আমার ইতিহাসশাশ্বত সনাতন

দেব সাম্রাজ্যের পতন ও আনুষঙ্গিক যুদ্ধের ইতিহাস

– শ্রী জ্যোতিষ্মান সরকার

 

দেব সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে জালাল উদ্দিনের অভিযান:

১৪১৮/১৯ খ্রিষ্টাব্দে যদু/জালালুদ্দিন সম্ভবত জৌনপুর ও অন্যান্য বৈদেশিক সাহায্য নিয়ে পান্ডুয়া পুনরুদ্ধার করেন। ১৪৭/১৮ পর্যন্ত গৌড়ে মহেন্দ্রদেব ও দনুজমর্দনের মুদ্রা পাওয়া যায়।(৩)(৪) ১৪১৮ সালে জালালুদ্দিনের টাকশাল হতে পান্ডুয়া থেকে জারি করা মুদ্রা পাওয়া যায়। শ্রী রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, জালালউদ্দিন ১৪১৮ সালে পান্ডুয়া পুনরুদ্ধার করেন। তিনি বঙ্গ অঞ্চলে নিয়মিত অভিযান পাঠাতে শুরু করেন এবং জালালুদ্দিনের বাহিনী দেব সৈন্যদের উপর চাপ দিতে শুরু করে। ১৪২৩ সাল নাগাদ জালালউদ্দিন বাংলার বেশির ভাগ অধিকার করেন। সুন্দরবন এলাকায়, যেখানে ২০০ বছরের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করা যায়নি, সেখানে মুসলিম বাহিনী একটি যুদ্ধে সফল হয়েছিল।(১)

ফৌজদার খান জাহান আলী মুকুট রায়কে (দ্বিতীয়) পরাজিত করে ১৪২৩ সালে পান্ডুয়া সালতানাতের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।(১৭) শ্রীহট্টও ধীরে ধীরে জালালউদ্দিনের নিয়ন্ত্রণে আসে। দনুজমর্দনদেব সম্ভবত ১৪২৭ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় তার কর্তৃত্ব বজায় রেখেছিলেন। পরবর্তীকালে তার বংশধরদের মধ্যে এমন বীরত্বের ইতিহাস পাওয়া যায় না। সম্ভবত ১৪২৭ সালের মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলা প্রায় জালালউদ্দিনের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।(২৫)(২০)

নবহট্টের ২য় যুদ্ধ – অষ্টগৌড়া:

জালালুদ্দিনের বাঙ্গালা সাম্রাজ্য বিজয় বেশ কয়েকটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়েছিল। সর্বপ্রথম তিনি ‘অষ্টগৌড়া’ রাজ্য আক্রমণ করেন। নবভট্ট বা নৈহাটি তখন দেব সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় রাজধানী ছিল। স্থানীয় ইতিহাস অনুসারে, তৎকালীন এই দুর্গম বনাঞ্চলের শাসক ছিলেন সীতা দেবী নামক এক রাণী। সম্ভবত দেব রাজবংশের অধীনে দক্ষিণ সুন্দরবনের ভাটি থেকে মুর্শিদাবাদ পর্যন্ত শাসন করতেন তিনি। বাণিজ্যিক দুর্বলতার কারণে দেব সাম্রাজ্যের সামন্তবাদী ভিত্তি খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে এই অঞ্চলটি বেশ স্বাধীনভাবে পরিচালিত হচ্ছিল। সীতা দেবীর পূর্ব পরিচয় সেভাবে জানা যায়নি। তবে অনুমান করা যায় যে তিনি দেববংশ বা মহিনানন্দের নাগ রাজবংশের সাথে যোগসূত্রে থাকতে পারেন।

অধুনা চব্বিশ পরগণার দক্ষিণাংশের এক প্রত্যন্ত অঞ্চল আটঘরা, সেই ইতিহাস বিখ্যাত আটঘরা, গ্রীক ভৌগোলিক ও জ্যোতির্বিদ টলেমির লেখায়, রেখায় ও মানচিত্রে যার উল্লেখ পাওয়া যায়, “অষ্টগৌড়া” নগর ও বন্দর হিসেবে। আর এই ইতিহাস ও কিংবদন্তী-র অষ্টগৌড়া বা আটঘরার কাছাকাছিই অবস্থিত রয়েছে সীতাকুণ্ড বা সীতাকুন্ডু। দেওয়ান গাজী নামক ( এই নামেই প্রসিদ্ধ) এক সেনাপতি কে এই অঞ্চলে অধিকার করতে পাঠান জালালউদ্দিন। প্রায় প্রত্যহ সে আক্রমণ করত সীতাঠাকুরাণীর রাজ্য আর বারংবার সে পরাস্ত হত ঠাকুরাণীর তলোয়ারের কাছে। তবে এই বারংবার আক্রমণের ফলে নবহট্ট নবদ্বীপের মতো অঞ্চলগুলো রাণী ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিল। কিন্তু কোনভাবেই তারা অষ্টগৌড়া বন্দর দুর্গটি দখল করতে পারেনি। এটা ছিল রাণীর শক্ত ঘাঁটি। বিদ্যাধরী নদী সর্বদা প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা কবচ হিসেবে কাজ করেছে।

