আঙিনাআমার ইতিহাস

ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়

(পূর্বের সংখ্যার পর)

 

– শ্রী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

এই সদাশয় দয়ালু মহাশয়ের দয়া ও সৌজন্য যেরূপ ছিল, আয় সেরূপ ছিল না। তিনি দালালি করিয়া সামান্যরূপ উপার্জন করিতেন। যাহা হউক, এই ব্যক্তির আশ্রয়ে আসিয়া, ঠাকুরদাসের নির্বিঘ্নে দুই বেলা আহার ও ইংরেজী পড়া চলিতে লাগিল। কিছুদিন পরে ঠাকুরদাসের দুর্ভাগ্য ক্রমে তদীয় আশ্রয় দাতার আয় বিলক্ষণ খর্ব হইয়া গেল : সুতরাং তাহার নিজের ও তাঁহার আশ্রিত ঠাকুরদাসের অতি কষ্ট উপস্থিত। প্রতিদিন প্রাতঃকালে বহির্গত হইতেন, এবং কিছু হস্তগত হইলে, কোনও দিন দেড় প্রহরের (১৭), কোনও দিন দুই প্রহরের, কোনও দিন আড়াই প্রহরের সময়, বাসায় আসিতেন; যাহা আনিতেন, তাহা দ্বারা কোনও দিন বা কষ্টে, কোনও দিন বা স্বচ্ছন্দে, নিজের ও ঠাকুরদাসের আহার সম্পন্ন হইত। কোনও কোনও দিন তিনি দিবাভাগে বাসায় আসিতেন না। সেই সেই দিন ঠাকুরকে সমস্ত দিন উপবাসী থাকিতে হইত।

ঠাকুরদাসের সামান্য রূপ একখানি পিতলের থালা ও একটি ছোট ঘটী ছিল থালাখানিতে ভাত ও ঘটীতে জল খাইতেন। তিনি বিবেচনা করিলেন, এক পয়সার পাত কিনিয়া রাখিলে ১০/১২ দিন ভাত খাওয়া চলিবেক। সূতরাং থালা না থাকিলে কাজ আটকাইৰেক না। অতএব থালাখানি বেচিয়া ফেলি। বেচিয়া যাহা পাইব, তাহা আপনার হাতে রাখিব। যে দিন দিনের বেলায় আহারের যোগাড় না হইবেক, এক পয়সার কিছু কিনিয়া খাইৰ। এই স্থির করিয়া তিনি সেই খালাখানি নুতন বাজারে কাঁসারীদের দোকানে বেচিতে গেলেন। কাঁসারীরা বলিল, আমরা অজানিত লোকের নিকট পুরাণ (১৮) বাসন (১৯) কিনিতে পারিব না। পুরাণ বাসন কিনিয়া কখনও-কখনও বড় ফেসাদে (২০) পড়িতে হয়, অতএব তোমার থালা লইব না। এইরূপে কোনও দোকানদার সেই থালা কিনিতে সম্মত হইল না।ঠাকুরদাস আশা করিয়া থালা বেচিতে গিয়াছিলেন, এক্ষণে সে আশা বিসর্জন দিয়া, বিষ মনে বাসায় ফিরিয়া আসিলেন।

