{আলোচ্য প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছিল শ্রী রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় দ্বারা সম্পাদিত প্রখ্যাত পত্রিকা “প্রবাসী” – বৈশাখ হতে আশ্বিন – ১৩৩৭ সংখ্যায়। প্রায় শতবর্ষ পরে তার পুনঃপ্রকাশ হল কাঞ্জিকের পাতায়। শুধু এইটুকু দৃষ্টান্তসমেত প্রমাণ করার জন্য যে গত প্রায় ১০০ বছরে বাঙ্গালী হিন্দুর জীবনে রয়ে গেছে একই প্রকার – মলিন, বিধ্বস্ত, সাড়হীন প্রায় ও ভেদ্য।}
ঢাকায় খুন লুট গৃহদাহ
জনৈক ঢাকানিবাসীর কয়েকটি পত্রাংশ
[ঢাকাতে যে শোকাবহ লজ্জাকর পৈশাচিক কান্ড অনেকদিন ধরিয়া ঘটিয়াছে, তাহার অনেক বিস্তারিত বৃত্তান্ত দৈনিক কোন কোন কাগজে বাহির হইয়াছে। তৎসত্ত্বেও আমরা যে কয়েকখানি চিঠির কোন কোন অংশ ছাপিতেছি, তাহার কারণ ইহাতে নুতন এবং অজ্ঞাত কোন কোন কথা আছে, এবং যাহাতে নৈরাশ্যের পরিবর্ত্তে কিছু আশারও সঞ্চার হয় এমন বৃত্তান্তও কিছু আছে। বলা বাহুল্য, পত্রাংশগুলির প্রত্যেকটি কথা গণিতশাস্ত্রের সত্যের মত নির্ভুল না হইতে পারে; কিন্তু লেখক যথাসাধ্য প্রকৃত সংবাদ নিজে দেখিয়া শুনিয়া বা সন্ধান লইয়া লিখিয়াছেন। ব্যাপারটার উৎপত্তি সম্বন্ধে লেখক কিছু বলেন নাই।
ঢাকার এই ব্যাপারটিকে আমরা ঠিক হিন্দু-মুসলমানের বিবাদ মনে করি না। ঢাকাতেই কোন কোন মুসলমান আছেন যাঁহারা এরূপ ব্যবহারের বিরোধী, এবং স্বরাজের জন্য সম্মিলিত চেষ্টার পক্ষপাতী, আমরা ইহা বিশ্বস্তসূত্রে শুনিয়াছি। তাঁহারা ঢাকার পৈশাচিক ব্যাপারে কেন বাধা দেন নাই বা দিতে পারেন নাই, অবগত নহি। – প্রবাসীর সম্পাদক]
(১)
২৮-০৫-১৯৩০
ঢাকার অবস্থা বিষম। মুসলমানেরা লোককে খুন করছে, ঘর দোকান লুট ক’রে তাতে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। ঢাকা হলের সম্মুখের একটি পাড়া বিধ্বস্ত করেছে। দুটি মেয়ে এক বাড়িতে ছিল, তাদের পিতা বিদেশে, বড় ভাই তার দুদিন আগেই অর্ডিন্যান্সের কবলে জেলখানায় গেছে। সেই বাড়ী মুসলমানেরা আক্রমণ করে। অপরাধ – যে, তাদের ভাই ভবেশ নন্দী ছেলেদের বলচর্চ্চার আখড়া করেছিল, মেয়েদেরও আত্মরক্ষায় শিক্ষিত করত। মেয়ে দুটি অবিবাহিতা, অল্পবয়স্কা। তারা দীর্ঘকাল দু-তিন শ’ মুসলমানের আক্রমণ প্রতিরোধ করে নিজেদের ঘরবাড়ী ও ইজ্জত রক্ষা ক’রেছে। ঢাকা ইউনিভার্সিটির তিনজন লেকচারার ভবানীচরণ গুহ, রুক্মিণীকান্ত পুরকায়স্থ ও হরিপ্রসন্ন মুখুজ্জে মুসলমানদের কাপুরুষতার প্রতিবাদ করায় ও অবশেষে বাধা দিতে বাড়ীর বাহির হওয়ায় আততায়ীরা মেয়ে দুটিকে ছেড়ে তাঁদের দিকে ধাবিত হয়। তাঁরা বাড়ীতে ঢুকে দ্বার বন্ধ করেন। মুসলমানেরা বাড়ীতে ঢুকতে না পেরে বাড়ীর চতুর্দ্দিকে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। মুসলমান জনতার মধ্যে ৮/১০ বছরের ছেলে থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত ছিল : কিন্তু সারা পাড়ার মধ্যে তিনটি হিন্দু ছাড়া কেউ মেয়ে দুটিকে রক্ষা করবার চেষ্টা করেননি। এঁদের বাড়ীতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে তারা অন্যান্য বাড়ীতে আগুন ধরাতে লাগল। সেই অবসরে এঁরা জ্বলন্ত বাড়ীর দোতলা থেকে লাফ দিয়ে প’ড়ে আহত হ’য়ে মেয়ে দুটিকে নিয়ে ঢাকা হলে পালিয়ে আসেন।
