বাংলা তথা ভারতীয় বডিবিল্ডিং ও খেলাধুলারচর্চাকে যাঁরা নিঁখুত শিল্পের পর্যায় নিয়ে গেছেন তার মধ্যে অন্যতম ভারতশ্রী কমল ভান্ডারী।এক কথায় তার সম্পর্কে বলা যায় A dynamic personality with Himalayan heights..
২০১৫ সালে ৮৪ বছর বয়সে তিনি বিদায় নিয়েছেন কিন্তু আজও কোথাও তার নাম নিয়ে চর্চা হয়না সেভাবে।একেধারে ৫ বারের ভারতশ্রী, শাস্ত্রীয় সংগীতের সমঝদার আবার অন্যদিকে কলকাতা পুলিশে বিধানচন্দ্র রায়ের পাইলট ছিলেন।কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের গোল্ড মেডেলিস্ট।এহেন মানুষ যে আজকের দিনে বিরল। এককথায় বলা যায় শরীরচর্চা,জ্ঞানচর্চা,শিল্পচর্চার অসাধারন সমন্বয়ে গড়া একজন মানুষ। নিজে প্রচার বিমুখ ছিলেন অত্যন্ত, যে জন্য এখনো সে ভাবে তার জীবনী,বা চর্চা কোথাও প্রকাশিত হয়নি। নিজে চাইতেনও না। তার জীবনের নানা টুকরো ঘটনা নিয়েই ছেঁড়া ছবির collage । ওনার মেয়ে ও তাঁর ছাত্রদের মুখে শোনা ঘটনা দিয়েই….এই শ্রদ্ধার্ঘ্য।
১৯৩০ সালের ২৮ শে ডিসেম্বর রাজপুরে জন্ম হয় শ্রী কমল ভান্ডারীর।বাবা শ্রী হরিদাস ভান্ডারী… মা শ্রীমতী বসন্তকুমারী ভান্ডারী। হরিদাস ভান্ডারী পোর্ট ট্রাস্টে চাকরী করতেন।পাশাপাশি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সাহায্য করতেন বলে জানা যায়। ছেলে কমলের ছোট থেকেই পড়াশোনার সাথেই খেলা ধুলা,গাছে ওঠা, নানা দৌরাত্ম্য চলতই।নানা খেলাধুলায় ঝোঁক ছিলই। রাজপুরের KC Dutta Road এর একটি ব্যায়ামাগারে “বিষ্ণুচরণ দাঁ” এর কাছে লাঠি বর্শা ইত্যাদি শিখতেন তিনি। এহেন সময়ই প্রবাদপ্রতিম ব্যায়ামাচার্য বিষ্ণুচরণ ঘোষ ছাত্র মনোতোষ রায়কে নিয়ে আসেন ব্যায়ামের শো করতে হিন্দু মিলন মন্দির ক্লাবে।সেখানে কমলবাবু একটু আধটু ব্যায়াম করতেন।এহেন ছেলেকে দূর থেকে দেখেই চিনতে পারেন তিনি। প্রতিভা কে চিনে নেওয়ার বিরল ক্ষমতা বিষ্ণু ঘোষের ছিল। সাথে সাথে প্রস্তাব দিলেন, ওনাকে সাথে নিয়ে কি Bodybuilding এ training দেবেন। কিন্তু বাড়িতে বাবা হরিদাস ভান্ডারী গররাজি হলেন,ছেলে কমলকে এভাবে ছেড়ে দিতে।বিষ্ণুচরণ ঘোষ কথা দিলেন ৬ মাসে ওনাকে চ্যাম্পিয়ন বানাবেন।হলেনও তাই। ১৯৪৯ সালে মি: Calcutta University Best Physique Champion এ ফার্স্ট। আনন্দবাজার পত্রিকায় তিনি এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন—
“ভারত তখন সবে স্বাধীন হয়েছে। বাড়ি থেকে দু’ মাইল পথ হেঁটে সোনারপুর স্টেশনে এসে ট্রেন ধরতাম,। শিয়ালদহে নেমে গড়পারে এসে ‘ঘোষেস্ কলেজ’ বা বিষ্টু ঘোষের আখড়ায়। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর।কলেজ শেষে ৪ ঘন্টা ব্যায়াম।সপ্তাহে ৬ দিন।গুরু কিনে দিতেন পাউরুটি আর টক দই। সেই হল ডায়েট।এর পর আবার বাড়ি। (এখানে আসার আগে আগে লাঠিখেলা শিখতেন বিদ্যাসাগর স্ট্রিটে বিপ্লবী পুলিন দাসের ‘বঙ্গীয় ব্যায়াম সমিতি’তে) , “১৯৪৯-এর মার্চ মাসে বিষ্টুদার কলেজে যোগ দেওয়ার ছ’মাস পরেই কম্পিটিশনে প্রথম হয়েছিলাম।