আঙিনা

‘ইংরেজি টিংরেজি কিছু’ –

এ প্রসঙ্গে কথা আগেও বলেছি এবং আজও বলছি। ব্যাপারটা হলো যে, এরকম আগেও দেখেছি এবং এখনো দেখে যাচ্ছি (ইন ফ্যাক্ট ২০০২ সাল থেকে, অর্থাৎ আমার লেকচারশিপ যে বছর শুরু সে বছর থেকেই দেখছি যে, কারুর উচ্চারণ ঠিক করে দিলে সাধারণত দু ধরনের রেসপন্স পাওয়া যায়। প্রথম ধরণের রেসপন্সটা হল সেই ধরণের রেসপন্স যে ধরনের রেসপন্স প্রতিটি স্কলারের কাছ থেকেই আসা উচিত। অর্থাৎ, আমি একটা জিনিস জানিনা কিন্তু যখনই আমাকে সেটা জানানো হল অর্থাৎ ঠিক করে দেওয়া হল, আমি নির্দ্বিধায় ভুল স্বীকার করে নিজেকে ঠিক করে নিলাম। কিন্তু এছাড়া আরো এক ধরনের রেসপন্সও পাওয়া যায় এবং ১) সেটা বিশেষ করে একজন শিক্ষকের কাছে খুব হতাশা জনক এবং ২) কোনো স্কলারের কাছ থেকে কখনোই আসা উচিত নয়। সেটা হল, আমি জানিনা কিন্তু সে কথা আমি স্বীকার করব না কারণ তাতে আমার ইগো আহত হয় এবং তাই আজেবাজে যুক্তির অবতারণা করে নিজের ভুলটাকেই বৈধতা প্রদানের অপচেষ্টা চালিয়ে যাব। এই দ্বিতীয় ধরণের রেসপন্স শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরই ক্ষতি করে সবচেয়ে বেশি।

আসলে, আজকে আমার ইচ্ছে হলো উচ্চারণের গুরুত্বটা সম্পর্কে, মানে শুদ্ধ উচ্চারণের গুরুত্ব সম্পর্কে আরেকবার একটু আলোচনা করতে।

দেখুন, আমাদের বাঙলা ভাষায় তিন রকমের ‘স’ ধ্বনি আছে আমরা সবাই জানি। স, শ, এবং ষ। ইংরেজিতে S দিয়েই এই তিন ধ্বনি বোঝানো হয়। যেটাকে ইংরেজিতে আমরা বলি the hissing S sound সেটা বাঙলায় represented হয় ‘স’ দিয়ে। Sh/ch (French) শব্দ সাধারণতঃ transliterate করা হয় ‘শ’ দিয়ে। এবার, আমি যদি আমি বাঙলার যে-উপভাষায় রোজ কথা বলে থাকি তার প্রভাবে ইংরেজি S আর Sh এ গুলিয়ে ফেলি, মানে বলতে চাইছি যে আমার জিভে Soft যদি ‘সফট’ না হয়ে হয় ‘শফট’, আর Shoot যদি ‘শুট’ না হয়ে হয় ‘সুট’, তবে ত নিদারুণ গন্ডগোল!

এরকম অনেক আছে। ‘বেশি’ কে ‘বেসি’, ‘শিখা’ কে ‘সিখা’, কিন্তু ”us’ কে ‘আশ’, “song” কে “শং” ইত্যাদি ইত্যাদি। এই সমস্যা বাঙালিদের মধ্যে মূলতঃ রাঢ় অঞ্চলের কিছু মানুষের। এগুলো যে শুধু শ্রুতিকটু তা-ই নয়, হাস্যকরও হওয়ার পাশাপাশি miscommunication তৈরী করে প্রায়ই। আর বক্তার impression যা হয় তা যে কহতব্য নয় সে ত বলাই বাহুল্য।

তবে উপায়? ঐ যে কথায় বলে ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়! যা করণীয় তা হল, ভালো voice artist (এর গালভরা বাঙলা প্রতিশব্দ হল ‘বাচিক শিল্পী’) -এর ভাষ্যপাঠ, সংবাদ পাঠ, আলোচনা, আবৃত্তি ইত্যাদি নিয়ম করে বারেবারে শোনা। ইংরেজি – বাঙলা সহ পৃথিবীর প্রতিটি major language সম্পর্কেই একই পরামর্শ। ফোনে বা ট্যাবলেটে বিবিসির অ্যাপ ডাউনলোড করে নিন। শুধু খবর নয়, ইংরেজি শিক্ষার অ্যাপও আছে ওদের। চেষ্টা করুন ওরা কীভাবে কোন ধ্বনিকে, কোন শব্দকে, কোন বাক্যকে, উচ্চারণ করছে। ওদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে জোর করে একমত হতে বলা হচ্ছে না। উচ্চারণটা অনুসরণ এবং সাধ্যানুযায়ী অনুকরণ করুন। বাঙলার ক্ষেত্রে আলাদা করে এর’ম কোনো প্রতিষ্ঠানের কথা বলার প্রয়োজন আছে বলে ত আমি মনে করি না।

চলুন, এই কিস্তি শেষ করি একটি জনপ্রিয় tongue twister এর কথা আপনাদেরকে মনে করিয়ে দিয়ে। এটা কিন্তু পরীক্ষিত পদ্ধতি। আমার অনেক ছাত্রছাত্রীর ‘স’ এ আর ‘শ’ এ গন্ডগোল করার রোগ আমি এটা দিয়েই সারিয়েছি। সেটি হলঃ She sells seashells on the seashore. শ-স-স-শ-স-শ। Practice করুন দেখি। ফোনে রেকর্ডও করে রাখতে পারেন প্রতিবার, নিজের উন্নতি হচ্ছে কিনা বোঝার জন্য। আমি আবার পরের কিস্তি নিয়ে যথাসময়ে ফেরত আসব।

(ক্রমশঃ)

Comment here