নারীর হাতে নিজের এই বারংবার পরাজয় হজম করে গাজী বুঝতে পারে সম্মুখ যুদ্ধে জেতা সম্ভব নয়। পরবর্তী যুদ্ধে, তিনি বিজয় লাভ করেন। তবে জনান্তিকে বলে, মহারাজ্ঞী সীতা দেবীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা হয়েছিল। এই সীতাদেবীও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না। নিজের উৎখননকৃত, কুন্ডের জলে আত্মাহুতি দিয়ে প্রাণ ত্যাগ করেন। যে কুন্ডে আত্মত্যাগ করেছিলেন, সেই কুন্ড, বহুযুগ ধরেই “জীয়ৎকুন্ড” নামে সুবিখ্যাত।(১৬)

খাঁ জাহান আলীর অভিযান:

এরপর খান জাহান আলীর নেতৃত্বে একটি অভিযান ইছামতি নদী পার হয়ে ঝিনাইদহ অঞ্চলে পাঠানো হয়। রাজা মুকুট রায় (২য়)শ্রোত্রিয় ব্রাহ্মণ জমিদার ছিলেন। অষ্টগৌড়া বিজয়ের পর বিজয়পুর রাজ্য অধিকার করেতে উদ্যোগী হন। রাজ্যের মধ্যে এক কাজীর গোহত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিজয়পুরে বিবাদ উপস্থিত হয়। এই সুযোগে খাঁ জাহান আলী ইসলামের দোহাই দিয়ে রাজ্য আক্রমণ করে।

এই রাজা রায় মুকুটের অনেক সৈন্য সামন্ত ছিল, কথিত আছে তিনি ১৬ হল কা হাতী, ২০ হল, কা অশ্ব ও ২২০০ কোড়া- দার না লইয়া বাহির হইতেন না ।ঝিনাইদহের পূর্ব্ব ধারে ‘বিজয়পুরে’ এই রাজার রাজধানী ছিল ; • উহার দক্ষিণে পশ্চিমে ‘বাড়ীবাথান’ নামক স্থানে তাহার প্রকাণ্ড গো-শালা ছিল। তাহার খুব অধিকসংখ্যক গাভী ছিল বলিয়া লোকে তাহাকে ‘বৃন্দাবনের’ নন্দ মহারাজ বলিত। “বেড়বাড়ী” নামক স্থানে তাহার উত্থান ছিল। যেখানে তাহার কোড়াদার সৈন্যেরা বাস করিত, তাহার নাম কোড়াপাড়া।

শৈলকুপার সন্নিকটবর্ত্তী বাঘুটিয়া- নিবাসী রঘুপতি ঘোষ, রায় মুকুটের প্রধান সেনাপতি ছিলেন, তাঁহার অধীনে আর দুইজন অসীম বলশালী বীর ছিলেন, তাঁহাদের নাম চণ্ডী ও কেশব। ইঁহারা চণ্ডী সর্দ্দার ও কেশব সর্দার নামে পরিচিত ছিলেন বলিয়া লোকে মনে করিত ইঁহারা চণ্ডালবংশীয়।

একটি গুপ্ত দুর্গে লুক্কায়িত রাখিয়া স্বয়ং যুদ্ধার্থ প্রস্তুত হইলেন । পর পর দুই দিন যুদ্ধে সুলতানী সৈন্য পরাজিত হইল। চণ্ডী ও কেশব জয়োল্লাসে মত্ত হইয়া রাজার জনৈক পাঠান সৈন্যকে নবাব-সৈন্য ভাবিয়া কালী মন্দিরে বলি দেয়;তাহার ফলে সমস্ত পাঠান-সৈন্য বিদ্রোহী হইয়া উঠে।

প্রবাদ আছে রায় মুকুটের আর এক দল পাঠান সৈন্য ছিল, তাহার অধ্যক্ষ ছিলেন গয়েশ-উদ্দীন। বাড়ী- বাথানের সন্নিকটে গয়েশপুর নামক একটি স্থান আছে ।বাড়ীবাথানের সন্নিকটে উভয় পক্ষে যে তৃতীয় যুদ্ধ হয়, তাহাতে গয়েশউদ্দীন যুদ্ধে বিরত ছিলেন বলিয়া মুকুট রায় সম্পূর্ণ পরাজিত ও বন্দী হন। বন্দীকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করিয়া রাজধানীতে লইয়া যাওয়া হয়। সেখানে তাহার বীরত্বের খ্যাতি পূর্ব্বেই পৌছিয়াছিল। জালালুদ্দিন তাঁহাকে বাধ্যতা স্বীকার করাইয়া তাঁহার রাজ্য প্রত্যর্পণ করেন।তাঁর এক ভ্রাতা গন্ধর্ব্ব রায়কে জালালুদ্দিন খাঁ উপাধি ভূষিত করে রাজ্য শাসনে নিযুক্ত করেন।(১৭)

কদল খাঁ গাজির অভিযান:

