(পূর্বের অংশের পর – চতুর্থ পর্ব)
দুঃখ রাতের গান —- একটি সাক্ষাৎকার
১) বাবা আলাউদ্দিন খাঁ সম্বন্ধে আপনার স্মৃতি বা তাঁর সঙ্গে আপনার সম্পর্কের কথা যদি কিছু বলেন ।
আমি বাবাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করি, ভালোবাসি । একইসঙ্গে তাঁর প্রতি আমার একটা বিস্ময়ও রয়েছে । আমি আমার জীবনে বাবার মতো মানুষ দেখিনি । বাবা সরল, সাধাসিধে, সত্য’র প্রতি নিষ্ঠাবান মানুষ ছিলেন । অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন । দুঃস্থ মানুষদের প্রতি তাঁর হৃদয়ে অপার করুণা ছিল ।
২) আপনার বাবা আপনাকে গান শেখাচ্ছিলেন সেখান থেকে সুরবাহারে চলে এলেন কী ভাবে ?
বাবা আমাদের মানে আমাকে আর ভাইয়াকে ( আলি আকবর খান সাহেব ) ধ্রুপদ শিখিয়েছিলেন । পরে আমি যখন সেতার শিখছি , তখন একদিন বললেন “ আমি এখন তোমাকে আমার গুরুবিদ্যা শেখাবো কারণ তুমি নির্লোভ । সুরবাহার শিখতে গেলে তোমার অনন্ত ধৈর্য্য আর মানসিক স্থিরতার প্রয়োজন । আমি বিশ্বাস করি তুমি আমার গুরুর শিক্ষা ধরে রাখতে পারবে , কিন্তু তার জন্য তোমাকে সেতার ছাড়তে হবে কারণ সেতারের শ্রোতা সাধারণ মানুষ । অন্যদিকে সুরবাহার শুধু সেই সব সমঝদার শ্রোতার জন্য যাঁরা সঙ্গীতকে অন্তর দিয়ে অনুভব করতে পারেন । সাধারণ শ্রোতা তোমার বাজনা অপছন্দ করে টমেটো ছুঁড়তে পারে , এখন সিদ্ধান্ত তোমার । আমি স্তব্ধবাক হয়ে গিয়ে বলেছিলাম, ‘আপনি যেমনটা আদেশ করবেন আমি তেমনটাই করবো’। ”
৩) আমরা দেখেছি আপনি আপনার বাবার মতো যে কোন তারবাদ্য বাজাতে পারেন । আপনার সাঙ্গীতিক জীবন নিয়ে যদি কিছু বলেন ।
না , আমি বাবার মতো সব তারবাদ্য বাজাতে পারি না । আমি গাইতে পারি আর সেতার আর সুরবাহার বাজাতে পারি । যদিও আমি বাঁশি , সরোদ , সেতার শেখাই মূলত গেয়ে । আমার কাছে আমার সঙ্গীত পূজার মতো । বাবা বলতেন সঙ্গীতের চর্চার মাধ্যমে ঈশ্বরকে পাওয়া সম্ভব । বাবা আমাকে আরও বলেছিলেন যে আমি সঙ্গীতচর্চা করে আমার জীবিকা নির্বাহ করতে পারি ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন হতে পারি । আমি আগেই বলেছি আমার সঙ্গীত আমার একমাত্র সাধনা । বাবা বলতেন প্রত্যেকটি স্বর যেন শ্রোতার হৃদয় ছুঁতে পারে । এর জন্য অনন্ত সাধনার প্রয়োজন । নিজের অহংকে সমর্পণ করে … এ বড়ো কঠিন সাধনা ।
৪) আপনার সময় মহিলা শিল্পীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য রকমের কম ছিল । আপনাকে কোন সামাজিক বা ধর্মীয় বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে ।
আমি বিশ্বাস করি সঙ্গীতের সাধনা অত্যন্ত কঠিন । তার জন্য প্রচুর সময় , একনিষ্ঠ দায়বদ্ধতা প্রয়োজন । আমাদের সমাজে মেয়েদের যতক্ষণ বিয়ে না হচ্ছে তাদের রেওয়াজে ততটা সমস্যা হয় না । আমি মনে করি না কোন যন্ত্র শেখার জন্য মেয়েদের কোন শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকতে পারে । যা প্রয়োজন তা হল অদম্য ইচ্ছাশক্তি , সঠিক গুরু এবং সংকল্প ।
