শক্তিচর্চা

শক্তিচর্চায় নীলমণি –

১৯৭০ সালের এক অশান্ত দুপুরবেলায় কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজের গেটের অনতিদুরেই  সশস্ত্র পুলিশ  রাস্তা আটকে দাঁড়িয়ে। বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের ধরার জন্য ফাঁদ পেতে আছে পুলিশ। এক ছাত্র পুলিশকে ইঁট ছুঁড়ে পালিয়ে আসছে, হঠাৎ এক কঠিন বজ্রমুষ্টির শিকার হল সে। সেই পেশীবহুল হাত আর কারোর না, কলেজের ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর স্যার নীলমণি দাশের। তিনি ছাত্রকে শুধু বললেন, “হাতের কব্জিতে এমন শক্তি গড়ে তোল যাতে লুকিয়ে ইঁট ছুড়ে পালিয়ে না আসতে হয়। শরীর শক্ত না হলে পালিয়ে কদিন বাঁচবি?” সত্যি বলতে ১৯৫০ এর দশক এ লেখা সচিত্র ব্যায়ামের বই বহু হতাশ যুবককেই আর জীবন থেকে পালাতে দেয়নি। নতুন করে শক্তি ও স্বাস্থ্যোদ্ধারের পর নতুন জীবনের মুখ দেখেছে তারা। আমি নিজেও যে তাঁর বই এর কাছে ঋণী। তাঁর একমাত্র লক্ষ্য ছিল প্রকৃত শিক্ষার মাধ্যমে প্রতিটি ছেলে যেন সর্বোপরি বলিষ্ঠ,চরিত্রবান, সৎ হয়ে ওঠে।আজীবন সে প্রচেষ্টা করে গেছেন তিনি। সেদিন সব ছাত্র কে নিয়ে পুলিশের ঘেরাটোপ উপেক্ষা করে  নিরাপদে বেরিয়ে গেছিলেন তাদের স্যার। কিভাবে একজন সাধারণ মানুষ থেকে সকলের প্রিয় আয়রনম্যান হয়ে উঠেছিলেন সে গল্পই আজ বলব।

নীলমণি দাশের ডাক নাম ছিল নীলু। জন্ম ১৯১১ সালে, কলকাতায়। ছোটবেলায় নীলু ছিল খুব দুরন্ত প্রকৃতির। তার লেখাপড়া শুরু হয় মদন মিত্র লেনের একটি পাঠশালায়। পাঠশালার শিক্ষা সমাপ্ত করে নীলু ভর্তি হয় হেদুয়ার কাছে অ্যাংলো বেঙ্গলি স্কুলে। এই সময় স্কুলের বেতন দিতে না পারায় সাময়িকভাবে নীলুর লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। কিছুদিন বাড়িতে থাকার পর পুনরায় তাকে ভর্তি করা হয় রাণী ভবানী স্কুলে। সেই সময় ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন শ্রীযুক্ত বেণীমাধব দাস। তিনি নেতাজী সুভাষচন্দ্রেরও শিক্ষক ছিলেন।

এখানে নীলুর পড়াশোনা বেশ ভালভাবে চলছিল। পরে বাড়ির পাশেই ক্যালকাটা অ্যাকাডেমিতে ক্লাস সিক্সে ভর্তি হল। সেভেন থেকে এইটে ওঠার সময় ক্লাসে ফার্স্ট হল নীলু। নীলমণির মেধার দিকে লক্ষ্য রেখে প্রধান শিক্ষক বেতন অর্ধেক করে দিলেন। এরপর শুরু হল নিয়মিত জীবন। খেলাধুলা পড়াশোনা এবং শরীর চর্চা ছাড়া তার অন্য কোনও দিকে মন ছিল না।

বাবা  নিবারণচন্দ্র নীলুর জন্য কোনও গৃহশিক্ষক নিয়োগ করতে পারেন নি। নিজেই পুত্রকে অঙ্ক ও ইংরেজি বিষয়ে সাহায্য করতেন। বাড়িতে জায়গার অভাব। অনেকগুলি ভাইবোনের মধ্যে পড়াশোনার জন্য নিরিবিলি স্থান পাওয়া সম্ভব নয়।  ম্যাট্রিক পরীক্ষাও এগিয়ে আসছে। অতএব এই অবস্থায় কী করা যায়!! শেষ পর্যন্ত অবশ্য আশার ক্ষীণ আলো দেখা গেল। সাহায্য করার জন্য এগিয়ে এলেন প্রতিবেশিনী এক মহিলা।  তিনিও নীলুকে পুত্রপ্রতিম স্নেহ করতেন। তিনি তাদের বাড়ির একটি ঘর ছেড়ে দিলেন। সেকালে বিদ্যুতের ব্যবস্থা ছিল না। পড়তে বসার আগে নীলু নিজেই হ্যারিকেন পরিষ্কার করে নিত। প্রয়োজন হলে তেল ভরে নিত। যে সময় যে কাজ করা প্রয়োজন সেই স্বভাব সে ছোটবেলা থেকেই রপ্ত করেছিল।

