আমার ইতিহাস

কোড়কদী – ১৩

(পূর্বের সংখ্যার পর)

– শ্রী অলোক ভট্টাচার্য

 

 

শ্রী শ্যামেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য: এ প্রতিবাদী সমাজবিপ্লবীর কথা

 

জন্মের এক শতাব্দী এবং মৃত্যুরও সিকি শতাব্দীর বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে যাবার পর কারও জীবন ও কর্মকান্ডের পর্যালোচনা করা খুবই দুরূহ যদি না কেউ কোথাও এ বিষয়ে কোনও পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ লিপিবদ্ধ করে থাকেন। তিনি নিজে কোন জীবনস্মৃতি লিখে যাননি। প্রচারবিমুখ তাই মৌখিক বা লিখিত কোন প্রকার আত্মপ্রচার ছিল তাঁর অনভিপ্রেত। যে জীবন কেটেছে পরার্থে, কৃষিনির্ভির দেশের কৃষক ও সাধারণ মানুষের শোষণমুক্ত উন্নততর জীবনযাত্রার স্বপ্নে ও সন্ধানে, এমন একটি জীবন-দর্শন বোধ হয় আজকের দিনেও আলোচনার অপেক্ষা রাখে। শ্রী শ্যামেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ছিলেন এমনই এক দুর্লভ জীবনের ধারক।

১৯০৭ সালের আগস্ট মাসে সামন্ত-সভ্যতায় অতি উন্নত ও বিখ্যাত কোড়কদী (জেলা ফরিদপুর) গ্রামে শ্যামেন্দ্রনাথের জন্ম। পিত সীতানাথ ছিলেন দরদী পরোপকারী হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক। ওষুধের সঙ্গে প্রায়শঃই রোগীর পথ্যের দায়িত্বটাও নিজের কাঁধে বিনামূল্যে বহন করার (কু) অভ্যাস থাকায় অনেক ভাইবোনের মধ্যে বেড়ে ওঠা শ্যামেন্দ্রর শৈশব-কৈশোরকে স্বচ্ছলতার খুব কাছাকাছি তিনি আসতে দিতে পারেন নি। কিন্তু শ্যামেন্দ্রর মনে সঞ্চিত হচ্ছিল মানবিক ধন-সম্পদ। তৎকালীন প্রথানুযায়ী বাল্যেই শ্যামেন্দ্রর উপনয়ন – গলায় যজ্ঞপবীত। সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রাবস্থায় প্রতিবাদী কণ্ঠে ব্রাহ্মণত্ব পরিত্যাগ করেন। বিবেকের শিক্ষা ‘জন্মে নয় – মানুষ কর্মে বড়’। হিন্দু-মুসলিম, বরং শূদ্র সামাজিক ভেদাভেদ অস্বীকার করে সমাজ কর্তৃক দণ্ডিত এবং নতিস্বীকার করে দণ্ড মানতে অরাজী হওয়ায় সমাজচ্যুত হন। তৎকালীন সমাজে অতবড় সামাজিক প্রতিবাদের নজির সৃষ্টি করে তিনিই হন এতদাঞ্চলের প্রথম বিদ্রোহী পুরুষ।

স্থানীয় রাসবিহারী উচ্চ বিদ্যালয়ের শেষ গণ্ডি সসম্মানে পেরিয়ে মেধাবী শ্যামেন্দ্র ভর্তি হন ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে। সামাজিক বিদ্রোহের আগুন ততদিনে রাজনৈতিক বিপ্লবের বীজ বপন করেছে অন্তরে। বিপ্লবীদল অনুশীলনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপিত হয়। সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের স্বপনে মশগুল তখন। প্রধান কাজ সাহসী ও নির্ভরযোগ্য যুবকদের বিপ্লবী মন্ত্রে দীক্ষাদান, শরীর ও মনের চর্চ্চা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও তত্ত্বাবধান করা। দলের অস্ত্র যোগাড়ের জন্য অর্থসংস্থানার্থে ডাকাতিও করেছেন। পুলিশের নজর এড়াতে পারেননি ফলে গ্রেফতার এবং প্রমাণাভাবে মুক্তি।

(ক্রমশঃ)