এই আক্রমণের আড়াই ঘণ্টা পরে পুলিশ আসে। তখন সাহস পেয়ে হিন্দুরা তাদের আক্রান্ত পাড়া ছেড়ে প্রায় ৫০০ শত নরনারী আবালবৃদ্ধবনিতা এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকা হলে আশ্রয় নিয়েছেন। এখন ছুটি। হলে মাত্র জন ৪০ পরীক্ষার্থী আছে। তারা এই অতিথিসৎকারের গুরুভার নিয়েছে। মুসলমানেরা ঢাকা হলের নিকটের সব দোকান পাহারা দিচ্ছে আর দোকানদারদের শাসাচ্ছে ঢাকা-হলে এক পয়সার জিনিস বেচেছ কি তোমাদের খুন করব। চাল ডাল কয়লা নেই; চোখের সামনে কয়লার দোকান পুড়িয়ে দিলে, চালের দোকান লুট করলে। ছেলেরা নিজেরা উপবাসী থেকে অতিথিদের সেবা করছে, আহতদের শুশ্রূষা করছে; সমস্ত রাত্রি জেগে ঘাঁটিতে ঘাঁটিতে হল পাহারা দিচ্ছে। মুসলমানদের ভয়ানক আক্রোশ রয়েছে ঢাকা-হলের উপরে, কেন সে এত লোককে আশ্রয় দিলে। তারা শাসাচ্ছে – দেখে নেব ঢাকা হলের জোর। ছেলেরা নিজেরা মাথায় ক’রে জীবন বিপন্ন ক’রে চাল কয়লা স্মাগল ক’রে আনছে। এত টাকা যে কোথা থেকে আসবে সে সম্বন্ধে তাদের একবার প্রশ্নই নেই; নিজেদের তহবিল শূন্য ক’রে ভয়াৰ্ত্ত নিরাশ্রয়দের সেবা করছে।
মন্দের মধ্যেও মঙ্গলের রূপ দেখে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে, প্রাণ আশায় আনন্দে ভ’রে উঠছে, ভগবান যে মঙ্গলময় তা উপলব্ধি করছি। দেশকে অন্যায়ের সঙ্গে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ক’রে তুলছেন তিনি।
একজন লেকচারারের স্ত্রীর আচরণে মুগ্ধ হয়েছি। যখন মুসলমানেরা ভবেশ নন্দীর বাড়ী আক্রমণ করে তখন দুটি মেয়ে বিউগল বাজিয়ে বিপদ-সঙ্কেত করে। হলের ছেলেরা নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্যত। বয়োবৃদ্ধেরা তাদের আটকাচ্ছেন। লেকচারার মহাশয়ের স্ত্রী তাঁর ছেলেকে বললেন, “যা যা তুই যা….” আর বীর মাতার আদেশ পাওয়া মাত্র পুত্র একা ছুটলো অন্যায়ের প্রতিরোধ করতে। অনেক কষ্টে তাকে ফেরানো হল। লেকচারার পত্নীকে তিরস্কার করলেন, “ছেলেকে মৃত্যুর মুখে পাঠিয়ে দিচ্ছিলে মা হয়ে!!?” তাতে তিনি বললেন, “যারা বিপন্ন তারাও তো মা, তাদেরও তো ছেলে আছে।”
ঢাকা-হলের লোকরা ৫০০ লোকের আহার, চিকিৎসা, স্বাস্থ্যরক্ষার বন্দোবস্ত, রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি নিয়ে দিবারাত্রি ব্যস্ত আছেন। সবাই ঢাকা ছেড়ে পালাচ্ছে। কিন্তু যতক্ষণ একজন লোকও ঢাকা-হলে আশ্রয় নিয়ে থাকবে, ততক্ষণ হলের লোকদের নড়বার জো নাই। তাঁরা অবরুদ্ধ দুর্গে আছেন।
