“কলকাতা বসে যদি ভাগ বাঁটোয়ারা করা হতো, তাহলে কোনো জিনিসের অভাব হতো না। নাজিমুদ্দিন সাহেব মুসলিম লীগ বা অন্য কারোর সাথে পরামর্শ না করেই ঘোষণা করলেন ঢাকাকে রাজধানী করা হবে। তাতেই আর আমাদের কলকাতার উপর আর কোনো দাবী রইলো না। এদিকে লর্ড মাউন্টব্যাটেন চিন্তাযুক্ত হয়ে পড়েছিলেন , কলকাতা নিয়ে কী করবেন?” “মিশন উইথ মাউন্টব্যাটেন” বইটা পড়লে সেটা দেখা যাবে। ইংরেজ তখনও ঠিক করে নাই কলকাতা পাকিস্তানে আসবে, না হিন্দুস্থানে থাকবে। আর যদি কোনো উপায় না থাকে তবে একে “ফ্রি শহর” করা যায় কিনা?! কারণ কলকাতার হিন্দু মুসলিম লড়বার জন্য প্রস্তুত। যে কোনো সময় দাঙ্গা হাঙ্গামা ভীষণ রূপ নিতে পারে। কলকাতার হিন্দু মুসলমান লড়বার জন্য প্রস্তুত। কলকাতা হিন্দুস্থানে পড়লেও শিয়ালদহ স্টেশন পর্যন্ত পাকিস্তানে আসার সম্ভাবনা ছিল। হিন্দুরা কলকাতা পাবার জন্য আরও কিছু ছেড়ে দিতে বাধ্য হতো।”
নিজের আত্মজীবনীতে প্রবল আক্ষেপের সঙ্গে এই কথাগুলি যিনি লিখে যাচ্ছেন তিনি আর কেউ নন, তথাকথিত অসাম্প্রদায়িক এবং “হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি” শেখ মুজিবর রহমান।
“পোকায় কাটা পাকিস্তান” তাকে দেওয়া হয়েছে, এ নিয়ে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত আক্ষেপ ছিল জিন্নাহর। এবং জিন্নাহর দল মুসলিম লীগের ক্যাডার হিসেবেই নিজের রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন শেখ মুজিব। অতএব তার চিন্তাভাবনায় সেই চাপ থাকবেই, এতে আশ্চর্য নেই।
নিজের আত্মজীবনীতে কলকাতা দাঙ্গা তথা ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে নিয়ে নিয়ে অসংখ্য মিথ্যাচারের নমুনা রেখে গেছেন মুজিব, একতরফা সমস্ত দোষ হিন্দুদের ঘাড়ে চাপিয়েছেন যেন প্রত্যক্ষ সংগ্রামের ডাক হিন্দুরা দিয়েছিল, জিন্নাহ নন। কিন্তু উল্লেখযোগ্য বিষয় যেটি, একটি সত্য কথা তিনি বলে ফেলেছেন।
কী সত্যি কথা?
একটি আক্ষেপ। জীবনের শেষদিন অব্দি তিনিও জিন্নাহর মতোই একটি বিষয় নিয়ে আক্ষেপ করে গেছেন।
কী বিষয়? কী আক্ষেপ?
কলকাতা না পাওয়া।
আনন্দনগরী কলকাতা, কল্লোলিনী কলকাতা, তৎকালীন ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ শহর কলকাতা তিনি পাকিস্তানে নিয়ে আসতে পারেননি, এ ব্যর্থতা মুজিব ভুলতে পারেননি। তাই আক্ষেপ করে নিজের আত্মজীবনীতে তিনি আরও লিখেছেন, “কলকাতা পাকিস্তানে থাকলে পাকিস্তানের রাজধানী কলকাতায় করতে বাধ্য হতো, কারণ পূর্ব বাংলার লোকেরা দাবী করতো পাকিস্তানের সংখ্যায়ও তারা বেশি, আর শহর হিসাবে তদানীন্তন ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ শহর কলকাতা। ইংরেজের শাসনের প্রথমদিকে কলকাতা একবার সারা ভারতবর্ষের রাজধানীও ছিল।”
পাঠক , আবার পড়ুন, “তদানীন্তন ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ শহর কলকাতা।” হ্যাঁ স্রেফ এই একটি কারণেই , যাকে ইংরেজিতে বলে, by hook and crook, আদা জল খেয়ে তারা উঠে পড়ে লেগেছিলেন কলকাতাকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করার।
প্রথম ছলনা ছিল অবিভক্ত বঙ্গপ্রদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্র। পরিণাম না বুঝেই তাতে সায় দিয়েছিলেন শরৎ বসু, একবারও ভাবেননি তাতে বাঙালি হিন্দুর অবস্থা কী হতে পারে !
