কারণ থাকতে পারে। কিন্তু কে জানতাে, কেই-বা বিশ্বাস করতে পেরেছিল যে, ঐ বিশাল চেহারার ভিতরকার প্রাণের মেয়াদ ইতিমধ্যেই শেষ। হয়েছে, আর কয়েকটি মাস মাত্র বাকি।

দু’একমাস পরে রাধাকান্ত’র ছেলেদের ক্যাম্পে নিয়ে যাবার কথা। সমস্ত ঠিকঠাক, তিনি যে কোন মুহুর্তে এসে পড়তে পারেন, এমন সময় খবর এল তাঁর শরীর খারাপ। সবাই ভাবলেন সামান্য জ্বর-টর হবে, সুতরাং খবর পাঠানো তিনি যেন আসবার চেষ্টা না করেন। তাঁকে ছাড়া যে ক্যাম্পের কথা কেউ ভাবতেই পারে না। কিন্তু তখন শিয়রে শমন এসে দাঁড়িয়েছে। মারাত্মক টাইফয়েড তাঁর সমস্ত প্রাণশক্তি দ্রুত নিঃশেষ করে দিচ্ছে,, উঠবার ক্ষমতাটুকু পর্যন্ত নেই। বলা ভালো তখন টাইফয়েডের কোন ঔষধ ছিল না।মাঝে একবার সুখবর এল তিনি সেরে উঠছেন এবং সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। অসুখ হঠাৎ relapse করে, এবং সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু তখন আর কিছু করবার ছিল না। তাঁর তরুণ ছাত্রের দল নিরুপায় ভঙ্গিতে শয্যাপাশ্বে সর্বক্ষণ কেবল অপেক্ষা করে রইল—কখন নিভে আসে দীপ।১৯৪৪ এ চলে গেলেন। এমন সজীব এবং তেজোদ্দীপ্ত, এমন কানায় কানায় আনন্দময় পুরুষ—তাঁকে যে সবাই চাইত-তাঁর ঐ পরিণামকে কে বিশ্বাস করবে? আগামী কোনাে এক উৎসবের দিনে সেই চিরাচরিত রীতিতে তার তরুণ স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে করে বিপুল জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে তাকে কি আর কোনদিন দেখব না?

পুরানাে দিনের মত তার স্কাউটদের নিয়ে ক্যাম্পফায়ারের চারদিক ঘিরে তিনি কি আর কোনদিন আমাদের সঙ্গে আরামে জমিয়ে বসবেন? আশ্চর্য-পরমাশ্চার্য, সে আর হবার নয়। এমন মানুষও থাকে প্রথম দর্শনেই যাঁকে অনেকদিনের বন্ধু মনে হয়। রাধাকান্ত মল্লিক তেমন মানুষ ছিলেন। সহানুভূতি আর সমবেদনায় ভরা ঐ মানুষটি যে সকলের বন্ধু, সকলের আপন জন।

রাধাকান্ত মল্লিক অসাধারণ চরিত্রের লােক ছিলেন। দেশের হিতের জন্য সদা উৎসুক তিনি, তার সব কিছু অকৃপণভাৱে দেশবাসীর সেবায় দিয়ে গেছেন, তথাপি তার অন্তরের অন্তস্থলে এক গভীর অসন্তোষ ছিল। তাঁর জীবনের আসল উদ্দেশ্য সার্থক হয়নি। তিনি কি তার পুরানাে কাজের বােঝা টেনেই যাবেন, না সব ছেড়ে সন্ন্যাসীর জীবনযাপন করবেন? কতবার তাঁকে
এই দুই কামনার মধ্যে অসহায়ভাবে দুলতে হয়েছে। আমার তাই একান্ত মনে হয়, এই ধারাবাহিক দ্বন্দ্বই এত শীঘ্র ঐ লােহার কাঠামােয় ঘুণ ধরিয়ে দিয়েছিল। তার সঙ্গে বহুদিনের পরিচিতরা ভালভাবেই জানেন কত একরােখা মানুষ ছিলেন তিনি। সামনে অন্যায় ঘটলে তাঁর ক্ষাত্ৰ-স্বভাব কখনাে তাঁকে উদাসীন থাকতে দিত না। অন্যায়কারীর উপর তিনি সবেগে ঝাপিয়ে পড়তেন।

সরল সংযত স্বভাবের এই মানুষটির পরিধেয় বস্তুটুকু ব্যতীত যেন কিছু সঞ্চয় ছিল না। তিনি বিবাহও করেননি। ১৩৩৯ সালের পত্রিকা ‘আমাদের কথায় লেখা হল: ‘যাতে ছেলেদের শরীরচর্চার সর্ববিষয়ে জ্ঞান জন্মায় সেইদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা একটা Beginners’ Physical Training Course ( শরীরচর্চা বিষয়ক প্রাথমিক শিক্ষা ) আরম্ভ করেছি। সেটি দুই বৎসরের শিক্ষণীয় বিষয়।

পরবর্তী বৎসরে পত্রিকায় পাঠ্য-বিষয়ের উল্লেখ করা হল :
প্রথম বর্ষ : (ক) আত্মরক্ষার কৌশল ছােটলাঠি, বক্সিং, জুজুৎসু, ছােরা, (খ) সঙ্ঘ।
T3 – Wand, Pole, Physical, Dumbell, Squad, School Boy’s Fun (91) ঔপপত্তিক— শরীরচর্চার সাধারণ জ্ঞান।
দ্বিতীয় বর্ষ : (ক) আত্মরক্ষার কৌশল-ছােটলাঠি, বড়লাঠি, বক্সিং, জুজুৎসু, ফেরীগদকা, (খ) সঙ্ঘ ব্যায়াম – Section Drill, বল্লম, লেজিম, লাঠি। (গ) ঔপপত্তিক প্রাথমিক প্রতিবিধান, আত্মিক ও গার্হস্থ্য স্বাস্থ্য, প্রাথমিক শারীরতত্ত্ব (Anatomys Physiology) )রাধাকান্তবাবু স্কুলে চালু করেছিলেন—ফুটবল, ক্রিকেট, ভলি, হকি, ড্রিল ইত্যাদি।

১৯২৯-১৯৩৮: ক্রীড়ানুষ্ঠানে সভাপতিরূপে বিদ্যালয়ে এসেছিলেন- এস কে মুখাজি, জে এন ব্যানার্জি, পি গুপ্ত, কানাইলাল গঙ্গোপাধ্যায়, জেমস বুকানন (১৯৩৪), কে ডি ঘােষ,জেলা জজ সাইমন্স।
১৯৪৫ সালে মারা যাওয়ার পর তার স্মৃতি রক্ষার্থে রাধাকান্ত মল্লিক কাপ চালু হয় যা এখনো বিদ্যালয়ে চালু রয়েছে স্বমহিমায়। তাঁর জিমনেশিয়ামও রয়েছে। ছেলেদের অভাবে তার অবস্থা প্রানহীন,জৌলুষহীন।

তাঁর সম্পর্কে এটাই বলার – A man of heroic mould, of clean and virtuous life he was a true knight spending all his life is loving kindness and service to all who were in need.

Comment here