(২)
০১-০৬-১৯৩০
কাল রাত্রে ঢাকা-হলের আশ্রিতদের সেন্সস নেওয়া হয়েছিল; তাতে এখনও সেখানে ৬৯ পুরুষ, ৭৪ স্ত্রীলোক ও ১০৭ বালক বালিকা শিশু আছে। যাঁরা সর্বস্বান্ত হয়ে এসেছেন তাঁরাও অত্যাচারীদের নাম প্রকাশ করতে সাহস করছেন না। হিন্দু সভা ও কংগ্রেস রিপোর্ট নিতে এসেছিলেন; এঁরা কারও নাম করতে সাহস করলেন না অথচ তাঁরা বলছেন যে, অনেককে তাঁরা চেনেন, তারা পাড়ারই লোক, এমন কি [কোনও মুসলমান বাড়ীর একজনের] মোটর গাড়ীও তাঁরা আক্রমণের সময় গতায়াত করতে দেখেছেন। রোজ সন্ধ্যার পরে [কোনও মুসলমান] বাড়ীর মোটর ঢাকা-হলের চারিদিকে ঘোরাফেরা করে।
লুটের পর যখন পুলিশ এসেছে তখনও তারা মুসলমান জনতাকে কেবল মাত্র কথায় হট্ যাও হট্ ব’লে সরিয়ে দিয়েছে, আর হিন্দুর বাড়ীতে খানাতল্লাসী করেছে বাড়ীতে কোন অস্ত্রশস্ত্র আছে কিনা। যে-সব লোক আত্মরক্ষার্থে বন্দুক আওয়াজ করেছে তাদের বন্দুক বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে। স্বয়ং এক পুলিশ অফিসার নাকি এক লুন্ঠিত বাড়ী দেখে যাবার সময় একখানি মাউন্টেড বাঘের চামড়া নিজের বাড়ীতে নিয়ে গেছেন। কাপড়ের দোকানের লুন্ঠনাবশেষ পুলিশের লোকে মোটর বোঝাই ক’রে বাড়ী নিয়ে গেছে। কাল হিন্দুসভার লোকদের সঙ্গে শহর দেখতে বেরিয়েছিলাম। দেখলাম কয়েকজন মুসলমান একখানা ঘোড়ার গাড়ির ছাদে চালের বস্তা ও ভিতরে তেল ঘিয়ের টিন বোঝাই ক’রে নিয়ে চলেছে। চকে জেলের সামনে কাল তিন টাকা মণ চাল ও এক টাকা সের ঘি বিক্রী হয়েছে। পুলিশ দেখেছে কি না, অথবা বিক্রেতা পুলিশকে কি বলে বুঝিয়েছে জানি না।
হিন্দুরা নালিশ করলেই ইংরেজরা ঠাট্টা করে – Go to your Gandhi and get Swaraj.. এখনো পথে হিন্দু চলে না, মুসলমান চলছে অল্প অল্প; দোকান বাজার এখনো প্রায় বন্ধ; হিন্দুরা দু’টি বাজার বসিয়েছে সেখানে কেবল হিন্দুর কারবার, কিন্তু ভিন্ন পাড়ার লোক সাহস ক’রে যেতে পারে না।
শিক্ষায়তন – বিশেষের সহিত সম্পৃক্ত এক মৌলবী সাহেব বলছিলেন যে, মুসলমানেরা দুঃখ করছিল যে, একটা আয়রন-চেস্ট লুট করে আনছিল, পথে পুলিশ ছিনিয়ে নিয়ে সেটা ভেঙে টাকাকড়ি নিজেরা সব নিয়ে নিয়েছে, তাদের কিছু দেয়নি। কাল দেখলাম বহু পোদ্দারের দোকান লুট করেছে ও পুড়িয়ে দিয়েছে – সোনারূপার দ্রব্য ও গিনি প্রচুর নিয়ে গেছে। হিন্দুরাও স্থানে স্থানে মুসলমানের দোকান লুট ও দাহ করেছে, কিন্তু একটা দর্জ্জির দোকান, একটা কয়লা কাঠের দোকান এমনি, তাতে বিশেষ বিশেষ ব্যক্তির খুবই ক্ষতি হয়েছে, কিন্তু সমাজ হিসাবে মুসলমানদের ক্ষতি হয়নি। তারা যে বীভৎস কান্ড করেছে তা যে কোনো মানুষ করতে পারে, এ না দেখলে বিশ্বাস ও ধারণা করা যায় না। অনেক মুসলমানের রাগ ছিল পিকেটিংয়ের দরুণ মদ গাঁজা কিনতে বাধা দেওয়াতে; দুর্বৃত্ত পক্ষ সেই রাগ এখন কাজে লাগিয়েছে।
(৩)
