– ডঃ গৌতম মুখোপাধ্যায়
গুজরাট –
১৯৮৫ তে আমেদাবাদে চাকরি করতে গিয়ে যা যা দেখেছি, কিছু লিখেছি, কিছু বাকি রয়ে গেছে। ওয়াশিং মেশিন। কলকাতায় মধ্যবিত্ত পরিবার ওয়াশিং মেশিন শোনেইনি তখন। অনেক পরে যখন শুনল বা দেখল , প্রথমেই মুখ ব্যাকালো। এতে জামা কাপড় পরিস্কার হয় না। কাপড়ে সাবান লেগে থাকে। কাপড় বেশীদিন টেঁকেনা। রাখার জায়গা নেই। জল ড্রেন করার অসুবিধে।
সবচেয়ে বড় যুক্তি হল দক্ষিন বঙ্গ থেকে ভোরের প্রথম ট্রেন ( কাজের লোক এক্সপ্রেস) রোজ সকালে শয়ে শয়ে কাজের লোক কলকাতায় উপুড় করে ঢেলে দিয়ে যায়। যারা ৫০-৬০ টাকায় সেই সময় ৩০ দিন সব জামা কাপড় কেচে, মেলে দিয়ে যায়। তাই ৬০০০/- টাকা( সেমি অটোমেটিক) বা ১২০০০-১৩০০০/- টাকা ( অটোমেটিক) অকারন খরচ করার মানে হয়?
আমোদাবাদে দেখলাম সেইসময় ওয়ারশিং মেশিনের চল আছে। বাজাজ স্কুটারের কারখানা ওখানে হওয়ার কারনে কিনা জানিনা, ঘরে ঘরে একটা দুটো স্কুটার থাকত। ওনজিসি থেকে আমাদের শুরুতেই স্কুটার লোন দিত। আমি স্কুটার কিনে চালানো শিখেছিলাম। গুজরাটি মেয়েরা ছেলেদের মতই স্কুলে থাকতেই স্কুটার চালানোয় এক্সপার্ট হত। মেয়েরা স্কুটার বা স্কুটি চালিয়ে টিউশন বা বন্ধুদের বাড়িতে পার্টি থাকলে যেত। রাত হলেও আনতে যেতে হত না। নিজেরাই ফিরত। কলকাতার মত টিটকিরি বা আওয়াজ দিত না কেউ। আগেই বলেছি ছেলেরা আড্ডা দিত না। আমরা চাকরি তে ঢোকার এক মাসের মধ্যে গ্যাস কানেকশন দিয়েছিল। ১৯৯৩ তে আমার কলকাতায় ট্রান্সফার হয়। বেহালায় ভাড়ায় ছিলাম। গ্যাসের দোকানে গ্যাসের ট্রান্সফার পেপার দেখালাম। বলল এক বছর সময় লাগবে। ঢাকুরিয়ায় IOC অফিসে গেলাম। অফিসার লিখে দিলেন
Install tomorrow.পরের দিন গ্যাসের দোকান সুড়সুড় করে install করে গেল। ওনজিসি র এটুকু সুবিধা পেতাম।
ওনজিসি র আর একটা সুবিধা হল মেডিক্যাল ফেসিলিটি। Unparalleled in India.রিটায়ারমেন্টের পরেও এই সুবিধা উপলব্ধ হয়। কলকাতায় সে সময় বা তার অনেক পরেও নতুন গ্যাস কানেকশন পেতে কয়েক বছর লাগতো। আমেদাবাদে নন- ওনজিসিয়ান রাও কয়েক মাসের মধ্যে কানেকশন পেত। ১৯৮৭ সালে নতুন জিনিস পেলাম আমেদাবাদে। কেবল টিভি। যেটা কলকাতায় এসেছিল দু তিন বছর পর।
গুজরাটে যেহেতু সব বাড়িতেই স্কুটার ছিল। বাস এ উঠে সীট পাওয়া যেত। ১৯৮৭ তে মাছ কিনতে অনেক টা দূর যেতে হত।
বাসেই যেতাম। অফিসের এক জন স্টাফ একদিন বলল স্যার অফিসাররা বাসে চড়ে না। বেশী দূরে যেতে হলে অফিসের গাড়ি চাইবেন, পেয়ে যাবেন। থাকতাম চাদখেডায়, সাবরমতী এলাকায়, যেতে হত তিন দরওয়াজায়। ওই সময় ওখানে মাছ খুব সস্তা ছিল। পাবদা কিলো ১৫/- রুই কাতলা ২০/- কিলো। বন্ধুদের ডেকে খাওয়াতাম। বন্ধুদের মধ্যে ভ্যানিটি ছিল না।কয়েকজন ব্যাচেলর ছিল। অত মাছ মাংস খেতে না পারলে বাটি করে ঘরে নিয়ে যেত, পরে খাবে বলে।
এদের একজনের বাবা তখন RAW এর Director ছিলেন। পাকিস্তানীরা বলে জিয়াউল হকের প্লেন এ্যাক্সিডেন্ট এর পেছনে ওনার হাত ছিল। ঘটনাটা হল একটা ছোট ট্রিপে ছোট প্লেনে করে প্রসিডেন্ট জিয়ার যাওয়ার কথা। শেষ মুহুর্তে একজন মাথায় একটা ঝুড়িতে কিছু উৎকৃষ্ট আম নিয়ে প্লেনে ঢোকে ও পাইলটের সীটের মাথায় কোনো কেমিক্যাল লাগিয়ে রাখে। পাইলটের ঘাড়ে ওই কেমিক্যাল লাগার কিছুক্ষন পর পাইলটের মৃত্যু হয়। প্লেন তখন আকাশে। জিয়া আম ভালবাসতেন।
আমরা সবাই ওনজিসি মাল্টিস্টোরিড এ থাকতাম. কুলদীপ এখন CRPFও NIAএর Director.