১৪২৬-২৭ খ্রিষ্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে সুফি কদল খান গাজী এগারোটি সেনাদলের সহযোগিতায় স্থানীয়দের পরাজিত করে চট্টগ্রাম অধিকার করে তা সুলতান জালালুদ্দিনের দখলদারিত্বের অন্তর্ভুক্ত করেন।

দেব বংশ খুব দ্রুত সৈন্য অপসারণ করায় চট্টগ্রাম দখল করতে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি । সম্ভবত কদলখান গাজী ছিলেন জালালুদ্দিন শাহের সেনাপতি। মক্তুল হোসেন গ্রন্থে উল্লেখ আছে:

“এক মনে প্রণাম করম বারে বার।
ভএ কেহ মজ্জি সমুদ্রের তল ।।
একসর মহিম হইল প্রাণহীন।
রিপুজিনি চাটি গ্রাম কৈলা নিজাধীন ।।
বৃক্ষডালে বসিলেক কাফিরের গণ।সেই বৃক্ষ ছেদি সবে করিলা নিধন ।।
তান একাদশ মিত্র করম প্রণাম।
পুস্তক বাড়এ হেতু না লেখিলু নাম।।
তান একাদশ মিত্র জিনিয়া চাটিগ্রাম।
মুসলমান কৈলা চাটিগ্রাম অনুপাম ।।”
(ডক্টর আব্দুর করিম, ২০১৮: ১৯-২০)

অর্থাৎ চট্টগ্রাম দখলের পর সর্বত্র হত্যা লীলা চলে। যে সমস্ত কাফিররা প্রাণ রক্ষা করতে বৃক্ষে আশ্রয় নিয়েছিল তাদেরকেও হত্যা করা হয়। কতটা নির্মমতার আশ্রয় নিয়ে চট্টগ্রামকে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে, তা সেই সময়ের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখতে পাই। (১৮) (১৯)

দেব সাম্রাজ্যের পতনের বাণিজ্যিক কারণ – চৈনিক অর্থনৈতিক অবরোধ:

জালালউদ্দিন কোন স্বাধীন শাসক ছিলেন না তিনি বহুবার চীনের মীং বংশকে উৎকোচ প্রদান করেন।চৈনিক নৌবাহিনীর সরাসরি সোনারগাঁও বন্দরের ওপর নিজস্ব স্বার্থ ছিল কিন্তু দেব সাম্রাজ্যের শক্তিশালী নৌবাহিনীর বিরুদ্ধে তারা টিকতে পারত না। ১৪১৫ তে জেঙ হি সোনারগাঁও বন্দর ভ্রমণ করেন। ১৪২১-২২ নাগাদ জৌনপুরের সুলতান ইব্রাহিম শাহ গৌড়কে নিজের অধীনে আনার চেষ্টায় ছিলেন। ফলতঃ, জালালুদ্দিন চীনের মিং রাজবংশের সামরিক ও বাণিজ্যিক সাহায্য লাভ করেন ।

জালালুদ্দিন মিং রাজবংশের উপর এত বেশি নির্ভরশীল ছিল যে রাষ্ট্রদূত মিং শি -র গৌড়ে আগমন উপলক্ষে মিং সম্রাটের সম্মানে নিজের মুদ্রার প্রচলন করেন। চীনের সম্রাট ইয়ুঙ লি-র শত্রু ছিলেন বর্মি রাজারা তাই জালালুদ্দিন আরাকানের রাজা মেং সোয়ামুনকে বর্মী বাহিনীর বিরুদ্ধে সৌনারগাঁর নারিকেল্লা বন্দর দুর্গ ব্যবহার করতে দেন তার রাজ্য পুনরুদ্ধারের জন্য।(২৩)

মিং সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যাওয়ার ক্ষমতা জালালুদ্দিনের ছিল না। ১৪৩৩ তে জালালুদ্দিনেই মৃত্যু হয়। অনেকে মনে করেন দেবদের বিরুদ্ধে জালালুদ্দিনের বিজয়ের অন্যতম কারণ মিং নৌবহরের সহায়তা। ভারত মহাসাগর অঞ্চলে সোনারগাঁও থেকে যাওয়া নৌবহরগুলো অবরোধ করে। মালয় শ্রীলঙ্কা থেকে বাণিজ্যের সমস্ত পথ বন্ধ হয়ে যায়।(২১)(২৩)

জেঙ হি সমস্ত রকম কূটনৈতিক সাহায্য প্রদান করে জালালুদ্দিনকে। পরবর্তীতে জালালুদ্দিন যথার্থই মিং সাম্রাজ্যের অধীনতা স্বীকার করেন। নৌসেনাপতি মিং শি একবার ও জেঙ হি দুবার পান্ডুয়া ভ্রমণ করেন। জালালুদ্দিন চীনা নৌসেনাপতিদের যথাসাধ্য উৎকোচ প্রদান করেন। যে রাজারা তাঁর অধীনতা স্বীকার করেনি সেরকম ৩০ টি রাজ্যের রাজাকে বন্দি করে জেঙ হি চীন দেশে নিয়ে যায়। তেমন একজন ছিলেন শ্রীলঙ্কার কোট্টে সাম্রাজ্যের রাজা বীরা অলোকেশ্বরা ।(২২)(১১)