“বিষ্টুদার অগম্য স্থান বলে কিছু ছিল না। দুম করে একদিন আমাকে নিয়ে হাজির হলেন বাংলার তখনকার মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের বাড়ি। শুধু তা-ই নয়, মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে ধর্মেন্দ্র-উত্তমকুমার থেকে হেমন্তবাবুর মতো গায়ক সবার সঙ্গেই তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল”।
যাইহোক,শুধু শরীরচর্চা নয়,গানবাজনাতেও ছিল ওনার খুব ঝোঁক।।দেবব্রত বিশ্বাস ও প্রফুল্ল দাস ছিলেন তাঁর গানের গুরু। আমির খান সাহেবের কাছে গান শিখেছিলেন। স্কুলের পোগ্রামে ওনার গানের ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন সলিল চৌধুরী।হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সাথে সখ্যতা ছিল খুবই।ওঁরা শেখাতেন গান,কমলবাবু তাঁদের শেখাতেন ব্যায়াম,শরীরচর্চা।
ব্যায়ামাচার্য বিষ্ণুচরণ ওরফে বিষ্টু ঘোষ ছাত্র কমলকে নিজের ছেলের মত স্নেহ করতেন, প্রায় ৬ মাস একটানা নিজের বাড়িতে রেখে ট্রেনিং করিয়েছিলেন মি: ইউনিভার্স কম্পিটিশন যোগ দেওয়ার আগে।(শোনা যায় বিষ্টুবাবু নিজের হাতে কমলালেবুর মেশিনে সব ছাত্রদের জন্য শরবত বানাতেন। কমল ভান্ডারী ১৯৪৯ সালে প্রথম হওয়ার পর ১৯৫০ সালে সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে আবারো প্রথম স্থানাধিকারী হন….১৯৫১ সালে বঙ্গবীর, ১৯৫২ তে কলকাতাশ্রী, ৫৩ য় আবার বঙ্গবীর, কলকাতাশ্রী,এবং প্রথম ভারতশ্রী। ১৯৫৪ সালে মি:ইউভার্সে ফাইনালিস্ট।লন্ডনে ‘মিস্টার ইউনির্ভাস’ প্রতিযোগিতায় প্রথম ছ’জনের মধ্যে নিজের স্থান করে নিয়েছিলেন ।
পদক জিততে না-পারলেও প্রচারমাধ্যমে লেখা হয়েছিল, ‘Among six, any one of competitors could have been Mr. Universe. ‘Posing’ সম্পর্কে লেখা হয়—Kamal Bhandari showed his development to good advantage but some of the judges did not think it was necessary to do very complicated kneeling or lying poses for what was basically intended to display the arms.
এরপর ওনাকে ফিরে তাকাতে হয়নি আর। আপন দক্ষতায় নিজেকে তুলে ধরেছিলেন,এবং তৎকালীন কোন বডিবিল্ডার সেভাবে তার ধারে কাছে যেতে পারেননি, এর কারণ একটাই। অত সৌন্দর্যময় Body proportion সেরকম কেউ গড়ে তুলতে পারেননি,যা তিনি পেরেছিলেন। আপন জ্ঞান, সাধনা, নিষ্ঠা,ও শারিরিক সৌন্দর্যচেতনা বোধের মধ্যে দিয়ে তিনি গড়ে তুলেছিলেন। আরেক ভারতশ্রী হিতেন রায় ছিলেন তাঁর প্রিয় বন্ধুদের মধ্যে একজন,উনিও কলকাতা পুলিশে চাকরী করতেন।।এছাড়া সন্তোষ সান্যাল, হিমাংশু রায়,শান্তি চক্রবর্তী, মধুসুধন পান্ডে ( শক্তি-সমুদ্র খেতাব পেয়েছিলেন),গৌর দাস, বিমল রায়, গৌর সরকার এরা সবাই এক ধার থেকে বিষ্টু ঘোষের আখড়ার রত্ন ছিলেন।