নিয়মিত পড়াশোনা এবং ব্যায়াম করার জন্যে পুষ্টিকর খাদ্যের প্রয়োজন। অভাবের সংসারে তার মা তার সাধ্যমতো পুত্রকে দুধ, মাছের টুকরো বা দু একটি রুটি বেশী দিতে চেষ্টা করতেন। খেতেন ভাতের ফ্যান, ও ভেজানো ছোলা। চারটে লেটার নিয়ে ম্যাট্রিক পাশ করে নীলু। পরে ডাক্তারী পড়ার ইচ্ছে ছিল কিন্তু অর্থাভাবে হয়ে উঠল না। অবশেষে, স্নাতক স্তরে বিএ ক্লাসে ভর্তি হওয়া গেল। ব্যায়াম সাধনার বীজটি ঠিক নীলুর মনে উপ্ত হয়েছিল সেই প্রসঙ্গে যেতে গেলে একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করতে হবে।

বাগমারির কাছে মল্লিক লজের মাঠে (বর্তমানে স্কটিশচার্চ কলেজ স্কুলের মাঠ) নীলুর দলের সঙ্গে মুসলমান সম্প্রদায়ের একটি ফুটবল টুর্নামেন্টের খেলা। চতুর্থ গোল হওয়ার পর পরাজিত ও বিপক্ষ দলের উত্তেজিত দর্শক ও খেলোয়াড়রা নীলুদের ভারতমাতা ক্লাবের দলের দিকে মারমুখী হয়ে এগিয়ে যায় এবং রেফারিকেও আক্রমণ করে। বিজয়ী দলের খেলোয়াড়রা মারমুখী জনতার ঘেরাটোপ থেকে পালিয়ে গেলেও নীলু কিন্তু পারল না। ফলে নীলু আক্রমণ জালে জড়িয়ে পড়ে বেধড়ক মার খেতে শুরু করে। আর সে বাঁচাও বাঁচাও বলে আর্তচিৎকার করতে থাকে।

অদূরে ছিল একটা কুস্তির আখড়া। এই চিৎকার শুনে অনুশীলনরত কুস্তিগির পালোয়ানরা ছুটে আসে। তাদের মধ্যে ছিলেন বিখ্যাত কুস্তিগির দুই ভাই ঋষি ঘোষ ও প্রকাশ ঘোষ। তাদের দেখে আক্রমণকারীরা পালিয়ে যায়। নীলুর প্রাণ রক্ষা পায়। তাকে উদ্ধার করে আখড়ার ছেলেরা (ঋষি ঘোষ) বিদ্রূপ করে বলেছিল, “এই রোগা পটকা শরীর নিয়ে ফুটবল খেলতে এসেছে। আগে শরীর মজবুত করো। ব্যায়াম করে কুস্তি করে শরীরটা তৈরি কর তবে তো ওদের সঙ্গে লড়তে পারবে। দু ঘা খেয়ে দশ ঘা দিতে পারবে।” – এই ব্যঙ্গোক্তি ও অত্যন্ত তাৎপযপূৰ্ণ নীলুর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিল।

পরের দিন থেকে নীলুকে আর খেলার মাঠে দেখা গেল না। পিতা নিবারণচন্দ্রের একজোড়া লোহার ডাম্বেল ছিল। সেই নিয়েই শুরু হল শরীর চর্চার সাধনা। নীলু বাড়ির লোকেদের বলে রাখল খেলার মাঠের বন্ধুরা তার খোঁজ করতে এলে তাঁরা যেন বলে দেন সে বাড়ি নেই। যথারীতি বন্ধুরা এসে ডাকাডাকি করে আর ফিরে যায়। কিছুদিন পরে বন্ধুদের ডাকাডাকি বন্ধ হয়ে যায়।বাড়ির ভিতরেই পিতার তত্ত্বাবধানে এগিয়ে চলে শরীরচর্চার সাধনা। বন্ধুরা নীলুর এই গোপন সাধনার কথা জানতে পারেনি। কিন্তু সেটা আর কতদিন। একদিন নীলু ধরা পড়ে গেল বন্ধু শংকরের কাছে। এই শংকরই পরবর্তী কালে শংকর বিজয় মিত্র, যুগান্তর পত্রিকার ক্রীড়া সাংবাদিক।

