আঙিনা

‘ইংরেজি টিংরেজি কিছু’

(আগের পর্বের লিঙ্ক)

গেল পর্বে বলেছিলাম এবারও রান্নাঘরেই বিচরণ করব। সবজী নিয়ে কিছুটা মাথা ঘামিয়েছি গতদিন। আজ একটু আমিষের দিকে যাওয়া যাক না হয়! না, বরং মশলার পাত্রের দিকে যাই আগে। ওসব ছাড়া আমিষ ত জমবেই না! দেখবেন, গড়পড়তা খদ্দেরের সুবিধে করে দিতে বিভিন্ন FMCG (fast moving consumer goods. এমন সমস্ত পণ্যদ্রব্য যেগুলোকে উৎপাদনের জোর একবছরের মধ্যেই consume করে ফেলতে হয়।) ‘র প্যাকেজের ওপর তার ভেতরের বস্তুর দেশীয় নাম ইংরেজি হরফে লিখে দেয়। যেমন Jaggery কে ইংরেজিতেও Gur (গুড়), জিরের গুঁড়োকে jeera powder, ইত্যাদি। কিন্তু, এগুলো ইংরেজি শব্দ নয়। এরা ইংরেজি শব্দ হয়ে যেতে পারত যদি, ইতোমধ্যেই এসবের কোনো ইংরেজি প্রতিশব্দ না থাকত। কিন্তু, ব্যাপারটা হল এই যে, তর্কাতীত ভাবে পৃথিবীর সমৃদ্ধতম ভাষাটির এত দৈন্য অবিশ্বাস্য যে, মশলাপাতির নিজস্ব প্রতিশব্দও তাদের থাকবে না। এবার তবে দেখে নিই কোন মশলার ইংরেজি নাম কী!

মৌরী – fennel, aniseed
জিরে – cumin
জোয়ান – caram, celery, bishop’s weed
এলাচ – cardamom
মেথি – fenugreek
দারচিনি – cinnamon
লবঙ্গ – cloves
হিং – asafoetida
হলুদ – turmeric
তেজপাতা – bay leaf
তিল – sesame seeds
ধনেপাতা – coriander

আপাতত এই থাক নাহয়। এবার সোজা মাংসের দিকে যাব। যেগুলো আমরা খাই এবং যেগুলো সাধারণতঃ খাই না সেগুলোর সবকটার ইংরেজি নামই দেয়ার চেষ্টা করব।

মুর্গীর মাংস – chicken
পাঁঠা/খাসির মাংস – chevon/goat meat
কচি ভেড়ার মাংস – lamb
পরিণত (অন্ততঃ এক বছর) বয়স্ক ভেড়ার মাংস – mutton
শুয়োরের মাংস – pork
গোমাংস – beef
মহিষের মাংস – beef/buff
(এঁড়ে) বাছুরের মাংস – veal
হরিণের মাংস – venison
খরগোশের মাংস – rabbit meat
কচ্ছপের মাংস – tortoise /turtle meat.

আচ্ছা, এই ব্যাপারটা একটু কৌতূহলোদ্দীপক নয় কি যে, শূকর জন্তুটির ইংরেজি নাম pig অথচ, তার মাংসের নাম pork? পাঁঠা বা খাসি goat কিন্তু, তাদের মাংস chevon! বাছুর হল calf কিন্তু, তার মাংস veal! ভেড়া হল sheep কিন্তু তার মাংস হল muton! ব্যাপারটা কী? হ্যাঁ, বলছি।

Norman দের Britain জয়ের কথা ত শুনেইছেন! ওটি হয়েছিল ১০৬৬ খ্রীস্টাব্দে। Normandy ‘র Duke William সেবছর ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ আক্রমণ করেন এবং ২৫ ডিসেম্বরে তাঁর রাজা হিসেবে অভিষেক হয়। এভাবে William the Bastard (বেজন্মা উইলিয়ম। তিনি একটি ‘অবৈধ’ প্রেম কাহিনীর ফসল ছিলেন তাই এই নামেই লোকে তাঁকে চিনত বেশি) William I হয়ে Britain এ Norman শাসন প্রবর্তন করেন।

এই সময় থেকে, স্বাভাবিকভাবেই, নতুন শাসকদের ভাষা Norman French থেকে প্রচুর শব্দ তখনকার ইংরেজিতে প্রবেশ করা শুরু করে। এবার, শাসিতের এক বড় অংশের মধ্যে নিজেদেরকে শাসকের তুলনায় নিকৃষ্টতর জীব ভাবার প্রবৃত্তিকে ত অস্বীকার করা যায় না! বিজিত Anglo-Saxon দের এই প্রবৃত্তি (প্রতিটি Angle বা Saxon, Robin hood ছিল না) তাদেরকে দিয়ে কিছু অদ্ভূত কাজ করানো শুরু করল।

বিশেষ করে যুদ্ধক্ষেত্র, সরকারি কাজকর্ম, এবং হেঁশেলে বহু Anglo-Saxon শব্দকে হঠিয়ে ঢুকে পড়ল ফরাসী শব্দ এবং স্থানীয়রা সাদরে গ্রহণও করল তাদেরকে। শাসকের ভাষায় কথা বললে নিজেকেও বেশ “জাতে উঠেছি” বোঝানো যায় কিনা! এই প্রক্রিয়ারই ফল ওপরের ঐ আপাত-অস্বাভাবিক ব্যাপারগুলো। Pig খোঁয়াড়ে pig কিন্তু খাবার টেবলে pork (ফরাসী porc থেকে); গরু মোষ গোয়ালে cow এবং buffalo অথচ টেবলে beef (ফরাসী beouf থেকে); একইভাবে, ভেড়া অর্থাৎ sheep খাদ্য হয়ে যাওয়ার পর mutton (ফরাসী mouton),বাছুর অর্থাৎ calf খাদ্য হিসেবে veal (ফরাসী veau), পাঁঠা-খাসি অর্থাৎ goat খাদ্য হিসেবে chevon (ফরাসী chèvre এর সঙ্গে mutton এর on যোগ করে) ইত্যাদি ইত্যাদি।

আজ নয় এখানেই ইতি টানি। বিদায় নেয়ার আগে একটা কথা বলে যেতেই হবে। আপনারা আমায় না বললেও আমি জানি, ওপরে ঐ chevon – mutton এর case ‘টাতে আপনাদের নিরানব্বই শতাংশ একটা ঝটকা খেয়েছেন। হয়ত আমায় মূর্খ বা উন্মাদ ভাবাও শুরু করেছেন। কিন্তু ব্যাপারটা তা নয়। আপনাকে বই বা internet ও ঘাঁটতে হবে না। দেখবেন, কোনো কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কিন্তু লাভের পাশাপাশি ভাষা ব্যবহারে ত্রুটিহীনতার দিকেও রীতিমতো নজর রাখে। আপনার বাড়ির আশেপাশে হরিণঘাটা মীট এর কোনো outlet থাকলে একবার গিয়ে ওদের, বাইরে টাঙানো rate chart টা দেখে আসুন। দেখবেন পাঁঠা/খাসিকে chevon ই বলছে, mutton নয়। প্রমাণ পাবেন চম্পক মজুমদার বাজে বকছে না।

আজ তবে উঠি? “কাঞ্জিক” এর বাকিটুকু পড়ে ফেলুন এবার।

Comment here