সাদাকালো রঙমাখা

কিঞ্চিৎ দ্বিধাগ্রস্ত বাঙ্গালীর ভ্রমণ বৃত্তান্ত –

-শ্রী স্বর্ণাভ মুখোপাধ্যায়

বাঙ্গালী একদা ভ্রমণ পিপাসু জাতি…তবে বর্তমানে দু একটি স্থান ছাড়া বাঙ্গালী কোথাও যেতে চায়না।

যেমন সমুদ্র সৈকত দিঘা বা পাহাড় হলে দার্জিলিং কিন্তু সেই স্থানে গিয়েও রিসোর্ট ভাড়া করে মদ্যপান সহকারে সারাদিন হোটেলে বসেই ঘুমায়। অলসতা – জড়তা কি এবার ভ্রমণের মধ্যেও ঢুকলো???

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ;ভ্রমণ এবং আরেকটু উচ্চস্তরে গেলে পরিব্রাজন এগুলোতে যে পরিমাণ মানসিক জোর আর কায়িক পরিশ্রম লাগে তাতে সন্দেহ নেই ,আদ্যোপান্ত ভেতো বাঙ্গালী বহু পিছিয়ে আছে। যে বাঙ্গালী এককালে “একলা চলো” নীতি নিয়ে গোটা বিশ্ব ঘুরে বেরিয়েছে। সাধু সন্ন্যাসী – লেখক – অভিযান প্রেমিক দের লেখা ৭০-৮০-৯০র দশকে দশকে প্রত্যেক বাঙ্গালীর ঘরে ম ম করত তাহলে আজ এই দশা হয়েছে তার কারণও আছে। এর থেকে বেরোতে হলে মানসিক জোর আর সঠিক উদ্দেশ্য থাকাটাই একমাত্র পথ।

একটা উদাহরণ স্বরূপ আমার সাম্প্রতিক যে ভ্রমণ কাল তার কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরলাম –

আমি একজন রেল ফ্যান (এটি একটি আমেরিকান কনসেপ্ট যেটা ভারতে হুহু করে ছড়িয়েছে এর সহজ বঙ্গীয়করণ করলে রেল-প্রেমিক বলা যেতে পারে)।

তা গত সেপ্টেম্বর মাসে ২০২৫ এ ভারতের রেল বোর্ডের থেকে ঘোষণা করা হয় যে কলকাতা থেকে সাইরাঙ (মিজোরাম এর রাজধানী আইজল থেকে যা ২২কিমি দূরে) একটি ত্রিসাপ্তাহিক ট্রেন চালু করা হবে (প্রতি মঙ্গল বুধ এবং শনি)। এই ট্রেনে কলকাতা থেকে দুপুর ১২:২৫ এ ছেড়ে পরের দিন রাত ৭:৪৫এ সাইরাঙ পৌঁছে দেয়; ৩১ঘণ্টায় ১৪৮৪ কিমি দূরত্ব অতিক্রম করে।

এবার সকলের জ্ঞাতার্থে বলে রাখি উত্তর পূর্ব ভারতের কিছু রাজ্য আছে(মিজোরাম নাগাল্যান্ড মনিপুর অরুণাচল প্রদেশ) সেখানে গেলে ওদের রাজ্য সরকার এর অনুমতি লাগে সেটি হলো ILP অর্থাৎ inner line permit সেগুলি আপনারা অনলাইনে কিংবা তাদের সরকারি ভবন গুলো থেকে করাতে পারবেন; যেগুলো কলকাতার পারিপার্শ্বিক সল্টলেকে অবস্থিত। এই ILP করাতে হলে আপনার কয়েকটি পাসপোর্ট সাইজ ছবি এবং কিছু অর্থ লাগবে যেগুলো একেক রাজ্যের একেক রকম।

সমস্ত রকম হ্যাপা কাটিয়ে টিকিট কেটে নিলাম স্লিপার ক্লাসে মিজোরাম যাবার জন্য – একাই ছিলাম সঙ্গে একটি বড় ব্যাগ অল্প জামা কাপড়, জলের বোতল ,চার্জার,সেলফি স্টিক ইত্যাদি। একে একে নৈহাটি কৃষ্ণনগর বহরমপুর লালবাগ হয়ে নসিপুর ব্রীজ পেরিয়ে আজিমগঞ্জ জঙ্গিপুর রোড দিয়ে ট্রেন মালদা ঢুকলো। যেতে যেতে পড়ন্ত বেলার গ্রাম বাংলা নদীমাতৃক প্রচ্ছদ অনুধাবন করতে করতে সময় টা বেশ কাটলো।

আমাদের রাজ্যের একটা বিশেষত্ব হলো এখানে আপনি যেখানেই যাবেন খাদ্যের অভাব হবেনা এবং রকমারি সুস্বাদু খাবার ট্রেনেও পাবেন যেমন ঘুগনি, মুড়ি, গজা,বাদাম,পেয়ারা মাখা,ডিম পাউরুটি ইত্যাদি।

এই ভাবে ট্রেন আমাদের মালদা পৌঁছলো সন্ধ্যে সাড়ে ৬ টা ইতিমধ্যে আমি বাড়ির তৈরি আলুর পরোটা তার সাথে মশলাদার ঘুগনি সহযোগে ক্ষুধা নিবারণ করলাম।

রাতের বেলা তেমন কিছুই দৃশ্যগোচর হলোনা – সকলেই জানেন উত্তর বঙ্গ গেলে ট্রেন বিহারের সিমাঞ্চল অংশ ঘেঁষে যায় যেখানে বারসই আর কিশানগঞ্জের মতন প্রমুখ স্টেশন আছে। এই ট্রেনটির আরেকটি বিশেষত্ব যে আপনাকে দিনের দিন ভদ্র-সভ্য সময় মত শিলিগুড়ি পৌঁছে দেবে যেটির স্টপেজ হচ্ছে নিউ জলপাইগুড়ি ধরে নিন সাড়ে নটা নাগাদ ট্রেনটি পৌঁছে দেবে আমার ক্ষেত্রেও ওই সময় তেই পৌঁছেছিল।

বিশেষ ব্যাপার হলো সেইদিন(১৬ই সেপ্টেম্বর) এই ট্রেনটির প্রথম যাত্রা ছিল তাই প্রত্যেক কামরা ফাঁকা ছিল কিছু ইউটিউবার উঠেছিল যাবার জন্য এবং তাদের সাথেও আলাপ করলাম।

যাই হোক ঘুমোতে যাওয়ার সময় সচরাচর আমার ট্রেনে ভালো করে ঘুম হয়না সেবারেও এর অন্যথা হয়নি। পরের পর্বে আপনাদের আসাম রাজ্যের ট্রেন যাত্রার বর্ণনা দেবো আপাতত এখানেই পরিসমাপ্তি।

 

লেখক – এক একনিষ্ঠ পান্থ।