প্রচলিত বাংলা প্রবাদ আছে, “পড়লে কাদায় হাতি চামচিকিতেও মারে লাথি”। হাতিকে কাদায় পড়তে দেখলে কোন চামচিকি না আনন্দ পায়! তবে এ যে সে চামচিকি নয়, স্বয়ং সি.ভি. রামন। হ্যাঁ, পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল জয়ী বিজ্ঞানী বড়লাট মাউন্টব্যাটেনের কাছে আবদার করেছিলেন সমগ্র বাংলাকে পাকিস্তানের হাতে সঁপে দেবার জন্য। কারণ একটাই হাতি কাদায় পড়ে বে-কায়দা হলে লাথ মারতে সুবিধে হবে, বাঙ্গালী মেধার সাথে তাঁর দলবলকে আর প্রতিযোগিতায় নামতে হবে না। বোঝা যাচ্ছে নোবেল জয়ী, noble ছিলেন না মোটেই। শুধু তিনি না, উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিমে তাঁর মতো অনেকেই ছিল তৎকালীন সময়ে। তৎকালীন অসমীয়া মিডিয়া বাংলা-ভাগ নিয়ে উল্লসিত হয়ে উঠেছিল। এর জন্য তৎকালীন আসাম অঞ্চলের শিক্ষা, দীক্ষায়, সম্পদে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা, সোনার ডিম পাড়া হাঁস, সুরমা উপত্যকাকে পাকিস্তানের হাতে সম্পূর্ণ সঁপে দিতে তাদের বাধে নি। তাদের আশা ছিল সিলেট ইস্ট পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত হলে সিলেটী বাঙ্গালীদের (যাদের বেশীরভাগ আসামের সরকারি পদগুলিতে বহাল ছিল) তাড়িয়ে শুধুমাত্র অহমীয়াদের জন্য একটি homogeneous আসাম গঠন করা। এইরকমভাবে হাতিকে কাদায় পড়তে দেখার অনেকের অবদমিত বাসনা নিয়ে ১৯৪৭ এ আবার আমার মাতৃভূমি বাংলা বহুভাগে ভাগ হল, ভারত স্বাধীনতা পেল। মানভূম, কোচবিহার, সুরমা উপত্যকার বাঙ্গালী এক লহমায় নিজভূমে হয়ে গেল পরদেশী। বিভিন্ন সময়ে ছোট, বড় অনেক রাজ্যের উদ্ভব হয়েছে এই বাংলায়। তাদের মধ্যে শাসন ক্ষমতার প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়েই ইতিহাস তার নিজের গতিপথে এগিয়ে গেছে।
রাজ্য, রাজা ভিন্ন হয়েছে কিন্তু বাঙ্গালী সংস্কৃতির মূল সুর সর্বত্র ছিল অভিন্ন। ধর্মের ভিত্তিতে পার্টিশন সেই, সুর, তাল সাংস্কৃতিক অভিন্নতা ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ঐতিহাসিকদের মতে সিলেট অঞ্চল প্রাচীন কালে অস্ট্রিক ভাষাভাষীদের বাসস্থান ছিল। দীর্ঘদিন ধরে ঝুমচাষ প্রধান ছিল, পরে বাংলার চিরাচরিত হাল চষে চাষবাস করার পদ্ধতি প্রসার লাভ করে। সপ্তম শতকের বঙ্গীয় সামন্তরাজা লোকনাথের তাম্রশাসন থেকে জানা যায়, তাঁর রাজত্ব কুমিল্লা থেকে সিলেট এবং কাছাড়ের জটিঙ্গা পর্যন্ত বিস্তৃত। পরবর্তীকালে একাদশ শতকে কেশব দেব এবং ঈশান দেবের শাসনকালে সিলেট একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাজ্য হিসেবে বিরাজমান ছিল। মধ্যযুগীয় বঙ্গে তিন হট্ট ছিল সংস্কৃত ও ধর্ম চর্চার প্রধান কেন্দ্র শ্রীহট্ট বা সিলেট, কুমারহট্ট বা হালিশহর এবং নবহট্ট বা নৈহাটি ও নবদ্বীপ।
