আমার এই লেখার আরম্ভ ও শেষ কোথায় করব না জেনেই আরম্ভ করলাম।
সুকুমার রায় অনেকদিন আগে একটা ছড়া/পদ্য লেখেন –
“ খেলার ছলে ষষ্ঠীচরণ হাতি লোফেন যখন তখন,
দেহের ওজন উনিশটি মণ,শক্ত যেন লোহার গঠন ।
একদিন এক গুণ্ডা তাকে বাঁশ বাগিয়ে মার্ল বেগে—
ভাঙল সে–বাঁশ শোলার মতো মট্ ক’রে তার কনুই লেগে”
যখন এটা তিনি লিখেছিলেন তখন বাংলায় স্বাস্থ্যচর্চার দাপট শুরু হয়ে গেছে। আনন্দমঠ পড়ে ছেলেপুলেরা উদ্বুদ্ধ। বিখ্যাত ব্যাঘ্রবিজয়ী শ্যামাকান্ত বন্দোপাধ্যায়ের বাঘের খাচায় ঢুকে খালি হাতে বাঘের সাথে লড়াই দেখে ছেলেরা উদ্বুদ্ধ। পরে যদিও ইনি সন্ন্যাসী হয়ে সোহং স্বামী নাম গ্রহন করেন।তারও শারিরিক বল ছিল দুর্দান্ত।ওনার দুটো পোষা বাঘ ছিল।দেওয়ালে ঘুষি মারলে ইট বালি ঝুরঝুর করে ঝরত। তা দেখে সবাই অবাক।একি মানুষের ব্যাটা? বাঘের সাথে লড়াই কি তাজ্জব।এতো গ্ল্যাডিয়েটর রা দেখাত!!!এছাড়াও লাঠি ছোরা খেলা ইত্যাদি তে গ্রামে গ্রামে ছেলে রা সংগঠিত হচ্ছে ইংরেজদের বিরুদ্ধে।বাংলায় লাঠিখেলা ছিল বিখ্যাত।রঘু ডাকাত থেকে বিশে ডাকাত সবাই ছিল বিখ্যাত লাঠিয়াল।কিন্তু শিক্ষিত সমাজ এ স্বাস্থ্য চর্চা তখনো আসেনি।কিন্তু মারের বদলে পালটা মার এ জিনিস যবে থেকে মানুষ বুঝল শিক্ষিত সমাজেও ছড়িয়ে পড়ল কুস্তি ব্যায়াম,লাঠি খেলা ছুরি খেলা। কলকাতায় ছিল অম্বিকাচরণ গুহের আখড়া (আদতে যা অম্বুবাবুর(১৮৪৩ – ১৯০০ খ্রী) র আখড়া নামে পরিচিত ছিল, যিনি বাংলায় “আখড়া” সংস্কৃতির প্রসারে পথপ্রবর্তক।অম্বিকাচরণ এক কুস্তিগীর পরিবারের সন্তান ছিলেন। তার পিতামহ , শিবচরণ গুহ বাংলায় বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়া বা খেলাধুলার পৃষ্ঠপোষকতা এবং জনপ্রিয়করণে অবদান রেখেছেন। অম্বিকাচরণ ১৮৪৩ সালে কলকাতার হোগলকুড়িয়ায় জন্মগ্রহণ করেন, যা বর্তমানে হাতিবাগানের কাছে মসজিদবাড়ি স্ট্রিট এলাকা। তার পিতার নাম ছিল অভয়চরণ গুহ।
অম্বিকাচরণ আট অথবা নয় বছর বয়সে গুরুতরভাবে আহত হন। ফলে চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে নিজ বাড়িতেই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হয়। তিনি নিয়মিত শরীরচর্চা শুরু করেন এবং বাড়িতেই তিনি ঘোড়সওয়ারের দীক্ষা পান। তিনি মথুরার কালিচরণ চৌবের কাছে কুস্তির প্রশিক্ষণ নেন সেই আখড়ার মাটি মাখেননি এমন পালোয়ান সেকালে ছিল না। বহু অর্থ তিনি অকাতরে দান করেছিলেন কুস্তির প্রসারে।যার জন্য ওনার নামই ছিল রাজা বাবু। সিমলাপাড়ার স্বামীজী (বা নরেন দত্ত) ও বন্ধু রাখাল (স্বামী ব্রহ্মানন্দ) কুস্তি করতো অম্বুবাবুর আখড়ায়। রবীন্দ্রনাথ নিজেও তাঁর ‘জীবনস্মৃতি’ – তে লিখেছেন, ‘ভোরে অন্ধকার থাকতে উঠিয়া, লেংটি পড়িয়া কানা পালোয়ানের সহিত কুস্তি করিতে হইত।’ কুস্তিতে কম যেতেন না বিদ্যাসাগর মশাইও। সংস্কৃত কলেজে রীতিমতো আখড়া খুলেছিলেন তিনি। তবেই না বিধবাদের রক্ষা করতে তাদের পাশে দাঁড়াতে পেরেছিলেন।