আর সামাজিক ধর্মীয় বাধার কথা যদি বল তাহলে আমার বোনের কথা বলতে হয় । বাবা তাঁকে বড়ো যত্ন করে গান শিখিয়েছিলেন । কিন্তু তাঁর মুসলমান শ্বশুরবাড়িতে তাঁকে গাইতে দেওয়া হয়নি । বাবা তাই আমাকে শেখানোর ব্যাপারে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন । বাবা দাদাকে যা শেখাতেন আমি তাই শুনে শুনে তুলে নিতাম । একদিন বাবা বাজারে গেছেন , দাদা সরোদ প্র্যাক্টিস করছে । দাদা ভুল করলে আমি শুধরে দিচ্ছিলাম । আমি বাজনায় এতটাই মগ্ন ছিলাম যে বাবা এসে গেছেন তা খেয়াল করিনি । বাবা কিন্তু আমাকে বকেননি , আমাকে ঘরে ডেকে একটা তানপুরা দিলেন । সেদিন থেকে আমার তালিম শুরু হল । আমি মেয়ে ছিলাম বলে আমাকে বাবা আলাদা ভাবে কিছু শেখাননি । দাদা আর আমি একইরকম তালিম পেয়েছি । আমি মনে করিনা সঙ্গীত লিঙ্গভেদে আলাদা হয় । শৈল্পিক প্রকাশের সঙ্গে ব্যক্তি বিশেষের লিঙ্গ নয় ব্যক্তিত্বর সম্পর্ক রয়েছে । একজন অন্তর্মুখী স্বভাবের শিল্পী হয়ত আলাপ এবং সুরের উপর বেশী প্রাধান্য দেবেন , অন্যদিকে বহির্মুখী একজন শিল্পী লয়কারির প্রতি বেশী আকৃষ্ট হবেন ।
৫) আপনার প্রথম জনসমক্ষে বাজানোর অভিজ্ঞতা কেমন ছিল ।
আমার প্রথম অনুষ্ঠান ছিল দিল্লিতে । পণ্ডিতজীর সঙ্গে যুগলবন্দী । পন্ডিতজী বারবার বলেছিলেন শ্রোতাদের কথা ভেবে বাজাতে । আমার উত্তর ছিল যে আমি যা শিখেছি তাই বাজাবো । আমার মনে হয় শ্রোতারাও সেদিন আমার বাজনা উপভোগ করেছিলেন ।
৬) আপনি যে কনসার্টগুলিতে বাজিয়েছেন তার মধ্যে সবচেয়ে স্মরণীয় কোনটি ।
আমি যা বাজিয়েছি তা আমার একবারেই পছন্দ হয়নি , তাই আমার স্মরণীয় কোন কনসার্ট নেই ।
৭) আপনি জনসমক্ষে বাজানো বন্ধ করলেন কেন ।
আমরা যখন যুগলবন্দী করছিলাম , শ্রোতারা আমার বাজনা উপভোগ করছিলেন , এবংপণ্ডিতজী সেটা পছন্দ করছিলেন না । আর এমনিও আমি জনসমক্ষে বাজাতে পছন্দ করতাম না , তাই অনুষ্ঠানে বাজানো ছেড়ে দিয়ে নিজের একান্ত সাধনা নিয়ে পড়ে থাকতে মনস্থ করি ।
৮) আপনি বিশ্বাস করেন সঙ্গীত মানুষকে জীবনের প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি দিতে পারে ।
আমি আমার সঙ্গীতকে বাবার কাছ থেকে পাওয়া বীজমন্ত্রের মতো মনে করি । সঙ্গীতের জন্যই আমি বেঁচে রয়েছি ।
৯) আপনি নারীমুক্তিতে বিশ্বাস করেন । তসলিমা বা অন্যান্যরা যে মেয়েদের মুক্তির জন্য লড়ে যাচ্ছেন , আপনি তাকে সমর্থন করেন ।
আমি নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করি মেয়েরা ছেলেদের মতোই সক্ষম । আজকের ভারতবর্ষে যে মেয়েরা খুব বেশী করে এগিয়ে আসছে , নিজেদের শক্তিকে উপলব্ধি করতে পারছে , জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে নিজেদের ক্ষমতার স্বাক্ষর রাখছে এতে আমি খুশী । আমি সেই সব মেয়েদের শ্রদ্ধা করি যাঁরা নিজেরা যা বিশ্বাস করেন তাঁর স্বপক্ষে লড়ছেন ।
১০) আপনি কী মনে করেন মেয়েদের বিবাহ আর কাজ করা দুটো একসাথে সম্ভব নয় ।
না , আমি তা মানিনা । যদি স্বামী স্ত্রী পরষ্পরকে শ্রদ্ধা করে , একে অপরকে শ্রদ্ধা করে , যদি ঈর্ষা না থাকে সম্পর্কের মধ্যে তাহলে দুজনেই কর্মজীবনে সফল হওয়ার পাশাপাশি সুখী দাম্পত্য জীবন কাটাতে পারে ।