০৩-০৬-১৯৩০
[কোনো বিখ্যাত লোকের] ভাগিনেয় তাঁর সদ্যপ্রসূত পত্নীকে নিয়ে ঢাকা-হলে পালিয়ে এসেছিলেন একটি ইউরোপীয় নার্সের সাহায্যে জ্বলন্ত রাস্তার মাঝখান দিয়ে। মনে হয়েছিলো এই বুঝি ট্র্যাজেডির ক্লাইম্যাক্স। কিন্তু ঢাকা-হলের ইতিহাসে বিধাতা আরো অচিন্তনীয় ঘটনা লিখেছিলেন – কাল প্রভাতে একটি মহিলা কন্যা প্রসব করেছেন এবং একটি মহিলা প্রাণত্যাগ করেছেন। যিনি মারা গেছেন, তাঁরা ধনী। তাঁদের সুশীল-নিবাস নামক সুরম্য সুন্দর বাড়ীখানি দুর্বৃত্তেরা চূর্ণ দগ্ধ লুট করে গেছে, মোটর গাড়ী পুড়িয়ে দিয়েছে; এই ‘শক’ বধূটির হৃদয়ে লেগেছিলো। কাল রাত্রে ঘুমিয়েছিলেন, সকালে উঠতে বিলম্ব দেখে ডাকাডাকির পর দেখা যায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এতগুলি আহত নরনারী ও শিশু এখানে আশ্রয় নিয়ে আছে, কিন্তু একজন ডাক্তারও কোনো দিন খোঁজ নিলেন না কিছু দরকার আছে কিনা। ডাক্তার, ধাত্রীর কাজ সব আনাড়িরাই করছেন।
ঢাকায় একটি রিলিফ-কমিটি গঠিত হয়েছে; তাতে নাকি নবাব বাহাদুর হাজার টাকা দিয়েছেন ও এখানকার প্রসিদ্ধ ধনী রমানাথ দাস হাজার দেবেন প্রতিশ্রুত হয়েছেন। সাহায্য ভিক্ষা করতে হবে সাহাবুদ্দীন সাহেবের কাছে, নয় তো ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে। কোন আত্মসম্মানসম্পন্ন হিন্দু তাঁদের কাছে হাত পাততে যাবে? মুসলমানের যা ক্ষতি হয়েছে তা ঐ দুই হাজারেই পূরণ হবে, কিন্তু হিন্দুদের যে অনেক লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ করবে কে? এতগুলি লোক নিরাশ্রয় আহত ভয়াৰ্ত্ত হয়ে ঢাকা-হলে আশ্রয় নিয়েছে, এখনও গভর্নমেন্টের তরফ থেকে কোন কর্ম্মচারী দয়া করে কিছুই জিজ্ঞাসা করতে যান নি। পরশু এক গোয়েন্দা ঢাকা-হলে গিয়েছিল বটে।
বাজার দোকান এখনও বন্ধ। পথ জনবিরল। ঢাকা-হলের ছেলেরাও ক্লান্ত হ’য়ে একে একে বাড়ী যাচ্ছে। এখনও দশ বারো জন আছে।
এপর্য্যন্ত কংগ্রেস ও হিন্দুসভা ছাড়া ঢাকা-হলে কোন ধনী লোক সাহায্য দিতে অগ্রসর হন নি। কেবল একজন ঢাকা-হলের প্রাক্তন ছাত্র স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে কুড়ি টাকা হলের এক লেকচারারের পকেটে গুঁজে দিয়ে গেছেন।
(৪)
০৫-০৬-১৯৩০
৩রা ও ৪থা তারিখের অমৃত বাজার পত্রিকায় ঢাকার যা বিবরণ বেরিয়েছে, তা সত্য। এখন ঢাকার নিকটবর্ত্তী গ্রামে দাঙ্গা লুট আরম্ভ হয়েছে। ঢাকাতেও ছাড়া বাড়ীর তালা ভেঙে জিনিসপত্র চুরি হচ্ছে। বাসিন্দারা বাসায় ফিরে যেতে চাইলেও মুসলমানরা বাধা দিচ্ছে ও ভয় দেখাচ্ছে, মহরমের আগে ফিরে গেলে ভাল হবে না। কোনো হিন্দু মুসলমানের কাছ থেকে কিছু কেনে না। তাই তারা হিন্দু দোকানীদের ভয় দেখিয়ে তাঁদের দিয়ে চোরাই মাল বেচছে। ঢাকা-হলের সামনের এক দোকানী এই রকমে বরাবর দোকান খোলা রেখেছে। এই খবর পেয়ে তার দোকান থেকে জিনিস কেনা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