একদিন মধ্যাহ্ন-সময়ে ক্ষুধায় অস্থির হইয়া ঠাকুরদাস বাসা হইতে বহির্গত হইলেন, এবং অন্যমনস্ক হইয়া ক্ষুধার যাতনা ভুলিবার অভিপ্রায়ে পথে পথে ভ্রমণ করিতে লাগিলেন। কিয়ৎক্ষণ ভ্রমণ করিয়া তিনি অভিপ্রায়ের সম্পূর্ণ বিপরীত ফল পাইলেন। ক্ষুধার যাতনা ভুলিয়া যাওয়া দূরে থাকুক, বড়বাজার হইতে ঠনঠনিয়া (২১) পর্যন্ত গিয়া এত ক্লান্ত ও ক্ষুধায় তৃষ্ণায় এত অভিভূত হইলেন যে, আর তাহার চলিবার ক্ষমতা ছিল না। কিঞ্চিৎ পরেই, তিনি এক দোকানের সম্মুখে উপস্থিত ও দণ্ডায়মান হইলেন। দেখিলেন, এক মধ্যবয়স্কা বিধবা নারী ঐ ঘোকানে বসিয়া মুড়ি-মুড়কি বেচিতেছেন। তাহাকে দাঁড়াইয়া থাকিতে দেখিয়া, ঐ ঐলোক জিজ্ঞাসা করিলেন, বাবাঠাকুর, দাঁড়াইয়া আছ কেন? ঠাকুরদা তৃষ্ণার উল্লেখ করিয়া পানার্থে জল প্রার্থনা করিলেন। তিনি সাদর ও সস্নেহ বাক্যে ঠাকুরদাসকে বসিতে বলিলেন, এবং ব্রাহ্মণের ছেলেকে শুধু (২২) জল দেওয়া অবিধেয়, এই বিবেচনা করিয়া কিছু মুড়কি ও জল দিলেন। ঠাকুরদাস যেরূপ ব্যগ্র হইয়া মুড়কিগুলি খাইলেন, তাহা এক দৃষ্টিতে নিরীক্ষণ করিয়া ঐ স্ত্রীলোক জিজ্ঞাসা করিলেন, বাবাঠাকুর, আজ বুঝি তোমার খাওয়া হয় নাই ? তিনি বলিলেন, না, আমি এখনও পর্যন্ত কিছুই খাই নাই। তখন সেই স্ত্রীলোক ঠাকুরদাসকে বলিলেন, বাপাঠাকুর, জল খাইও না, একটু অপেক্ষা কর। এই বলিয়া নিকটবর্তী গোয়ালার দোকান হইতে সত্ত্বর দই কিনিয়া আনিলেন, এবং আরও মুড়কি দিয়া ঠাকুরদাসকে পেট ভরিয়া ফলার (২৩) করাইলেন। পরে তাহার মুখে সবিশেষ সমস্ত অবগত হইয়া জিদ করিয়া বলিয়া দিলেন, যেদিন তোমার এরূপ ঘটিবে, এখানে আসিয়া ফলার করিয়া যাইবে ।

পিতৃদেবের মুখে এই – বিদারণ উপাখ্যান শুনিয়া, আমার অন্তঃকরণে যেমন দুঃসহ দুঃখানল প্রজ্জ্বলিত হইয়াছিল, স্ত্রীজাতির উপরতেমনি প্রগাঢ় ভক্তি জন্মিয়াছিল। এই দোকানের মালিক পুরুষ হইলে ঠাকুরদাসের উপর কখনই এরূপ দয়া প্রকাশ ও বাৎসল্য প্রদর্শন করিতেন না। যাহা হউক, যে যে দিন দিবাভাগে আহারের যোগাড় না হইত, ঠাকুরদাস সেই সেই দিন ঐ দয়াময়ীর আশ্বাসবাক্য অনুসারে তাহার দোকানে গিয়া পেট ভরিয়া ফলার করিয়া আসিতেন।

ঠাকুরদাস মধ্যে মধ্যে আশ্রয় দাতাকে বলিতেন, যাহাতে আমি কোনও স্থানে নিযুক্ত হইয়া মাসিক কিছু-কিছু পাইতে পারি, আপনি দয়া করিয়া তাহার কোন উপায় করিয়া দেন। আমি ধর্ম প্রমাণ (২৪) বলিতেছি, যাহার নিকট নিযুক্ত হইব প্রাণপণে পরিশ্রম করিয়া তাহাকে সন্তুষ্ট করিব এবং প্রাণান্তে অধর্মাচরণ করিব না; আমার উপকার করিয়া আপনাকে কদাচ লজ্জিত হইতে বা কখনও কোনও কথা শুনিতে হইবেক না। জননী ও ভাই-ভগিনীগুলির কথা যখন মনে হয়, তখন আর ক্ষণ-কালের পরও বাঁচিয়া থাকিতে ইচ্ছা করে না। এই বলিতে বলিতে চক্ষের জলে তাঁহার বক্ষঃস্থল ভাসিয়া যাইত ।