একদিন নীলু ব্যায়াম ট্যায়াম করার পর গলির মুখে দাঁড়িয়ে ছিল। গায়ে হালকা একটা চাদর জড়ানো ছিল। ব্যায়ামপুষ্ট শরীর আপাতত লোকচক্ষুর আড়ালে থাকুক হয়তো নীলুর এই অভিপ্রায়। শংকর তো অনেকদিন পরে নীলুর দেখা পেয়ে ভারী খুশি। গল্প করতে করতে সে নীলুকে বলল, “কী ব্যাপার এই গরমে একটা চাদর জড়িয়েছিস কেন?” নীলু আমতা আমতা করে বলল, “না, তেমন কিছু নয় এমনি।” এমনি। এমনি এমনি কেউ গায়ে চাদর জড়ায় নাকি। শংকর এক ঝটকায় নীলুর গায়ের চাদরটা সরিয়ে দিলে। নীলুর দেহের দিকে তাকিয়ে শংকর অবাক! এই নীলু কি সেই নীলু!!? যে রোগাপটকা নীলু বাগমারিতে খেলার মাঠে মরতে বসেছিল। যে বিপদ বুঝেও ছুটে পালিয়ে আসতে পারে নি। তার এই দেহসৌষ্ঠব!

সবাই জেনে গেল নীলু খেলার মাঠ ছেড়ে ব্যায়ামের প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়েছে। এতে বন্ধুরা খুশি হল। নীলুর জন্য গর্বিত হল। এতদিন নীলুর শিক্ষা ছিল ঘরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এবার সে আরও উন্নতমানের শিক্ষা লাভ করার জন্য ঘর থেকে বাইরে পা বাড়াল।

১৯২৭ সাল। স্বাধীনতা আন্দোলনেই জোয়ারে তখন বাংলা সমেত সমগ্র ভারত কাঁপছে। এই লগ্নে নীলু প্রথমে শিক্ষা শুরু করলে স্কুলের শরীর শিক্ষক সুবল বিশ্বাসের কাছে, পরে নীলু ভর্তি হল স্থানীয় সিমলা ব্যায়াম সমিতিতে। সেই সময় ওখানে ব্যায়াম শিক্ষক ছিলেন ডঃ নারায়ণচন্দ্র দাস। নারায়ণবাবুর নীলুকে খুব পছন্দ হয়ে গেল। নীলু জানাল তার ভারী ইচ্ছে নারায়ণবাবুর কাছে ব্যায়াম শিক্ষা করা। নারায়ণবাবু প্রথম দর্শনেই নীলমণির ভিতর এক সুপ্ত প্রতিভার আভাস পেয়েছিলেন। ক্রমে ক্রমে নীলুর নিয়ম, নিষ্ঠা ও আগ্রহ দেখে তিনি নবাগত ছাত্রটির প্রতি আরও মনোযোগী হয়ে ওঠেন। যেটা সবচেয়ে বেশি তাঁকে আকৃষ্ট করে সেটি নীলুর ব্যায়াম সম্পর্কিত তীব্র কৌতূহল। ব্যায়াম সমিতির প্রধান ছিলেন শ্রী যতীন্দ্রনাথ বসু। তাঁকে সকলে জ্যাঠামশাই বলতেন। নারায়ণচন্দ্র সেই জ্যাঠামশাইকে বলে নীলুর ব্যায়ামচর্চার বিশেষ সুযোগ সুবিধে করে দিলেন। নীলুকে দেওয়া হল একটা আলাদা ঘর। সেই ঘরে একটা বড় আয়না ছিল। সে সেই ঘরে একা একা ব্যায়াম অনুশীলন করতে লাগল। এখানে থাকার সময় নীলু বিভিন্ন শিক্ষকের সংস্পর্শে আসে, তাদের মধ্যে শ্রী কবি ঘোষ এবং শ্রী প্রকাশচন্দ্র ঘোষের নাম পুনরায় উল্লেখ করা যেতে পারে।

তবে নীলু থাকে শিক্ষাগুরু বলে মেনে নিয়েছিল তিনি হলেন শ্রীযুক্ত ফণীন্দ্রকৃষ্ণ গুপ্ত। ওনাকে নিয়ে ‘কাঞ্জিক’ -এ পুর্বেই লেখা হয়েছে।বিরাট মাপের ব্যায়ামবীর ছিলেন মেজর পি. কে. গুপ্ত। তিনি ছিলেন খোদ ডাঃ নারায়ণচন্দ্র দাসের গুরু, অর্থাৎ নীলমণি দাশের গুরুর গুরু।  প্রথম সাক্ষাতেই নীলু মেজর গুপ্তকে আপন গুরুর আসনে অধিষ্ঠিত করল। প্রণাম করে নীলু -যখন গুরুর কাছ থেকে চলে আসার জন্য উদ্যত তখন মেজর গুপ্ত বললেন, “যখনই তোমার প্রয়োজন হবে আমার কাছে চলে আসবে।” গুরু মেজর গুপ্তের নির্দেশ ছিল শরীর চর্চার সঙ্গে সঙ্গে মনের চর্চাও করবে। মনকে বাদ দিয়ে শরীর হয় না। আর মনের চর্চা হবে ভাল বই পড়লে। সামনে আদর্শ নিয়ে শারীরিক ও মানসিক উন্নতি সাধন একযোগে না হলে সম্পূর্ণ মানুষ হয়ে ওঠা যায় না।

