বিজ্ঞান

গোলমালও একধরণের সংকেত, যদি তা হয় পারমাণবিক স্কেলে

– শ্রী অর্ণব বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রিয় পাঠক, তোমাকে যদি আমি এখন প্রশ্ন করি, তোমার গোলমাল (ইংরেজিতে যাকে আমরা ‘Noise’ বলি) ভালোলাগে? সব থেকে সহজ উত্তর পাবো, ‘না’। সত্যিই তো সেই ভালো না লাগা থেকেই লোকজন আজকাল ঘুরতে যেতে চায় নির্জন, কোলাহল মুক্ত প্রকৃতির কোলে। কিন্তু গোলমাল একটি উপদ্রব, না কি এটি একটি সংকেত তা নির্ভর করে আপনি কাকে জিজ্ঞাসা করছেন তার উপর। এই যেমন, আধুনিক ব্যান্ডের গান আমাদের দাদু ঠাকুমার কাছে noise মনে হলেও তরুণ প্রজন্মের কাছে তা চিত্তাকর্ষক। ঠিক তেমনই, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পারমাণবিক স্কেলে এই গোলমাল বা noise-ই পদার্থের অনেক অজানা ধর্মের রহস্য উদঘাটন করতে পারে, খুলে দিতে পারে বিজ্ঞানের জটিল সমস্যাগুলোর জট।

চারপাশে আমরা যেসকল পদার্থ দেখি সবই মূলত তিনটি মৌলিক কণার সমন্বয়ে গঠিত। ইলেক্ট্রন, প্রোটন আর নিউট্রন। এর মধ্যে প্রোটন আর নিউট্রনকে একত্রে বলে পদার্থটির পরমাণুর নিউক্লিয়াস এবং ইলেক্ট্রন সেই নিউক্লিয়াসকে ঘিরে রাখে ঠিক যেমন বায়ুমণ্ডল ঘিরে রাখে আমাদের পৃথিবীকে। সাধারণভাবে যে কোনো পদার্থের পরমাণুর গঠন এরমই। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো পারমাণবিক গঠন এক হওয়া সত্ত্বেও আমাদের চারপাশে আমরা নানাবিধ পদার্থের সন্ধান পাই। তাদের মধ্যে কোনোটা তড়িতের সুপরিবাহী (conductor) তো অন্যটা অপরিবাহী (insulator)। আবার কোনোটা অতিপরিবাহী (superconductor) তো আরেকটা অর্ধপরিবাহী (semiconductor)। স্বভাবতই আমাদের বোঝা দরকার এতো বৈচিত্রের কারণ কি ?

এই সবকিছুর জন্য দায়ী ইলেক্ট্রনের নিজস্ব গতিবিধি, আচার আচরণ। সবসময় আবার এই বিচিত্র বৈশিষ্টের বহিঃপ্রকাশ শুধুমাত্র একটি ইলেক্ট্রনের জন্যই হয় তেমনও নয়; এদের সমষ্টিগত বহুরূপও পদার্থের নানান জটিল ধর্মের জন্য দায়ী। সত্যি করেই, এই সুবিশাল ‘বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য’-র সুরটা বাঁধার কাজ করে ইলেক্ট্রন। উদাহরণস্বরূপ, আমরা একটি মৌমাছিকে যখন একাকী উড়ে বেড়াতে দেখি তখন দেখে উদ্ভ্রান্তের মতো মনে হয়। আবার, একত্রে অনেক মৌমাছিকে যখন মৌচাকের কাছাকাছি দেখি, তখন সেই মৌমাছিগুলোরই দায়িত্বপরায়ণ, সমাজবদ্ধ রূপটি প্রস্ফুটিত হয়। একইভাবে, অনেকগুলো ইলেক্ট্রন কিছু পদার্থে সাধারণ ইলেক্ট্রনেরই কার্যকরী ভরকে বহুগুণ বৃদ্ধি করে সৃষ্টি করে ‘ভারী ফার্মিয়ন’ (heavy fermions) ; আবার কিছু ক্ষেত্রে জন্ম দেয় একক তড়িতাধানেরও ভগ্নাংশের বা ‘আংশিক তড়িতাধান’ (fractional charge)। সত্যি করেই সাধারণ বলবিদ্যার তত্ত্ব দিয়ে আমরা এগুলিকে ব্যাখ্যা করতে পারি না। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ‘কোয়ান্টাম বলবিদ্যা’-র (quantum mechanics) আবিষ্কার এই বিষয়ে অনেকাংশে আমাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেও পদার্থের মধ্যে ইলেক্ট্রনের গতিপ্রকৃতির খুঁটিনাটি এবং তার থেকে পদার্থের বিচিত্র ধর্মের আবির্ভাব বরাবরই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিজ্ঞানীদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।