মুসলমানেরা খুব ব্ল্যাকমেল করছে। যে-সব পরিবার পালিয়েছে তাদের অনেককে ঘুষ দিয়ে যেতে হয়েছে। যারা পালাতে পারে নি তাদের অনেকে ক্রমাগত ঘুষ দিচ্ছে। অনেক ইউনিভার্সিটি লেকচারারদের কাছ থেকে ২০০ টাকা করে ঘুষ চেয়েছে। তাঁরা দেন নি; কাজেই তাঁদের বাসা ছাড়তে হয়েছে।
ঢাকা থেকে ব্যবস্থাপক সভায় যে তিনজন প্রতিনিধি গেছেন, তাঁদের কেউ বা অন্য কোন সভ্য কি গভর্ণমেন্টকে প্রশ্ন করতে পারেন না – ১) কতজন হিন্দু ও মুসলমান হতাহত হয়েছে? ২) হিন্দু ও মুসলমানের সম্পত্তি ক্ষতির পরিমাণ কি? ৩) কতজন হিন্দু ও মুসলমান গেরেপ্তার হয়েছে? ৪) ভবেশ নন্দীকে অর্ডিন্যান্স অনুসারে গেরেপ্তার করার পর কয়েক শত মুসলমান তাদেরই বাড়ী আক্রমণ করলে কেন? ৫) যারা আত্মরক্ষার জন্য বন্দুক ছুড়েছে তাদের বন্দুক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে কেন? ৬) তেসরা জুন তারিখে কেবল মাত্র দুজন নিম্নশ্রেণীর মুসলমানের নির্দ্দেশ অনুসারে নবাবপুর, টিকাটুলি, উয়ারী, ঠাঠারী বাজার গুর্খা দিয়ে ঘিরে বহু হিন্দুকে গ্রেফতার করা হয়েছে কি না? ৭) বেলা ৯টা – ১০টার সময় যখন কয়েক শত মুসলমান কায়েতটুলী ধ্বংস করে তখন ক’জন মুসলমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে? ৮) রাত্রি ১০টার সময় বাবুপুর থানার অদূরে যেকোন মুসলমানেরা আল্লা-হো-আকবর চিৎকার করে ইন্দুপ্রভা ক্যাবিনেট ওয়ার্কস পুড়িয়ে ফেলে, তখন পুলিশ সেখানে গিয়েছিল কি না এবং ক’জন মুসলমানকে গেরেপ্তার করেছে? ৯) লালবাজার পুলিশ থানার নিকটে নবাবগঞ্জ প্রভৃতি স্থান যখন লুন্ঠিত ও দগ্ধ হয়, তখন পুলিশ গিয়েছিল কি না ও ক’জন মুসলমানকে গেরেপ্তার করেছে? ১০) মুসলমানদের জামিনে খালাস দেওয়া হচ্ছে, হিন্দুদের বেশী হচ্ছে না, একথা ঠিক কি না? ১১) দিনে রাতে লুট করার কোনো বাধা পুলিশ কোথাও দিয়েছে কি না?
(৫)
০৬-০৬-১৯৩০
ঢাকা উকিল-সভার সভাপতি শ্রীযুক্ত মহেন্দ্রকুমার ঘোষ ও অপর কয়েকজন উকিল ঢাকা-হলে গিয়েছিলেন দেখতে শুনতে। তাঁর মুখে শোনা গেছে, তাঁর যে কয়টি রেজ্যুলুশন অমৃতবাজার পত্রিকায় বাহির হয়েছে, তার তৃতীয়টিতে পুলিশ সাহেবের নামে একটি অভিযোগ পরিষ্কার ভাষায় ব্যক্ত করা হ’য়েছিল। পত্রিকায় কেবল serious allegation বলা হ’য়েছে। কিন্তু অভিযোগটি সুস্পষ্ট ভাষায় বড়লাটের প্রাইভেট সেক্রেটারী ও বঙ্গের লাটের চীফ সেক্রেটারীর নিকট পাঠান হ’য়েছে।
(৬)
০৬-০৬-১৯৩০