এদের মধ্যে শান্তি চক্রবর্তী এখনো আছেন। London এ থাকেন। এবং হিমাংশু রায় যিনি শেষ বয়সে নিউ ইয়র্ক থেকে ভারতে চলে আসেন, বন্ধু কমলের সাথে চার বছর কাটিয়েছিলেন। হিমাংশু রায় বিরাট শরীরের অধিকারী ছিলেন,কিন্তু জীবনে কোনদিন প্রতিযোগিতা করেননি।হিতেন রায়, শান্তি চক্রবর্তী, ওংকার ব্যানার্জী,কমলবাবু ও হিমাংশু রায় এঁরা শেষ দিন অব্দি ব্যায়াম করে গেছেন।
আমার ব্যাক্তিগত মতে,পর্যবেক্ষণে সেসময় মনোহর আইচের ওই ছোট চেহারায় অত বড় বিশাল দেহ, এবং মনোতোষ রায়ের সুললিত পেশী থাকলেও কমল ভাণ্ডারীর মত সর্বাঙ্গীন সুন্দর দেহ ( Proportionate body বডিবিল্ডিং এর ভাষায়) একটিও ছিল কিনা সন্দেহ। কলেজের পর ওনার সুযোগ এসেছিল মেডিকেল কলেজে পড়বারও, কিন্তু শেষ অবধি মনোবিজ্ঞান ও ফিজিওলজি নিয়ে MSC শেষ করেন। টপ্পা ও ধ্রুপদী সঙ্গীতেও শিক্ষা নেন। বিষ্ণু ঘোষের অগম্য স্থান ছিল না আগেই বলেছি, তাঁর সূত্রেই হঠাত চোখে পড়ে যান ড: বিধান চন্দ্র রায়ের। শিক্ষিত ,স্বাস্থ্যবান কমল ভান্ডারীকে দেখেই বলে ওঠেন তোমায় পুলিশে নেব। চলে এস। (তাঁর আরেক বন্ধু হিতেন রায় পুলিশে কাজ করছেন তখন) যদিও উনি এরপর ৬ মাস জার্মানি যান, ফিরে এসে যোগ দেন পুলিশে। সেটা ১৯৫৬ সাল।
এবার আসি একটি গল্পে। তিনি তখন বিধান চন্দ্র রায়ের পাইলট ছিলেন।রোজ বাড়ি থেকে রাইটার্স অবধি তাঁকে এসকর্ট করতেন।এইরকমই একদিন হল কি বিধান রায় হঠাৎ রাইটার্সে ঢুকে কমলকে ডাক দিলেন। হন্তদন্ত হয়ে তাঁর কাছে আসতেই বললেন কমল!! কি হল ল্যাটিসিমাসের ব্যায়াম ছেড়ে দিয়েছ নাকি?? — না লাগাতার চিনিং দিয়ে খুব পিঠে ব্যাথা। তাই আরকি! ..পরদিন পুলিশ কোয়ার্টারে চিনিং রড লাগানো হল ডঃ রায়ের নিদের্শে।এবং নিজে এসে চিনিং করা দেখিয়ে দিলেন। বিধান চন্দ্র রায় নিজেও ব্যায়াম করতেন, রোজ ডাম্বেল ফ্রন্ট প্রেস করা তাঁর রুটিন ছিল। মেডিকেল কলেজে জিমনেশিয়াম করেছিলেন ডাক্তার দের উদ্দেশ্যে।
কমলবাবুর কন্যা ইতি এও জানালেন-“বাবুর( বাবা) PTS কোয়ার্টারে অনেক জায়গা ছিল,সেখানে ডাম্বেল,বারবেল,প্যারালাল বার সব ছিল অবসরে ব্যায়াম করার জন্যে। পরে বাবুর রিটারায়মেন্টের পর চেতলার বাড়িতে চলে আসি। জায়গা না থাকায় সেসব এক ব্যায়াম সমিতি ক্লাবে দিয়ে দেওয়া হয়। বাবু শেষদিন অবধি ব্যায়াম করে গেছেন। ৪-৫ ঘন্টার কমে প্রাক্টিস করত না। তবে বিষ্টু ঘোষের Ghosh’s college এর জিম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কষ্ট পেয়েছিলেন। বিষ্টু ঘোষের সাথে তাঁর এমন গাঢ় সম্পর্ক ছিল যে আলমারির চাবিটাও ছাত্র কমলকে দিয়ে রাখতেন।। এছাড়া ছিল বাইকের শখ যা তিনি গুরুর থেকে পেয়েছিলেন। কলকাতার প্রথম যে BMW 1000 CC বাইকটি আসে তা ১৯৮০ তে জার্মানি থেকে তিনি কিনে আনেন। কলকাতার সবার আকর্ষণ ছিল ওই Iconic bike..যা চড়ে তিনি কলকাতা দাপিয়ে বেড়াতেন।ছিল BSA Sunbeam বাইক,রয়াল এনফিল্ড বুলেট,স্কুটার। এছাড়া ছিল জামা, বিদেশী ক্যামেরা ও স্টাইলিশ জুতোর শখ। মারকাটারি চেহারা,মার্জিত রুচি, রসবোধ,সব বিষয়ে অসম্ভব জ্ঞান এসব তাঁকে আলাদা উচ্চতায় তুলে রাখত,ও পারিপার্শ্বিক মানুষদের আকর্ষিত করত ।।১৯৭৩ সালে তিনি প্রথম West Bengal Yoga Association তৈরী করেন,যার চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হয় ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে,।