তারা ১) চৈনাদের কর প্রদান ২) চিনা নৌ বণিকদের অবাধ ব্যবসার জন্য বন্দর উন্মুক্তকরণের শর্তে ছাড়া পান।

চট্টগ্রামের পতনের সামরিক কারণ ? যুদ্ধক্ষেত্রে খারাপ সিদ্ধান্ত:

দেব সাম্রাজ্যের তিনটি প্রধান বন্দর ছিল বাকলা, চট্টগ্রাম, সোনারগাঁও। স্থলপথে ত্রিপুরার সাহায্য ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর ধরে রাখা অসম্ভব মনে করে দনুজমর্দন সোনারগাঁ ও চট্টগ্রাম দুটি বন্দর থেকে সৈন্যদের সরিয়ে দেন। তিনি সন্দীপ নৌ ঘাঁটিতে প্রত্যাহার করা সৈন্যদের একটি অংশ এবং মধুমতি বলেশ্বরী নদী পাহারা দেওয়ার জন্য নিযুক্ত বাকি নৌসৈন্যদের স্থাপন করেছিলেন। এটাই ছিল সবচেয়ে বড় ভুল, চট্টগ্রাম বন্দরের নিয়ন্ত্রণ ছাড়া মেঘনা নদীর ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা সম্ভব ছিল না।

জালালউদ্দিনের সেনাপতি কদল খান গাজী চট্টগ্রাম তার সৈন্য নিয়ে কুমিল্লা দখল করেন এবং এখন পূর্ব দিক থেকেও দেব সাম্রাজ্যের আক্রমণ শুরু হয়। দেব সাম্রাজ্য উত্তরে জালালুদ্দিনের বাহিনী, পশ্চিমে খান জাহান আলী এবং পূর্বে কদল খান দ্বারা তিন দিক বেষ্টিত ছিল। প্রায় দুই বছর পর সব প্রতিরোধ ভেঙে পড়ে।

সমসাময়িক অন্যান্য রাজশক্তির সহায়তা না পাওয়া:

দীর্ঘ অর্থনৈতিক অবরোধের মুখে দেব সাম্রাজ্যের অর্থনীতি ভেঙে পড়ে। নিয়মিত বেতন না দেওয়ায় পদাতিক সৈন্যদের মধ্যে বিদ্রোহ শুরু হয়। [ যারা এই বিষয় টা জানেন না দেব বংশ সম্পর্কিত পূর্ববর্তী প্রবন্ধগুলো পড়ুন]

উত্তরে জালালউদ্দিন ক্রমাগত আক্রমণ করেন, পূর্বে মধুমতি নদীর সীমান্তে ফৌজদার জাহান আলী। গোলাবর্ষণে সোনারগাঁ নৌঘাঁটির প্রাচীর প্রায় ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।

তাদের মেরামতের জন্য কোষাগারে পর্যাপ্ত অর্থ ছিল না। দেব সাম্রাজ্যের অন্যতম বিশ্বস্ত সৈন্য ছিল রাজকীয় নৌবাহিনী। আরাকানের রাজা নরি মেখলাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার জন্য দেব সাম্রাজ্য বার্মার আভা রাজবংশের কাছ থেকে কোনো সমর্থন পায়নি। এছাড়া তিনি ত্রিপুরার রাজাদের কাছ থেকে তেমন সাহায্য পাননি। ত্রিপুরার রাজারা হয়তো ভেবেছিলেন দেব সাম্রাজ্য উচ্ছেদ হলে তাদের অধিকার চট্টগ্রাম সমভূমি পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।

চন্দ্রদ্বীপ দখলের পর দক্ষিণ পূর্ব বাংলায় ব্যাপক গণহত্যা ও ধর্মান্তকরণ সংগঠিত হয়। পরবর্তীতেও দেব রাজবংশের শাসকরা কর প্রদানকারী পরগনার শাসক হিসাবে টিকে ছিলেন। শেষ রানী কমলাদেবীর পরে, জামাতা বসু পরিবার এই পরগনা শাসনের কর্তৃত্ব লাভ করে। মুঘল আমলের নথি অনুসারে (আইন-ই-আকবরী) এই রাজ্যে ১৫, ০০০ পদাতিক এবং ৩৫০টি হস্তীর একটি বাহিনী ছিল। ২০০ বছর ধরে তুর্কিদের বাংলার সমুদ্র উপকূলতট পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ অর্জনের প্রচেষ্টা এতদিনে সফল হয়(২৪)

পান্ডুয়া সালতানাতের দক্ষিণ পূর্বে সম্প্রসারণ ও তার প্রভাব :

আরাকানের যুদ্ধ:

আরাকানের রাজা মেং সোয়ামুন গৌড়ে সামরিক সাহায্য চাইতে রান ১৪০৪ সালে । (৬)কিন্তু গণেশের ও দেব বংশের শাসনকাল কেবলমাত্র যুদ্ধে নিয়োজিত থাকায় তাঁদের থেকে সহায়তা পাননি।

