আঙিনা

‘ইংরেজি টিংরেজি কিছু’ –

যে-আলোচনা গত দু’কিস্তি ধরে চলছে তাতে একটা কথা খুব স্পষ্ট করে না বলে দিলে নয়। কথাটা হল এই যে, ইংরেজিতে চিন্তা করতে পারার ক্ষমতা অর্জনের অপরিহার্যতাকে তুলে ধরার অর্থ কিন্তু কোনোভাবেই নিজের মাতৃভাষা – এই কলামের পাঠকদের কাছে তা বাংলা – কে অবহেলা করতে, বা তাকে না শিখতে, বা ভুলে যেতে, এবং উলটে তাকে উপযুক্ত ভাবে ব্যবহার করার অক্ষমতাকে স্টেইটাস সিম্বল হিসেবে লোককে জানাতে পরামর্শ দেয়া নয়। কোনো ভাবেই নয়। ইন ফ্যাক্ট, বাংলাদেশে (এ বাংলাদেশ অতীতের বাঙালি লেখকদের বাংলাদেশ। আমাদের পূর্বদিকের তথাকথিত বাংলাভাষী রাষ্ট্রটি নয়।) থেকে কোনো বাঙালির ছেলে/মেয়ে কিছুতে বাংলা ভুলতে বা খারাপ শিখতে পারে না যদি না তাতে নিজেরা বাংলা মিডিয়মে পড়া এবং সেকারণে হাস্যকর হীনমন্যতায় ভোগা বাপ-মায়ের প্রচ্ছন্ন ত বটেই এমনকি বহুক্ষেত্রেই প্রকট আশকারা না থাকে।

যাহোক, যেটা বলছিলাম, ইংরেজিতে চিন্তা করার ক্ষমতা অর্জন করার কথা। এর জন্য সবচাইতে বেশি প্রয়োজন দিনের একটা বড় অংশ এমনি একটা পরিবেশে কাটানো যেখানে ইংরেজি ছাড়া অন্য কোনো ভাষা কেউ ব্যবহার করছে না। যা-ই বলা হোক না কেন তা ইংরেজিতেই বলা হবে। অবশ্যই যে শিখছে তার প্রথম দিকে প্রচুর ভুল হবে। নানারকমের ভুল। সে ত বাংলা প্রথম বলার সময়ও হয়েছে। ভুল হোক, তবু কথা ইংরেজিতেই চালিয়ে যেতে হবে জেদ করে। এই পরিবেশ প্রতিদিন চার পাঁচ ঘন্টা পেলে ছেলেমেয়েরা ইংরেজি শিখবেই। শিখতে বাধ্য। চিন্তা এমনিতেই ইংরেজিতে আসবে। বাংলার ক্রাচ বগলে না নিয়েই আসবে।

এবার, কেউ জিজ্ঞেস করতেই পারেন, তবে বাংলা মিডিয়ম কি তুলে দিতে হবে/উঠে যাওয়া উচিত? উত্তরদাতা আমি হলে উত্তর হল “হ্যাঁ”। এযুগে বাংলা মিডিয়ম স্কুলের প্রয়োজন বা প্রাসঙ্গিকতা শূন্য।

এই উত্তর অনেকেরই চরম outrageous মনে হতে পারে কিন্তু সেক্ষেত্রে অনুরোধ করব চটে না গিয়ে ঠান্ডা মাথায় বাস্তবটা বুঝতে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য পড়ানো বন্ধ করে দেয়া হোক তা কিন্তু একবারও বলিনি আমি। তার জন্য আলাদা পেপার থাকুক কিন্তু, পড়াশুনোর মাধ্যমটাই বাংলা করে দিলে লাভটা কী হয়? প্রায় প্রতিটি বিষয়েই গাদাগুচ্ছের technical term যেগুলোর অনেক ক’টারই বাংলা প্রতিশব্দ দেখলেই বোঝা যায় যে স্রেফ জোর করে অনুবাদ করা হয়েছে। সেসব “বাংলা” শব্দের চাইতে in fact আসল ইংরেজি শব্দগুলো অনেক সহজ। তাই, ইংরেজিতে বাঙলা বাদে অন্য সব বিষয় পড়লে ইংরেজির ওপর প্রয়োজনীয় দখল জন্মানোর পাশাপাশি ইংরেজি jargon গুলো মুখস্থ হয়ে যায় যা পরবর্তীকালে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ছাত্রদের সুবিধে দেয়। শুনতে যেমনই লাগুক, বিশ্বায়িত পৃথিবীতে global language, অর্থাৎ ইংরেজি, একেবারে শৈশব থেকেই ভালো করে শেখার কোনো বিকল্পই নেই।

তবে কী করণীয়? আমার ব্যক্তিগত মত, শিক্ষাদান শৈশব থেকেই ইংরেজিতেই দেয়া উচিত। কিন্তু এই ব্যবস্থায় স্কুল এবং বাড়ি, উভয়েরই দায়িত্ব অনেক বেড়ে যাবে। স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা নিজেরা যেন নির্ভুল ইংরেজি বলতে ও লিখতে পারেন সেটা নিশ্চিত করতে হবে কর্তৃপক্ষকে। সেই সঙ্গে তাঁদের উচ্চারণে যেন MTI অর্থাৎ Mother Tongue Influence না থাকে সেটাও দেখা প্রয়োজন। সম্ভব হলে কোনো ইংরেজ শিক্ষাবিদকে ভাষাশিক্ষার উপদেষ্টা করা হোক প্রতিটি স্কুলে। আর, বাড়ির বড়দের যত্নবান হতে হবে ছেলে/মেয়ের মাতৃভাষা শিক্ষার ব্যাপারে। তাঁদেরকে দেখতে হবে যাতে সন্তান নিজের মাতৃভাষায় লেখা অমর সৃষ্টিগুলো সম্পর্কে ঠিক সময় জানতে পারে। যেন সেসব বইয়ের রস থেকে কোনো ভাবেই বঞ্চিত না হয় যেগুলো ছাড়া বাঙালির শৈশব-কৈশোর অকল্পনীয়। এভাবে এগোতে পারলে ভাষাশিক্ষা খুব balanced হতে পারে বলে আমার ধারণা।

যা হোক, আপাতত এ-আলোচনা মুলতুবি রেখে সামনের কিস্তি থেকে দেখি ইংরেজি ভাষার আরও কিছু কিছু interesting বৈশিষ্ট্য নিয়ে লেখা যায় কিনা! ততক্ষণ কাঞ্জিকের বাকিটা আপনারা শেষ করে নিন!

 

(ক্রমশঃ)

Comment here