১৯৭৪ সালে Yoga Federation of India (তার আগে কোন যোগাসনের সংগঠন ছিলনা) এবং এই সংগঠনের তত্ত্বাবধানেই যোগ প্রতিযোগিতা আরম্ভ হয়,১৯৭৪ সালে পাটনায়,সুরোদ্যান এথলেটিক্স ক্লাবে।। ইতি এই যোগাসন চ্যাম্পিয়নশিপে তৃতীয় বছর থেকে যোগ দেন ও বহুবার প্রথম হন। এরপরেও ধারাবাহিকভাবে যোগাসনে সাফল্য লাভ করেছেন। কমলবাবু নিজে প্রতিবছর হলিউড যেতেন, যোগাসন শেখাতে।অভিনেতা ধর্মেন্দ্র কে যোগাসন ,উত্তমকুমার কে ব্যায়াম শেখাতেন। ২০০২. সালে USA Yoga Federation প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সাহায্য করেন ও Judgment System এ শিক্ষিত করেন, এবং ২০০২থেকে ২০১৩ সাল অবধি Los Angels এর International Yoga Championship এ প্রধান বিচারক ছিলেন।2005 এ অস্ট্রেলিয়ার সিডনি তেও যোগ চ্যাম্পিয়নশীপের প্রধান বিচারক ছিলেন।
যাইহোক আবার ফিরে আসি ওনার বডিবিল্ডিং কেরিয়ারে।১৯৭৯ সালে এক প্রখ্যাত ম্যাগাজিনে এক সাক্ষ্যাৎকারে তিনি বলেন যে ‘বাংলা তথা ভারতে ব্যায়ামকে আভিজাত্য এনে দিয়েছেন যেমন বিষ্ণুদা, তেমনি ব্যায়ামের কতকগুলি মৌলিক সংযোজন দিয়েছেন মনোহর আইচ।”আগে আমেরিকান স্টাইলে আমরা ব্যায়াম করতাম। সপ্তাহে ৩ দিন প্রচণ্ড ব্যায়াম। এমন খাটুনি হতো যে বাসের হ্যান্ডেল ধরার শক্তিও থাকতো না। বাকি ৪ দিন বিশ্রাম। মনোহরদা একদিন আমাকে ডেকে বললেন, “এ্যামন ব্যায়াম করলে টি বি ধইরা যাইবো’। এই পদ্ধতি পাল্টানোর জন্যে তিনি আমাদের বললেন। আর বয়স বেশি হলে দেহ এবং পেশী সোজা রাখতে ব্যায়াম বেশি করতে হয় বলে মনোহরদা যে কথা বলেছেন, আমি নিজে তা বিশ্বাস করি এবং সমর্থন করি।
পূর্বেই বলা হয়েছে, কমল ভান্ডারী হলিউডে যোগের ট্রেনিং দিতে প্রতি বছর যেতেন । সেখানে গিয়ে বিদেশের জিমের ট্রেনিং পদ্ধতি,সেখানকার Technology দেখে আসতেন। কারণ ভারত তখনো সেভাবে দেহচর্চায় উন্নত ছিলনা এবং উন্নত জিম ছিল ভারতে হাতে গোনা। সবই পাড়ার ব্যায়ামাগার, আখড়া,বা Manual জিম।সেগুলো কে কিভাবে আরো উন্নত করা যায় তা সেসময় তিনি বিদেশ থেকে দেখে আসতেন, এবং এ নিয়ে তাঁর জ্ঞানের গভীরতা ছিল দেখবার মত। বডিবিল্ডিং তাঁর কাছে ছিল Art….শারিরিক সৌন্দর্যময়তার সাধনা।বিদেশে যাতায়াতের সুবাদে Arnold Schwarzenegger এর সাথে ওনার সেসময় খুবই ভালো আলাপ গড়ে ওঠে,ও দেশে থাকাকালীন ফোনে যোগাযোগ থাকত। আর্নল্ডের প্রথম বই ‘Life of a Bodybuilder’ -র স্বাক্ষরিত কপি তিনি উপহার স্বরূপ পেয়েছিলেন। আর্নল্ডের আদর্শ Reg Park ছিলেন কমল ভান্ডারীর প্রতিযোগী।।