একটি সমসাময়িক আরাকানীয় নথি লিপিবদ্ধ করেছে যে রাজা গণেশের সেনাবাহিনী, তৎকালীনভাবে পান্ডুয়ার নিয়ন্ত্রণে ছিল এবং যুদ্ধে ইব্রাহিমকে পরাজিত করেছিল। এই নথি অনুসারে, আরাকানের একজন শাসক মেং সোয়ামুন নামের, যিনি ১৪০৬ সালে একজন বার্মিজ রাজা মিনখাউং (আভা রাজবংশ) দ্বারা পরাজিত হয়ে পান্ডুয়ায় আশ্রয় নিয়েছিলেন, তিনি রাজা গণেশকে সামরিক সাহায্য দিয়েছিলেন যা তার সেনাবাহিনীকে ইব্রাহিমকে পরাস্ত করতে সক্ষম করেছিল। (৬) (৭) (৮) (১০)

জালালুদ্দিন ক্ষমতায় এলে তিনি তাঁর কাছেও সহায়তা চান । গণেশের ও দেব বংশের সৈন্য বাহিনীতে মেং সোয়ামুন বহুদিন ধরেই ছিলেন।

জালালুদ্দিন তাঁর সামরিক কুশলতার সম্বন্ধে জৌনপুরের সাথে ( মুঙ্গেরের যুদ্ধে ) যুদ্ধের সময় থেকেই পরিচিত ছিলেন।(৬) তিনি সুলতানের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন এবং সুলতানকে আরাকানি সিংহাসন পুনরুদ্ধারে সাহায্য করতে রাজি করান। সুলতান রাজি হন কিন্তু এক শর্তে যে মেং সোয়ামুন কে ইসলাম গ্রহণ করতে হবে এবং তাকে তার রাজ্যে মুসলিম সুফিদের প্রবেশের ধর্মপ্রচারের অনুমতি দিতে হবে। মেং সোয়ামুনের রাজি হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিল। জালালুদ্দিন তাকে একটি নতুন নাম দেন সুলেমান শাহ। যদিও তিনি কখনো বৌদ্ধ ধর্ম ত্যাগ করেননি তিনি তাঁর বংশের পরবর্তী রাজারা বহু বৌদ্ধ মঠ মন্দির পরে নির্মাণ করে। আরাকান রাজপরিবার দুটি নাম ব্যবহার করত, প্রথম বৌদ্ধ হিসেবে দ্বিতীয় মুসলিম হিসেবে।

১৪২৯ সালে, তিনি সুলতানের সহায়তায় আরাকানি সিংহাসন পুনরুদ্ধার করেন এবং রাজ্য শাসন করেন। ফেব্রুয়ারি/মার্চ ১৪২৯ সালে মেং সোয়ামুন আফগান সৈন্যদের সহায়তায় আরাকান আক্রমণ করে। আক্রমণের প্রথম প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল কারণ সোয়ামুনের সাথে সেনাপতির বাদানুবাদ হয়েছিল (Tabaung 790 ME), জেনারেল ওয়ালী খান বন্দী হয়। সোয়ামুন কোন ক্রমে পালিয়ে যান। (৯) (১০)

সুলতান আরেকটি প্রচেষ্টায় রাজি হলেন। দ্বিতীয় আক্রমণটি সফল হয়। ১৮ই এপ্রিল ১৪২৯ সালে Launggyet তে সোয়ামুন কে রাজা ঘোষণা করা হয়।

(Thursday, 1st waning of Kason 791 ME). (According to some Arakanese chronicles, such as Inzauk Razawin, the second invasion took place in 1430, a year later.) তিনি ১৪৩০ সালে একটি নতুন রাজধানী হিসেবে আরও ভালো কৌশলগত অবস্থান রূপে Mrauk-U(မြောက်ဦးမြို့)শহর, প্রতিষ্ঠা করেন । রাজা ১৪৩৩ সালে মারা যান এবং তাঁর কনিষ্ঠ ভ্রাতা খায়ী আলী খান (အလီခင်) স্থলাভিষিক্ত হন। আলি খাঁর শাসনে যথার্থই আরাকান একটি প্রাথমিক ঐসলামিক রাজ্যে পরিণত হয় এমনকি এইসময় মুদ্রায় ফার্সিতে কালেমা লেখার চল শুরু হয়। এই সময়েতেই পীর বদরুদ্দিনের আগমন হয় চট্টগ্রামে। তাঁর সম্পর্কে বলা হয় যে, তিনি চট্টগ্রামে সকল ভূত দূর করে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দেন। পীর বদরুদ্দীন সম্ভবত চট্টগ্রামে বৌদ্ধ বিহার ধ্বংস করে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন। ভূত সম্ভবত ‘ব্যূতপরস্তি’ অর্থাৎ প্রতিমা পূজাকে বোঝায়। বট পরস্তি/بت پرسی মানে প্রতিমা পূজা। অনেকের মতে ব্যুত বুদ্ধ মূর্তিকেও বোঝায়। (৭) (১৪)