তবে এই ‘কোয়ান্টাম বলবিদ্যা’ বিষয়টি মোটেই সহজসাধ্য নয়। সবটাই যেন সেই সুকুমার রায়-এর ‘শিব ঠাকুরের আপনদেশে’ নিয়মকানুন সর্বনেশে। আমরা আমাদের চারপাশে যেসকল ঘটনা দেখি বা আমাদের অর্জিত জ্ঞান দিয়ে সেটার বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করি না কেন; তার কোনো কিছুই এই বিষয়টি মেনে চলে না। যেমন ধরা যাক, একটি চেয়ারকে একটা ঘরে এক কোণে রেখে দিয়ে ঘর থেকে মানুষটি বেরিয়ে গেলেন আর ঘরের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হল। অর্থাৎ, আপনি আর চেয়ারটি দেখতে পাচ্ছেন না। আপাতদৃষ্টিতে এটাই ঠিক যে, চেয়ারটি ঘরেই আছে। কিন্তু কোয়ান্টাম বলবিদ্যা অনুযায়ী চেয়ারটি ঘরে নাও থাকতে পারে; যতক্ষণ না মানুষটি ঘরে গিয়ে চেয়ারটিকে দেখতে পাচ্ছেন। আর একটি উদাহরণ দিই; একটি রবারের খেলার বলকে সোজাসুজি সামনের একটা দেওয়ালে জোরে ছুঁড়ে মারলাম। কি দেখবো যে বলটা আবার ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসছে। কিন্তু এখন বলটাকে যদি খুব ছোট্ট করে দেওয়া যায় অর্থাৎ এখনকার আকারের প্রায় ১০,০০০,০০০,০০০ ভাগ কমিয়ে দেওয়া যায় তাহলে আমরা খুব নিশ্চিতভাবে বলতে পারবো না যে সেটি ধাক্কা খেয়ে আবার ফিরে আসবে। বলটি দেওয়াল ভেদ করে চলেও যেতে পারে। কোয়ান্টাম বলবিদ্যার পরিভাষায় বলটির দেওয়াল ভেদ করে চলে যাওয়ার ঘটনাটিকে বলে ‘টানেলিং’ (quantum tunneling)। আর মূল সমস্যার সৃষ্টি এখানেই। সুতরাং আমরা বুঝলাম, আমাদের সাধারণ জ্ঞানে যেখানে বস্তুর অবস্থান সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত হতে পারি, কোয়ান্টাম বলবিদ্যার ক্ষেত্রে সেটি সম্পূর্ণরূপেই সম্ভাবনাময়। আর সেই সম্ভাবনা বা প্রোবাবিলিটির সূত্র ধরেই ছোট্ট বলটির দেওয়াল ভেদ করে অন্য পাশে পৌঁছানোর সম্ভাবনা কখনোই শুন্য হতে পারে না। বিজ্ঞানীরা তাত্ত্বিক গণনার মাধ্যমে ও দেখলেন যে এই দেওয়ালটির বেধ বাড়িয়ে বা কমিয়ে বলটির দেওয়াল ভেদ করার সম্ভাবনাও কমানো বা বাড়ানো যায়। পদার্থবিজ্ঞানের পরিভাষায় এই দেওয়ালটিকে বলা হয় ‘টানেলিং ব্যরিয়ার’ (tunneling barrier)। প্রসঙ্গত বলে দি, কোয়ান্টাম বলবিদ্যা নামক পদার্থবিদ্যার এই শাখাটি পদার্থের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা (যেমন ইলেক্ট্রন, প্রোটন ইত্যাদি) নিয়েই আলোচনা করে।