তো যাইহোক, মোটামুটিভাবে যা জানা যায়, অম্বিকাচরণ গুহ তৎকালীন সমাজে কুস্তির প্রসারে লক্ষ লক্ষ টাকা ঢালেন/ব্যয় করেন। সেকালে সারা ভারত থেকে এমন কোন পালোয়ান ছিল না যারা মূলত অম্বুবাবুর ব্যবসায় আসেননি। গামা, কাল্লু, বাহমণি, ভীম ভবানী, শ্যামাকান্ত, পরেশনাথ, জিতেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি (captain) নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারী,বাঘাযতীন ঋষি ঘোষ, প্রকাশ ঘোষ, বনমালী ঘোষ, গোসাই কলু, মোংলা কলু, ফনীন্দ্র গুপ্ত কত নাম এমন কী ভাবীকালের ব্যায়ামবীর বা মূলত নীলমণি দাস, মনোহর আইচ সবাই এসেছেন আখড়ার মাটি মাখতে। ওনার নাতি গোবর গুহ তো কুস্তিতে বাংলার নাম পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন।সরলাদেবী চৌধুরানী বীরাস্টমী ব্রত বা প্রতাপাদিত্য অনুষ্ঠান চালু করলে ছেলেদের মধ্যে হুহু করে শক্তিচর্চার প্রসার ঘটে।এখানে ছোরা লাঠি তরোয়াল খেলা হত।হত বক্সিং,শক্তির খেলা।Albert হলে ( কফিহাউস হয়নি তখনো) এই ব্রত উদযাপন হওয়ার কথা ছিল একবার।মালিক ভয়ে বন্ধ করে দেন গেটের দরজা।একি দস্যিপনারে বাবা।তরোয়াল নিয়ে ছুরি নিয়ে।ইংরেজ পুলিশ ও ভয়ে আছে।
কুস্তি তখন চর্চা করলেও মূলত দেহগঠন এই ধারণাটি আসেনি। Bodybuilding এই ধারণাটি আসে বিদেশে Sandow -এর হাত ধরে (স্বামী বিবেকানন্দের ধর্ম মহাসভায় তারও একটি শো ছিল। ব্যায়ামপ্রেমী, ক্রীড়াপ্রেমী বিবেকানন্দের তার সাথে দেখা করা আশ্চর্যের নয়) ভারতে তখন মুগুর ও ডন বৈঠক, গদা ঘোরানো ইত্যাদি ব্যায়াম চলতো। যার উদ্দেশ্য কেবল শক্তিলাভ,দেহের ক্ষিপ্রতা বাড়ানো কিন্তু তাতে দেহের মধ্যে এপোলোর ভাস্কর্যের মতো পেশীর সামঞ্জস্য বা সৌন্দর্য থাকতো না। যারা তা করতো তা ওই Sandow র আবিষ্কৃত Spring Dumbbell,. Chest Expander ও তার বই পড়ে। এগুলো বিদেশ থেকে আনানো ছিল খরচ সাপেক্ষ। তাই ব্যায়াম জিনিসটা সেভাবে ছড়িয়ে পড়েনি। মূলত তখন সার্কাসি ঢঙে নানা কসরৎ দেখানো হতো। দেখতে দক্ষিণের কোডি রামমূর্তি নাইডু। পরে তাকে ছাপিয়ে যায় আমাদের ভীম ভবানী। ব্যায়াচর্চায় প্রথম এগিয়ে আসেন রাজেন্দ্র গুহ ঠাকুরতা। তিনি বুকে রোলার তোলা থেকে অন্যান্য নানা শক্তির ক্রীড়া দেখতে পারতেন। কলকাতা ল’ কলেজ ও সিটি কলেজের ব্যায়াম ইন্সট্রাক্টর হওয়ার সুবাদে বহু ছাত্রের মধ্যে ব্যায়াম জিনিসটা ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষত, পেশী প্রদর্শনের প্রচলন শুরু হয়। ঘটনাক্রমে মায়ানমারের এক ছাত্র চিট টুন্ (Chit Tun) কলকাতা মেডিকেল কলেজে ডাক্তারী পড়তে এলে তার পেশী সৌন্দর্য ও মাসল ডান্স সবাইকে আকৃষ্ট করে। [মুষ্টিযুদ্ধ ও ভারোত্তোলনের পাশাপাশি মানুষ এবার দেহগঠনকারী ব্যায়ামের দিকে আকৃষ্ট হয়। সমগ্র ভারতবর্ষে এই মুষ্টিযুদ্ধ ও ভারোত্তোলনের প্রচলনের অগ্রণী ছিল বাঙ্গালী। পি. এল. রায় মুষ্টিযুদ্ধের প্রবর্তন করেন বাংলায় ও বাগবাজার ব্যায়াম সমিতিতে ভারোত্তোলন আরম্ভ হয়] যদিও ওয়াল্টার চিট টুনের আবির্ভাবই ব্যায়ামের বীররসে অভিষিক্ত বাঙ্গালীকে নতুন ধারার দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করায়।