১১) আপনি কী বিশ্বাস করেন যে একটি অসফল বিবাহ একটি মেয়ের জীবন একটি ছেলের জীবনের থেকে বেশী নষ্ট করে দিতে পারে ।
দূর্ভাগ্যজনক হলেও একথা সত্যি । মেয়েদের পক্ষে নতুন করে আবার সব কিছু শুরু করা খুব কঠিন । সামাজিক , মানসিক , আর্থিকতার প্রতিবন্ধকতা অজস্র ।
১২) রবিশংকরের কোন গুণটি আপনাকে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট করেছিল ।
আমি বাবা – মা’র সঙ্গে আশ্রমিক পরিবেশে বড়ো হয়েছি । পণ্ডিতজীর প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার মতো কোন কিছুই হয়নি । আমাদের সম্বন্ধ করে বিয়ে হয় তাই তাঁর প্রতি বিয়ের আগে আকর্ষণের কোন প্রশ্নই ওঠেনা ।
১৩) আপনার মতে স্বামীস্ত্রীর সম্পর্কের ভিত্তি কী হওয়া উচিত ।
পারষ্পরিক শ্রদ্ধা , ভালোবাসা , সহমর্মিতা , সততা , আন্তরিকতা , এবং একে অপরের জন্য আত্মবলিদানের মানসিকতা ।
১৪) দুজন সেলিব্রিটির মধ্যে বিয়ে হলে তা অসফল হওয়ার কারণ ।
উপরিউক্ত বিষয়গুলির অনুপস্থিতি ।
১৫) রবিশংকরকে ব্যক্তি হিসাবে এবং শিল্পী হিসাবে আপনি কেমনভাবে মূল্যায়ন করবেন ।
পণ্ডিতজী সঙ্গীত পছন্দ করেন এবং নিজের সাঙ্গীতিক জীবনকে গড়ে তুলতে তিনি অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন । বাবার কাছ থেকে তিনি যা শিখেছেন তা চমৎকারভাবে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছেন । এবং তা করতে গিয়ে তিনি রাগের শুদ্ধতা বজায় রেখেছেন । সঙ্গীতজ্ঞ হিসাবে তিনি যা সম্মান পেয়েছেন তা তাঁর প্রাপ্য ছিল । এই সম্মান তিনি অর্জন করেছেন । কিন্তু তিনি বাজানোর সময় তবলাকে বেশী প্রাধান্য দিয়েছেন , যা আমি মনে করি শ্রোতার রুচিকে বিকৃত করেছে । দর্শকরা এর ফলে সুরের প্রতি আগ্রহ হারিয়েছে , তারা তাল আর গতির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছে । এছাড়া আমাদের মার্গসঙ্গীতের ক্ষেত্রে পণ্ডিতজীর অবদান প্রবাদপ্রতিম । দাদা এবং পণ্ডিতজীর জন্য সারা পৃথিবীতে মানুষ ভারতীয় সঙ্গীতের ঐতিহ্যের ব্যাপারে জানতে পেরেছে । পণ্ডিতজী কে ছোট দেখায় এমন কোন মন্তব্য আমি করব না ।
১৬) আপনি কী মনে করেন একজন শিল্পী ভালো শিল্পী হওয়ার পাশে ভালো মানুষ হবেন ।
সব শিল্পীরাই যদি বাবার মতো হতেন তাহলে খুবই ভালো হত নিশ্চয়ই । কিন্তু সবাই এমন হবেন এমন সম্ভবনার কথা কল্পনা করা শক্ত ।
১৭) সম্প্রতি রবিশংকরের আত্মজীবনী রাগমালা প্রকাশিত হয়েছে । এই বইতে তিনি আপনাদের দাম্পত্যজীবনের, বিশেষত শুভ সম্বন্ধে বেশ কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন । গানবাজনার জগত থেকে আপনার দীর্ঘ অনুপস্থিতি এবং আপনাদের ব্যক্তিগত জীবন সম্বন্ধে আপনার নীরবতার জন্যই কী পণ্ডিতজী এমন অনৃতভাষণে প্রবৃত্ত হলেন বলে আপনার মনে হয় ।