কিছুদিন পরে ঠাকুরদাস আশ্রয় দাতার সহায়তার মাসিক দুই টাকা বেতনে কোনও স্থানে নিযুক্ত হইলেন। এই কর্ম পাইয়া তাহার আর আহলাদের সীমা রহিল না । পূর্ব দাতার আশ্রয়ে থাকিয়া, আহারের ক্লেশ সহ্য করিয়াও বেতনের দুইটা টাকা যথানিয়মে জননীর নিকট পাঠাইতে লাগিলেন। তিনি বিলক্ষণ বুদ্ধিমান্ ও যার-পর-নাই পরিশ্রমী ছিলেন, এবং কখনও কোনও ওজর না করিয়া সকল কর্ম সুন্দররূপে সম্পন্ন করিতেন। এজন্য ঠাকুরদাস যখন যাহার নিকট কর্ম করিতেন, তাহারা সকলেই তাহার উপর সাতিশয় সন্তুষ্ট হইতেন।

দুই তিন বৎসর পরেই, ঠাকুরদাস মাসিক পাঁচ টাকা বেতন পাইতে লাগিলেন তখন তাহার জননীর ও ভাইভগিনীগুলির অপেক্ষাকৃত অনেক অংশে কষ্ট দূর হইল। এই সময়, পিতামহ-দেবও দেশে প্রাণত্যাগ করিলেন। তিনি প্রথমতঃ বনমালিপুরে গিয়াছিলেন। তার স্ত্রী, পুত্র, কতটা দেখিতে না পাইয়া বীরসিংহে আসিয়া পরিবার-বর্গের সহিত মিলিত হইলেন। সাত আট বৎসরের পর তাঁহার সমাগম লাভে সকলেই আহলাদ – সাগরে মগ্ন হইলেন। শ্বশুরালয়ে বা শ্বশুরালয়ের সন্নিকটে বাস করা তিনি অবমাননা জ্ঞান করিতেন, কিছু দিন পরেই পরিবার (২৫) লইয়া বনমালিপুরে যাইতে উদ্যত হইয়াছিলেন। কিন্তু দুর্গাদেবীর মুখে ভ্রাতাদের আচরণের পরিচয় পাইয়া, সে উদ্যম হইতে বিরত হইলেন, এবং নিতান্ত অনিচ্ছা-পূর্বক বীরসিংহে অবস্থিতি বিষয়ে সম্মতি প্রদান করিলেন। এইরূপে বীরসিংহ গ্রামে আমাদের বাস হইয়াছিল।

বীরসিংহে কতিপয় দিবস অতিবাহিত করিয়া, তর্কভূষণ মহাশয় জ্যেষ্ঠ পুত্র ঠাকুরদাসকে দেখিবার জন্য কলিকাতা প্রস্থান করিলেন । ঠাকুরদাসের আশ্রয় দাতার মুখে তদীয় কষ্ট সহিষ্ণুতা প্রভৃতির প্রভূত পরিচয় পাইয়া, তিনি আশীর্বাদ ও সবিশেষ সন্তোষ প্রকাশ করিলেন। বড়-বাজারে দ’রে হাটার উত্তর রাঢ়ীয় কায়স্থ ভাগবতচরণ সিংহ নামে এক সঙ্গতিপন্ন ব্যক্তি ছিলেন। এই ব্যক্তির সহিত তর্কভূষণ মহাশয়ের বিলক্ষণ পরিচয় ছিল। সিংহ মশায় অতিশয় দয়াল ও সদাশয় মানুষ ছিলেন। তর্কভূষণ মহাশয়ের মুখে তদীয় দেশত্যাগ অবধি যাবতীয় বৃত্তান্ত অবগত হইয়া প্রস্তাব করিলেন, আপনি অতঃপর ঠাকুরদাসকে আমার বাটীতে রাখুন, আমি তাহার আহার প্রভৃতির ভার লইতেছি। যখন এ পাক করিয়া খাইতে পারে, তখন আর তাহার কোন অংশে অসুবিধা ঘটিবেক না।