বৃন্দাবন মুসলিম শাসক কর্তৃক ধ্বংস হওয়ার পর শ্রী শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু নির্দেশ দেন শ্রীহট্টের সহস্রাধিক মন্দিরের অনুকরণে নতুন ভাবে বৃন্দাবন কে সাজাতে। কালক্রমে অন্তর্দ্বন্দের ফলে শ্রীহট্ট রাজ্য দুর্বল হতে থাকে। ত্রয়োদশ ও চতুর্দশ শতকে শামসুদ্দিন ফিরোজ শার অধীনস্থ হয় সিলেট। তাঁর জেনারেল সিকন্দর খান গাজী এবং আরব ধর্ম প্রচারক শাহ জালাল সিলেটে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। ১৬১২ তে সিলেট মোঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। পরবর্তিকালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার দেওয়ানী অধিকার প্রাপ্ত হলে সিলেট ব্রিটিশ শাসনাভুক্ত হয়। নিত্যনতুন বিভিন্ন এলাকা করতলগত হতে হতে ব্রিটিশের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সী (বেঙ্গল প্রেসিডেন্সী এবং বাংলার ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক সীমানা কিন্তু এক নয়) যখন সুবৃহৎ আকৃতি ধারণ করে তখন ১৮৭৪ সালে আসাম জেলার সাথে কাছাড়, গোয়ালপাড়া, গারো পাহাড় এবং অন্যান্য পার্বত্য জেলা জুড়ে দিয়ে চীফ কমিশনারের প্রভিন্স গঠন করা হয়। পরবর্তীকালে দেখা গেল এই অঞ্চল অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হবার এবং নিজের শাসন পরিকাঠামো পরিচালন করার উপযুক্ত নয়। তখন, সচ্ছল, তুলনামূলক ভাবে উন্নত বাংলার সিলেট জেলাকে এই প্রভিন্সের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। সুতরাং এই প্রভিন্স কোনোভাবেই ভাষিক ও সাংস্কৃতিক হোমোজেনিয়াস অঞ্চল ছিল না। অনুন্নত এলাকার মধ্যে সিলেটকে জোরপূর্বক অন্তর্গত করাতে বাঙ্গালীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তৎকালীন বঙ্গবন্ধু পত্রিকা এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করে। বাঙ্গালী এবং বাংলাভাষী মুসলিম উভয়েই ভাইসরয়ের কাছে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আবেদন জানাতে থাকে। ব্রিটিশ ভারত সরকার আপত্তিতে কান না দিয়ে সেই আবেদন খারিজ করে দেয়।
বাংলাভাষী মুসলিম প্রথমদিকে বাংলার সাথে পুনর্মিলনের দাবী জানালেও ১৯১০ এর পর থেকে তাদের মতের পরিবর্তন হতে শুরু করে। সিলেটের আসাম লেজিস্লেটিভ কাউন্সিল সদস্য দেওয়ান ওয়াসিল চৌধুরী বাঙ্গালী থেকে সিলেটী আত্মপরিচয় পৃথক করতে সচেষ্ট হয়ে ওঠেন। তিনি তীব্র ভাষায় কলকাতা কেন্দ্রিক বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের সমালোচনা করেন। তাঁকেই ‘সিলেটী’ শব্দটির জনক বলে মনে করা হয়। ১৯২০ সাল নাগাদ সিলেট পিপলস অ্যাসোসিয়েশন এবং সিলেট-বেঙ্গল রিইউনিয়ন লীগ পুনরায় বাংলার সাথে পুনর্মিলনের পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে শুরু করে। পুনরায় তাঁদের হতাশ হতে হয়। ব্রিটিশ ভারত সরকার তাঁদের দাবী নাকচ করে দেন তিনটি কারণ দেখিয়ে, ১) সমগ্র বাঙলায় এরকম কোনো দাবী নেই, ২) এই দাবী মেনে নিলে বিহারের এবং ওড়িশার মানভূম অঞ্চলও অনুরূপ দাবী করতে পারে, ৩) শুধুমাত্র মুষ্টিমেয় সিলেটের বাঙ্গালীদের সেন্টিমেন্ট এরকম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট নয়, কারণ সমগ্র বাঙলার মানুষের মধ্যে এরকম কোনো সেন্টিমেন্ট পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এখানে দুটি বিষয় অত্যন্ত মজাদার – প্রথমতঃ ব্রিটিশ পরোক্ষভাবে স্বীকার করে নিচ্ছে মানভূম বাংলার অংশ। দ্বিতীয়তঃ, ১৯২০ সালেই বিশ্বনাগরিক সুলভ ঔদাসিন্য শিক্ষিত বাঙ্গালী মজ্জায় ঢুকতে শুরু করেছে। সিলেট, মানভূমে নিজের ভাই বিরাদরদের নিয়ে তার আর মাথাব্যথা নেই।
