(পূর্বের অংশের পর)
– শ্রী অলোক ভট্টাচার্য
১৮৭০ সালে রামধনের লেখা ‘বিধবা বেদন নিষেধক’ নামে বিচার মূলক গ্রন্থ প্রকাশিত হয় এবং তিনি ‘তর্কপঞ্চানন’ উপাধিতে ভূষিত হন। ১৮৮৪ সালে তিনি দেহত্যাগ করেন। দাদা রাম জগন্নাথ আগেই প্রয়াত। ১৯১৩ সালে তাঁর উত্তর পুরুষরা রামধানের স্মৃতিতে প্রতিষ্ঠা করেন ‘রামধন তর্কপঞ্চানন লাইব্রেরী’। রাম ধন এই গ্রামের প্রথম প্রভূত খ্যাতিমান মানুষ।
কালিকিঙ্কর লাহিড়ী ছিলেন এই গ্রামের প্রথম লেখক যাঁর লেখা ‘রোশনারা’ প্রকাশিত হয় ১৮৬৮ সালে কড়কদি থেকেই। গ্রামের ছাপাখানা ছিল না ব’লে মুদ্রিত হয় কলকাতা থেকে।
বঙ্কিমচন্দ্র লাহিড়ীর জন্ম ১৮৬০ সালে কোড়কোদিতেই। কর্মসূত্রে পূর্ণিয়া তে থাকাকালীন ১৮৯৮ সালে প্রকাশ করেন তাঁর ‘বীরকেশরী নেপোলিয়ান বোনাপার্ট’ ও ১৯০১ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর গ্রন্থ ‘সম্রাট আকবর’। দুটি গ্রন্থই হিন্দি ও গুজরাটিতে অনুবাদিত হয়েছিল। ১৯২৪ সালে প্রকাশিত হয় ‘মহাভারত মঞ্জরী’। মহাভারতের গদ্যমূলক পাঠের সাথে টিকা টিপ্পনি সহ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ।
শিবদাস বিজয় দাস ভাদুড়ী –
১৯১১ সালে মোহনবাগান দল খালি পায়ে ফুটবল খেলে ইংরেজ দল ইস্ট ইয়র্ককে পরাজিত ক’রে প্রথম ভারতীয় দল হিসেবে আই এফ এ শিল্ড জয় ক’রে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। দেশের মুখ উজ্জ্বল করা ছাড়াও ‘আমরাও পারি’- এই বিশ্বাসটিকে ছড়িয়ে দিয়েছিল ভারতীয়দের মনে। পরোক্ষে স্বাধীনতা সংগ্রামে এটি সাহস যুগিয়ে ছিল।
অধিনায়ক ও জয়সূচক গোলটির মালিক শিবদাস ভাদুড়ীর জন্ম কোড়কদিতেই ১৮৮৫ সালে। পেশায় ছিলেন পশু চিকিৎসক। তাঁর দাদা বিজয়দাসও সেই দলে খেলেছিলেন।
এঁদের আরেক ভাই রামদাস ঢাকাতে তাজপুরের জমিদারের তৈরি দল ওয়ারীতে অধিনায়ক ছিলেন। রামদাস পরে ময়ূরভঞ্জ এর রাজার দরবারে চাকরি নেন ও সেখানে স্থিত হন। সেটি বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির মধ্যেই ছিল। তার প্রথম পুত্র আমার নিজের মেসোমশাই ;আমি ১৯৭০ সালে সেই বাড়িতে গিয়েছি। দ্বিতীয় পুত্র জীবিত ছিলেন, তার স্ত্রীও ছিলেন আমাদের প্রতিবেশী রুকনি গ্রামের মেয়ে।
জ্ঞানেন্দ্রলাল ভাদুড়ি শিক্ষা :
শিক্ষা জগতে জে এল ভাদুড়ি নামে খ্যাত ছিলেন। ১৮৯৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন কোড়কদিতে। গ্রামের স্কুল থেকে ম্যাট্রিক্স অর্থাৎ দশম মান পাস করে কলকাতায় প্রাণীবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞানের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। ব্যাঙ ও ব্যাঙ্গাচির উপর তাঁর মৌলিক গবেষণা আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করে। আচার্য সত্যেন্দ্রনাথ বসুর সঙ্গে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান প্রচারের কাজে সক্রিয় ছিলেন। বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ ও তার মুখপত্র ‘জ্ঞান ও বিজ্ঞান’ প্রকাশনে তাঁর ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে আছে। ১৯৭০ থেকে ১৯৭৩ সাল অব্দি ‘ ইন্ডিয়ান সাইন্স নিউজ অ্যাসোসিয়েশন’ এর সভাপতি ছিলেন। ‘প্রাণিবিজ্ঞানের পরিভাষা’ তাঁর বিখ্যাত ও সমাদৃত গ্রন্থ।
(ক্রমশঃ)
Comment here