দক্ষিণ-পশ্চিমে পান্ডুয়া সালতানাতের বিস্তার এবং গড় মান্দারানের যুদ্ধ:

১৪৩৪ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে, জালালুদ্দিন বা তার পুত্রের পান্ডুয়া সালতানাতের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তের (পাশাপাশি আরাকানেও) অভিযান পাঠান। এই সময়ে গঙ্গা রাজবংশের রাজা ছিলেন ভানু দেব। বিশ্বনাথ কবিরাজের একটি নাটকে এই আক্রমণের উল্লেখ রয়েছে। সম্ভবত জালালুদ্দিন প্রথমে তাম্রধ্বজ রাজ্য আক্রমণ করেন। আক্রমণ মান্দারে হলেও সম্ভবত হিজলী অধিকার ও তার মাধ্যমে দামোদর , সরস্বতী ( বর্তমান হুগলী) , সুবর্ণরেখার বাণিজ্যপথের ওপর নিয়ন্ত্রণ ওনার মূল উদ্দেশ্য ছিল ।এই সময়ে তাম্রলিপ্তের রাজা ধিতাই রায় ভূঁইয়া ছিলেন সম্ভবত গঙ্গা রাজবংশের সাহায্য চেয়েছিলেন।

e.g.

सूत्रधारः
– आर्ये पश्य पश्य, अयमिदानीं यवन(पुर)-पुरन्ध्रीवर्ग –
निर्गलदविरल-नयनजलधारा-निर्धीतगिरिकन्दरो निखिलानवद्य – विद्यानिधिर्थिकुल-कल्पद्रुमः सभामध्यास्ते गजपतिमहाराजाधिराजः

त्रिकलिङ्गभूमण्डलाखण्डलः श्रीमात्रिशङ्कमानुदेवः ।

आछत्रे धर्मघाम्नि प्रखरहयखुरक्षुण्णपृथ्वीरजोभिः
क्षिप्ते नक्षत्रलक्षे नमसि करिकरोद्धृतगङ्गापयोभिः । ज्योत्स्नाभिः कीर्तिचन्द्रे धवलयति जगज्जैत्रयात्रावकाशे गौडक्ष्मापाललक्ष्मी व्यरचयदचिरादेव चस्याभिसारम् || (CKN,I.2.)

নাটকটি সম্পর্কে বলা হয়েছে যে রাজা নিশঙ্ক ভানুদেব চতুর্থের উপস্থিতিতে নাটকটি মঞ্চস্থ হয়েছিল, গৌড় বিজয় থেকে রাজধানীতে ফিরে আসার পর পণ্ডিতদের একটি সমাবেশের সামনে। নাটকটিতে গৌড় বিজয় উল্লেখ থাকলেও সম্ভবত এখানে গৌড় বলতে তাম্রলিপ্তকে বলা হয়েছে। কারণ পরবর্তীকালে গজপতি শিলালিপিতে ‘তাম্রলিপ্ত’ এবং বিশেষ করে মান্দারন দুর্গকে গৌড় বলে উল্লেখ করা হয়েছে।উল্লেখ্য যে সংস্কৃত পণ্ডিতরা এই সময়ে মল্লভূম ও উড়িষ্যার মতো হিন্দু রাজ্যে আশ্রয় নিতে শুরু করেন।(২)

দেব বংশের পতনের পর চট্টগ্রাম দখল ও হিন্দু বৌদ্ধ গণহত্যা:

দেব বংশের পতন দক্ষিণ পূর্ব বাঙলার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি বিশাল শূন্যস্থান তৈরি করে। আরকান সুলতান ও পান্ডুয়ার সুলতানের যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে ওঠে এই অঞ্চল ।এই অঞ্চলের হিন্দুরা অর্থনৈতিক ভাবে ভেঙে পড়ে। এবং বৈষম্যমূলক শুল্ক ব্যবস্থার কারণে অনেকেই বাধ্য হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম কুমিল্লা এলাকায় এই শুন্যস্থাণ অনেকাংশে ত্রিপুরার রাজারা শাসনে আসে।

মুসলিম শাসকরা কোন নগরকে জয় করে সর্বপ্রথমে তারা সেই শহরের আরাধ্য কুলদেবতা বা দেববিগ্রহাদি ধ্বংস করে মানুষের মধ্যে প্রচণ্ড ভীতি স্থাপন করতেন। সেই কাব্যের শুরুতেই বলা আছে জঙ্গী পীর কদল খান গাজীর সহযােগীরা চট্টগ্রাম নগর করায়ত্ব করে সর্বপ্রথম দেবী চট্টেশ্বরীর বিগ্রহাদি ধ্বংস করে চট্টগ্রামের অধিবাসীদের ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করে। কদল খান গাজী পীর স্থানীয় এত মানুষকে শিরোচ্ছেদ করে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিলেন যে, আজও তার নামের সাথে ‘কতল’ বা শিরশ্ছেদ শব্দটি যুক্ত হয়ে তিনি ‘কাতাল পীর’ নামে খ্যাত। যে স্থানটিতে তার মাযার অবস্থিত, সেই স্থানের নাম ‘কাতালগঞ্জ’।