এইবার ১৯৪৭ সালে সিলেটের পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে আসা যাক।
সিলেটের পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্তি হয় ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে,এক ‘কলঙ্কময় গণভোট’ (Sylhet Referendum)-এর মাধ্যমে, যেখানে “Fake Vote” কে কেন্দ্র করে প্রতিবাদ দেখা গিয়েছিল। এক্ষেত্রে রাজস্বের প্রভূত ক্ষতিসাধন হলেও অসমিয়া জনগণ এ ব্যাপারে বড়ই উচ্ছ্বসিত হয়েছিল। দেশভাগের সেই জঘন্যতম পর্বে এই ধরণের মানসিকতা অস্বাভাবিক মনে হতে পারে কিন্তু একটি তলিয়ে দেখলেই ব্যাপারটা জলবৎ তরলং হয়ে যাবে।
সিলেটের অপসারণ ১৯৪৭এ হলেও এর বীজ আগে থেকেই অসম প্রদেশ কংগ্রেস বপণ করছিল ,তখন দেশভাগ বা সেই রকম কিছুর পরিকল্পনাও ঠিকঠাক গড়ে উঠেনি | তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড ওয়াভেল ১৯৪৬ এর এপ্রিল মাসে তাঁর জার্নালে লিখেছেন – অসম প্রদেশ কংগ্রেসের তৎকালীন কর্ণধার গোপীনাথ বরদলৈ ক্যাবিনেট মিশনকে জানান যে “আসাম ,সিলেটকে বাংলাকে সঁপে দিতে পুরোপুরি তৈরী”| শ্রী বরদলৈ বল্লভভাই প্যাটেলকে লিখেছেন “মৌলানা সাহেব (আজাদ) মনে হয় রাজ্যের বিকল্প হিসেবে বাঙ্গালী জেলা সিলেট ও কাছাড়ের কিছু অংশ আসাম থেকে অপসারণ করে বাংলাতে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এই সিদ্ধান্তের অপেক্ষা অসমবাসী ৭০ বছর থেকে দেখে আসছে” | অসম প্রদেশ কংগ্রেস ১৯৪৫এ তাদের নির্বাচন ইস্তাহারে উল্লেখ করে “অসম প্রদেশ যদি অসমিয়া ভাষা ও সংস্কৃতির ভিত্তিতে গড়ে না উঠে তাহলে অসমীয়া জাতির ও সংস্কৃতির রক্ষা সম্ভব হবেনা। সিলেট ও কাছাড়ের বাংলাভাষী জেলার অন্তর্ভুক্তি, লক্ষ লক্ষ বাঙ্গালীর আগমন এবং পতিত জমিতে তাদের আমদানি করে আনা স্বতন্ত্র অসমের পরিচয়কে যেন ক্রমাগতভাবে ধ্বংস করার হুমকি দিয়ে চলছে”।
কংগ্রেস হাই কমান্ড প্রথমদিকে অসম প্রদেশ কংগ্রেসকে সিলেটের অপসারণ নিয়ে সিদ্ধান্ত করার অনুমতি দিয়েছিল কারণ অবিভক্ত ভারতে প্রদেশগুলির পুনর্গঠনের বিচার জরুরী ছিল, কিন্তু ১৯৪৭ এর জুলাই মাসে তারা এই একই অনুমতি দানে ইতস্তত বোধ করছিল। কারণ, এই সময় সিলেটের অপসারণের অর্থ হল জেলাটির পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্তি।
কিন্তু সিলেট পাকিস্তানে না ভারতে না গোল্লায় যাবে, আসামের প্রদেশ কংগ্রেসের এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই। তাই বরদলৈ গণভোটের ফল ঘোষণার সময় বলেন “সিলেট থেকে মুক্তি পাওয়ার এবং ভাষাগত homogeneous অসম প্রদেশ গঠনের জন্য এটা ছিল সুবর্ণসুযোগ”। তিনি আরও বলেন যে এর ফলে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় নাকি স্বস্তির বাতাস বইছে। সিলেট নেতৃত্ব জেলার একটা ভাগকে অসমে রাখার দাবী বর্ডার কমিশনের কাছে পাকাপোক্তভাবে উপস্থাপিত করলেও তাদের হতাশ হতে হয়েছিল।
এখন দেখার বিষয় হল যখন সিলেটকে ইংরেজ সরকার অসমে ঢুকিয়েছিল তখনও কি অসমীয়া জনগণ বা বুদ্ধিজীবীরা একই মনোভাব পোষণ করতেন ?