কথায় কথায় পরিচয় হল ওনার সুযোগ্য ছাত্রদের সাথে। যাঁর কথা প্রথমেই না বললেই নয় তিনি হলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক শ্রী তরুণ গোস্বামী। উনি মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার ১৯৭৮ সালে গুরুপ্রসাদ ব্যানার্জীর হাত ধরে ল্যান্সডাউন রোডের BODYBUILDING CENTRE এ যান,যেখানকার প্রশিক্ষক ছিলেন কমলবাবু। উনি চার্ট করে দেন এবং সেই শুরু।পরে উনি অগ্রগামী ব্যায়ামাগারে চলে গেলেও মাঝে মাঝেই ওনার “কমলদার” কাছে যেতেন..যতদিন ওনার কমলদা ছিলেন। এখনও উনি ওজন নিয়ে ব্যায়াম করেন।এর মোটিভেশন কি জানতে চাইলে বলেন ——- ” শোনো ভাই,আগেকার দিনে ফ্রি ওয়েট নিয়ে ব্যায়াম হত।যেজন্য ওনাদের চেহারা ছিল বিরাট।মাল্টিজিম তৈরী শরীরকে maintained রাখার জন্যে,কিন্তু শরীর তৈরী করতে গেলে ওজন তুলতে হবে,ডন, বৈঠক,লেগ প্রেস। চিনিং চেনপুলিং,ফ্রন্ট ডেলটয়েড প্রেস,ডাম্বেল রাইজিং”এসব করতে হবে।আর ব্যায়ামটাকে ভালোবেসে করতে হবে,আমি ব্যায়াম ভালোবাসি।তাই করি।এখন তো ক্রিকেট ছাড়া কোন খেলা নেই।তখন ব্যায়াম,ডাম্বেল বারবেল তোলা,ফুটবল এসবে মানুষের খুব আগ্রহ ছিল,যেসময় যেটা চলে জানোতো”।
তিনি আরো বল্লেন ——–“কলকাতার প্রথম BMW বাইক কমলদা আনেন,খুব গুণী মানুষ ছিলেন, এসব মানুষ আর হবেনা।,আর এত ঘটনা আছে যে কোনটা ছাড়ব কোনটা বলব। যখন পা ভেঙে পিজিতে ভর্তি ছোট ডাম্বেল নিয়ে ওখানে বসে বসেই হালকা ব্যায়াম করতেন। ওনার PTS এর কোয়ার্টারে প্যারালাল বার ছিল। আমি নিজে কত বার ব্রেস্টিং( দুলে ওঠা নামা)করেছি। ওই প্যারালাল বার আজকের জিমে রাখা হয়না,কারণ ওতে যা হাতের জোর লাগে তা আজ কারো আছে। রিং ও উঠে গেছে।”( কমলবাবু এই রাইজিং বার ১০০ -১২০ বার অনায়াসে করতেন)।কমলদা প্রথম চার সেট করতেন লাইট ওয়েট, লাস্ট সেট করতেন সুপার হেভি ওয়েট এ। জিজ্ঞেস করলে বলতেন লাস্ট সেটে অত বেশী লোড দিলাম কারণ এখনো আমার গায়ে জোর আছে দেখানোর জন্যে। উত্তম কুমার,ধর্মেন্দ্র,রবিশংকর খুব ভালো বন্ধু ছিলেন কমলদার।”
গভর্নরের পাইলট ও সেলিব্রিটি কোচ গুরুপ্রসাদ ব্যানার্জীও কমল বাবুর ছাত্র ছিলেন। এখনো উনি যুবক,ও স্টাইলিশ ঠিক নিজের গুরুর মতোই।উনি এক জায়গায়বলেছেন—“মায়ের ঘোরতর আপত্তি সত্ত্বেও কমলদার কাছে তালিম নিতে নিতে উনার ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হয়ে আমি সবকিছু ছেড়ে পুলিশে জয়েন করেছিলাম”..এই BODYBUIDING CENTRE এই ব্যায়াম করতেন শুভেন্দু বন্দোপাধ্যায়।ওনার সাথে কমল ভান্ডারীর পরিচয় স্কুল জীবন থেকে। বললেন-“তখন মিত্র ইন্সটিটিউটে আমাদের হেডমাস্টারমশাই শান্তিময় মুখার্জি ছিলেন কুস্তিগীর।ওনার বন্ধু ছিলেন কমলদা, উনি আমাদের মাধ্যমিকে Trafficking এর ক্লাস নিতে আসতেন, দুজনেরই রয়াল এনফিল্ড ছিল। পরে PTS এও গেছি, যেখানে উনি প্রায় ৭-৮টা Dog Squad এর কুকুর নিয়ে থাকতেন,উনি ডাকলে কুকুরগুলো এসে দাঁড়িয়ে যেত, উনি বললেন সরো – সব সরে যেত।