এই প্ৰস্তাৰ শুনিয়া তর্কভূষণ মহাশয় সাতিশয় আহ্লাদিত হইলেন, এবং ঠাকুরদাসকে সিংহ মহাশয়ের আশ্রয়ে রাখিয়া বীরসিংহ প্রতিগমন করিলেন। এই অবধি ঠাকুরদাসের আহার-ক্লেশের অবসান হইল। যথা সময়ে আবশ্যক-মত দুই বেলা আহার পাইয়া, তিনি পুনর্জন্ম জ্ঞান করিলেন। এই শুভ ঘটনা দ্বারা তাহার যে কেবল আহারের ক্লেশ দূর হইল – এ রূপ নহে,, সঙ্গে সিংহ মহাশয়ের সহায়তার মাসিক আট টাকা বেতনে এক স্থানে নিযুক্ত হইলেন। ঠাকুরদাসের আট টাকা মাহিয়ানা (২৬) হইয়াছে, এই সংবাদ শুনিয়া তদীয় দুর্গাদেবীর আহ্লাদের সীমা রহিল না। 

 

১) দেশত্যাগী – পৈতৃক সম্পত্তি লইয়া ভ্রাতাদের সহিত মনান্তর হওয়ায় রামজয় তর্কভূষণ বাটী হইতে চলিয়া যান; দীর্গ আট বৎসর পরে ফিরিয়া আসিয়া আবার পরিবারবর্গের সহিত মিলিত হন।
২) বনমালিপুর – শব্দটি ‘বনমালী’; ‘বনমালিপুর’ – এখানে দীর্ঘ-ঈ না হইয়া হ্রস্ব-ই হইল কেন?
৩) ভ্রাতৃশ্বশুর – ভাশুর, স্বামীর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা।
৪) টেকুয়া (বা টাকুয়া) – পশ্চিম বঙ্গে ‘টেকো’, পূর্ব বঙ্গে ‘টাউক্যা’ – সূতা কাটাবার যন্ত্র। সংস্কৃত ‘তক্রু’ হইতে ‘টককু’, তাহা হইতে ‘টাকু’, আ-প্রত্যয় যোগে ‘টাকুয়া’। (গুজরাটী ‘তকলী’ শব্দ এখন মহাত্মা গান্ধীর প্রভাবে এই খাঁটী বাঙ্গালা শব্দটিকে বাঙ্গালা ভাষাতে সীমাবদ্ধ করিয়া দিতেছে।)
৫) চরখা – ফারসী শব্দ। (সংস্কৃত ‘অরঘট্ট’, প্রাচীন ভারতে ব্যবহৃত হইত – ‘অরঘট্ট’ হইতে হিন্দী ও উড়িয়া ‘রহটা’, মারহাট্টী ‘রহেট’ শব্দস্বর এখনও প্রচলিত আছে) ।
৬) সূতা – মুলে আছে ‘সূত’। ‘সূত্র’ হইতে ‘সূত’; হাতে ‘আ’ প্রত্যয় যোগে ‘সূতা’ – স্বরসঙ্গতি অনুসারে কলিকাতা অঞ্চলের উচ্চারণ-বিকৃতির জন্য ‘সূতো’, এই ‘সূতো’ শব্দ বিদ্যাসাগর মহাশয় অ-কারান্ত করিয়া ‘সুত’ রূপে লিখিয়াছেন।
৭) গুজরান – ফারসী শব্দ – দিন – যাপন।
৮) প্রতিপন্ন – উচ্চ-অবস্থা-যুক্ত।
৯) আসন্ন – নিকট।
১০) সংক্ষিপ্তসার ব্যাকরণ – পূর্বে দ্রষ্টব্য, পৃ: ২ – টিপ্পনী।
১১) ইংরেজী – মূল গ্রন্থে বিদ্যাসাগর মহাশয় বানান করিয়াছেন, ‘ইঙ্গরেজী’। English শব্দের ফরাসী প্রতিরূপ Anglais ‘আঁগ্নে’, আরবীতে ‘ইংকিলিস’; আজকাল ‘ইংরেজ’ রূপে লিখিত হয়। ‘ইংরাজ-রাজ্’ এই অনুপ্রাসের খাতিরে আবার এই শব্দকে বহুশঃ ‘ইংরাজ’ রূপে (‘আ-কার-যুক্ত করিয়া) বাঙ্গালায় লেখা হয়।
১২) সওদাগর – বণিক। ফারসী শব্দ।
১৩) হৌস – হাউস, house ইংরেজ বণিকদের কুঠী বা আপিস। ‘হৌস’ – এই উচ্চারণ দ্রষ্টব্য; শতাধিক বর্ষ পূর্বে শব্দটী ইংরেজীতেই ‘হাউস ‘ না হইয়া ‘হৌস’ রূপে উচ্চারিত হইত। তুলনীয় – Town Hall – ‘টৌন হাল’। (এখন ‘টাউন হল’)
১৪) উপরিলোক – পরিবার-বহির্ভূত বাহিরের লোক।
১৫) নক্তন্তন – রাত্রিকালের। নক্তম – রাত্রি+বিশেষণার্থে তন-প্রত্যয়। ‘অদ্য-তন; পুরা-তন. সনা-তন’ প্রভৃতি শব্দেও এই ‘তন’ প্রত্যয়।
১৬) যার-পর-নাই – এই বাক্যাংশের সংস্কৃতরূপ ‘যৎপরোনাস্তি’ – ও বাঙ্গালায় চলে।
১৭) প্রহর – চার প্রহরে পুরা দিন বা রাত্রি। এক প্রহর তিন ঘন্টায়। সূর্যোদয় (ভোর ছয়টা) হইতে নয়টা পর্যন্ত প্রথম প্রহর; বারোটা পর্যন্ত দ্বিতীয় প্রহর (বা ‘দ্বিপ্রহর’) – চলিত কথায় – ‘দুপহর, দুপর, দুপুর’।
১৮) পুরাণ – শব্দটীর ঠিক বানান হওয়া উচিত ‘পুরানো’। সংস্কৃত ‘পুরাতনক’, প্রাকৃত ‘পুরাঅণঅ’ – ভাষা (বাঙ্গালা) ‘পুরাণঅ, পুরানো’। সংস্কৃতের ‘পুরাণ’ শব্দে ধর্ম্মগ্রন্থ বুঝায়, সে শব্দ এই শব্দ হইতে পৃথক।
১৯) বাসন – ইউরোপীয় শব্দ – পুরাতন ইংরেজিতে bason, আধুনিক ইংরেজী basin, অর্থ ‘পাত্র’। পোর্তুগীস bason-এর মারফৎ বাঙ্গালায় আসিয়াছে।
২০) ফাসাদ – ফারসী ‘ফসাদ’ শব্দ; অর্থ – ঝঞ্ঝাট।
২১) ঠনঠনিয়া – কলিকাতা নগরীর এক বিখ্যাত পল্লী – এখানকার হ্যারিসন-রাস্তা হইতে আরম্ভ করিয়া, কর্ণওআলিস-সড়ক ধরিয়া শঙ্কর-ঘোষের প্রতিষ্ঠিত কালী-মন্দির (‘কালীতলা’) পর্যন্ত ইহার বিস্তৃতি ছিল।
২২) শুধু – ‘শুদ্ধ’ – শব্দজ – কেবল বা মাত্র।