এরপরে স্থানীয় মানুষদের জোরকরে ধর্মান্তরিত করেন- “মুসলমান কৈল সব চাটিগ্রাম পুরী”। সাধারণ মানুষ এদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে যখন গাছেল ডালে উঠেও বাঁচতে পারেননি। যারা গাছের ডালে গিয়ে বসেছে, তাদেরও বৃক্ষছেদন করে নৃশংসভাবে নিধন করা হয়।(১৯)

তান এক মিত্রে বধিলেক চাটেশ্বরী।
মুসলমান কৈল সব চাটিগ্রাম পুরী ॥

(ডক্টর আব্দুর করিম, ২০১৮: ২৯)

 

চট্টেশ্বরী দেবী তৎকালে সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ তীর্থে অবস্থিত ছিল।দেবী পুরাণে চৈত্র মাহাত্ম্যে স্বয়ম্ভুরহস্য কথনে চণ্ডিক খণ্ডে বলা আছে, চন্দ্রশেখর পর্বত স্থিত চট্টেশ্বরী অন্নপূর্ণারূপে সর্বদা সাধুদের রক্ষা এবং দুষ্টের বিনাশে করেন।কদল খান গাজী এবং তার এগারোজন সহযোগী মিলে যখন চট্টেশ্বরী দেবীর বিগ্রহ ধ্বংসের পরে পরবর্তীতে কোন সময়ে চট্টেশ্বরী দেবীর বিগ্রহ চট্টগ্রাম শহরের বর্তমান স্থানে স্থাপিত হয়। বর্তমান চট্টেশ্বরী অঞ্চলটি সে সময়ে ছিল নির্জন ঘন জঙ্গলে পূর্ণ। এ কারণেই বিভিন্ন পুরাণ এবং তন্ত্রে চট্টেশ্বরী দেবীর বর্ণনা চন্দ্রনাথ তীর্থে বর্ণিত হলেও, বর্তমানে দেবীতীর্থটি পাওয়া যায় চট্টগ্রাম শহরের কেন্দ্রস্থলে।

যত্র চট্টেশ্বরী দেবী চান্নপূর্ণা বভূবহ।
দুষ্টানাং প্রাণমাশায় সাধূনাং রক্ষণায় চ।
লিঙ্গরূপং সমাস্থায় শ্রীচণ্ডশেখরে বসন্ ॥
বিরূপাক্ষে কদাদেবাে ভবান্যাচ ভূতেশ্বরঃ।
কদাচ চম্পকারণ্যে কদাচ বাড়বানলে ॥
কদা মন্দাকিনীগতঃ সচ দেবস্মরান্তকঃ।
বভ্রাম কাননে রম্যে লবণাম্বুসমীপতঃ ॥

“সেই চন্দ্রশেখর পর্বত স্থিত চট্টেশ্বরী অন্নপূর্ণারূপে সাধুদের রক্ষা এবং দুষ্টের বিনাশে; কখনও বিরুপাক্ষে , কখনও চম্পকারণ্যে, কখনো বাড়বানলে, কখনো মন্দাকিনীতে, কোন কোন সময়ে লবনাম্বু সমীপবর্তী রম্যকাননে ভগবান ভূতেশ্বর স্মরান্তকারী শিব লিঙ্গমূর্তিতে দেবী পার্বতীর সাথে বিরাজ করেন।”

চট্টগ্রামের চট্টেশ্বরী যে অন্নপূর্ণারূপে পূজিতা এ বিষয়টি দেবী পুরাণের চৈত্র মাহাত্ম্যে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। তবে বর্তমান চট্টগ্রাম শহরস্থ চট্টেশ্বরী মন্দিরে দেবীকে অন্নপূর্ণারূপেই পূজা করা হয়। চট্টেশ্বরীর প্রণাম মন্ত্রে বলা হয়েছে:

চট্টেশ্বরী মহামায়া শঙ্করপ্রাণবল্লভাঃ।
অত্রৈব সততং তিষ্ঠেত অন্নপূর্ণা স্বরূপিনি।।
চট্টলে দক্ষ বাহু মে ভৈরব চন্দ্রশেখরঃ।
ব্যপ্তরূপা ভগবতি ভবানী অত্র দেবতা।।

“বৃক্ষডালে বসিলেক কাফিরের গণ।
সেই বৃক্ষ ছেদি সবে করিলা নিধন ।”(১৮)(১৯) (ডক্টর আব্দুর করিম, ২০১৮: ১৯)

১৪২৭- ১৪৩৪ পর্যন্ত সোনারগাঁ কার্যত চৈনিক নৌঘাঁটি হিসেবেই ব্যবহৃত হতো। (১১) (১২) (১৩) দঃ পূর্ব বঙ্গ দখলের পর কার্যত সেখানকার হিন্দু বৌদ্ধদের নাভিশ্বাস উঠে যায় জালালুদ্দিন ও নব্য ধর্মান্তরিত আরাকানের রাজাদের অত্যাচারে।বহু হিন্দু মন্দির বৌদ্ধ মঠ ধ্বংস হয়। বহু মানুষ প্রবল অত্যাচারের মধ্য দিয়ে ধর্মান্তরিত হন। একইভাবে বাগেরহাটে খাঁ জাহান আলীও বহু হিন্দুর বলপূর্বক ধর্মান্তরকরণ করেন ।(১৭)