ব্রিটিশ সরকার ১৮২৬ সালে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা দখল করে। তখন শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় পূর্ববঙ্গ থেকে বহু চাষী,জমিদার, মৌজদাররা সেই স্থানে এসে বসবাস করা শুরু করে, যাদের অধিকাংশই ছিল মুসলিম জনগণ। ১৮৮৫-৮৬ তে লেখক গুণাভিরাম কয়েকটি প্রবন্ধে উল্লেখ করেন যে এই প্রকার অভিবাসন (Immigration) খুবই ইতিবাচক। ১৯২৯ সালে খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবী জগন্নাথ বেজবড়ুয়া Assam Banking & Inquiry Committee কে বলেছেন যে অভিবাসনের ফলে বরপেটার প্রভূত উন্নতি হয়েছে। কিন্তু পরের দশক থেকেই অসমবাসীদের বিচারে পরিবর্তন আসা শুরু হয়। লাগামছাড়া অভিবাসনের ফলে অসমে তারা সংখ্যালঘু হয়ে যাওয়ার ভয় পাচ্ছিল।
এই সময় অসম নেতৃত্ব দুটি বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন –
১। লাগামহীন মুসলিম আগমন আটকানো
২। সিলেট ও কাছাড়কে অসম থেকে অপসারণ করার মাধ্যমে সরকারী অফিসগুলোকে বাঙ্গালী হিন্দুর কবল থেকে মুক্ত করা |
১৯৩৭ এর নভেম্বরে নির্বাচনীয় প্রচারকার্যে নেহরু যখন অসমে আসেন তখন ‘অসমিয়া সংরক্ষিণী সভা’ ও ‘অসমিয়া দেকা দল’ দুটো প্রস্তাব তার কাছে তুলে ধরেন যার প্রথমটা ছিল এই – “অসমিয়া জাতিকে বিলুপ্ত হওয়া থেকে আটকাতে অনেক বুদ্ধিজীবী প্রদেশকে ভারত থেকে আলাদা করার মত প্রকাশ করেছেন।”
১৯২১-৩১ এ অসমে মুসলিম সংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ৪৫.৮% যেটা সমগ্র অসমের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার (১৯.৮%) এর তুলনায় দ্বিগুণেরও অধিক। ১৯৩১-৪১ এ এই অনুপাত হয় যথাক্রমে ৩২.৯% এবং ২০.৫%। এবার আরও কিছু অতি অসমিয়াদের উল্লেখ করা যাক। ভারতের স্বাধীনতার ২০ দিন আগে খ্যাতনামা সাহিত্যিক বিরিঞ্চিকুমার বড়ুয়া বলেছেন “… সাংস্কৃতিক, জাতিগত ও ভাষাগত দিক দিয়ে প্রত্যেক অ-অসমিয়া অসমের কাছে বিদেশী। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে অতিপ্রাচীন কাল থেকেই অসম কখনই ভারতের অংশ ছিলনা।” এভাবে সবাইকে বিদেশী বলে যখন তিনি দাগাচ্ছিলেন তার সহযোদ্ধারা আরও দুয়েক পা এগিয়ে ছিলেন। তাদের জনসমক্ষে উস্কানিমূলক ভাষণ দিতেও দেখা গিয়েছে।
১৯৪৭ সালের ২৭ এ আগস্ট Shillong Times পত্রিকা জাতীয় মহাসভার স্বাক্ষরসহ একটি কলম প্রকাশ করে যাতে লেখা ছিল “With Sylhet joining Pakistan, Assam has grown smaller in area but attained greater homogeneity”।
অসমের গভর্নর জেনারেল আকবর হায়দ্রী স্বাধীনতার পরের মাসে বিধানসভায় তার বক্তৃতায় বলেন “.. এই পার্বত্য এলাকায় ও উপত্যকায় দাবী থাকলেও বাঙালিদের আর করার কিছু ক্ষমতা রইল না”। কিন্তু এই স্বস্তি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। দেশভাগের পরেই যেহেতু সিলেটের যেহেতু পশ্চিমবঙ্গের সাথে কোনো বর্ডার নেই, সিলেটবাসীরা পুনরায় রিফিউজি হয়ে অসমে এসে আশ্রয় নেওয়া শুরু করে। এটা আটকানোর জন্য গোপীনাথ বরদলৈ যারপরনাই প্রচেষ্টা চালান। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোহনলাল সাক্সেনা কেন্দ্রকে জানান যে – রাজ্য সরকারের বৈমাত্রেয় আচরণ সত্বেও রিফিউজিরা এখানেই আছে।