ভীষণ ‘শুকতারা’ পড়তে ভালোবাসতেন। আমার প্রথম চাকরীর ব্যবস্থাও উনি করে দিয়েছিলেন।“ সমীর ঘোষ কমল ভান্ডারীর কৃতি ছাত্র। শুরুতে হিতেন রায়ের ছাত্র হলেও, হিতেন রায় ওনাকে পাঠান কমলবাবুর কাছে। সমীর ঘোষের বাবাও Ghosh’s College এ একদা ব্যায়াম করতেন।সমীর ঘোষ (Jr. Mr. India ,Jr. Mr. Asia silver TAIWAN ,Sr. Mr. India ,Mr. Universe USA 2008.হয়েছেন।)
সমীরদার সাথে কথা বলে জানলাম —-“স্যার আমাদের খুলে কিচ্ছু বলতেন না।কম কথায়,খালি হিন্টস দিতেন। ব্যাস ওতেই মাথা খেলিয়ে আমরা ঠিক জিনিসটা বুঝে নিতাম। কিভাবে Mind muscle connection করব? জিজ্ঞেস করতে বললেন, একটা কাঠুরে কাঠ কাটছে! Deltoid কিন্তু হচ্ছে না? কেন বলতো? তার মন মাসলে নেই,আছে কাঠে আর কুড়ুলে”। আবার কখনো জিজ্ঞেস করলাম কি খাবো? উত্তর এল –সব খাবি!” ।
এবং সব Field এ নলেজ,যা ভাবাই যায়না,এবং চট করে কাউকে পাত্তা দিতেন না অর্থাৎ এই অর্থে যে কাউকে খুশি করে ওনার কিছু পাওয়ার ছিল না,নিজেই এত উঁচুদরের ছিলেন। এটাও বলতেন সব সময় Full Range of Motion এ ব্যায়াম করাই হল স্ট্রেচিং হয়ে যাবে,আর ঝুলে থাকবি রডে।এমনিই Gravity র জন্যমাসলে স্টেচিংহবে”।ওনার মি: ইউনিভার্সে যাওয়া নিয়ে বললেন, “ওনার যা চেহারা ছিল তা ওই জমানায় কারোর ছিলনা।১৯ ইঞ্চি হাত,এবং Proportion সব দিকেই। ভারতে যারা বিশ্বশ্রী হয়েছেন তারা Short Class এ,এবং সেসময় Short Class এ ভারত থেকেই যেত। Tall গ্রুপেই Competition বেশী হত, কারণ বিদেশীরা ছিলেন সবাই লম্বা। স্যার সেই Tall গ্রুপেই খেলেছিলেন। আর আরেকটা ব্যাপার দেখবে স্যারের সব ছবিতেই Loose এ ছবি। একটাও Contracts করে নয়। এবং আমাদের থেকে বেশী Lift করতেন,৮০ বছর বয়সেও কিকরে হয় সেটাই আশ্চর্যের।”
Calcutta University Institute এ দীর্ঘদিন Training করিয়েছেন বহু ছাত্রকে। চেতলা থেকে সপ্তাহে চারদিন উনি আমৃত্যু এখানে আসতেন।ওনারই এক ছাত্র শুভায়ু পালের কাছ থেকে জানতে পারি যে বডিবিল্ডিং করার নেশায় সুদুর ভদ্রেশ্বর থেকে হাওড়ার মহেশ ভট্টাচার্য হোমিওপ্যাথি কলেজে পড়তে আসার সময় হাওড়া স্টেশনে আবিষ্কার করেন কমল ভান্ডারীর ছাত্র ভারোত্তোলনে ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন ইন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়কে। তার মারফত চলে আসেন Calcutta University Institute এ। সেই শুরু,তার কথায় “কমল স্যার ছিল চুম্বকের মত। সুটেড-ব্যুটেড হয়ে আসতেন, সেরকম কথাবার্তা, Highly educated,সেরকম বড়ো শরীর ওই ৭৫ বছরে বয়সেও ধরে রেখেছিলেন। আমাদের বলতেন এখনকার হালফ্যাশনের যা ব্যায়াম দেখছিস তা সব ওই ৪ টে ব্যায়াম কে Modification করেই ৪০ টা করা হয়েছে। স্যার আমাদের এত উৎসাহ দিতেন যে আমাদের মধ্যে কে আগে ব্যায়াম করবে