কাল বেঙ্গল গভর্নমেন্টের কমিশনারকে তদন্ত করবার জন্য টেলিগ্রাফ ক’রেছেন। আজ বেলা ১১টার সময় ম্যাজিস্ট্রেট মিঃ হল্যান্ড ও তাঁর স্ত্রী ঢাকা-হলে গিয়েছিলেন। ম্যাজিস্ট্রেট স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে হয়তো জানাতে চেয়েছিলেন যে, এটা অফিসিয়াল ভিজিট নয়, কেবল সামাজিকভাবে গিয়েছিলেন। সুশীল-নিবাসের মালিক পেনশনপ্রাপ্ত পেশকার রাধিকামোহন আঢ্যকে কায়েতটুলী ধ্বংসের বিস্ময়ে জেরা করলেন – “কখন আক্রমণ করেছিল – রাত্রে?” বেলা ৯টার সময় চীৎকারে গগন বিদীর্ণ ক’রে আক্রমণ করলে এবং সেই চীৎকার ঢাকা-হল থেকে শোনা যাচ্ছিল, অথচ ম্যাজিস্ট্রেট কিছুই জানেন না!! প্রশ্ন হ’ল, “কত লোক আক্রমণ করেছিল?” উত্তর: “তিন শ’ হবে।” প্রশ্ন: – ‘পুলিশ ছিল?” উত্তর: -‘দেখিনি; তবে শুনেছি […..] অদূরে দাঁড়িয়েছিলেন।” ম্যাজিস্ট্রেট – ” [………]?” তখন উত্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন লেকচারার বললেন – “হাঁ, তিনি (পুলিশের একজন অফিসার) ছিলেন, আমি বহু লোকের কাছে শুনেছি।”
ঢাকায় একথা অনেকে শুনেছেন যে, কোন সরকারী কর্ম্মচারী ঐ পুলিশ অফিসারকে জিজ্ঞাসা করেন, “আপনি ফায়ার করলেন না কেন?” উত্তরে তিনি বলেন, “কি ক’রে করি, স্বয়ং […..] উপস্থিত ছিলেন, তিনি যখন ফায়ার করছেন না।” ঐ পুলিশ অফিসার নাকি, কার প্ররোচনায় এ সব হচ্ছে, সে বিষয়েও ইঙ্গিত করেন।
পূর্ব্বোক্ত লেকচারারটি ম্যাজিস্ট্রেটকে আরো বলেন, “আমি ৫।৬ জন কনস্টেবলের মুখে নিজে শুনেছি যে, তারা উপস্থিত ছিল এবং তারা প্রতিরোধও করতে পারত, কিন্তু তারা কোনো হুকুম পায় নি।” এই কথা শুনে ম্যাজিস্টেট বললেন, “৪।৫ জন কনস্টেবল ৩০০।৪০০ লোকের বিরুদ্ধে কি করতে পারতো? সব লোকে বলছে পুলিশ কোনো সাহায্য করে নি – এ কি ঠিক?” রাধিকাবাবু বললেন, ‘যখন ডি-আই-জি আমার বাড়ীতে এলেন, তখনও বহু মুসলমান আমার বাড়ীর মধ্যে ছিল; তিনি তাদের শান্তভাবে বললেন, ‘যাও, যাও, চলা যাও।’ তখন তারা চলে গেল, কিন্তু কাউকে গেরেপ্তার করা হ’লো না।”
এই কথার পর ম্যাজিস্ট্রেট আর রইলেন না। নন্দী-পরিবারের সঙ্গে মোকাবেলা করাবার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তিনি আর বিলম্ব করতে সম্মত হলেন না। দাঙ্গার ১২ দিন পরে এই হলো তদন্ত। মেমে সাহেব চুপিচুপি সাহেবকে বলছিলেন যে, লোকে বলে ২০০ লোক আছে, কিন্তু ১৫।২০ জনের বেশী নেই। তা শুনতে পেয়ে পূর্ব্বোক্ত লেকচারারটি বললেন – “এখন পুরুষেরা কতক বাজারে গেছে, কতক আফিসে গেছে, আর মেয়েরা এখন দিনের বেলা নিজের নিজের বাড়ী দেখতে যায় ও কেউ কেউ বাড়ীতেই খাওয়া-দাওয়া করে; সন্ধ্যার সময় রাত্রের খাওয়াও সেরে বা রাত্রের খাওয়া সঙ্গে নিয়ে সকলে হলে ফিরে আসে।”
(৭)
০৭-০৬-১৯৩০
কাল বিকালবেলা একজন দারোগা তদন্ত করতে ও জবানবন্দী নিতে ঢাকা-হলে গিয়েছিলেন। ক্ষতিগ্রস্ত বিপন্ন লোকেরা বললেন যে, তারা পুলিশের […..] কে উপস্থিত দেখেছেন, স্বয়ং পুলিশের […….] এসেও কোনো লুণ্ঠনকারীকে গেরেপ্তার করেন নি, কেবল হটিয়ে দিয়েছেন; লুণ্ঠনকারীরা [একজন প্রভাবশালী মুসলমান] কা হুকুম, কা জয়, ব’লে বাড়ী লুট ক’রেছিল। দারোগা এসব কিন্তু লিখে নেন নি। ১২ দিন পরে এই তদন্ত। একজন পেনশনপ্রাপ্ত ভদ্রলোক এক থানায় গিয়ে, অন্য থানায় ফোন করে, তার পর বড় পুলিশ আফিসে ফোন করে, পুলিশ সাহেবের মোটর যাচ্ছে দেখে সেটা থামিয়ে প্রার্থনা জানবার জন্যে হাত তুলে, কিছুতেই কোনো সাহায্য পান নি। তাঁর বাড়ী তৈরীর সময় যে মিস্ত্রী দরজা রং ক’রেছিল, সে-ই বাড়ীতে ঢুকে ছোরা দেখিয়ে টাকা চায়; তাঁর বাড়ীর কাছের মসজিদের মোল্লাও তাঁকে শাসিয়েছিল।
