হে আবেগী মূর্খ বাঙ্গালী –
আজ প্রায় ১৫ বছর যাবৎ শ্রী ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে আপনাদের অবগতির জন্য তুলে ধরার চেষ্টা করছি যে, ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে ভারত থেকে মুসলমানদের জন্য পাকিস্তান জন্মের মাত্র ৬/৭ মাস পর পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ঊর্দু রুখে দেওয়ার পর ধীরেনবাবুকে অনেক জেল – জুলুম সইতে হয়েছে। এমনকি এই অপবাদও সইতে হয়েছে যে, মশাই আপনি পাকিস্তান ভাঙার পাঁয়তারা করছেন, যার ফলে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যেকোন দ্বন্দ্ব দেখা দিলে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত কখনো জেলে বা কখনো নিজের ঘরে পুলিশী পাহারায় নজরবন্দি থাকতেন।
শেষ পর্যন্ত ১৯৭১ সালের ২৯শে মার্চ সোমবার রাতে তার ৭/৮ বছরের ছেলে দিলীপ দত্ত সহ পাক সেনারা ময়নামতি সেনানিবাসে নির্যাতনের মাধ্যমে তাঁকে হত্যা করেছে। ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের ছোট মেয়ে যার বয়স এখন ৮৬ বছর সেই ওই ২৯শে মার্চকে মৃত্যু দিবস বলে স্মরণ করে। সেই দিবসটিতে তার ছোট মেয়ের উপস্থিতিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামের ভারত সভা ঘরে, জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির রথীন্দ্র মঞ্চে, বারাসাত জেলা পরিষদ হলে (শহীদ তিতুমীর হল) তাঁর তিরোধান দিবস পালনে অংশগ্রহণ করা হয় বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে। এবং সেই স্মরণ সভায় আমি প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হই। কখনো নিজেই পৌঁছে যাই, আবার যেতে না পারলে আমার লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শোনানো হয়। যা শোনার জন্য দর্শক – শ্রোতা আগ্রহভরে অপেক্ষা করতে থাকে।
মূলতঃ আমি যে কথা বলার চেষ্টা করছি তা হচ্ছে, ধীরেন্দ্রনাথ দত্তই প্রথম ব্যক্তি যিনি অখণ্ড পাকিস্তানে বাংলা ভাষা রক্ষা করে আমাদেরকে বাঙ্গালী করে রেখেছিলেন। যার ফলে বাংলা ভাষা রক্ষার আন্দোলন ‘৫২-এর ২১শে ফেব্রুয়ারী, ‘৭০-এর নির্বাচন, ‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ ফলস্বরূপ স্বাধীন বাংলাদেশ। তাই আমি মনে করি, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তই প্রকৃত বঙ্গবন্ধু ও জাতির জনক। বোকা বাঙ্গালীদের মনীষী শেখ মুজিবের অসমাপ্ত আত্মজীবনীর ৩১১ নং পৃষ্ঠায় বর্ণিত কয়েকটা লাইন তুলে ধরলাম যা মনীষী নিজেই বলে গেছেন শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত সম্পর্কে –
“ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত (১৮৮৬ – ১৯৭১) আইনজীবি ও রাজনীতিবিদ, ১৯৪৬ সালে কংগ্রেসের সদস্য হিসেবে বঙ্গীয় বিধানসভার সদস্য নির্বাচিত। ১৯৪৭ এ দেশ বিভাগের পর পাকিস্তানের গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি পাকিস্তানী গণপরিষদে ইংরেজি ও ঊর্দূর পাশাপাশি বাংলাকেও সমান মর্যাদা দানের দাবি জানান। এই দাবি প্রত্যাখ্যাত হয়। এই সূত্রে পূর্ব বাংলায় ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। তিনি আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে গঠিত পূর্ব বংগো সরকারের মন্ত্রী নিযুক্ত হন।
১৯৭১ সালের ২৭শে মার্চ পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী তাকে তার বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। তারপর থেকে তিনি নিখোঁজ থাকেন।” (মনীষী শেখ মুজিব)
পাঠকবৃন্দ, এখন আপনারা আপনাদের বিবেককে প্রশ্ন করুন, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে আমার প্রকৃত বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীন বাংলাদেশের জাতির জনক বলাটা কি ভুল?
