– শ্রী সুমিতাভ বিশ্বাস
এই কথাটি শুনলেই আমাদের বিগত শতাব্দীর বিভীষিকাময় চিত্রগুলি যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে। অভুক্ত শিশু রাস্তার ধারে বসে কাঁদছে, মা পাগলের মতন ঘুরছে তার সন্তানের খোঁজে, রাস্তা জুড়ে অঙ্গ-প্রতঙ্গ যত্রতত্র ছড়িয়ে আছে। এই সমস্ত দৃশ্যে, মনুষ্য হৃদয়ে আত্মসমালোচনার ঢেউ ওঠে, যা শেষ হয় আত্মগ্লানিতে। কেন যুদ্ধ? কেন এতো রক্তপাত? এক ফসলা জমির দামের কাছে মানুষের জীবনের দাম এতই কি নগন্য? সত্যি তো, মনুষত্বের এই প্রশ্ন গুলো কি সত্যি অগ্রাহ্য করা যায়? যায় এবং যায় না!
চরিত্রের সবলতা বা দুর্বলতা প্রকাশ পায়, যখন কোনো ব্যক্তি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভূমিকা গ্রহণ করেন। আমাদের যে সুনিপুনতার সাথে সহিষ্ণুতার পাঠ পড়ানো হয়েছে, সেই সততা, কর্তব্যপরায়নতা ও দৃঢ়সংকল্পিতচিত্ত নির্মাণের পাঠে ছিল না। যার ফলে সংকরাচার্য্য, অত্রিমুনি, বৃহস্পতির মতো ব্যাঘ্রবিক্রমশালী ব্যক্তিত্বের স্পর্শিত পুণ্যভূমি আজ ক্লীব, হীন মেষবেষ্টিত হয়ে পড়েছে। নিজেদের হীনতা ঢাকতে আমরা আজ ঠিক-ভুল বিচারের আড়াল খুঁজেছি। নিজেদের সংস্কৃতি, পরম্পরা ভুলে ছুটেছি অপরের ধন বন্টনের সাহায্যে। তাই তাদের ঠিক হয়ে উঠেছে আমাদের ঠিক, তাদের ভুল আমাদেরও ভুল। আমরা আজ ঠিক-ভুল বিচারে এতটাই আবদ্ধ হয়ে পড়েছি, যে সমস্যা কে ভুলে সমাধানের শ্রেণীবিভাগ নিয়ে আমরা বেশি চিন্তিত। সর্বাগ্রে আমাদের বোঝার দরকার যে সমাধানের কখনো শ্ৰেণী বিচার করা যায় না। সমস্যা অনুযায়ী সমাধান আসে, সমস্যা যদি গুরুতর হয়ে থাকে সমাধানের রূপেও কাঠিন্য প্রকাশ পায়। সেই কঠোরতা দেখে আমরা যদি পলায়নবৃত্তি বা আপোষকামী সিদ্ধান্তের আশ্রয় নেই, তাহলে আমাদের পরবর্তীকালে সেই সমস্যার আরো বীভৎস রূপের সম্মুখীন হতে হবে, এই বোধটি যেন আমাদের থাকে। প্রকৃত সমাধান কে হতে হবে উদ্দেশ্যআশ্রিত। Complete impact on the problem along with minimal disruption in the ambience, shall constitute an Ideal Solution.
অনেক সময় আমরা কূটনৈতিক চাল ও আপোষকামী সিদ্ধান্তের মধ্যে প্রভেদ করতে পারিনা। কূটনৈতিক চাল হলো তাই যা শত্রুপক্ষ কে অস্ত্রহীন ভাবে কোণঠাসা করে বাধ্য করে পরাজয় স্বীকার করতে, আর অপরদিকে আপোষকামী সিদ্ধান্ত হলো তাই যা মেরুদণ্ডের উপস্থিতি সত্ত্বেও তার অনুপস্থির প্রমান দেয়। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, ব্যক্তিত্বের দৃঢ়তার প্রামাণ্য স্বরূপ একান্তই যুদ্ধ নয়। War is the last resort. কূটনৈতিক সমস্ত পন্থা যখন নিরস্ত্র হয়, তখনই এই পন্থার অবলম্বন করা উচিত। যুদ্ধ কোনো option নয়, its THE ANSWER, when everything else fails! শত্রুপক্ষের strategic point গুলোতে আঘাত করে, তার সামরিক ক্ষমতা কে দুর্বল করার উদ্দেশ্যই হলো যুদ্ধশাস্ত্রের প্রাথমিক পাঠ। একবিংশ শতাব্দীর যুদ্ধ যে বিবর্তন দেখেছে তা একাধারে যেমন ভয়াবহ আরেক দিকে ফলপ্রসূ। বর্তমানে ইউক্রেনে যে ভাবে Cyber War এর চিত্র অঙ্কিত হচ্ছে, তা থেকে যুদ্ধতত্ত্ব যে আরেকটি বড় বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সামরিক বাহিনী দিয়ে আঘাত করার আগে, শত্রু পক্ষের ঘরের বিদ্যুৎ, জলের লাইন, ও ইন্টারনেট পরিষেবা যদি ১২ ঘন্টার জন্যও বন্ধ করে দেওয়া যায়, তাহলে সেই ধাক্কা সামলানোর ক্ষমতা এই বিশ্বায়নের জগতে কোনো দেশের নেই। যত বড় দেশ তত কম সময়ের জন্য এরকম আঘাত হয়ে উঠতে পারে মারণঘাতী! এমতাবস্থায় ভারতের যে বিপুল IT talent তার যথাযত ব্যবহারের সময় আগত। দেশের Cyber Security Infrastructure তৈরির ক্ষেত্রে এই talent pool কে tap করতে হবে। শুধুমাত্র সরকারি ভাবে নয়, বেসরকারি ভাবেও general IT education সাধারণ জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। শুধুমাত্র PIN শেয়ার করবেন না, Password কাওকে জানাবেন না বললেই, দেশের সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা দেওয়া যাবে না। এবার দরকার সচেতনতা যা হতে পারে এই বিষয়ের বিদ্যালাভের মধ্যে দিয়ে।
ব্যক্তি চেতনা যখন মনুষত্ব স্তরে, তখন সত্যি মনুষত্বের প্রশ্ন অগ্রাহ্য করা যায় না। যে ব্যক্তি কে উপরে আলোচিত প্রশ্ন গুলো তার সমগ্র অস্তিত্ব কে নাড়া দিয়ে তার এযাবৎকালে তৈরি হওয়া সকল মতাদর্শ কে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়ে নিঃস্ব করে দেয়, তার মধ্যে জাগে খোঁজ। জীবনের রহস্য উন্মোচনের খোঁজ, আত্মপরিচয়ের খোঁজ! এই খোঁজ থেকেই শুরু হয় চেতনার সেই উত্তরণমুখী যাত্রা! মনুষত্ব.. দেবত্ব.. ঋষিত্ব.. Towards the infinite! যেখানে সাধারণ কোনো বাধাই আর থাকে না, রক্তমাংসের মানুষ প্রকাশিত হন মহাপুরুষ রূপে! শুধুই থেকে যায় করণীয় কর্তব্য, প্রেম ও উদ্দেশ্য।
(লেখক পরিচিতি: সফটওয়্যার ডেভেলাপার ও গবেষক – ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি, খড়গপুর)
Comment here