কিন্তু শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্য সেই চক্রান্ত ব্যর্থ হয়ে গেলো। পশ্চিমবঙ্গের বিধান পরিষদে গণভোটে জয়ী হয়ে জন্ম নিলো নতুন রাজ্য, বাঙালি হিন্দুর হোমল্যান্ড, “পশ্চিমবঙ্গ”! শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের কাছে বাঙালি হিন্দুর এই ঋণ কোনোদিনই শোধ হবে না। তিনি বাঙালি হিন্দু নামক জাতির রক্ষাকর্তা।
তারপরে ?
এলো দ্বিতীয় ছলনা। প্রস্তাব এলো “কলকাতা”- র আন্তর্জাতিকীকরণ। তাকে “ফ্রি সিটি” হিসাবে ঘোষণা করা হোক, স্বার্থান্বেষী মহল থেকে দাবী উঠলো।
সেটি কীরকম?
প্রস্তাব এলো। কলকাতা ভারত বা পাকিস্তান, কারোর অন্তর্ভুক্ত হবে না। তা একটি আন্তর্জাতিক নগর হিসেবে গণ্য হবে এবং তা আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের শাসনাধীন থাকবে।
এই ধোঁয়াশাভরা প্রস্তাবের পিছনের উদ্দেশ্য বুঝতে বাঙালি হিন্দুর একেবারেই অসুবিধা হয়নি। বাণিজ্য, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড, জিডিপির বিচারে কলকাতা তখন ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ শহর। তাই যেন যেন প্ৰকারেণ তাকে পাকিস্তানে চাই। তাই “ফ্রি সিটি”নামক সোনার পাথরবাটির ছল করে তাকে নিজেদের আওতায় আনার চক্রান্ত।
বাঙালি হিন্দু তখন জাতির স্বার্থে লড়তে জানতো, চোখের বদলে চোখ দেখাতে জানতো।
তাই সে গর্জে উঠেছিল, শাণিত যুক্তির সাহায্যে প্রতিপক্ষের ছলনা ছিন্নভিন্ন করে সমস্ত চক্রান্ত ব্যর্থ করে দিয়েছিল।
তার ছাপ রয়েছে তৎকালীন পত্র পত্রিকায়, পাক্ষিকে।
সেরকমই একটি চিঠি যা আদতে অমূল্য ঐতিহাসিক দলিল, তা বঙ্গানুবাদ সহ দেওয়া হচ্ছে কাঞ্জিকের এই পর্বে। চিঠিটি প্রকাশিত হয়েছিল অমৃতবাজার পত্রিকায়, ৮ ই মে, ১৯৪৭। লেখক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনৈক অধ্যাপক, ডি এন ব্যানার্জি। বর্তমানের দ্বিধা বিভক্ত বাঙালি হিন্দু অতীত গৌরব স্মরণ করে পুনরায় স্বমর্যাদায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে উদ্যোগী হবে, এইমাত্র আশা –
Hands Off Calcutta, Please
কলকাতার দিকে দয়া করে নজর দেবেন না
(প্রফেসর ডি এন ব্যানার্জি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
সম্প্রতি কিছু কিছু মহল থেকে একথা গুঞ্জরিত হয়ে চলেছে যে , হিন্দুস্থাণ এবং পাকিস্তান, অবিভক্ত ভারতবর্ষকে এই দুই ভাগে বিভাজিত করার সিদ্ধান্তের অপরিহার্য অংশস্বরূপ অবিভক্ত বঙ্গপ্রদেশও যখন পূর্ববঙ্গ এবং পশ্চিমবঙ্গ, এই দুই খণ্ডে দ্বিখন্ডিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পর্ব সমাপ্ত, তখন “কলকাতা”- কে একটি “আন্তর্জাতিক নগরী” রূপে স্বীকৃতি দেওয়া উচিৎ।