কাঞ্জিক পাঠকগণ, শ্রীরামচন্দ্রের আরাধনায় দূর্গামায়ের অকালবোধন তো উদযাপন করেন , কিন্তু অকাল-বিশ্বকর্মা পূজা শুনেছেন!! বেশ আজ শোনাই দেবকূলের কারিগর শ্রীশ্রী বিশ্বকর্মার অকালবোধনের মহা আয়োজনের কথা।
হুগলীজেলার বেগমপুর গ্রামের খরসরাই-ছোটতাজপুর অঞ্চলে মূলত তন্তুবায় সম্প্রদায়ের বাস, যা আমাদের সবার কাছে পরিচিত প্রসিদ্ধ ‘বেগমপুরী তাঁতশাড়ী’র জন্য। সেই তাঁতযন্ত্রকে প্রতি মাঘমাসের শুক্লানবমী তিথিতে মহা আড়ম্বরে করিৎকর্মা শ্রীশ্রীবিশ্বকর্মাদেবকে সাক্ষী রেখে পূজার আয়োজন করা হয়। কিন্তু মাঘ মাস কেন? আসলে কারণ হলো ১৭ ই সেপ্টেম্বর যা আমরা সবাই পরিচিত দেবকূলের কারিগরের তথা এই ভারতভূমির অধিকাংশ যন্ত্রকারিগরীর অঞ্চলে তাঁর পূজা হওয়ার দিন, কিন্তু তাঁতযন্ত্রে সেসময় আসন্ন দুর্গাপুজা উপলক্ষে তাঁত শাড়ি বানানোর ব্যস্ততা তুঙ্গে, তখন যন্ত্র থামিয়ে পূজার আয়োজন মানে আর্থিকক্ষতি।। তাই আনুমানিক ৭০ বছর ধরে তন্তুবায় সম্প্রদায়ের তত্ত্বাবধানে দূর্গাপুজোর সপ্তমীর দিন থেকে গুনে তিনমাস পর সপ্তমী তিথি হতে চারদিন ব্যাপী মহাসাড়ম্বরে আয়োজিত হয় বিশ্বকর্মা দেবের অকালবোধন।
বিগ্রহের বিশেষত্বে আরও একটি চমক আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছে, এখানে ঠাকুরের বাহন ঘোড়া। উল্লিখিত কারণ, তাঁতযন্ত্রের মধ্যস্থ ‘মাকু’ হাতে নিয়ে ডানদিক-বামদিক চালনার সময় ঘোড়ার ক্ষুরের চলার মতোই ‘খটখট’ আওয়াজ হয়, তাই তন্তুবায় বিশ্বকর্মা ঠাকুরের বাহন ঘোড়া।
পুজোর কটাদিন গ্রামের মাঠে চলে “পেটকাটি”, ” চাঁদিয়াল”সমেত শতশত ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা, শয়েশয়ে মানুষ সেখানে ঘুড়ি ওড়ান, ভিড় করেন।
“বচ্ছরকার” উৎসব যদি হয় দূর্গাপূজা, তবে বেগমপুর অঞ্চলে “তাঁতপূজা” হল দ্বিতীয় দূর্গাপূজা। বাড়িবাড়ি কুটুমজন-বন্ধুবান্ধবের আনাগোনা স্বাভাবিকভাবেই হয়ে থাকে
পুজো উপলক্ষে প্রায় সমস্ত বাড়িতে পেটপুজোর আয়োজনে কিন্তু “খাসির মাংস” এবং “মোয়া” থাকবেই
বিগ্রহ-পুজো প্যান্ডেল এবং রকমারী আলোর এই উৎসবে বাজেট থাকে লাখের উপরে, কিন্তু ২০২২শে এই ভাইরাসজনিত পরিস্থিতির জন্য সেসব প্রায় ৫০হাজারেও আসেনি, সাথে আয়োজনেও ভাটা।।
১১ই জানুয়ারি, ২০২২ থেকে চারদিন ব্যাপী পালিত হলো বেগমপুরে তন্তুবায় শ্রী বিশ্বকর্মা পূজা।
পাঠকগণ আগামী ২০২৩ সালে, পুজো উপলক্ষে আপনাদের সপরিবারে-সবান্ধবে নিমন্ত্রণ রইল 🙏😊
রবীন্দ্রসংগীত ও কত্থক নৃত্যশিল্পী, কথাসাহিত্যে স্নাতকোত্তর ও আকাশবাণীর ঘোষিকা। .দেশজ জীবনশৈলীর একনিষ্ঠ ধারক।
Comment here