২৩) ফলার – ‘ফলাহার’ হইতে – ফলমূল ও সামান্য মিষ্টান্নাদির সহিত জলপান, তাহা হইতে ‘গুরু-ভোজন’, নিমন্ত্রণ। বাঙ্গালা শব্দে মধ্যস্থিত হ-কার প্রায়ই অনুচ্চারিত হয়, সেজন্য এই সংক্ষিপ্ত রূপ।
২৪) ধর্ম-প্রমাণ -ধর্মকে প্রমাণ করিয়া বা ধর্মকে শ্রেষ্ঠ মানিয়া।
২৫) পরিবার – মূল অর্থ, পরিজন, পোষ্য – যাহারা কোনও গৃহস্থকে চারিদিকে ঘিরিয়া থাকে (পরিব্রিয়তে এভিঃ – ইতি পরিবারঃ); family বা স্ত্রী-কন্যা-পুত্র অর্থে ব্যবহৃত হয়, বহুশঃ কেবল ‘পত্নী’ অর্থেও প্রযুক্ত হয়।
২৬) ‘মাহিয়ানা’ – মাসিক বেতন। ফারসী ‘মাহ’ শব্দের অর্থ ‘মাস’, তাহা হইতে ‘মাহিয়ানা’ = মাস-সম্বন্ধীয়। চলিত ভাষায় ‘মাইনে’ (হ-কারের লোপ, স্বর-সংকোচ ও স্বর-সঙ্গতি)।

(সমাপ্ত)

Comment here