এ তো গেলো ‘টানেলিং’ আর কোয়ান্টাম বলবিদ্যার কথা। বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহে বিংশ শতকের গোড়ার দিকে আবার এটাও প্রমাণিত হলো যে টানেলিং হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা তাই ভাবনা শুরু করলেন এই ‘টানেলিং’-কে প্রয়োগ করে যদি পদার্থের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণার সুবিশাল জগৎটার ছবি মানুষের চোখের সামনে তুলে ধরা যায়। এতে ছোট্ট কণাগুলির শুধু ছবিই যে দেখা যাবে তাই নয়, এর সাহায্যে অনেক অজানা রহস্যের সমাধান সম্ভব। এই ভাবনার সূত্র ধরেই আবিষ্কার হলো ‘স্ক্যানিং টানেলিং মাইক্রোস্কোপ’ বা সংক্ষেপে “এস টি এম (STM)“ (১৯৮১); যার জন্য দুই জার্মান বিজ্ঞানী জর্জ বিনিগ ও হেনরিখ রোহেরার নোবেল পুরস্কারে (পদার্থবিদ্যা, ১৯৮৬) সম্মানিত হন। এই ‘এস টি এম’ ব্যবহার করেই পদার্থের পরমাণুর ছবি তোলা সম্ভব হলো। অর্থাৎ, নিজের চোখেই মানুষ দেখতে পেল পদার্থের পারমাণবিক গঠন। বলাই বাহুল্য, এই আবিষ্কার মৌলিক গবেষণার ক্ষেত্রে একটা নতুন দিশা দেখাতে সক্ষম হয়। এখন দেখা যাক এই ‘এস টি এম’ কেমন করে কাজ করে?

যন্ত্রটির প্রধান অংশ একটি সুতীক্ষ্ণ ধাতব তার, জেক ‘এস টি এম’-এর ‘টিপ্’ বলে। এখন যে পদার্থের পৃষ্ঠতলের আমরা পারমাণবিক স্কেলে উচ্চ রেজোলিউশনের ছবি তুলতে চাইছি, তারটিকে সেটির খুব কাছাকাছি নিয়ে আসতে হয় এবং সেই টিপ্ আর পদার্থের পৃষ্ঠতলটির মধ্যে তড়িৎ বিভব প্রয়োগ করা হয়। আমরা জানি, তড়িৎ বিভব প্রয়োগ করলে ইলেক্ট্রনের প্রবাহ শুরু হয় এবং ওই পৃষ্ঠতল আর টিপ্-এর মধ্যে বিদ্যুৎ প্রবাহ হয়। ঠিক যেমন, কোনো ব্যাটারির ধনাত্মক ও ঋণাত্মক মেরুকে একটি পরিবাহী তার দিয়ে জুড়ে দিলে আমরা বিদ্যুৎ প্রবাহ পেতে পারি। আর ‘এস টি এম’-এর ক্ষেত্রেও টিপের মধ্যের এই তড়িৎ প্রবাহ মেপেই আমরা উচ্চ রেজোলিউশনের ছবি তুলতে পারি। শুধু পার্থক্য এটাই যে ‘এস টি এম’-এর ক্ষেত্রে টিপ্ ও নমুনাটির পৃষ্ঠতলের মধ্যে কোনো পরিবাহী তারের সংযোগ থাকে না; এবং ইলেক্ট্রন টিপ্ থেকে ‘টানেলিং’-এর মাধ্যমে পৃষ্ঠতলে বা পৃষ্ঠতল থেকে টিপে স্থানান্তরিত হয়। ইলেক্ট্রনের এইরূপ প্রবাহের ফলে আমরা তড়িৎপ্রবাহ পাই বলে একে ‘টানেলিং তড়িৎপ্রবাহ’ (tunneling current) বলে এবং এক্ষেত্রে টিপ্ ও পদার্থের পৃষ্ঠতলের মধ্যে একটি খুবই ক্ষুদ্র শূন্যস্থান থাকে যেটি ‘টানেলিং ব্যারিয়ার’-এর কাজ করে। বেশি তড়িৎপ্রবাহ পাওয়ার অর্থ টিপটি পৃষ্ঠতলের কাছে আছে অর্থাৎ জায়গাটি উঁচু। বিপরীতক্রমে, কম তড়িৎপ্রবাহ পাওয়ার অর্থ স্থানটি অপেক্ষাকৃত নিচু। এভাবে তড়িৎপ্রবাহ মেপেই আমরা উচ্চ রেজোলিউশনের ছবি তুলতে পারি। আপাতদৃষ্টিতে যন্ত্রটির কার্যনীতি খুব সহজ বলে মনে হলেও বাস্তবে সেটি বেশই জটিল কারণ এর জন্য দরকার অণুবীক্ষণিক ভাবে পরিষ্কার পদার্থটির পৃষ্ঠতল এবং টিপটির খুব সুক্ষ নড়াচড়া পরিমাপের বা নিয়ন্ত্রণের জন্য “পিয়েজো ইলেকট্রিক’’ মোটর।