তা নিয়ে প্রায় হুড়োহুড়ি পড়ে যেত। আমাদের মধ্যে কম্পিটিশন হত,৩০০ পুশ আপ কে আগে দেবে। বিদেশের নানা Advanced Method Bodybuilding এর,যা আজ এখানে করা হচ্ছে, তা তখন থেকে স্যার জানতেন। তখন CUI চাঁদের হাট ছিল, হিতেন রায়,গৌর দাস নামকরা সবাই আসতেন, এছাড়া সব থেকে আকর্ষণীয় বিষয় যে স্যার চার দিনই নিজে আমাদের সাথে Practice করতেন। ৭৭ বছর বয়সে পাল্লা দিয়ে, ৮০ কেজি দিয়ে বেঞ্চ প্রেস ও ৫০ পাউন্ডের ডাম্বেলে ডেলটয়েট প্রেস করতেন।এছাড়াও লেগ প্রেস,ল্যাট পুলডাউন সহ নানা ব্যায়াম করতেন।”
Calcutta University Institute এর জিমনেশিয়ামে ১৯৮১ সাল থেকে আছেন সর্বর্জনপ্রিয় হরিদা। তিনি বললেন আমার তখন অল্প মাইনের চাকরী, কমলদাকে ধরলাম। উনি ওখানে রোজ সন্ধেয় আসতেন, আমার কাজ ছিল ওনার লিখে দেওয়া Exercise গুলো দেখিয়ে দেওয়া।কমলদা আমায় মেসেজ ও ফিজিওথেরাপি শিখিয়েছিলেন ও নিজে বাইকে চাপিয়ে নিয়ে গেলেন প্রথমে West Bengal Bodybuilding Association এর সেক্রেটারী রণদাসুন্দর পালের বাড়ি। তাকে ফিজিওথেরাপি করাতাম। পরে চিত্রপরিচালক অজয় করের বাড়ি যেতাম।এভাবে আস্তে আস্তে আমি নিজের পায়ে দাড়াই,আর তার অবদান ওনার। একবার শীতে, ওয়েলিংটন স্কোয়ার থেকে সোয়েটার এনে বললেন —দেখতো! তোর মত একজনের জন্য এটা কিনলাম,পরে একবার দেখতো। পরতে বললেন বাহ দারুণ তো!! শেষে বললেন এটা তোরই, পরবি। PTS Quarter এ গেলে পেট ভরে খাওয়াতেন। “সে সময় স্নেহাংশু রক্ষিত, দেবনারায়ণ গাঙ্গুলী, শৈবাল পোদ্দার, তারক চৌধুরী এরকম প্রচুর অনেকে ওনার হাতে ভারতশ্রী, বঙ্গকুমার এসব হয়েছে, এবং ভালো ভালো Body উনি তৈরী করেছেন।প্রতি মাসল আলাদা আলাদা ভাবে কি ভাবে তৈরী হবে,তার জন্য কটা সেট কটা রিপিটেশন, আর কি ভাবে তা গড়ে হবে সব জানতেন। কমলদা মানে, আমার বাবা আর মায়ের স্থানে আছেন।
একই কথার পুনরাবৃত্তি করলেন ওনার ছাত্ররাজীব ব্যানার্জীও, যিনি দীর্ঘদিন Calcutta University Institute এর জিমনেশিয়ামে ওনার কাছে ব্যায়াম করেছেন ১৯৯৮ সাল থেকে। উনি এও বললেন মারা যাবার দুদিন আগেও উনি ৬০ কেজি দিয়ে বেঞ্চ প্রেস করেছিলেন।আমরা যখন দেখেছি ওনার ৭০ চলছে যখন,মারা গেলেন ৮৫ চলছে। ৮০ পাউন্ড দিয়ে ট্রাইসেপ পুশডাউন করতেন। উনি অসম্ভব প্রতিভাবান এক মানুষ। যেটা আমরা এখন আরও বেশি উপলব্ধি করি। যাকে বলে ওল্ড স্কুল বডিবিল্ডিং ভারতে তার মডার্ন রূপদান করেছিলেন উনি। একজন বডিবিল্ডার যিনি একাধারে যোগা জানেন, gymnastics জানেন, ফিজিওথেরাপি সম্বন্ধে গভীর জ্ঞান, ২-৩ টে বাদ্যযন্ত্র বাজানোতে পারদর্শী, রবীন্দ্র সঙ্গীত, নজরুলগীতি নিয়ে রীতিমত পড়াশোনা করা।
এক এক শরীরের কাঠামো দেখে নিয়ে আলাদা আলাদা ব্যায়াম করানো।যেটা এখনকার কোন ট্রেইনার কে করাতে দেখি না।কোন ব্যায়াম কি ভাবে করলে সেই পেশীটা শক্তিশালী হবে, এবং ভালো মতো প্রদর্শিত করা যাবে, এবং তার জন্য কি কি খাবার খেতে হবে, সেগুলো ছিল জলভাতের মতো তাঁর নখদর্পণে।