এর অল্পক্ষণ পরে দুজন কাপড় পরা কনস্টেবল দোকানে জিনিস কিনতে যায়; মুসলমান গুন্ডারা তাদের ধরে ঘরে বন্ধ ক’রে ছোরা লাঠি দেখিয়ে টাকা আদায় করবার চেষ্টা করে। একজন কনস্টেবল পালিয়ে বাবুপুরা থানায় খবর দেয় এবং তখন অল্পক্ষণ পরেই একজন পুলিশ অফিসার পুলিশ নিয়ে এসে কনস্টেবলকে উদ্ধার করেন ও ১৫। ১৬ জন মুসলমানকে গেরেপ্তার করেন। বাকী লোক মসজিদে গিয়ে লুকোয়। একথা তাঁকে বলা সত্ত্বেও তিনি মসজিদের লোকদের কিছু বলেন নি।
পুলিশ এখনো অনেক মুসলমানের বাড়ী তল্লাশ করলে অনেক চোরাই মাল ধরতে পারে। মুসলমানের ভয়ে মৃতদেহের সৎকার করা দায় হয়ে উঠেছে।ওরা শ্মশানে জটলা করে। দাঙ্গার সময় শ্মশান-যাত্রী দুজনকে খুন করেছিল।
এই-সব কুৎসিৎ হিংস্র ব্যাপারের মধ্যে ভালোমন্দ মেশানো একটি ঘটনা জানানো দরকার। একজন ব্রাহ্মণ লেকচারার যখন দোতলা থেকে লাফিয়ে পাশের বাড়ীতে পড়েন তখন একটি মুসলমান ছাত্র তাড়াতাড়ি তাঁকে লুঙ্গি পড়িয়ে পৈতা ছাড়িয়ে মুসলমান ব’লে তার প্রাণরক্ষা করে। ছাত্রটির উদ্দেশ্য ভালই ছিল, কিন্তু প্রাণের জন্যও নিজের ধম্মমত গোপন করার হীনতার লজ্জা ভুলবার নয়।
(৮)
০৮-০৫-১৯৩০
ম্যাজিস্ট্রেট ঢাকা-হলে এসে আর একটা প্রশ্ন ক’রেছিলেন, “এত লোকে খাওয়ার কি ব্যবস্থা হয়েছে?”
উত্তর – ‘প্রথমে ৪ বেলা আমরা এঁদের খাইয়েছি, পরে যে যার নিজের নিজের ব্যবস্থা করেছেন। কেবল তিনটি পরিবার একেবারে নিঃস্ব হয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছেন; তাঁদের খাওয়ার ব্যবস্থা আমাদেরই করতে হয়েছে।’
ম্যাজিস্ট্রেট আর কিছু জিজ্ঞাসা করলেন না।
কয়েকটি পরিবার একেবারে একবস্ত্রে এসেছিলেন। কেউ কেউ পরে দ্রব্যাদি উদ্ধার করেছেন; কারো কিছুই নেই। এক পেনশনভোগী বৃদ্ধ ছাত্রদের বিছানায় শয়ন করেন ও সপরিবারে ছাত্রদের আতিথ্যে ঢাকা-হলে বাস করছেন।
Hindu Citizens’ Relief Committee হ’য়েছে। তাঁরা নিঃস্ব পরিবারদের চাল ও টাকা সাহায্য ক’রে গেছেন। এবং চাল কিনে অন্যদেরও বাড়ীতে পৌঁছে দেবেন বলেছেন, যাঁদের চাল ডাল পাওয়া দুষ্কর।
বাজারে প্রত্যেক দোকানে ২। ৪ জন মুসলমান পাহারা থাকে; তারা হুকুম করে এই বাবুকে পাঁচ, ঐ বাবুকে দশ সের দেবে, বেশী দিলে দোকান লুট করব। ক্রমশঃ বহু হিন্দু বাজার বসছে। ম্যাজিস্ট্রেট সেই বাজারের দোকানীদের পুরাতন বাজারে যাবার জন্য নিজে গিয়ে অনুরোধ করছেন; কিন্তু দোকানীরা বলছে আমাদের যেতে সাহস হয় না।