এই বক্তব্যের তাৎপর্য এই যে কলকাতা, তার বন্দর এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চলসমূহ আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষ দ্বারা শাসিত হবে এবং এই অঞ্চলে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তথা ভারত সরকারের কোনোরকম হস্তক্ষেপ করার কোনো অধিকার থাকবে না। বর্তমান ভারতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে এই বক্তব্য যেমন অনভিপ্রেত তেমনি অবিবেচনাপ্রসূত, অপরিণামদর্শী এবং ভয়ানক। পশ্চিমবঙ্গের প্রাণকেন্দ্র হলো কলকাতা এবং জনসংখ্যা কিংবা সংস্কৃতি কিংবা ব্যবসা বাণিজ্য, সবদিক থেকে কলকাতা আদ্যন্ত হিন্দুঅধ্যুষিত। ১৯৪১ সালের জনগণনা অনুযায়ী , কলকাতা নগরীর জনসংখ্যার শতকরা ৭৩ জন হিন্দু, মাত্র ২৪ জন মুসলিম এবং অবশিষ্ট কিছু ইওরোপিয়ান, অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান, চাইনিজ ইত্যাদি । এমনকি প্রফেসর ক্যুপল্যান্ড , যার কিনা কোনোকালেই “হিন্দুঘেঁষা” বলে কোনো সুখ্যাতি নেই, তিনিও তার “Future of India” গ্রন্থে (তৃতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা ৮৮-৮৯) সম্যকরূপে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন যে-
“কলকাতা এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চলসমূহ হিন্দু অধ্যুষিত।এই নগরীতে হিন্দুর সংখ্যা ১৫৩১৫১২, মুসলিম ব্যতিরেকে অন্যান্য অহিন্দু ৭৯৮৪৪, এবং মুসলিম ৪৮৭৫৩৫। এই শহর চব্বিশ পরগণা জেলার অন্তর্ভুক্ত এবং কলকাতা ব্যতিরেকে এই জেলার অধিবাসীদের মধ্যে ২৩০৯৯৬ জন হিন্দু, ১১৪৮১৮০ জন মুসলিম এবং ৭৮২১০ জন অন্যান্য অমুসলিম । অতএব এই জেলা এবং শহর, দুই ক্ষেত্রেই অমুসলিম এবং মুসলিমের অনুপাত ২:১ এবং জনসংখ্যার এই বিন্যাস এই শহরের সাংস্কৃতিক এবং বাণিজ্যিক জীবনধারায় সম্যকরূপে প্রতিফলিত হয়।”
প্রফেসর ক্যুপল্যান্ড আরো বলেছেন যে কলকাতার সংস্কৃতি এবং বাণিজ্য, এর মধ্যে “দ্বিতীয়টিতে ব্রিটিশদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অবদান থাকলেও হিন্দুদের অবদানই সিংহভাগ। এক্ষেত্রে মুসলিমদের কিঞ্চিদধিক বাণিজ্যিক কর্মকান্ড অঞ্চলবিশেষে থাকলেও, হিন্দুদের ক্রিয়াকলাপ প্রশ্নাতীতভাবে অনেক বেশি। ” এবং ১৯৪১ সালে শহরে বহু সংখ্যায় হিন্দুর আগমনের ফলপরিণামস্বরূপ, এই হিন্দু আধিপত্য, আগের চেয়েও বৃদ্ধি পেয়েছে, একথা বলাই বাহুল্য।
উপরের বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে কলকাতার এই “আন্তর্জাতিকীকরণ” বা এর স্থায়ী বাসিন্দাদের স্বার্থ উপেক্ষা করে কোনো নির্দিষ্ট জাতি বা সম্প্রদায়কে আন্তর্জাতিক আইনের দোহাই দিয়ে অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান, আদতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তথা ভারত সরকার, উভয়ের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের নামান্তর। এইটি বাস্তবায়িত হলে তা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে তার স্বাধীনতা হরণের পর্যায়ের সামিল ব্যতীত আর কিছুই হবে না। এবং একই সঙ্গে , কলকাতা যেহেতু ভারতের বহু অঞ্চলের পণ্য সরবরাহের জন্য প্রধান বন্দর, তাই এর আন্তর্জাতিকীকরণ ভবিষ্যতে অনেক প্রশাসনিক সমস্যার জন্ম দেবে। কোনোভাবেই এই জিনিস মেনে নেওয়া যায় না। কোনো স্বাধীন, সার্বভৌম, আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন সরকার, কোনোভাবেই হিন্দুঅধ্যুষিত কলকাতাকে এভাবে আরেকটি ডানজিগ বা আরেকটি সাংহাই বা আরেকটি তান্জিয়ার কিংবা আরেকটি ট্রিস্টি বানানো মেনে নেবে না।