আমার ইতিহাস

কোড়কদী – ৯

 

(পূর্বের অংশের পর)

– শ্রী অলোক ভট্টাচার্য

বিখ্যাত মানুষ অনেক জায়গাতেই জন্মেছেন কিন্তু একটি গ্রাম একটি গ্রামে এত বেশি সংখ্যক গুণী মানুষের উদ্ভব হয়েছে- তেমন ঘটনা আমার জানা নেই। সে দিক থেকে কোড়কদী ব্যতিক্রম। সারা গ্রামে একটি মননশীলতার চর্চাই বোধহয়| এর কারণ। এখানে ও ব্যক্তিগতভাবে যশস্বী বেশ কিছু মানুষ সমগ্র মানুষের হিতার্থে কাজ করেছেন। এমন মানুষদের মধ্যে সবার আগে আসে নাম রাসবিহারী লাহিড়ীর নাম,যিনি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা। এর মাধ্যমে কত যে মানুষ ও পরিবারের জীবন পাল্টে গিয়েছিল। তারপর জমিতে সম্পূর্ণ নিজের অর্থে স্কুল ছাড়াও একটি দাতব্য চিকিৎসালয় চালাতেন। জমিদারদের বিরুদ্ধে প্রজাপীড়ণ ও নারী লোলুপাতার যে অভিযোগ খুবই শোনা যেত সেটি কোড়কদীর নামে কখনো শোনা যায়নি। যাদের নামের লাহিড়ী ও সান্যাল গোষ্ঠী জমিদারি শুরু করেন, সেই ভট্টাচার্যরা আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকলেও তাদের শাসনকে তারা উপেক্ষা করতে পারতেন না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সেই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সময়ে এখানকার যুবকরা নিজেদের শস্য গোলা খুলে দিয়ে লঙ্গরখানা চালু রেখেছিল। সাহিত্যিক সুলেখা সান্যাল লঙ্গরখানা চালানোর মূল দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

 

ষষ্ঠ অধ্যায় –
………………
রাতভর বৃষ্টিতে জলবন্দী হয়ে গেছি। প্রায় যোগাযোগ বিপর্যস্ত। এ পর্বটি তাই জল নিয়ে লিখছি। কল্লোলিনী কোড়কদী অর্থ শিক্ষা সংস্কৃতিতে যখন মধ্য গগনে তখন তার রূপের ছটাও ভুবনমোহিনী। একজন ইংরেজ শিক্ষা দপ্তরের উচ্চ পদাধিকারী এসেছিলেন রামধন তর্ক পঞ্চানন লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে। তিনি একটি গ্রামে নিজেদের অর্থে লাইব্রেরী হতে চলেছে জেনে নিজেই স্বত:প্রবৃত্ত হয়ে আমন্ত্রণ আদায় করেছিলেন। সারা গ্রাম ঘুরে দেখেছিলেন ঘনবসতি সারি সারি অট্টালিকা, পুকুর, খেলার মাঠ, স্কুল, ডাকঘর, ডাক্তার, বৈদ্য :শিবদাস বিজয় দাস ভাদুড়ীদের বাড়ি ও অনেক পন্ডিতদের বাস ইত্যাদি দেখে এটির নাম দিয়েছিলেন ‘ছোট কলকাতা’; কারণ তখন এমন গ্রাম আর ছিল না বাংলায়। সময়টা ১৯১৩।

 

(ক্রমশঃ)

 

 

Comment here