সংস্কৃতি

তোরঙ্গে রাখা চিঠি

— শ্রী পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়

 

সবুজ টিয়াটি এলোমেলো দূর জঙ্গলে উড়ে গেলে
পাতাঝরা দিনে ডাকপিয়নের চিঠি আসে সাইকেলে।
গোলাপী খামের ভিতরে সে ছবি কেবা সযত্নে পুরে
ঢেলে দেয় রঙ, গাঢ় সুগন্ধী, ঝিকিমিকি রোদ্দুরে।
ভাঙা পথে কিছু শিরীষের ফুল, সারিসারি পাতাগুলি
ছড়িয়ে রয়েছে, পাশে পোড়ো মাঠ, চকিত নয়ানজুলি।
বাতাসের ঘাসে উড়ে যাওয়া খাম, ছেঁড়া ছেঁড়া বুক থেকে
বিহ্বল সেই অন্ধকারে কি আকাশকে নিল ডেকে!
কারা তাকে গোল ডাকবাক্সের অন্ধ প্রেক্ষাগৃহে
বিষণ্ণ ঋতু, সবুজ দুঃখ, বিমূর্ত নিস্পৃহে —
রেখে এসেছিল, আমি তা দেখিনি, কী বিপুল নির্জনে
ব্যাপ্ত সে হলো আনন্দে, উৎকণ্ঠার আয়োজনে।
আলোয় এমন স্পর্শের ছায়া কেন তাকে চিনে নিল?
দুর্লভ এই বাগানে মুকুলগন্ধে সে এসেছিল।

চুনীর আংটি, সেতারের ঝালা, বন্দিশ কারুকাজে
কত দূর তাকে পাওয়া যেত বলো, যে কথা গোপনে বাজে!
যে মর্মে পাওয়া উচ্ছ্বাস আর উপল বেদনা এসে
ভাঙে নিসর্গ, নীরক্ত ঢেউ, অভিমানে ভালবেসে।
পত্রশূন্য পিপুলের গাছে পাখির বৃষ্টিধারা …
স্ফূরিত বিকেল মৃদু কেঁপে ওঠে, গ্রীষ্মের বনে যারা
ছুটি নিয়েছিল, তারা দিয়ে গেল করতালি অবশেষে
সরস গাছটি খাঁ খাঁ হয়ে গেল, খুলি ও হাড়ের দেশে।
এমন আঁধারে চিঠি পড়া যায় ! এ শাদা অন্ধকারে
আঁকাবাঁকা কালো বিপন্ন হাওয়া — স্তব্ধ সারাৎসারে।
এই চিঠি আমি কীভাবে পড়ব ? কোথায় খুলব একে !
স্মৃতি এক নিঃসঙ্গ জানালা, শালিখের বাসা থেকে
টেনে আনা খড়, পাতার টুকরো, ডিমের খোসাতে ধূলি
বিবর্ণ সেই বাদামী পালক, পড়ে দাও চিঠিগুলি।

 

(লেখক পরিচিতি – মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক। জাতীয়তাবাদী কবি ও প্রাবন্ধিক। প্রকাশিত গ্রন্থ : রাত বারোটার সূর্য (কাব্যগ্রন্থ), প্রকাশ্য আড়াল ( কবিতা বিষয়ক প্রবন্ধগ্রন্থ ), লিমেরিক ৫০ (ননসেন্স ভার্স), এবং ‘বাঙালি হিন্দুর ধূসর ভবিষ্যৎ’ (নিবন্ধগ্রন্থ)।)

 

Comment here