এই শহর ভারতভুক্ত হওয়া উচিত এবং ভারতের অন্তর্গত নতুন প্রদেশ পশ্চিমবঙ্গের রাজধানীরূপে এর স্বীকৃতি পাওয়া উচিত। অবশ্যই অব সম্প্রদায়ের মানুষ এখানে স্বাগত এবং তারা তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অব্যাহত রাখতে পারবেন যদি তারা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আনুগত্য স্বীকার করেন এবং তার প্রণীত আইন মেনে চলতে স্বীকৃত হোন।
একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের কিছু সংখ্যক প্রতিনিধি সুযোগ বুঝে এই আন্তর্জাতিকীকরণের সপক্ষে সওয়াল করছেন কারণ তাদের প্রবল লালসা এখনও সম্পূৰ্ণ চরিতার্থ হয়নি। তাদের এই পরামর্শই দেওয়া যেতে পারে যে, কলকাতার দিকে লোলুপ নজর দেবেন না।হিন্দু অধ্যুষিত কলকাতা কীভাবে শাসিত হবে , এ নিয়ে তাদের মাথা না ঘামালেও চলবে। “আন্তর্জাতিকীকরণ” নামক সোনার পাথরবাটি নিয়ে যদি তাদের এতই উৎসাহ থাকে তাহলে তারা সে পরীক্ষার গিনিপিগ হিসেবে তাদের শাসনাধীন চট্টগ্রাম বা করাচী বন্দরকে অতি অবশ্যই বেছে নিতে পারেন এবং আমরা তাকে স্বাগত জানাবো। আমরা তাদের এখন একটি কাজই করার পরামর্শ দেবো, তা হলো অবিলম্বে কলকাতা পরিত্যাগ করা।কলকাতার ওপর কোনো বহি:শক্তির হস্তক্ষেপ ভারত সরকার তথা পশ্চিমবঙ্গ সরকার কোনোভাবেই মেনে নেবে না। মহামান্য সরকার বাহাদুর যখন সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছেন যে ১৯৪৮ সালের জুন মাসের মধ্যে ক্ষমতা হস্তান্তরপর্ব সমাপ্ত হবে, অতএব আশা করা যায় যে, ইওরপিয়ান বণিক সম্প্রদায়ও দেশের বর্তমান আভ্যন্তরীণ দলীয় রাজনীতি থেকে নিজেদের দূরে রাখবে।তাদের সময়ের পদধ্বনি শুনতে হবে, বুঝতে হবে এবং নিজেদের সেইমতো প্রস্তুত করতে হবে। এবং এটি করলেই তারা বিচক্ষণতা বা বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেবেন।
আশা করা যায় যে বর্তমান মহামান্য ভাইসরয় তথা ভারতের গভর্নর জেনারেল যিনি তার বাস্তববোধ এবং ন্যায়-বিচারের জন্য খ্যাতমান, তিনি কোনোভাবেই কলকাতার এরূপ “আন্তর্জাতিকীকরণ” নামক হ য ব র ল তে সায় দেবেন না।
সবশেষে আমি ব্রিটিশ ক্যাবিনেটের প্রতিনিধিএর বক্তব্য যাতে ভাইসরয় স্বয়ং গত ১৬ ই মে সীলমোহর দিয়েছিলেন, তার কিছু প্রাসঙ্গিক অংশ উদ্ধৃত করছি। মহামান্য সরকার বাহাদুর কোনোভাবেই তার নিজের এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে, কলকাতা এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চলকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আওতাভুক্ত করা ব্যতীত অন্য কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।
“আমরা কোনোভাবেই বাংলা ও আসামের অমুসলিম জনঅধ্যুষিত জেলাগুলিকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করার কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছি না। পাকিস্তান গঠনের সপক্ষে যে যে যুক্তি দেওয়া যায়, ঠিক সেই একই যুক্তি ,এই অমুসলিম জনঅধ্যুষিত জেলাগুলিকে পাকিস্তানের বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট।”