ঁ শ্রী বিষ্ণুচরণ ঘোষ, ঁ শ্রী কেশবচন্দ্র সেনগুপ্ত, ঁডাঃ ভুপেশ কর্মকার, ঁ শ্রী সত্যপদ ভট্টাচার্য, ঁ আয়রনম্যান নীরদ সরকার, সকলেই ছিলেন এনার ছাত্র। পরবর্তীকালে, সবাই ব্যায়াম জগতের দিক্পালরূপে পরিচিত হন। অন্যদিকে মেজর পি.কে.গুপ্ত (Doctor/MS) ছিলেন বড়ো পালোয়ান, আর তাঁর ছাত্র ছিলেন শ্রী নীলমণি দাস (লৌহমানব)।
কিছুকাল পরে, ব্যায়ামবীরগণের অনুপ্রেরণায় গ্রামে গঞ্জে একের পর এক আখড়া খুলতে শুরু করে।এছাড়া ক্যাপ্টেন জিতেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি? তার নাম বাদ দি কিকরে? রাস্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়ের ভাই, এবং উকিল হয়েও ব্যায়ামচর্চা করেছেন।৭০ বছর বয়সেও কিরকম শরীর তা ছবিতে দেখুন।এছাড়া উনি কিছুকাল লন্ডনে থাকাকালীন রানী ভিক্টোরিয়ার দেহরক্ষী ছিলেন।
স্বাধীনতা আন্দোলনের ধারায় সবাই দশের কাজে যুক্ত হন। (দ্রষ্টব্যঃ নীরদ সরকার/শ্রী নীলমণি দাশ/মনোহর আইচ,বসন্তকুমার বন্দোপাধ্যায়)। অবশ্য, বিভিন্ন ধরণের দেহীরা ব্যায়ামে নিজেদের সম্পূর্ণরূপে আত্মনিবেদন করলেও, সুদেহীদের জন্য কোন প্রতিযোগিতা হতো না। এই সময়ই শ্রী রাজেন্দ্র গুহঠাকুরতা তাঁর ছাত্রদের নিয়ে গ্রামে গঞ্জে প্রতিযোগিতা/প্রদর্শনী করতে শুরু করলেন।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, হাটখোলা ব্যায়াম সমিতিই সর্বপ্রথম এই প্রকারের প্রতিযোগিতা/প্রদর্শনী আয়োজন করতে শুরু করে। পরে, মেজর পি.কে.গুপ্ত, ক্যাপ্টেন জিতেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রী রাজেন্দ্র গুহঠাকুরতা মিলে All Bengal Physical Culture পত্তন করেন।
কিন্তু সবার তো আর গুরু নেই। তাই সঠিক দিশার জন্য proper training schedule চাই, বইপত্র চাই। ওয়াল্টার চিট টুনের ইংরেজিতে লেখা ‘Barbell Exercise’ বড়ো দুর্বোধ্য। তাই বিষ্টু ঘোষ ও কেশবচন্দ্র সেনগুপ্ত লিখলেন একটি নতুন বই, ‘Muscle Control & Barbell Exercise”; তৎসহ প্রকাশিত হয় শ্রী রাধেশ্যাম সাহার “বারবেলে ব্যায়াম’ (যা এখন দুষ্প্রাপ্য)। কিন্তু এই দুটি বই ব্যাপক সাড়া ফেলতে ব্যর্থ হয়।
এই জন্য, শেষ পর্যন্ত, হাল ধরেন যোগব্যায়ামাচার্য শ্রী নীরদ সরকার। সহজ ভাষায় লিখলেন ‘শরীর ও শক্তি’ নামক বেশ কিছু মূল্যবান গ্রন্থ তাঁর ছাত্রদের ও ব্যায়াম অভ্যাসকারীদের জন্য। সহজতর ভাষায় ‘ব্যায়াম ও স্বাস্থ্য’ লিখে ব্যাপক সাড়া ফেলে দেন লৌহমানব শ্রী নীলমণি দাস মহাশয়। প্রকাশ করতে শুরু করেন ব্যায়ামের চার্টও, যা হুহু করে ছড়িয়ে পরে শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে। এবং তার প্রভাব অমলিন আজও। বাঙ্গালীদের ঘরে ঘরে স্থান পেতে শুরু করে ‘ব্যায়াম ও স্বাস্থ্য’। শুরু পুরুষ নয়, বাংলার নারীদের মধ্যেও যোগব্যায়ামকে বিশেষ জনপ্রিয় করে তোলেন নীলমণিবাবু। যোগব্যায়াম থেকে ডাম্বেল, বারবেল প্রত্যেক বিভাগেই ছিল তাঁর অপরিসীম জ্ঞান। তাঁর তাঁর বইপত্র আজকের যুগেও হটকেক।এই লেখক অধমের ব্যায়াম শেখাও ওই দুজনের বই পড়ে।