সপ্তদশ শতকের প্রখ্যাত কবি মুহাম্মদ খান কর্তৃক আনুমানিক ১৬৪৬ খ্রিষ্টাব্দে রচিত ‘মক্তুল হোসেন’ কাব্যের শুরুতেই আমরা দেখতে পাই চট্টগ্রামের স্থানীয় মানুষদের কিভাবে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে।কদলখান গাজী তার এগারো জন বন্ধু-দরবেশের সাহায্যে চট্টগ্রামে ইসলাম প্রচার করেন।লোকশ্রুতি যে, পীর বদর শাহ্, কতল পীর এবং মহসিন আউলিয়া সম্ভবত সর্বপ্রথম একসঙ্গে চট্টগ্রামে আগমন করেন। গোলাম সাকলায়েনের লেখা ‘বাংলাদেশের সূফী-সাধক’ গ্রন্থে বারো আউলিয়ার মধ্যে দশ আউলিয়ার সংক্ষিপ্ত পরিচয় পাওয়া যায়। তাদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় হল:

১. সুলতান বায়েযীদ বোস্তামী

২. শেখ ফরীদ

৩. বদর শাহ্ বা বদর আউলিয়া বা পীর বদর

৪. পীর কতল

৫. শাহ্ মহসিন আওলিয়া

৬. শাহ্ পীর

৭.শাহ্ উমর

৮. শাহ্ বাদল

৯.শাহ্ চাঁদ আউলিয়া,

১০. শাহ্ জায়েজ

পূর্ববঙ্গে হিন্দু নির্যাতন শুরু হলে বহু ব্রাহ্মণ নবদ্বীপ অঞ্চলে আগমন করেন। (৫) প্রায় ১৫০ বছর পর নিকালো ডি কন্টি এই অঞ্চল ভ্রমণের সময় সন্দ্বীপ প্রায় ১০০% মুসলিম জনসংখ্যায় পূর্ণ দেখেন(১৫)

সূত্র –

১) History of Bengal (Rakhaldas Bandyopadhyay) Volume II 153
(২)Four hundred years of Orissa: a glorious epoch by AK Panda
৩) Pravasi (Part 35, Part II) 761 p
৪)চন্দ্রদ্বীপের ইতিহাস [সংস্করণ-১] | শ্রী বৃন্দাবন চন্দ্র পুততুন্ড
(৫) শ্রী রজনীকান্ত চক্রবর্তী – “গৌঢ়ের ইতিহাস”, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ – ১৯২
(৬) Richard Maxwell Eaton (1993). “The Rise of Islam and the Bengal Frontier, 1204-1760”.pp-53ff, 54ff.
(৭) Harvey 1925: 137–140
(৮) Sandamala Linkara Vol. 2 1999:
(৯) Myint-U 2006: 73
(১০) Sandamala Linkara Vol. 1 1997:
(১১) East Africa and its Invaders p. 37
(১২) Paranavitana, History of Ceylon, p.299
((১৩) Sri Haraprasad Ray, (1997). Sino – Indian Commercial and Diplomatic Relations. The Quarterly Review of Historical Studies. Vol. 37. Calcutta: Institute of Historical Studies. p. 114
(১৪) Phayre 1967: 78
(১৫) Portugese in Bengal Campos
১৬)বারুইপুরের ইতিহাস,”প্রবন্ধ- বারুইপুরের দীঘি খালবিল জলাভূমি পরিক্রমা”, লেখক:- স্বর্গীয় ডঃ শ্রী কালীচরণ কর্মকার মহাশয়।
১৭) যশোর খুলনার ইতিহাস সতীশ চন্দ্র মিত্র ৩৬১ পৃ
১৮) ডক্টর আব্দুল করিম, চট্টগ্রামে ইসলাম ও ঐতিহ্য, জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ, ঢাকা : ফেব্রুয়ারি ২০১৮
১৯) গোলাম সাকলায়েন, বাংলাদেশের সূফী-সাধক, ইসলামি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ঢাকা: জুন ১৯৯৩
২০) ডঃ মোহাম্মদ আব্দুল জলিল সুন্দরবনের ইতিহাস
২১) East Africa and its Invaders p. 37
২২) Paranavitana, History of Ceylon, p.299
২৩) Ray, Haraprasad (1997). Sino-Indian Commercial and Diplomatic Relations. The Quarterly Review of Historical Studies. Vol.37. Calcutta: Institute of Historical Studies. p. 114

২৪)Siraj Uddin Ahmed. History of Barisal Division (Volume 1). Bhaskar Publications, Dhaka. 2010
২৫) History of Bengal Volume II Rakhaldas Bandyopadhyay Volume 2 187 p.

 

 

(লেখক পরিচিতি: শ্রী জ্যোতিষ্মান সরকার B.Tech Ceramic Technology তে পাঠরত)

 

 

Comment here