পরশু দিনের বেলাও দুজন মুসলমান ঢাকা-হলে আশ্রিত এক ভদ্রলোককে পথে অতর্কিতে ছোরা নিয়ে তাড়া করেছিল। তিনি পায়ের জুতো খুলে ফিরে দাঁড়ানোতে আততায়ীরা থমকে যায় এবং সেই সময় আর একজন হিন্দু পথিক আসাতে তারা পালিয়ে যায়।
৯)
০৮-০৬-১৯৩০ রাত্রি
ভবেশ নন্দীকে গেরেপ্তার করার পর তার পিত ছাড়া আর সকলেই বাড়ীতে ছিলেন, শুধু মেয়ে দুটি নয়। ভবেশ নন্দীর জন্য ১৯২৬ সালের জন্মাষ্টমীর সময় ও গত ২৬শে জানুয়ারী ইন্ডিপেন্ডন্স ডে’র পরের দুবারের দাঙ্গায় মুসলমানেরা কায়েতটুলী আক্রমণ করতে চেষ্টা করেও সফলকাম হয় নি। এবার ভবেশ বাড়ীতে না থাকাতে মুসলমানেরা দলবদ্ধ হ’য়ে এসে প্রথমেই তারই বাড়ী আক্রমণ করে। ১৯২৬ সালের দাঙ্গার পর বৃদ্ধ কর্ত্তা নন্দী মহাশয়ই দোতলায় ওঠবার সিঁড়ির মুখে একটা লোহার গেট লাগিয়ে দিয়েছিলেন। গেট বাহিরের দিকে খোলা। যখন মুসলমানেরা বাড়ী আক্রমণ করল, তখন বাড়ীর লোকেরা সেই লোহার গেট বন্ধ ক’রে দিয়ে দোতলায় চ’লে যান। কিন্তু মুসলমানেরা উপরে ইঁট ছুঁড়তে থাকে ও বাড়িতে প্রবেশ করে।
এই সময় ভবেশের দুই বোন ও ভ্রাতৃজায়া উপর থেকে ইঁট ছুঁড়ে আক্রমণে বাধা দিতে থাকে; ভবেশের মা শিশুগুলিকে আগলে ঘরের মধ্যে ছিলেন। ছেলেরা ইঁট ভেঙে মেয়েদের এনে এনে দিচ্ছিল। অল্পক্ষণ পরে মুসলমানেরা লোহার গেট ভাঙতে আরম্ভ করে। তখন ছেলেরা একটা বড় লোহার শিকল দিয়ে গেট বেঁধে একটা লোহার খুঁটিতে শিকল পেঁচিয়ে টেনে ধ’রে বসে থাকে। মেয়ে দুটি ও মাঝে মাঝে বধূটি ইঁট ছুঁড়ে আক্রমণে বাধা দিতে থাকে। অনিন্দ্যবালা সামনে ছিল, সে আহত হয়। আক্রমণকারীদের সংখ্যা ঠিক কেউ বলতে পারে না, পড়বার কথাও নয়; তবে ৫০০ লোকের কথাই বেশী লোকে বলে। নন্দীদের বাড়ী একটা চৌমাথার কাছে; সেখানে এত লোক জড় হ’য়েছিল যে চারিদিকের গলি ভ’রে গিয়েছিল – তাদের মধ্যে কে যে দর্শক, কে যে আক্রমণকারী, তা পৃথক করা তখন দুষ্কর হয়েছিল। এই বিবরণ বৃদ্ধ কর্ত্তা প্রসন্নকুমার নন্দী মহাশয় নিকট হ’তে শুনে লেখা। যিনি গভর্নমেন্ট স্কুলের পেনশনপ্রাপ্ত হেড পন্ডিত।
শ্রীমতী অনিন্দ্যবালা নন্দীকে নিখিল ভারত হিন্দু-সভার পক্ষ থেকে তার বীরত্ব ও ধৈর্যের জন্য একটি সুবর্ণপদক দেওয়া হবে স্থির হ’য়েছে। হিন্দু মহাসভার বর্ত্তমান কর্ম্মকর্ত্তা সভাপতি ডাঃ মুঞ্জে এই কথা বলেছেন।
পুঃ – সকল হিন্দুর মুখে কেবল এই কথা শুনি, যে, পুলিশ যদি হিন্দুকে রক্ষা না করে, তবে যেন তাদের আত্মরক্ষায় বাধা না দেয়; তা হ’লেই আমরা নিশ্চিন্ত হ’য়ে বাস করতে পারি। যখনই হিন্দুরা প্রতিরোধ ক’রতে গেছে, তখনই পুলিশ এসে নাকি তাদের প্রতিরোধ ক’রেছে। তাতেই হিন্দুর এমন সর্ব্বনাশ হ’তে পেরেছে। এখনও ঢাকা-হলের আশ্রিত অবশিষ্ট লোকেরা নিজেদের বাড়ীতে ফিরে যেতে সাহস করছেন না।
ছবি: শ্রীমতী অনিন্দ্যবালা নন্দী, অসমসাহসী ক্ষত্রিয়াবালা –
Comment here