কোন কোন বই পড়তে হবে, কোন বইয়ের কোথায় কী আছে, এবং সেইসব বই কোথায় বা কোন লাইব্রেরিতে পাওয়া যায় তারও সন্ধান দিয়েছিলেন একইসাথে মেজর পি. কে. গুপ্ত।

এরপর নীলুর সাধনা শুরু হল। শরীর ও মনকে গড়ে তোলার সাধনা। একদিকে যেমন শরীর চর্চার জন্য নানারকম ব্যায়াম, অন্যদিকে তেমন শরীর বিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানের অধ্যয়ন। কতকগুলি লাইব্রেরির সে মেম্বার হল। বিশেষ করে রামমোহন লাইব্রেরি ও অমল লাইব্রেরিতে ছিল তার নিত্য যাতায়াত। তার সব থেকে প্রিয় ছিল শ্রীরামকৃষ্ণ ও স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা। তাঁদের রচনায় যে সব স্থানে শরীর চর্চার কথা পেতো সেটা সে নিজের খাতায় টুকে রাখতো।

শুধু ব্যায়ামই নয়, একইসাথে নীলু বক্সিং, লাঠি খেলা, জুজুৎসু, সাতার, জিমন্যাস্টিক ইত্যাদি অনুশীলন করতে লাগল। এন. সি. সি, রেড ক্রুশ, সিভিল ডিফেন্সেও তার উৎসাহ ছিল এবং অংশগ্রহণ করতো। লাঠিখেলা শিখেছিল বিখ্যাত বৈপ্লবিক সংস্থা ঢাকা অনুশীলন সমিতির প্রাণপুরুষ তথা বিখ্যাত বঙ্গীয় ব্যায়াম সমিতির প্রতিষ্ঠাতা প্রণম্য বিপ্লবী শ্রী পুলিনবিহারী দাস  ও সিমলা ব্যায়াম সমিতির শ্রী অমল বসুর কাছে। সাঁতার শিক্ষা তার হয় হেদুয়ার সেন্ট্রাল সুইমিং ক্লাবে। ফুটবল খেলা সুবিখ্যাত ফুটবলার শ্রী বলাই চ্যাটার্জির কাছে। বক্সিং শিক্ষা স্কুল অফ ফিজিক্যাল কালচারের শ্রী জে. কে. শীল এবং কেমব্রিজ ব্লু শ্রী অশোক চ্যাটার্জির কাছে।

সম্ভবত সেটি ১৯৩৫ সাল। একদিন সকালে শক্তি সমিতি থেকে বাড়ি ফেরার সময় নীলুর সঙ্গে হঠাৎ দেখা হয়ে গেল লাঠি শিক্ষক বিপ্লবী পুলিনবিহারী দাসের। ছাত্রকে দেখে শিক্ষক তো ভারী খুশি। “কি অদ্ভুত যোগাযোগ। আমি তোমার কথাই ভাবছিলাম নীলু।” “আমার কথা?”

“হ্যাঁ তোমার কথা।  শোনো, তোমাকে আমার সঙ্গে মালদায় যেতে হবে। ওখানে হিন্দু মহাসভার সম্মেলন হচ্ছে শুনেছো নিশ্চয়ই। ওখানে নানান রকম কালচারাল প্রোগ্রাম হবে। একদিন ব্যায়াম চর্চার কলাকৌশল দেখানোর ব্যবস্থা আছে। আমার ইচ্ছে তুমি তাতে যোগ দাও।

“আপনি আমাকে একটা দিন সময় দিন স্যার। বাবার কাছ থেকে অনুমতিটা নিয়ে নিই।”

বিপ্লবী পুলিনবিহারী হেসে ফেললেন, “অনুমতি? তুমি তো এখন ছোট নও, বেশ। আমিই তোমার বাবার সঙ্গে কথা বলব।” খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে পুলিনবিহারী বললেন, “নীলু। পিতৃভক্তি, মাতৃভক্তি ব্যাপারটা কেমন ফিকে হয়ে আসছিল। হতাশ বোধ করছিলাম। তোমাকে দেখে আবার আশা জাগছে। মানুষ আপনি আপনি বড় হয় না। যাদের পিতামাতার ওপর ভক্তি আছে এবং কর্মে নিষ্ঠা আছে তাদের বড় হওয়া কেউ আটকে রাখতে পারেনা।” 

