— পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায়
ভারতকেশরী শ্যামাপ্রসাদ ! ওগো মহাবিদ্রোহী
গেলে পরাধীন ভারতবর্ষে বেদনার ভার বহি
ধুলার প্রাচীন প্রাসাদে ন্যুব্জ
বিক্রমশিলা, কান্যকুব্জ
ঘূর্ণি জাগায়ে লুপ্ত হইলো কালের অশ্বারোহী।
ভগ্ন সিন্ধুসভ্যতা জুড়ে মড়কের মহামারী
উদিলে হে বীর ভারতসিংহ, পাপীর দর্পহারী
মহামন্দ্রিত গম্ভীর স্বরে
বাজে ডম্বরু কালগহ্বরে
সন্ন্যাসী, তব চরণে লুটায় শাসকের তরবারি।
মহাবাংলার পরমতীর্থে জন্মিলে পরহিতে
যুগসাগ্নিক ঋত্বিক তুমি আপন চিতাগ্নিতে
ভবানীমায়ের চরণকমলে
হৃদয়পদ্ম যে পুণ্যবলে
অঞ্জলি দিলে, প্রাণের অর্ঘে পারি নাই তাহা দিতে।
শত গরলের পিয়াসা মিটায়ে জীবনের অমৃত
দান করিয়াছ, স্রষ্টা তোমাতে বরাভয়ে জাগরিত
খণ্ডিত মৃত বাংলার ক্ষুধা
তবু আহ্বানে মিটালো বসুধা
অগ্নিমন্ত্র আকাশে বাতাসে সামগানে উত্থিত।
নিজের জীবনপ্রদীপ নিভায়ে আঁধার করিলে দূর
তুমি যে পরম আশ্রয়দাতা নিপীড়িত হিন্দুর
আপনারে দান করি নিঃশেষে
জীবনপাত্র ভিখারির বেশে
তুলে দিলে কোটি রিক্তহস্তে, প্রাচুর্য ভরপুর !
লুণ্ঠিত দেখি আর্যগরিমা শাসনের সংহারে
স্বদেশজননী গুপ্তঘাতের বিপুল অন্ধকারে
গৈরিকভূমি অশ্রুসজল
ছিন্ন হইলো সুখশতদল
ভস্ম করিলে ভূষণ আজিকে শক্তিহীনের দ্বারে।
যবে হিন্দুর নিধনযজ্ঞে নোয়াখালি শুনশান
সারা কলিকাতা ডাকিয়া ফিরিল নরহত্যার বান
শূন্য সে শমীবৃক্ষের শাখা
সূর্য ঢাকিলো শকুনির পাখা
তুমি ছিলে শেষ ভরসা অজেয় শার্দুলসন্তান !
তোমারে পুজিতে গগনের তারা ফুল হয়ে পড়ে খসি
তোমারে বধিতে নররাক্ষস ভাঙিয়া ফেলে সে অসি
তুমি ইতিহাস, কালের সাধনা
হৃদিমন্দিরে তব আরাধনা
মৃত্যু অঝোরে কাঁদিছে তোমার চরণপ্রান্তে বসি।
(লেখক পরিচিতি – মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক। জাতীয়তাবাদী কবি ও প্রাবন্ধিক। প্রকাশিত গ্রন্থ : রাত বারোটার সূর্য (কাব্যগ্রন্থ), প্রকাশ্য আড়াল ( কবিতা বিষয়ক প্রবন্ধগ্রন্থ ), লিমেরিক ৫০ (ননসেন্স ভার্স), এবং ‘বাঙালি হিন্দুর ধূসর ভবিষ্যৎ’ (নিবন্ধগ্রন্থ)।)
Comment here
You must be logged in to post a comment.