আমার ওজন বাড়ানোর জন্য আমাকে রোজ ১২ টা কোয়াটার সেদ্ধ ডিম মধু দিয়ে পাউরুটি দিয়ে মেখে খেতে বলেছিলেন! ১.৫ মাসে আমার ৫ কিলো ওজন বেড়েছিল !এই technique এখন কার কোনো ট্রেইনার বলতে পারবে!! অথচ সেটা প্রাকৃতিক উপায়! কোনো ওয়েট গেইনার খেতে হয়নি।আমাদের কাওকে কখনো সাপ্লিমেন্ট খেতে বলতেন না! এমন কি যারা প্রফেসনাল বডি বিল্ডিং করতো , তাদেরকেও না! নরমাল ডায়েট করিয়ে নামাতেন! দারুণ চেহারা তাদের ছিলো!! স্যার আমাদের রোজ নিয়ম করে প্যারালাল বারে ৩-৪ রকম এক্সারসাইজ করাতেন।
রোজব্রেস্টিং, হুপিং, প্যারালাল বার প্রেস, triceps ওয়াকআর চিন আপ করাতেন। বলতেন যত বডি ওয়েট এক্সারসাইজ করবি, তত শরীরের স্ট্রাকচার সুন্দর হবে, এবং থেকে যাবে। আমাদের সময়ে বুকডন হতো, এখন pushups হয় আমরা পাড়াতে বাড়িতে উঠোনে মেঝেতে গর্ত করে দুপাশে ইট বসিয়ে বুকডন দিতাম। এখনো তার জন্য আমরা কয়েকমাস ব্যায়াম না করলেও আমাদের বুক একইরকম থাকে। ব্যায়াম ৬ মাস না করার পরেও যে কেউ বলবে হ্যাঁ আমরা ব্যায়াম করি। এখনকার জেনারেশন শুরু করে বেঞ্চ প্রেস দিয়ে।“
২০১৫য় তিনি চলে যান।বাংলা সংবাদপত্রে লেখা হয় প্রয়াত ময়দানের ‘চিরযুবক’ কমল ভান্ডারী।
পাঁচ বারের প্রাক্তন মিস্টার ইন্ডিয়া কমল ভান্ডারী প্রয়াত হলেন৷ বৃহস্পতিবার ভোররাতে আচমকা হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে৷ চুরাশি বছরের ‘চির যুবক’, কলকাতা ময়দানের বয়স্কতম ক্রীড়াকর্তা কমল ভান্ডারী আমৃত্যু ময়দানে সক্রিয় ছিলেন৷
লেখা শেষ করি স্বামীজীর একটি উক্তি দিয়ে – যা স্বামীজী নিজের শিষ্যকে তার জীবনের শেষ দিকেবলছেন।কর্মক্লান্ত অথচ প্রাণবন্ত গলায় বলছেন- “শরীরটাকে খুব মজবুত করতে তোকে শিখতে হবে ও শেখাতে হবে। দেখছিসনে এখনো আমি রোজ ডাম্বেল কষি।আমি বলছি The Physically weak are unfit for realization of self…”
ব্যায়াম করে সবাই বডিবিল্ডার নাই বা হল। কিন্তু লোহা তুলে পেশীগুলো লোহার মত নাহয় গড়ে তুলি।তাতেই জীবন সার্থক হবে, কাজে-কর্মে উদ্যম ও সাহসিকতার পরিচয় দেওয়া যাবে।কমলবাবুর মতো মানুষেরা তো সেটাই জীবন ভোর দেখিয়ে ও শিখিয়ে গেছেন। শক্ত শরীর ও শিক্ষিত, স্বর সমন দুটোরই অভাব আজ…এখানেই ইতি…
বিশেষ কৃতজ্ঞতা : কমলবাবুর কন্যা ইতিদি, সাংবাদিক শ্রী তরুণ গোস্বামী, সমীর ঘোষ, শ্রী শুভেন্দু ব্যানার্জী, ছাত্র রাজীব ব্যানার্জী, শ্রী গুরুপ্রসাদ ব্যানার্জীকে। কৃতজ্ঞতা জানাই শ্রী শুভায়ু পালকে যার জন্য এই লেখাটার শুরু ও যে নানাভাবে আমায় সাহায্য করে গেছে।
কৃতজ্ঞতা জানাই ‘কাঞ্জিক ‘সম্পাদক অনিমিত্রবাবুকে। গ্রন্থসহায়তা -ব্যায়ামচর্চা,খেলার আসর পত্রিকার পুরোন সংখ্যা।
হাওড়ার নরসিংহ দত্ত কলেজে ইংরেজী সাহিত্যে স্নাতক পাঠরত।
অবসরে বইপড়া,হাওয়াইন গীটার ও তবলা বাজানো, ও অবশ্যই আখড়ায় ব্যায়াম।
Comment here