একদিন পুলিনবিহারী স্বয়ং এসে হাজির হলেন নিবারণচন্দ্রের কাছে। নিবারণ চন্দ্র তো অবাক! তিনি ভাবতেই পারেন নি বিপ্লবী পুলিনবিহারী তার বাড়িতে কোনওদিন আসবেন।বলবেন ভেবে পেলেন না। পুলিনবিহারী বললেন, “আমি নীলুকে মালদার একটি অনুষ্ঠানে নিয়ে যেতে চাই। হিন্দু মহাসভার ওই সভায় আপনার পুত্র দেহ সৌষ্ঠবের খেলা দেখাবে।

মালদহের উপেনবাবুর বাড়ির পাশে মাঠ। মাঠের গা বেয়ে জুবিলি রোড। সেই সময় ওই মাঠকে বলা হতো খোলা মাঠ। খোলা মাঠে বঙ্গীয় প্রাদেশিক হিন্দু মহাসভার সম্মেলন হয়েছিল। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন ডাঃ বিনয় কুমার সরকার, শ্রীযুক্ত বিধুশেখর শাস্ত্রী, সাহিত্যিক সজনীকান্ত দাস, শ্রীযুক্ত আশুতোষ লাহিড়ী প্রমুখ। ঐ অনুষ্ঠানে হিন্দু মহাসভার সভাপতি “প্রবাসী” এবং “মর্ডান রিভিউ”- য়ের প্রখ্যাত সম্পাদক শ্রীরামানন্দ চট্টোপাধ্যায় মহাশয়ও উপস্থিত ছিলেন। সেদিন ওই সম্মেলনের সভাপতি ছিলেন সাধু বলদেবানন্দ গিরি মহারাজ। তিনি মালদহের মঠে থাকতেন। বর্তমানে ওই মঠকে ‘জাহাজ বাড়ি’ বলা হয়। প্রসঙ্গত বলা দরকার ওঁর স্মৃতি রক্ষার্থে মালদহের একটি রাস্তার নাম দেওয়া হয়েছে বলদেবানন্দ গিরি রোড।

সেদিন অনুষ্ঠানের শুরুতেই একটি চমকপদ ঘটনা ঘটল। ঘটনাটি ঘটেছিল অবশ্য মঞ্চের উপর।

অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চের উপর কয়েকজন বাহক একটি পাখি নিয়ে এলেন। নীলু অবাক হয়ে দেখল বাহকেরা পাল্কির এক একটা অংশ খুলে নিচ্ছেন। দেখতে দেখতে পাঙ্কিটা যেন জাদুমন্ত্রে একটি আরাম কেদারায় পরিণত হয়ে গেল। দর্শকদের সঙ্গেও নীলুও মুগ্ধ বিস্ময়ে দেখল সেই আরাম কেদারায় অর্ধশায়িত অবস্থায় আছেন বলদেবানন্দ গিরি মহারাজ।

বিপ্লবী পুলিনবিহারীর পরিচালনায় শুরু হল লাঠি ও অসি খেলা। লাঠির মধ্যে বড় লাঠি, ছোট লাঠি, এবং অসি, ছোরা। হাড়োয়া এবং আগুনসহ লাঠি। এইসব খেলার মধ্যে মধ্যে চলল নীলমণির দেহ সৌষ্ঠব প্রদর্শনী। লোহা বেঁকানো, বিম ব্যালেন্সিং প্রভৃতি দুঃসাহসী ক্রীড়া কসরৎ নীলু প্রদর্শন করল। নীলুর এইরকম খেলা দেখে সবাই হতবাক। এমন কি সভাপতি পর্যন্ত। খেলার শেষে সভাপতি হাতছানি দিয়ে নীলুকে কাছে ডাকলেন। সভাপতি বলদেবানন্দ গিরিমহারাজ নীলুর গা হাত টিপে বললেন, “তোমার গোটা শরীরটা তো দেখছি লোহার মতন। তোমায় আমি আয়রনম্যান উপাধি দিলাম।” সমসাময়িক অনেক আয়রনম্যান থাকলেও নীলমণি দাস ছিলেন অনন্য। তাঁর ধারকাছ দিয়ে কেউ যেতে পারতেন না। তাঁর শরীর ছিল লোহার মতন কিন্তু ব্যাবহার ছিল অমায়িক ও মধুর।