কিন্তু মুসলিম অভিবাসীগণ অসমকে খুবই স্বস্তি প্রদান করে। কিভাবে সেটা দেখা যাক।
অসমে ১৯৩১ সালে অসমিয়া ভাষী জনগণের সংখ্যা ছিল ৩১.৪% (১৯,৭৩,২৫০) যেটা ১৯৫১ তে গিয়ে ৫৬.৭%(৪৯,১৩,৯২৯) এ গিয়ে দাঁড়ায়। আর বাংলাভাষীদের সংখ্যা এই দুই গণনার সময় ছিল যথাক্রমে ২৬.৮% এবং ১৬.৫%। তৎকালীন অসমে উগ্র ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদের চেহারাটা বেশ পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়।
১৯৫১ তে ICS আর. বি. ভাগাইওয়ালা এই বিষয়টি পরিষ্কারভাবে দেখিয়েছেন যে বাংলাভাষী মুসলিমসহ বাকি বহু ট্রাইবালরা নিজেদের অসমিয়া বলে পরিচয় দিয়েছে (Census of India ,1951,Vol XII,part 1-A,Page 413-14) |
MYRON WEINER তাঁর ‘SONS OF THE SOIL'(P.124) এ লিখেছেন,
“AFTER 1947 THE BENGALI MUSLIMS BECAME DEFACTO ALLIES OF THE ASSAMESE IN THEIR CONFLICT WITH THE BENGALI HINDUS, BENGALI MUSLIMS HAVE BEEN WILLING TO ACCEPT ASSAMESE AS THE MEDIUM OF INSTRUCTION IN THEIR SCHOOLS, AND HAVE THROWN THEIR VOTES BEHIND ASSAMESE CANDIDATES FOR THE STATE ASSEMBLY AND THE NATIONAL PARLIAMENT. THEY HAVE DECLARED ASSAMESE AS THEIR MOTHER TONGUE .IN RETURN, THE STATE GOVERNMENT HAS NOT ATTEMPTED TO EJECT BENGALI MUSLIMS FROM LANDS ON WHICH THEY HAVE SETTLED IN THE BRAHMAPUTRA VALLEY, THOUGH EARLIER LEADERS HAD CLAIMED THAT MUCH OF THE SETTLEMENT HAD TAKEN PLACE ILLEGALLY…THERE IS THUS AN UNSPOKEN COALITION BETWEEN THE ASSAMESE AND THE BENGALI MUSLIMS AGAINST THE BENGALI HINDUS .”
বাংলায় একে বলা হয় “নিজের নাক কেটে পরের যাত্রাভঙ্গ করা’ |
এবার দেখার বিষয় হল এই অভিবাসী মুসলিম ও তাদের সাহায্যে পরবর্তীকালে আনীত অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা অসমের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর প্রভাব বর্তমান সময়ের ভোটেও দেখা গিয়েছে।
অসমিয়া জনতার লাভ কিছুই হয়নি তবে এর ফলে হিন্দু বাঙ্গালীর অনেক বড়ো ক্ষতি হয়েছে বটে।
ULFA বা ১৯৮০ এর দশকে ‘বঙ্গাল খেদা’র মতো ইস্যু অনেক পরের ঘটনা হলেও তার স্ক্রিপ্ট যে বহু পুরোনো এবং এসব যে নিতান্তই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় তা আশা করি পাঠকদের কাছে পরিষ্কার হল।
বর্তমানে অসম সরকারের এক নেতা উদ্বাস্তুদের উল্লেখ করে বলেছেন যে ‘বাঙ্গালী হিন্দুরা যদি নিজেদের অসমিয়া বলে পরিচয় দেয় তাহলে তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে‘। এমতবস্থায় বাঙ্গালী হিন্দু নেতৃত্ব বা অসমের বাঙ্গালী সমাজের কি প্রতিক্রিয়া হয় সেটা দেখার আশায় রইলাম।
Comment here