যদি পাকিস্তান সরকার মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলগুলি শাসন করতে চায়, তাহলে হিন্দুস্থাণ সরকার বা কোর্ট সরকারের অধীন পশ্চিমবঙ্গ সরকার অমুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল শাসন করবে, এই ন্যায্য যুক্তি থেকে সরে আসার কোনো কারণ নেই। কলকাতা অমুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল এবং অতি অবশ্যই, একটি হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চল। যদি মহামান্য সরকার বাহাদুর তার পূর্বতন সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন তার প্রতিক্রিয়ায় হিন্দু – ব্রিটিশ সম্পর্ক বিষাক্ত হতে বাধ্য। আশা করা যায়, মহামান্য সরকার বাহাদুর বিচক্ষণতার পরিচয় দেবেন এবং এরূপ কোনো হঠকারিতা দেখবেন না। যে সিদ্ধান্তই নেওয়া হোক না কেন, তা যেন ন্যায়সঙ্গত, যুক্তিসিদ্ধ হয়।”
( ৮ ই মে, ১৯৪৭)
HANDS OFF CALCUTTA, PLEASE !
(Professor D.N. Banerjee, Dacca University)
” It has been suggested in some quarters that in the event of the partition of Bengal into two provinces of East Bengal and West Bengal as a logical corollary to the division of India into Hindusthan and Pakistan, Calcutta should be made an ” International City”.This means , presumably, that the city of Calcutta together with the Port and other adjacent areas should be governed by an International Administrative Authority wholly independent of the Government of West Bengal and also of the Union of India. This suggestion is as ridiculous in the present context of Indian politics, as it mean, spiteful and mischievous. Calcutta is in the heart of West Bengal and it is predominantly Hindu in character in respect of its population, culture, trade and commerce.According to the census of 1941, Hindus constitute about 73 percent of the population of the city of Calcutta, Muslims only about 24 percent and the others such as Europeans , Anglo-Indians, Chinese etc. the rest. Even Professor Coupland , by no means a particular friend of the Hindus has been constrained to admit in his “Future of India” ( Part III, pp 88-89) :
“The population of Calcutta and its neighbourhood is predominantly Hindu. The city itself contains 1531512 Hindus, 79844 other non-moslems , and 497, 535 moslems. It lies in the Twenty-Four Parganahs District which excluding the city, contains 2309996 Hindus 78210 other non- moslems and 1148180 Moslems. Thus, both in the city and in the district, the proportion in over two to one in favour of non-moslems. And this balance is reflected in the city’s cultural and commercial life.”