আমার বিবাহিত জীবন সম্বন্ধে যে মিথ্যা অতিশয়োক্তি প্রচারিত হচ্ছে তা সম্বন্ধে আমি অবহিত আছি । বাবা যতদিন বেঁচেছিলেন আমি এ ব্যাপারে নীরব থেকেছি । আমি যা অন্যায় অবিচার সহ্য করেছি তা নিয়ে কোন কথা বলিনি কারণ তাতে বাবা আঘাত পেতেন । কিন্তু আমি এখন মনে করি যে আমার কথাগুলিও , অন্তত শুভ সম্বন্ধে কথাগুলি সবার জানার প্রয়োজন আছে । আমার মনে হয় পণ্ডিতজী মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন বা মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন অথবা মানসিক রোগীর মতো মিথ্যাচার করছেন । ইংরাজীতে একটি প্রবাদ আছে যে বৃদ্ধ মূর্খের চেয়ে বড়ো মূর্খ আর পৃথিবীতে নেই । পণ্ডিতজীর সাম্প্রতিক আচরণ এই কথাটির সত্যতা প্রতিপন্ন করে । এই মিথ্যাচারের পিছনে সময়ের অপব্যয় না করে তিনি যদি শিষ্যদের পিছনে সময় ব্যয় করতেন তা সবার পক্ষে ভালো হত এবং ভারতবর্ষও হয়তো আরও কিছু গুণী শিল্পীকে পেতে পারত ।
যাই হোক সত্য ঘটনা আমি বলছি —
সে বছর পণ্ডিতজী মুম্বইতে এসে শুনলেন যে শুভ খুব ভালো বাজাচ্ছে । পণ্ডিতজী শুভকে ডেকে পাঠালেন এবং শুভ’র বাজনা শোনার পর বললেন যে শুভ’র উচিত তার বাবার কাছে তালিম নেওয়া । পণ্ডিতজীর ঘনিষ্ঠরাও বললেন যে শুভ’র তৈয়ারি শেষ , এবার সে বাইরে বাজাতে পারবে । শুভ আমাকে বলেছিল যে পণ্ডিতজী তাঁকে এও বলেছেন যে তোমার মা আর আমি একই গুরুর শিষ্য , তাই আমিও তোমাকে শেখাতে পারি । আমি শুভকে বলেছিলাম ‘ পণ্ডিতজী ঠিকই বলছেন , কিন্তু উনি তোমাকে শেখানোর সময় দিতে পারবেন না । তুমি আর দেড় বছর আমার কাছে থাকো , তালিম নাও । তারপর তোমার যেখানে ইচ্ছা সেখানে যেও । আমি তোমায় বাধা দেবো না , কারণ তখন তুমি পৃথিবীর মুখোমুখি হওয়ার জন্য তৈরি হয়ে যাবে ।
তখনই পণ্ডিতজী আর শুভ শুভ’র ঘুমের বড়ি খেয়ে আত্মহত্যার নাটকটি করার সিদ্ধান্ত নেয় । অপরিণত্মনস্ক শুভ নিজের বাবার এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গী হয় । পণ্ডিতজীর উদ্দেশ্য ছিল শুভকে আমার কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া । আমার ধারণা নিজের অসময়ে মৃত্যুর আগে শুভ নিজের বাবার এই চক্রান্তটি ধরতে পেরেছিল তাই সে নিজের বাবার সঙ্গে সব যোগাযোগ ছিন্ন করে দেয় ।
শুভ’র আত্মহত্যার চেষ্টা করার খবর পেয়েই আমি ডাক্তার ডাকি এবং ডাক্তার আমায় আশ্বস্ত করেন যে শুভ’র কিছুই হয়নি । আমরা তন্নতন্ন করে খুঁজেও কোন ওষুধের চিহ্নমাত্র পাইনি । শুভ নিজে তার বাবাকে ফোন করে বলেছিল পরিকল্পনা অনুযায়ী তাকে নিয়ে যেতে ।
আমি পণ্ডিতজীকে বলেছিলাম যে ‘ তুমি আমার জীবন নষ্ট করেছো , এখন নিজের ছেলের জীবন নষ্ট করছো কেন !” পণ্ডিতজীবলেছিলেন ‘ সব কিছুর জন্য তুমি দায়ী ‘। আমি আজও তাঁর এই আচরণের কোন ব্যাখ্যা খুঁজে পাইনি । তখন সবাই বলছিলেন যে শুভ চমৎকার বাজাচ্ছে এবং এভাবে বাজালে সে নিজের বাবার চেয়েও ভালো বাজাতে পারবে । পণ্ডিতজী ভেবেছিলেন আমি বোধহয় এভাবে তাঁর উপর প্রতিশোধ নিচ্ছি । আমি আজও বুঝতে পারিনা কোন মানুষ এমনটা কী করে ভাবতে পারে । আজ শুভ যদি ভালো বাজাত তার কৃতিত্ব বাবারই হত । আমাদের বাজনা তাঁরই দান ।