এই যে আমরা চারপাশে নানাবিধ বৈদ্যুতিক যন্ত্রের এক আশ্চর্য সমাহার দেখতে পাই, তার সবকিছুই চলে ইলেক্ট্রনের গতিবিধির ওপর নির্ভর করে। সত্যিই ভাবলে অবাক লাগে, একটা ছোট্ট কণা কিভাবে আমাদের জীবনটাকে বদলে দিয়েছে, বা ভবিষ্যতওে দেবে। কখনো একাকি তো কখনোও আবার জোট বেঁধে। সাধারণত, আমরা তড়িৎপ্রবাহ বলতে বুঝি কোনো তড়িৎদ্বারে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে একস্থান থেকে অন্যত্র ইলেক্ট্রন প্রবাহের গড়। এখন আমরা যদি এই তারটিকে একটি খুব সুক্ষ তার হিসেবে কল্পনা করতে পারি, যেখানে দুটি বিভিন্ন বা একই পদার্থের পরমাণু জুড়ে তারটি তৈরী করেছে। সেখানে ইলেক্ট্রনের গতিবিধি কোয়ান্টাম বলবিদ্যার নিয়ম মেনে সম্পূর্ণরূপেই বদলে যাবে এবং এই সুক্ষ তারটি দিয়ে তখন আর আগের মতো অতগুলো ইলেক্ট্রন একত্রে যাতায়াত করতে পারবে না। যথারীতি পরিসংখ্যান বিদ্যার সাহায্যে তখন আমরা ইলেক্ট্রনের চালচলন আরও নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করতে পারবো। যা থেকে বুঝতে পারবো সাধারণত আমরা যে অপরিবর্তনীয় তড়িৎপ্রবাহ লক্ষ্য করি তা সত্যি করেই কোনো নিরন্তর তড়িৎপ্রবাহ নয়, উল্টে এক একটি ইলেক্ট্রনকে কেউ যেন আলাদা আলাদাভাবে এক জায়গা থেকে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছে। ঠিক যেন, একজন মাঝি নৌকায় আলাদা করে প্রতিটি মানুষকে নদীর এক পার থেকে অন্য পারে পৌঁছে দিয়ে আসছে। তড়িৎপ্রবাহের সময় ইলেক্ট্রনগুলির এইরূপ আচরণের জন্য তড়িৎ্প্রবাহের প্রবাহমাত্রার মান সময়ের সাথে ওঠানামা করে। শুধু তাই নয় ইলেক্ট্রনগুলির এক স্থান থেকে অন্যত্র পৌঁছানোর সময়ের পরিসংখ্যানগত সুক্ষ তারতম্যের উপরও নির্ভর করে প্রবাহমাত্রার মানের পরিবর্তন হয়। একেই বিজ্ঞানের পরিভাষায় আমরা “শট নয়েজ” (shot noise) বলে থাকি। বৃষ্টির জলের ফোটা যখন টিনের চালে এসে আঘাত করে তখন যে প্রকার শব্দ শুনতে পাওয়া যায়, এই ঘটনাটিও কিছুটা সেইরকম। এই প্রকার নয়েজ বা গোলমালের পরিমাপ, ইলেক্ট্রন বা সংশ্লিষ্ট আধানটির সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরতে পারে যা সাধারণ তড়িৎ পরিবাহিতার পরিমাপের দ্বারা সম্ভবপর হয় না। আমরা (মূলত যারা বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রী) জানি অর্ধপরিবাহী, পরিবাহী এমনকি অতিপরিবাহী পদার্থের মধ্যে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে অপদ্রব্য মেশালে তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্টের অনেক পরিবর্তন সম্ভব। কিন্তু আমি যদি এখন প্রশ্ন করি বিশুদ্ধ পদার্থটির মধ্যে যদি একটিমাত্র অবিশুদ্ধির পরমাণু মেশানো হয়, তাহলে সেটির কিরূপ পরিবর্তন লক্ষ্য করবো ? সত্যি করেই এর উত্তর আমাদের অজানা। এখন তোমার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, একটিমাত্র অবিশুদ্ধি যোগ করে কিই-বা পরিবর্তন হবে বা কোনো পদার্থে সামান্য একটা অবিশুদ্ধি পরমাণুর প্রভাব জেনে আমাদের মানবজীবনে কি উপকার হবে ? কিন্তু যদি একটু গভীরে গিয়ে ভাবা যায়, দেখবো আমরা ধাপে ধাপে বিদ্যমান বিদ্যুৎবর্তনীর ক্ষুদ্রায়ণের (miniaturization of electronic circuits) দিকেই এগিয়ে চলেছি। আর তারই যথার্থ বাস্তবায়নের জন্য আমাদের এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়ে জানা খুবই জরুরি। তাই যখন হাতের কাছে আমাদের “খুড়োর কল“ ‘এস টি এম’-এর পারমাণবিক জগতে কাজ করার এক অভূতপূর্ব ক্ষমতা আছে , সেটিকে কাজে লাগিয়েই বা কেন আমরা ‘পারমাণবিক গণ্ডগোলের’ উৎস সন্ধানে যেতে পারবো না ? এই চিন্তার বশবর্তী হয়েই জার্মানিতে একদল গবেষক নিরন্তর কাজ করে চলেছে। আর কর্মসূত্রে তাদেরই পথের পথিক হওয়ার জন্যই আমার কলকাতা থেকে সুদূর জার্মানিতে পাড়ি দেওয়া।

