(পূর্বের অংশের পর)
– শ্রী সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
যাইহোক, আমরা পৌঁছলাম ISBT স্ট্যাণ্ডে। করন ব্যাটা ১৫০/- র জায়গায় ১৯০/- নিল কায়দা করে। সিধুর মন খুঁতখুঁত করছে। আমরা গেলাম হিমাচল পরিবহণের বাস স্ট্যাণ্ডে। বাস রয়েছে ছাড়েনি রাত ১২.৩০ এ ছাড়বে। কোনো সিট নেই। সিমলা পৌঁছবে সকাল ১০টায়। তারমানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ১০ ঘন্টা!!!!!!!!! ড্রাইভার বললো যে দুটো সিট পান্টা থেকে দেবে তাও ২ঘণ্টা বাদে.. মুশকিল!! ওদিকে সিধুর মন চঞ্চল… সিধু আজকের রাতে যেতে চাইলনা। আমরা ব্যাক করলাম..অনেক চিন্তা করে ঠিক করলাম আজকের সকালের ৯টার বাসেই যাব। অতঃপর ব্যাক টু যোগীওয়ালা… আবার ১৫৬/- গেল। এসে দেখি একটা কুকুর বাড়ির গেটের বাইরে।। রুমে এসে দেখি গ্যাস সিলিণ্ডারের সুইচ অন..একটা ল্যাম্প চার্জে বসানোই আছে। যাইহোক শুতে প্রায় রাত ২টো। সকাল পৌনে ৬টায় ঘুম ভাঙল.. নিদ্রা দেবী অনন্য কথা রেখেছেন। ৪ঘণ্টা সাউণ্ড স্লিপ।
সকালে রেডি হয়ে বেরোলাম। আবার ISBT…এবার আর সিমলা ডিরেক্ট এর জন্য অপেক্ষা করলাম না। ঐ বাসটা হরিদ্বার থেকে আসে আর ভায়া নাহান হয়ে যায়। পাহাড়ী রাস্তা.. আমার তো ভালই লাগত। কিন্তু আমরা চণ্ডীগড়ের বাসে উঠলাম। ওখান থেকে সিমলা। সেখানে পৌঁছে দেখি কি করা যায়। কিন্তু একটা খুব ভাল ব্যাপার.. আকাশ পরিস্কার..রোদ আলো ঝলমলে সকাল.. সিধু আলু পরাঠা নিয়ে আসলো। বাস চলতে শুরু করতেই খেয়ে নিলাম.. এখন আমরা চণ্ডীগড়ের পথে। আমার মনে হয় সব পাহাড়ী গ্রামের গন্ধ এক.. মন প্রাণ ভরে যায়।
সবুজ অরণ্যের মাঝে ছোট ছোট ঘরের অবস্থান। গরু ছাগলের সাথে তাদের গোময়-গোমুত্রজনিত ঝাঁঝালো গন্ধের সাথে কাঠের আগুনে রান্না করার ফলে ঐ কাঠের ধোঁয়া হয়। সেই ধোঁয়ার গন্ধও মিলে মিশে পাহাড়ী গ্রাম বস্তির জীবনযাত্রা একটা আলাদা মাত্রা পায়.. এছাড়া পাহাড়ী মানুষদের সহজসরল মানসিকতাও আছেই। আমি দীর্ঘদিন নেপালে ছিলাম, ১৯৯২ থেকে ২০০১। কাজের খাতিরে গ্রাম থেকে গ্রামে, শহর থেকে শহরান্তরে ঘুরতে হয়েছে। নেপালি ভাষায় বলতে, পড়তে, গাইতে, লিখতে পারি আমার বাংলা ভাষার মতই। ফলে নেপাল এবং নেপালি মানুষদের তথা পাহাড়ি মানুষদের জীবনযাত্রার প্রতি আমার খুবই দুর্বলতা আছে। তাই পাহাড় আমাকে খুবই ডাকে।
দেরাদুন থেকে চণ্ডীগড় বা সিমলা যাওয়ার রাস্তা নাহান পর্যন্ত এক.. নাহান থেকে একটা রাস্তা সিমলার দিকে উঠেছে আর চণ্ডীগড়ের দিকে নেমেছে। অসাধারন রাস্তা। দুপাশে সবুজ বনানী। বসুধা মা যেন অকৃপণ দানে ধনী করেছে এই ক্ষেত্রের মানুষদের। তবে অনেক জায়গাতেই জঙ্গল কেটে বসতি বানাবার আভাস স্পষ্ট। সেক্ষেত্রে জঙ্গল ধ্বংস করে মানুষের বংশবৃদ্ধি করার অপরাজিত মানসিকতা সত্যি সত্যি কষ্ট বৃদ্ধির সাথে বিষ্ময় সৃষ্টি করে।
চণ্ডীগড় পৌঁছেই সিমলার বাস পেয়ে গেছি। ৭টায় পৌঁছবে। ওখান থেকে ৮টায় ছাড়বে থাংলিং এর বাস। এই বাস বেশ ভাল। হিমাচল পরিবহণের, ভাড়া ১৬৮টাকা। কণ্ডাক্টরের ২টাকা। সবজায়গাতেই এক চরিত্র। যাইহোক, পঞ্চকুল্লা থেকে চণ্ডীগড়ের পথে বাসে আসতে যা চোখে পড়ল তাতে পরিষ্কারই লাগল… বিজেপি সরকারের স্বচ্ছ ভারতের মহিমা আর কি!!
(ক্রমশঃ)
(লেখক পরিচিতি – বিশিষ্ট জ্যোতিষী; একাগ্র পান্থ)
Comment here