একবার তিনি  ব্যায়াম প্রদর্শন করতে কোনও একটি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন।  অনুষ্ঠানের শেষ আইটেম ছিল শ্রী নীলমণি দাশ ও তাঁর ছাত্রদের অভি প্রদর্শনী। মঞ্চে আয়রনম্যান অবতীর্ণ হলেন। লৌহপাত কে কেমন অবলীলায় হাত, গ্রীবা ও দাঁতের সাহায্যে বেঁকিয়ে বেঁকিয়ে একটি গোলাকার বলে রূপ দিলেন। বড় বড় লৌহ বিম স্কন্ধে ফেলে বেঁকিয়ে দিলেন। আরও কত খেলা দেখালেন।আয়রনম্যান টান টান হয়ে শুয়ে পড়েছেন। তাঁর বুকের উপর কাঠের পাটাতন রাখা হল। এর পর দেখা গেল আয়রনম্যানের বুকের উপর দিয়ে লোকজনে ঠাসা একটি গোরুর গাড়ি চলে যাচ্ছে, কখনও মোটর চলে যাচ্ছে।ওই অনুষ্ঠানে সেদিন উপস্থিত ছিলেন ‘ভারতবর্ষ’ নামক বিখ্যাত মাসিক পত্রের বিখ্যাত সম্পাদক রায়বাহাদুর শ্রী জলধর সেন। তিনি নীলমণি বাবুর এই খেলা দেখে মুগ্ধ হলেন। প্রশংসা করলেন। এবং পরিশেষে নীলমণি বাবুকে তাঁর পত্রিকার দপ্তরে একদিন আমন্ত্রণ জানালেন। তিনি একান্তে এই ব্যায়ামবীরের সঙ্গে কিছু কথা বলতে চান।যাব যাব করেও নীলমণি বাবুর আর যাওয়া হয়ে ওঠেনা। ভারতবর্ষের সম্পাদক আবার ব্যায়ামবীরের কাছে তলব পাঠালেন। অবশেষে একদিন নীলমণি বাবু জলধর সেনের ভারতবর্ষের দপ্তরে নিয়েবহাজির হলেন। জলধরবাবু ব্যায়ামবীর যুবককে বলেছিলেন, “ বাপু, সেদিনের ওই অনুষ্ঠানে তোমার খেলা দেখেছিল মাত্র দু তিন হাজার দর্শক। আমি চাইভারতবর্ষের প্রতিটি মানুষ তোমার ওই শারীরিক ভঙ্গিমা দেখুক। তুমি সেদিন আমাদের যে সব খেলা দেখিয়েছিলেন তার ছবিগুলো আমাকে দিতে পার?”

বন্ধু শ্রীযুক্ত ফণী বন্দ্যোপাধ্যায় নীলমণিবাবুর ব্যায়াম কৌশলের ফোটো তুলেছিলেন। ফণীবাবুর কাছ থেকে ছবি নিয়ে নীলমণিবাবু ‘ভারতবর্ষ’ এর সম্পাদকের হাতে তুলে দিলেন। ধারাবাহিকভাবে ‘ভারতবর্ষে যখন ওই ছবিগুলি ছাপা হচ্ছিল সেই সময় একদিন নীলমণি দাশের কাছে জলধরবাবুর এক জরুরি বার্তা এল।এবার নীলমণি আর দেরি করলেন না। ভারতবর্ষ পত্রিকার দপ্তরে পা দিতেই বৃদ্ধ জলধর সেন মহাশয় তরুণ ব্যায়ামবীরের দিকে তাকিয়ে বললেন, “তুমি আমাকে কী বিপদেই যে ফেলেছো।” নীলমণি মাননীয় সম্পাদকের কথা শুনলেন। কিন্তু তিনি কী বলছেন বুঝতে পারলেন না। ছবি ছাপিয়ে জলধর বাবু কি নানান সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন? খানিকটা নার্ভাস দৃষ্টিতে তিনি সম্পাদক মহাশয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন।জলধরবাবু মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে এক বাণ্ডিল চিঠি টেবিলের উপরে রাখলেন।

“শুধু ছবি দেখে মানুষের আশা মিটছে না। তাঁরা জানতে চান কীভাবে শরীর ঠিক রাখতে হবে। তাই তোমাকে এবার কলম ধরতে হবে। আমার ভারতবর্ষের পৃষ্ঠাতেই সেই লেখা লিখতে হবে।” দুঃশ্চিন্তা ও আশঙ্কার বোঝা বুকের উপর থেকে নেমে গেল। কিন্তু তরুণ নীলমণির nervousness কাটল না। তিনি কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন, “কিন্তু এই ধরনের লেখালিখির কাজ তো কখনও করিনি।” “করো নি তো কী হয়েছে। করতে করতে শিখবে। তুমি লেখ। ভয় নেই। আমরা তো আছি।”ভারতবর্ষের সাব এডিটর ছিলেন শ্রীযুক্ত হীরেন বসু। তিনি কালাচাঁদ ছদ্মনামে লিখতেন। নীলমণি বাবুকে লেখার ব্যাপারে প্রথমে সাহায্য করেছিলেন এই ভদ্রলোক। পরে নীলমণিবাবু একাই লিখতে শুরু করেন।

