(পূর্বের অংশের পর)
– শ্রী সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
সাধারনতঃ এরা তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ে আর ভোরবেলায় ওঠে। গতকাল আমাদের জন্য রাত ১১টারও বেশি হয়ে গেছিল। আমারও ঘুমটা ভাঙল ছবিলাল উঠে লাইট জ্বালানোয়, তখন পৌনে ৬টা বাজে। আমি খাট থেকে আস্তে নামার সময় দেখলাম ব্যথা কম। ফ্রেশ হতে নিচে নামলাম কষ্ট করেই, ফ্রেশ হওয়ার পর দিদি চা দিল চা খেয়ে গল্প করতে লাগলাম দিদির ছেলে মেয়ের সাথে। দিদির চার ছেলে মেয়ে তার মধ্যে বড় মেয়ে সিমলায় হস্টেলে থাকে ফার্ষ্ট ইয়ার পড়ছে, আর ছেলে মেয়ে দুটো একটা ক্লাস সেভেন আর একটা ক্লাস ফোর। এবার বেরোতে হবে। ছবিলালকে বললাম দিদিকে নাস্তা করে দিতে বলো। আবার সেই এক কথা এখন সময় নেই খেতএ কাজে বেরোতে হবে, কে করবে? তার থেকে রাস্তায় খেতে হবে ইত্যাদি। ইতিমধ্যে সিধু এসেও নাস্তার কথা বলতে সেই এক কথা। কিছুক্ষণ পরে আমি দিদিকে বললাম “দিদি বহুত ভুখ লাগা!” শুনে কি হ’লো জানিনা, কিছুক্ষণ পরে আলুপরাঠা আর আচার তিনটে থালাতে করে সবার জন্য পাঠালো ছেলে মেয়ের হাত দিয়ে তারপর চা ও। আমি মনে এইটাই ভাবলাম মেয়েরা সর্ব ক্ষেত্রেই মা জননী অংশ যারা সন্তানের ক্ষুধার্ত মুখ সহ্য করতে পারেনা। তাই তো প্রকৃতি সমস্ত নারীজাতিকেই তার সন্তান জন্মের বহু পূর্বেই সন্তানের আহারের বন্দোবস্ত হিসাবে বিশেষ অঙ্গের সুচনা করে দিয়েছেন।
আমরা আলুপরাঠা চা খেয়ে টাকাপয়সা মিটিয়ে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে প্রায় ৯-৯.৩০ নাগাদ বেরোলাম থাংলিং এর উদ্দেশ্যে প্রায় ১ ঘন্টার রাস্তা। এই রাস্তা পার করতে আমার একটু ওই খাড়া উৎরাইগুলো পেরোতে কষ্ট হয়েছে মাত্র। অবশেষে আমরা আমরা থাংলিংএ পৌঁছলাম, প্রেমা দিদি আবার চা বানিয়ে খাওয়ালো। আমরা নেক্সট প্ল্যান করলাম রাতটা রেকংপিওতে গিয়ে থাকবো, এই ভেবে গাড়ীর জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম।
আপাততঃ এবারের জন্য কৈলাশ দর্শন অসম্পুর্ণই থেকে গেল। প্রতিবছর ১লা আগস্ট থেকে ১৫ই আগস্ট লোকাল মন্দির কমিটি ১৫দিনের জন্য কৈলাশ দর্শনের বিশেষ ব্যবস্থা করে এই ব্যাপারটা সিধু জানতোনা, আসলে সিধু এবার প্রপার ইনফর্মেশনটাই নেয়নি তাই এবার আমাদের যাত্রা অসম্পুর্ণ রেখেই ফিরতে হ’লো সামনের বছর দর্শনের ইচ্ছা রেখেই। ওম নমঃ শিবায়ঃ।
কিন্তু আমার কথা এখনও শেষ হয়নি। কিন্নর কিন্নরীদের তথা কিন্নর প্রদেশটার কথা একটু বলার আছে।
থাংলিং থেকে ১টা নাগাদ রেকংপিওর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম একজন পরিচিত মানুষের বোলেরো ট্রেকারে, ভাড়া ৫০০টাকা, আমি সিধু আর ছবিলাল। ওখানে পৌঁছে ক্যাফেটরিয়া নামে একটা হোটেলে উঠলাম। হোটেলটা রেকংপিও বাজারের একটু ওপরে। অত্যন্ত বাজে হোটেল কিন্তু আমার পায়ের এত খারাপ অবস্থা যে খুঁজে একটা ভাল হোটেলে যাব তার ক্ষমতা ছিলনা ৬০০টাকা ভাড়া। ওখানে গিয়ে ছবিলালের পেমেন্ট করে দিলাম ৪ দিনের ২৪০০টাকা + আরও ৩০০ টাকা বখশিশ খুশী হয়ে।বিকালে আমি একটা ভেজ স্যুপ আর ২টো রুটি খেলাম পনির কড়াই দিয়ে তারপর একটু রাস্তায় ঘুরে এসে শুয়ে পড়লাম। পরের দিন সকালে বাস ৭.৩০টায় চণ্ডীগড়।
(ক্রমশঃ)
(লেখক পরিচিতি – বিশিষ্ট জ্যোতিষী; একাগ্র পান্থ)
Comment here
You must be logged in to post a comment.