(পূর্বের অংশের পর)
– শ্রী সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
০৮/০৭/২০১৫
সকালবেলা উঠে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়লাম। ৭.৩০টায়বাস ধরলাম চণ্ডীগড়ের জন্য। কিন্নরে আপেল চাষ সর্বাত্মক, এখানকার আপেল বিদেশ তথা সারা ভারতবর্ষে রপ্তানী হয়। আমরা কাশ্মীরী আপেল নিয়ে মাথা ব্যথা করি বটে কিন্তু অধিকাংশ আপেল আমরা কিন্নর জেলারই খাই। এখানকার আপেল গোল্ডেব ফ্রুটের তকমা প্রাপ্ত। যাইহোক, বাসে আমার পাশে একজন কিন্নর রমনী বসেছিল সুন্দরী স্বাস্থ্যবতী পেশায় শিক্ষিকা। সে থাকে রেকংপিও থেকে ৩ঘন্টার দূরত্বের কোনো একটা জায়গায় নাম মনে করতে পারছিনা। রেকংপিওতে তার দাদার বাড়ী ঘুরতে এসেছিল এখন বাড়ী যাচ্ছে। বি.এ. পাস করে ট্রাইবাল কোটায় কিন্নরী হিসাবে সরকারী স্কুলে চাকরী পেয়েছে, পড়াশুনা সিমলা আর কুরুক্ষেত্র ইউনিভার্সিটি থেকে, নাম বিদ্যা। কিন্নর এবং কিন্নর রিচ্যুয়াল নিয়ে খুবই গর্বিত। কিন্তু একঘেয়ে জীবন, শুধু পাহাড় আর পাহাড়। খাওয়া দাওয়া প্রায় এক হলেও এখানকার পুরুষরা অত্যধিক মদ্যপান করে। যে কোনো বিবাহউৎসবে মদ না খেলে এদের চলেনা তারপর মাংস তো আছেই। বিয়েতে মেয়েদের বাড়ী এসে ছেলেরা প্রস্তাব রাখবে, মেয়েরা এক্ষেত্রে মুক্ত বা স্বাধীন (এ ব্যাপার আমি নেপালীদের মধ্যেও দেখেছি) মেয়েরা ইচ্ছা করলে একই বাড়ীর দুই ভাইকেও বিয়ে করতে পারে (যেহেতু মহাভারতের সময় পাণ্ডবরা দ্রৌপদীকে নিয়ে ১২বছর এই প্রদেশেই কাটিয়েছিল বিদ্যার কথানুযায়ী সেই পরম্পরা একনও চলে তবে খুব কম)। কিন্নর কিন্নরীদের নিজস্ব পোশাক আছে। পাহাড়ী হিসাবে হাতে পায়ে পরিস্কার হলেও বেসিক্যালি অপরিস্কার। নিয়মিত স্নান করেনা। এখন এদের মধ্যে পড়াশুনা করার চল হয়েছে। গান বাজনার ক্ষেত্রে এদের সুরের বৈচিত্র্য এসেছে, টিপিকাল কিন্নরী গীত বা সুর খুবই রেয়ার। তাতে ৫টা বাদ্যযন্ত্র ব্যবহৃত হ’ত ঝাঁঝর,মাদল,সিঙা, নাকাড়া ইত্যাদি আর সেই সুর খুবই মন ছুঁয়ে যেত যা এখন আর হয়না।খুব দুঃখের সময় হয়ত সেই রেয়ার সঙ্গীত শোনা যায়! কিন্নরী সিনেমা আস্তে আস্তে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এদের ভাষা হিন্দী হলেও টিবেটিয়ান আর নেপালী প্রভাবও যথেষ্ঠ আছে। নেপালীদের সংখ্যাটাও নেহাত কম নয়। যাইহোক এসব কথা হতে হতে তার গন্তব্যস্থান আসতে সে নেমে গেল।
আমরা আবার চলতে লাগলাম একপাশে দামাল শতদ্রুকে রেখে, এভাবেই চলতে থাকে আমাদের বাস.. আমাদের জীবন।
(সমাপ্ত)