বাংলাদেশে হিন্দুদেরকে অধিকার নিয়ে টিকে থাকতে হলে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে
বাংলাদেশের হিন্দুরা আওয়ামী লীগ বা কোন রাজনৈতিক দলের দালালি করে টিকতে পারবে না। আওয়ামী লীগ দলটার জন্ম হয়েছে পাকিস্তানের ঔরসে, পাকিস্তানের (পূর্ব ও পশ্চিম) হিন্দুদের সাথে প্রতারণা করে পাকিস্তান থেকে তাঁদের বিতাড়িত করার জন্য যা আজ অবধি বাংলাদেশে চলছে।
বাংলাদেশে সম্মিলিতভাবে হিন্দুদের একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম থাকতে হবে এবং দলটির নাম হবে বাংলাদেশ হিন্দু লীগ। প্রশ্ন উঠবে হিন্দু লীগ কেন? বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলাম, হেফাজতে ইসলাম থাকতে পারলে হিন্দু লীগ কেন থাকতে পারে না, অবশ্যই থাকতে পারে।
বাংলাদেশ হিন্দু লীগ হিন্দুদের স্বার্থরক্ষায় যেকোন দলের সাথে জোট বাঁধতে পারে, তাদের জন্য একটা কোটা থাকতে হবে যেন সংসদে হিন্দুদের প্রতিনিধিত্ব থাকে। হিন্দুদের নেতৃবৃন্দের কথা আর বিশ্বাস করা উচিত নয় যে, আর এইবার শেষবারের মতো হাসিনাকে ভোট দেন, সে হিন্দুদের অধিকার সংরক্ষণ করবে। এইভাবেই ১৯৭২ সাল থেকে ২০২১ পর্যন্ত প্রায় এক কোটি হিন্দু দেশছাড়া হয়েছে। ১৯৭২ সাল থেকে দেশে জনসংখ্যা দ্বিগুণের বেশি হয়েছে অথচ দেশের হিন্দু সংখ্যা প্রায় এক কোটি কমেছে যা আমাদের উদ্বেগের কারণ। দেশ যদি হিন্দুশূন্য হয় তবে আমরা সবাই মুসলমান, আল কায়দা ও তালেবান।
বাংলাদেশে হিন্দু লীগ নামে একটি সংগঠন আছে, সংগঠনটি রাজনৈতিক দল হিসাবে হাসিনা সরকারের কাছ থেকে রেজিস্ট্রেশন পায়নি বরং তাদেরকে আওয়ামী লীগের সাথে রাজনীতি করতে বলা হয়েছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার প্রেসক্লাবে এই হিন্দু লীগ শহীদ শ্রী ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের তিরোধান দিবসে যে স্মরণ সভাটি আয়োজন করেছিল সেই সভাটি পন্ড করেছিল আওয়ামী লীগের গুন্ডারা; মঞ্চটি ভেঙে দেওয়াও হয়। পরবর্তীতে, ২০১৮ সালে রানা দাশগুপ্তদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানটি হয়েছিল কিন্তু রাজনৈতিকভাবে এই দলটিকে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হচ্ছে না। কিছু লোক চান হিন্দুদের নিজস্ব একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম থাকুক। আবার কিছু দালালেরা চায় আওয়ামী লীগের সাথে থেকে তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল হোক; একইসাথে আগরতলা, কলকাতা, বোম্বে, দিল্লী, নিউ ইয়র্ক, কানাডা, লন্ডন, জাপান, জার্মানি ও ফ্রান্সে তাঁদের নিজের পরিবার পরিজনের স্থায়ী ও সুরক্ষিত আস্তানার ব্যবস্থা হোক।
(প্রবন্ধগুলি বিশিষ্ট লেখকের নিজস্ব মৌলিক রচনা, ‘কাঞ্জিক‘ – এর সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। প্রতিবাদে বা আলোচনায় তাঁর সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে নেবেন)
Comment here