এক্ষেত্রে ‘এস টি এম’-এর টিপটাকে ব্যবহার করে একটি অণু বা একটি মৌলের পরমাণুর সাথে সংযোগ স্থাপন করা হয়। এরপর সেই পারমাণবিক সংযোগটি স্থিতিশীল হলে, তবেই আমরা “শট নয়েজ” পরিমাপ করতে পারি। তাই বিষয়টি আপাতভাবে গোলমাল বা Noise পরিমাপের হলেও, ওই পারমাণবিক সংযোগটির স্থায়িত্বের জন্য দরকার সম্পূর্ণভাবে গোলমাল বর্জিত পরিবেশ। কারণ, একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র disturbance-ও সংযোগটিকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে, যা পুরো পরীক্ষায় বাধা সৃষ্টি করবে।তবে, গবেষণা বা পরীক্ষালব্ধ ফলের নিরিখে বিষয়টিকে একটি সদ্যজাত শিশুর সাথে যথার্থই তুলনা করা চলে। তাই বিশদে কিছু বলার জন্য এখনও অনেক পথ পেরোনো বাকি।

 

(লেখক পরিচিতি: শ্রী অর্ণব বন্দ্যোপাধ্যায় – পোস্টডক্টরাল ফেলো, সারফেস ফিজিক্স গ্ৰুপ, কিয়েল বিশ্ববিদ্যালয়)

Comment here