Professor Coupland has further stated that both in culture and in commerce “apart from the great contribution of British empires to the latter, the Hindus share predominates. Moslems has substantial business interest in the area , but the Hindu interests are unquestionably greater.” And this predominance of the Hindu population in the city of Calcutta is undoubtedly much greater to-day, as a result of the influx of a very large member of Hindus into the city during the last few years than what it was in 1941.
In view of what I have shown above, any “internationalization” of the City of Calcutta or any special extra territorial rights and privileges for any nation or community there other than those usual communities under the head of extraterritorriality permitted by international law in all countries, will be a serious affront to the Government of the province of West Bengal as part of the Union of India. Besides, any sich arrangement will be like a pistol held at the head of the Government of West Bengal. Moreover, apart from the fact that Calcutta is and will continue to be, the chief port for the supply of imported commodities to many areas of Hindusthan, any internationalization of the city would lead to various types of administratives complications in future. All this must be prevented. No self respecting Government of Union of India can tolerate the creation of a Danzig or a Sanghai or a Tangier, or a Trieste, in the predominantly Hindu city of Calcutta. This city should be the capital of the new province of West Bengal as part of the Union of India. Off course, everybody will be welcome to carry on his normal avocation in the city, subject to the requirements of the law made by the Government of West Bengal.
Some members of particular political organization seem to have encouraged, and even advocated, the idea of “internationalization” of Calcutta, chiefly out of sheer spitefulness. They would be well advised to keep their hands off Calcutta. It is not their business to suggest as to how this predominantly Hindu city should be governed. If they are so enamoured of the idea of “internationalization”, they are perfectly at liberty to apply it to Chittagong or Karachi or both. They should leave Calcutta severely alone. The people of West Bengal- or for the matter for that, for the Union of India – would not tolerate any interference by any outside authority with the administrative arrangements for Calcutta to be made by The Government of West Bengal. It is also sincerely hoped that now that His Majesty’s Government has definitely decided to transfer power to the Indian people by the end of June, 1948, the European commercial community in India will forbear from any interference with the internal politics of this country. It should carefully read the sig of the times and adjust itself accordingly. The path of wisdom as well as of interest lies only in that direction.
Further it is earnestly hoped that His Excellency the ( present) Viceroy and Governor- General of India, who has a great reputation for sturdy common sense and fair dealing, will not be a party to any such preposterous transaction as the “internationalization” of the city of Calcutta or even its division into two or more separate administrative zones as suggested by some people.
Finally, it may be noted here that in view of the following categorical statement made by the British Cabinet Delegation and the Viceroy of 16th May last with its “full aproval”, His Majesty’s Government, too, cannot now legitimately permit the adoption of any other course of action than the inclusion of the city of Calcutta with all its adjacent areas, within the exclusive jurisdiction of the Government of West Bengal as part of the Union of India :
” Nor can we see any justification for including within a sovereign Pakistan those districts of Punjab and of Bengal and of Assam in which the pooulation is pre-dominantly non-muslim. Every arguments that can be used in favour of Pakistan, can equally in our view be used in favour of the exclusion of the non-muslim areas from Pakistan.”
If the Government of Pakistan is to rule over predominantly Muslim area, then the Government of Hindusthan- in the present context the Government of West Bengal as part of the Union of India -must rule over the predominantly non-muslim areas on this side of India. There can be no equitable escape from this logical and reasonable conclusion. And the city of Calcutta is , as shown before, not merely predominantly non-muslim, but also predominantly Hindu in character. If His Majesty’s Government now tries in any way to go back upon the clear implications of its solemn declaration as quoted above , it is bound to produce a most unfortunate repercussion upon the whole future of Hindu- British relationship. It is therefore, sincerely hoped that His Majesty’s Government will forbear from any such action. Let logic take its course and let reason and equity have their way.”
May 8, 1947 (Page 4)
বাঙ্গালী হিন্দু। পেশাগত ব্যস্ততার বাইরে বাঙ্গালী হিন্দুর অতীত গৌরব এবং গৌরবময় ভবিষ্যতের সন্ধানে নিমগ্ন নগণ্য ছাত্র।
Comment here