একদিন দুপুরে এক খেলার দোকানে গেছেন।ব্যায়ামের যন্ত্রপাতি কিনতে। দোকানদার তাকে দেখেই বললেন, “আপনার লেখা পড়েছি।আপনি বই লিখবেন?”  ব্যায়ামের বই সেভাবে বাজারে তো নেই।কারন সত্যিই তখন ব্যায়াম,বডিবিল্ডিং এসব মানুষ ভালো জানতই না। আধুনিক বৈজ্ঞানিক ব্যায়ামচর্চার জনক হলেন ইউজিন স্যাণ্ডো! ওঁর আগে শরীরচর্চার কোনো সুনির্দিষ্ট  নিয়ম ছিলো না, অর্থাৎ, কোন্ ব্যায়ামের পরে কোন্‌টা করবো এ’বিষয়ে সচেতন ছিলেন না কেউই। তাই কোনো ব্যায়ামবীরের শরীর বিশাল হলেও দেহসৌষ্ঠব  ও সামঞ্জস্য থাকত না। দেহটি হত মোটাসোটা,বেঢপ। ইউজিন স্যাণ্ডোই প্রথম ব্যায়ামে ‘চার্ট’ নিয়ে আসেন, এবং কী করে একটি সাধারণ শরীরকে গ্রীক ভাস্কর্যের মতো অপূর্ব সুন্দর করে তোলা যায় পথ দেখান।   ইনিই প্রথম  ‘বুলওয়ার্কার’ ও চেস্ট এক্সপান্ডার এনেছিলেন।  আমার নিজের দাদুর ছিল পাঁচটি স্প্রিং দেওয়া চেস্ট এক্সপান্ডার।হাতের প্রবল জোর চাই ওই এক্সপান্ডার নিয়ে ব্যায়াম করতে গেলে।একটি কথা বলা ভালো ‘স্যান্ডো গেঞ্জি’র নামটাও এসেছে এই  স্যান্ডোর নাম থেকেই। নীলমণি দাশ বের করলেন ব্যায়াম ও স্বাস্থ্য নামক বইটি। পরে একে একে ডাম্বেল বারবেল ব্যায়াম,সচিত্র যোগব্যায়াম,বিশেষত তার লেখা চার্ট তখনকার প্রত্যেক ব্যায়ামাগারে থাকত।খুব সস্তা ছিল তার বই ও চার্ট।বইমেলার স্টলে হুহু করে বিক্রি হয়ে যেত।এখনো তার বই হটকেক।

একথা বিশেষ ভাবে বলা ভালো বাঙ্গালী মেয়েদের ব্যায়ামের মঞ্চে তিনিই টেনে আনেন। তাঁর সহধর্মিণী রেবা দাশ যোগাসন ও লোহার পাত বাঁকানোয় পারদর্শী ছিলেন। আজকাল যখন মেয়েদের সেল্ফ ডিফেন্স বা জিমে ফিট হওয়ার হিড়িক তখন আজ থেকে ৬০ বছরের বেশী আগে তিনি করে দেখিয়েছিলেন। তাঁর দেখানো পথেই আমরা এগোচ্ছি। শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা নীলমণিবাবুর চরিত্রের বৈশিষ্ট্য ছিল। একদিন এই সংস্থার কোনও একটি অনুষ্ঠানে সারদাপীঠের জয়রাম মহারাজ বেলুড় মঠে রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দিরের ছাত্রদের ব্যায়াম শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করতে অনুরোধ করেন। তাঁর অনুরোধে সপ্তাহে দুদিন তিনি বেলুড়ের ওই কলেজে গিয়ে ছাত্রদের ব্যায়াম শেখাতেন। যাতায়াত বাবদ সামান্য পারিশ্রমিক ছাড়া আর কিছুই গ্রহণ করেন নি। কেননা তিনি প্রায়শই বলতেন, ‘আমার—অনেকদিনের সাধ রামকৃষ্ণ মিশনের মতো আদর্শ প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের ব্যায়াম শিক্ষা দেওয়া।” এতদিনে সেই সাধ পূর্ণ হল।কলেজে শিক্ষকতা করার সময় শ্রীদাশ নিজে এবং পত্নীকে নিয়ে তৎকালীন মঠের সভাপতি স্বামী বীরেশ্বরানন্দের কাছে দীক্ষা গ্রহণ করেন।