আমি জানি পণ্ডিতজী নিজের ভাবমূর্তির ব্যাপারে খুবই সচেতন । যখনই তিনি দেখেছেন যে সত্যিটা প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে তিনি আমার , শুভ’র সম্বন্ধে মিথ্যা রটনা করতে শুরু করেছেন । শুভ এইজন্যই শেষের দিকে বাবার সঙ্গে আর যোগাযোগ রাখেনি । শুভ খুব বড়ো শিল্পী হতে পারত , কিন্তু এইসব কারণে হতে পারলো না ।
১৮ ) আপনার জীবনে রুশী কুমার পাণ্ড্য’র আবির্ভাব সম্বন্ধে কিছু বলুন ।
আমি বিশ্বাস করি আমার জীবনে যা কিছু হয়েছে সবই ঈশ্বরের অভিপ্রায় । ঈশ্বর মানুষের কর্মফল অনুযায়ী মানুষের জীবনে কাউকে পাঠান । কিন্তু যখনই আমরা আকস্মিক বা অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটতে দেখি তখনই তাকে ঈশ্বরপ্রদত্ত বলে মনে করি । আমার প্রথম বিবাহের তিক্ত অভিজ্ঞতার পর আমার পুনর্বিবাহ করার কোন সম্ভবনা ছিল না । কিন্তু তা সত্ত্বেও আমার পুনর্বিবাহ হল । প্রফেসর পাণ্ড্য যখন আমার জীবনে আসেন তখন আমি শারীরিক এবং মানসিক দিক দিয়ে একবারে বিধ্বস্ত । আমি যে আজ বেঁচে আছি এবং তোমাদের সঙ্গে আছি , প্রফেসর পাণ্ড্য না থাকলে তা সম্ভব হত না ।
১৯) আপনি যে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন তারপর আপনি বিশ্বাস করেন যে একজন নারীর সংসারের জন্য নিজের ক্যারিয়ার বিসর্জন দেওয়া উচিত ।
আমি কোনদিনই বিশ্বাস করিনি যে একজন নারী সংসার আর সফল কর্মজীবন দুটির প্রতি সুবিচার করতে পারে । যদি কোন বিবাহিত মহিলা কর্মজীবনে সফল হতে চান তাহলে স্বামীর সমর্থন আর ব্যক্তিত্বের সংঘাত না হওয়া জরুরী । কিন্তু মেয়েরা কখনও কখনও সংসারের প্রতি দায়িত্বকে কর্মস্থলে অসফলতার এবং বাইরে কাজ করাকে সাংসারিক দায়িত্বপালনের ত্রুটির অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করে ।
২০) সংগীতচর্চা ছাড়া আর কোন বিষয়ে আপনি শান্তি পান ।
হ্যাঁ, ধ্যান করলে পাই ।
২১) ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে আপনি কিভাবে পরিচিত হতে চান ।
আমি মনে করিনা যে আমার মধ্যে এমন কিছু আছে যার জন্য কেউ আমাকে মনে রাখবে ।
( তথ্যসূত্র -)
১) অন্নপূর্ণাদেবী —- দ্য আনটোল্ড স্টোরি অফ আ রিক্লুসিভ জিনিয়াস — অতুল মার্চেন্ট ( জটায়ু )
২) অ্যান আনহার্ড মেলডি , অ্যান আনহার্ড বায়োগ্রাফি — স্বপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
৩) রাগ অনুরাগ — রবিশংকর
৪) রাগমালা —– রবিশংকর
৫) আলাউদ্দিন খাঁ — যতীন ভট্টাচার্য
৬) কমলা —- স্বপনকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ( দেশ ১৯৯৮ )
৭) অন্নপূর্ণা —- রবিশংকর —- অমিতাভ গুপ্ত , যুগান্তর , ১৯৮১
৮) সমর্থবালি —- অন্নপূর্ণা দেবী দ্য উওম্যান শ্রাউডেড ইন মিস্ট্রি সোসাইটি , জানুয়ারি ১৯৮৮
(ছবি – বাবা আলাউদ্দিন খাঁয়ের সঙ্গে অন্নপূর্ণা দেবী)
(সমাপ্ত)
অনিন্দ্য গৌতম পেশায় পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসনিক কৃত্যকের একজন আধিকারিক। বর্তমানে পুরুলিয়া জেলায় উপশাসক এবং উপসমাহর্তা পদে কর্মরত। মূলত অন্তর্জালে লেখালেখি করেন।
Comment here