আগেই বলেছি সুব্রত ভট্টাচার্য ও উৎপল বল আমার সাথেই ONGC Logging section, Ahmedabad e, 1985 e. Join করে।
সুব্রত ও উৎপল মেইটেনান্স ইন্জিনিয়র , আর আমি, কুলদীপ, চ্যাটার্জি , সমীর , হরিকুমার আরো কয়েকজন পেট্রোফিজিসিস্ট হিসেবে জয়েন করি। কলকাতার ৫০০-৬০০ রিসার্চ স্কলার সেবছর ONGC র পরীক্ষা দিয়েছিল , আমি একা ফিজিক্স আর কেমিস্টি থেকে ক্লাস ওয়ান জব টা পেয়েছিলাম। একই সাথে সার্ভে অফ ইন্ডিয়াতে ক্লাস ওয়ান জব পেয়েছিলাম UPSC পরীক্ষা দিয়ে। ONGC jobটা নিয়েছিলাম। কুলদীপ,সমীর আরো কয়েকজন IAS পরীক্ষা দিয়েছিল।
কুলদীপ IPS পেয়ে বাংলায় পোস্টেড হয়েছিল। 1986. কুলদীপ গতবছর CRPF n NIA r Directorহয়ে Delhiগেল, কলকাতা থেকে। সমীর পায়নি। ওর বাবা ছিলেন RAW er Director. মামা বিনোদ পান্ডে , Cabinet Secretary of VP Singh. আর এক মামা বাংলার রাজ্যপাল ছিলেন। কুলদীপ কে দেখে উৎপল ও সুব্রত উৎসাহিত হয়ে IAS এ বসে। উৎপল রেলওয়ে তে, সুব্রত IFS এ পায়। সুব্রত এখন চিলির রাজধানী সান্তিয়াগো তে পোস্টেড। উৎপল এখন কলকাতায়। কুলদীপ ফিজিক্স আর হিস্ট্রি নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছিল। ও ফিজিক্সে MSc. সুব্রত ও উৎপল Kharagpur IITর Electronics. তাই ওরা ফিজিক্স ও ম্যাথস নিয়ে IAS clearকরেছিল।
সেই সময় (১৯৮৭) শুনেছিলাম লাস্ট ৫ বছরের মধ্যে একজন বাঙালী IAS হয়েছেন। আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। উনি বাংলা নিয়ে পরীক্ষা দিয়ছিলেন। কলকাতা তথা বাংলায় কোনো কোচিং সেন্টার ছিল না। ওরা দিল্লীর বিখ্যাত Rao’s Coaching centreথেকে
Postal coaching নিয়েছিল।
(লেখক পরিচিতি – অবসরপ্রাপ্ত পেট্রফিসসিস্ট: ব্যাঙ্গালোরের প্রেসিডেন্সী বিশ্ববিদ্যালয়ে পেট্রোলিয়াম বিভাগের প্রাক্তন ফ্যাকাল্টি)
(ক্রমশঃ)
শ্রী অনিমিত্র চক্রবর্তী হলেন একজন সাংবাদিক ও বিভাগীয় লেখক (columnist) এবং বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের এক সক্রিয় কর্মী।
Comment here