শ্রী নবনীহরন মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ, সারদামা ও বিবেকানন্দ ছিলেন তাঁদের জীবনের আদর্শ। লৌহবৎ পেশী ও অমিত বলের অধিকারী হলেও তাঁর হৃদয় ছিল কোমল। সকলকে তিনি ভালবাসতে জানতেন প্রত্যেকের সঙ্গে তাঁর ব্যবহার অমায়িক। কাউকে কখনও কটু কথা বলতে তাঁকে দেখিনি। যেখানে বলের প্রকাশ প্রয়োজন তাও তাকে একবার করতে দেখেছি। একবার বাইরে কোথাও একটা শিক্ষণ শিবিরে আমরা কয়েকজন যাব। সংগে আমাদের সঙ্গীত শিক্ষক পূজনীয়” বীরেশ্বর চক্রবর্তী মশাই ও নীলমণিদা আছেন। হাওড়া স্টেশনে প্ল্যাটফর্মে আমরা ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছি, দাড়িয়ে সকলে কথা কইছি। হঠাৎ পকেট থেকে কিছু বার করতে গিয়ে বীরেশ্বরদার হাত থেকে ছাতিটা পায়ের কাছে পড়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে এক ব্যক্তি ছাতিটা তুলে নিয়ে নির্বিবাদে চলতে শুরু করল। বীরেশ্বরদা তাঁর স্বভাবসিদ্ধ শান্ত গলায় বললেন, “ছাতাটা নিয়ে যাচ্ছেন কেন”? ব্যক্তিটিও উত্তর দিল “এটা আমার”। কারুরই ব্যাপারটা বুঝতে অসুবিধা ছিল না। কোন বাক্যব্যায় না করে নীলমণিদার বাঁ হাতের একটি চপেটাঘাত ব্যক্তিটির একটি গালে পড়তে সব ব্যাপারটা নিঃশব্দে মিটে গেল।”

এরকম বহু গল্প তাকে নিয়ে ছড়িয়ে আছে — শুনবেন?

“একবার  ড.নীরেন মজুমদার, প্রভাস ব্যানার্জী, নীলমণিবাবু ও নবেন্দু সাহা হুগলী চন্দননগর থেকে বিচার কার্য্য সেরে ফিরছেন—স্টেশনে এসে গাড়ীতে উঠেছেন শীতের রাত্রের প্রায় ১০টা–বিচারকদের দায়িত্বে চুলচেরা বিচারে সকলকে একভাবে সন্তুষ্ট করা হয়নি।  শেওড়াফুলিতে গাড়ী এসে থামতেই তুমুল চিৎকার হট্টগোল।  কি ব্যাপার!  জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখা গেল একটা দল সংখ্যায় দশজন মতো হবে আমাদের দিকেই দৌড়ে আসছে—শীতের রাত্রি ১০-৩০ স্টেশনে লোক সংখ্যায় কমে এসেছে অবশেষে চোর চোর চিৎকার করে দলটি ওনাদের দিকে  আঙ্গুল দেখিয়ে বলছে, ,ঐ চোরগুলো বসে আছে মার-মার শালাদের’। সবাই বিচলিত চঞ্চল হলেও লৌহমানব কিন্তু  শান্ত ভাবেই বসে ছিলেন। — সবুজ আলো দিয়ে গাড়ী ছেড়ে দিল। নীলমণি বাবু বল্লেন কোন সময় শত্রুপক্ষের কাছে এগিয়ে যাবে না। ওদের আসতে দাও তারপর ব্যবস্থা হবে”।

বিশ্বশ্রী মনোতোষ রায় বলেছিলেন ওনার জীবনে প্রথম ব্যায়ামের প্রতিযোগিতায় নীলমণি দাশ বলেছিলেন “তোমাকে দিয়েই বিষ্টুদা নতুন প্রজন্ম তৈরী করবেন।সেই কোয়ালিটি তোমাতে আছে। অধৈর্য্য হোয়ো না। সব সময় সত্যকে শ্রদ্ধা কোরো। বিচারকদের সিদ্ধান্ত মাথায় নিও। গুরুর আদেশ মতো ব্যায়াম কোরো। তুমি শুধু বাংলার নয়, তুমি সারা ভারতবর্ষের।

তিনি ছিলেন বলিষ্ঠ মনে অধিকারী ও আত্মবিশ্বাস এ ভরপুর।ব্যাবহারে অমায়িক ও নির্লোভ।উচ্চাকাঙ্খা ছিল না বলেই পরশ্রীকাতরতা বা হিংসার দিকে তিনি যাননি।

আমার কথা – ছোটবেলায় বাবা নিজের ট্রাংক থেকে “ব্যায়াম ও স্বাস্থ্য”, “ডাম্বেল বারবেল ব্যায়াম” বই দুটি যখন আমার হাতে দিয়েছিল বইয়ের মলাটে থাকা পেশীবহুল আয়রনম্যানের ছবি দেখে চোখ চক চক করে উঠেছিল।ভেবেছিলাম ইশ! এরকম যদি হতে পারতাম। হতে পারার সেই সাধনা, সেই চেষ্টা  এখন তো পুরোদম চলছে। নীলমণি দাশকে না পেলেও তাঁর সম স্যার প্রদীপ দেবনাথ বাবুকে পেয়েছি,যাঁর সাক্ষাৎকারের ভিডিও ‘কাঞ্জিক’ -র ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি।

 

তথ্যসুত্রঃ লৌহমানব নীলমনি দাশ – শ্রী শ্রী বানীব্রত চক্রবর্তী – আয়রনম্যান পাবলিশিং হাউস।

_

Comment here