সাদাকালো রঙমাখা

সেন মুদ্রার ইতিহাসে নতুন দিশার সম্ভাবনা –

– শ্রী জ্যোতিষ্মান সরকার

সেন রাজাদের মুদ্রা ব্যবস্থার ইতিহাস খুঁজলে সেভাবে ভালো কিছু পাওয়া যায় না।তার অন্যতম কারণ ছিল সুবর্ণবণিকদের সাথে বিবাদ । বল্লালচরিতে তার কিছু উল্লেখ পাওয়া যায়।

ওদন্তপুরের রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য বল্লভানন্দ নামে এক ধনী ব্যক্তির থেকে রাজা বল্লাল সেন দেড় কোটি সুবর্ণমুদ্রা ধার চান। কিন্তু তার বিনিময়ে হরিকেলের রাজস্ব দাবি করেন। তাতে বল্লাল সেন রেগে যান।প্রথমে তিনি দ্বিগুণ শুল্ক লাগান বণিকদের।তাতেও কাজ না হলে ভোজসভায় আমন্ত্রিত বণিক প্রতিনিধিদের শুদ্রদের পঙতিতে বসান। বণিকরাও সৎশূদ্রদের সঙ্গে আহারে আপত্তি রয়েছে বলে রাজপ্রাসাদে খাওয়াদাওয়ার আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দেন।বণিকরা প্রতিবাদ করলে রাজকুমার ভীমসেন( বল্লালের আরেক পুত্র) তাদের গালি দিয়ে ফেলেন। রুষ্ট হয়ে বণিকরা ভোজসভা ত্যাগ করেন।বল্লাল সেন তাতে আরও রেগে গিয়ে বল্লাল রাজাদেশ অবজ্ঞার ছুতো করে বণিকদের শূদ্রের স্তরে নামিয়ে দেন ও তাঁদের উপননয়নের অধিকার কেড়ে নেন। বণিকরা তখন দাসদের সম্পত্তি দিয়ে হাত করেন। বল্লাল সেনও কৈবর্তদের জলচল করে দেন। শেষপর্যন্ত ব্যবসায়ীরা আর বৈশ্য রইলেন না।

এথেকে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, সেই সময় রাষ্ট্র বনাম বৈশ্যদের বিবাদে সেন অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে যায়। কিন্তু বর্তমানে একটি মুদ্রা পাওয়া গেছে যা সেন মুদ্রা ব্যবস্থার ইতিহাস পাল্টানোর ক্ষমতা রাখে।

সাগরদ্বীপ ফুলবাড়ী প্রত্নক্ষত্র থেকে এই রৌপ্যমুদ্রাটি পাওয়া গেছে ।২০২১ সালে দেবী শংকর মিদ্যা বাবু এটা পোস্ট করেন তাঁর ফেসবুক পেজ সুন্দরবন প্রত্ন গবেষণা কেন্দ্র থেকে।সেন শাসকদের কোন মুদ্রা পাওয়া যায়নি এই মিথটাকে ভাঙার ক্ষমতা রাখে ।এই মুদ্রাটি নিয়ে বিশদ চর্চা প্রয়োজন। দেবীবাবু অনুমান করেন এটি পাল সেন যুগীয় বা ১৩ শতাব্দীর হতে হতে পারে।
এটা সেন মুদ্রা হবার প্রভূত সম্ভাবনা আছে।

প্রথমত, ১৩ শতকের যে সময় এই অঞ্চল সেন শাসনে ছিল।১২৯০ খ্রি শাহ সুফী, জাফর খাঁ গাজির অভিযানের আগে তুর্কি শাসনের অস্তিত্ব ছিল না।

দ্বিতীয়ত রৌপ্যমুদ্রা । সেনদের সময় ২ ধরনের মুদ্রা ছিল কর্পদক বা কড়ি ও পুরাণ বা রৌপ্যমুদ্রা।তবকাতে নাসিরিতেও লক্ষণ সেনের রৌপ্যমুদ্রা দানের উল্লেখ রয়েছে

তৃতীয়ত, এক পৃষ্ঠে সদাশিব অপর দিকে বৃষ/ নন্দী মূর্তি। সদাশিব সেন রাজপ্রতীক ছিল।

মূর্তির উপরাংশ ক্ষয়ে গিয়েছে কিন্তু এক পৃষ্ঠে সদাশিব মূর্তির অপর ২ দিকের মউখআয়বএর মুকুট দৃশ্যমান

চতুর্থত তলায় ‘স ন ‘/সেন খোদিত ।
৫ মত , সম্ভবত উপরে নাগরীতে ১১০০ সম্বত লেখা ( ভুল পাঠ হতেও পারে) কোন সম্বত জানা নেই। ( শকাব্দ হতে পারে)

সম্ভবত গৌড়ীয় নাগরিতে যে সম্বত লেখা তা হল

৭५৭৭०० 

অর্থাৎ
১- প্রথম
৫- শ্রাবণ( শকাব্দে শ্রাবণ পঞ্চম মাস)
১১০০ – শকাব্দ

অর্থাৎ ১ ম শ্রাবণ ১১০০ খ্রিঃ

[ * পুনশ্চ – পাঠ ভুল হতেও পারে]

১ লা শ্রাবণ দিনটির বিশেষ করে শৈব পরম্পরায় বিশেষ গুরুত্ব আছে । এই সময়কালকেই লক্ষণ সেনের সিংহাসনে আরোহণ কাল বলে অনেক ঐতিহাসিক মনে করে থাকেন। ( ১১৭৬/৭৭ খ্রিঃ )

উপরোক্ত প্রমাণের ভিত্তিতে এই মুদ্রা সেন মুদ্রা অনুমান করা যেতে পারে। সম্ভবত বল্লালের সাথে বিবাদের একটি মীমাংসা লক্ষণ সেন ও বিশ্বরুপ সেনের সময় হয়ে গিয়েছিল ও সেন অর্থনীতি ধীরে ধীরে শক্তিশালী হচ্ছিল। এর প্রমাণ লক্ষণ সেনের রাজসভায় শ্রমণ পুরুষোত্তমের উপস্থিতি দেখে বোঝা যায়। লক্ষণ সেন বৌদ্ধদের সাথেও একটি সমঝোতা করে নেন

যদিও এর ওপর বিস্তারিত গবেষণা প্রয়োজন। পন্ডিত ব্যক্তিদের মতামত অবশ্যকাম্য।

 

 

(লেখক পরিচিতি: শ্রী জ্যোতিষ্মান সরকার B.Tech Ceramic Technology তে পাঠরত)

Comment here