কলকাতার গড়পাড়ে শ্রী বিষ্ণুচরণ ঘোষ সূচনা করেন তাঁর ‘Ghosh’s Yoga College’; কত অসাধারণ, আন্তর্জাতিক মানের ব্যায়ামবীর এই কলেজ থেকে বেরিয়ে এসেছেন জগৎসংসার মাঝে তার ইয়ত্তা নেই। মনোতোষ রায়, কমল ভান্ডারী, হীতেন রায়, তাপস ভট্টাচার্য, রেবা রক্ষিত (প্রথম ছাত্রী যিনি বুকে হাতি তুলেছিলেন) এবং এইজন্যই বিষ্টু ঘোষকে Father of Indian Bodybuilding বলা হয়।
পরবর্তীকালে, ১৯৫১ সালে শ্রী মনোতোষ রায় বিশ্বশ্রী হন। শ্রী মনোহর আইচ সেই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করলেও কাঙ্খিত সাফল্য লাভ করতে পারেননি। তিনি এক বছর লণ্ডন শহরে অতিবাহিত করেন, অসামান্য পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের ফলে অবশেষে বিশ্বশ্রী হন। মনোহর আইচ কয়েকবছর আগেই শতায়ু পার করে মারা গেলেন।ওনার লাস্ট শো ছিল ৯০ বছর বয়সকালে।
অন্যদিকে শ্রী মনোতোষ রায়ের তত্ত্বাবধানে সৃষ্ট হয় IBBF নামক প্রতিষ্ঠানটি। এই প্রসঙ্গে অবশ্যই উলেখ করতে হবে শ্রী কমল ভান্ডারীকে। শ্রী কমল ভান্ডারী ছিলেন ৭ বারের ভারতশ্রী, পেশাগত জীবনে ছিলেন কলকাতা পুলিশের পাইলট। তাঁর ব্যায়ামপ্রিয়তার জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ডঃ বিধান চন্দ্র রায় পুলিশের মধ্যে শরীরচর্চার নানা ব্যবস্থা করেছিলেন। YMCA -এর জিমন্যাসিয়ামে তাঁর নেতৃত্বে বহু ব্যায়ামবীর গড়ে উঠেছিলেন। বিশ্বশ্রী শ্রী মনোহর আইচের সর্বজনপ্রয়িতা সবাই জানে।
৭০র দশকের শেষার্ধে শ্রী সত্যজিৎ রায় দ্বারা পরিচালিত ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ ছায়াছবিতে বিশ্বশ্রী গুণময় বাগচীর চরিত্রে অভিনয় করে মনোতোষ-পুত্র মলয় রায়। যুবসমাজের মধ্যে দেহচর্চার কি প্রকারের সাড়া ফেলেছিলেন তা বলাই বাহুল্য। শ্রী তুষার শীল (ভারতশ্রী) নিয়মিতভাবে ‘শুকতারা’ পত্রিকায় লিখেছেন লিখেছেন ব্যায়াম ও শরীরচর্চার নানা আঙ্গিকের উপরে, বিশেষত যোগের উপরে। তিনি এখনো ব্যায়ামচর্চার প্রসারে অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে নিয়োজিত আছেন। এছাড়া, শ্রী স্বপন দাস তাঁর পিতা শ্রী নীলমণি দাস দ্বারা সৃষ্ট যোগ প্রতিষ্ঠান চালিয়ে যাচ্ছেন কৃতিত্বের সাথে। হাওড়ায় শ্রী নীরদ সরকারের আখড়া চলে তাঁর পুত্র শ্রী পুরন্দর সরকারের তত্বাবধানে। এছাড়াও ভারতশ্রী দামোদর চট্টোপাধ্যায়,দুর্গাদাস চ্যাটার্জী,অঞ্জন মিশ্র,দেবদত্ত বিশ্বাস এখনো নানা জিমে ট্রেনিং দিয়ে যাচ্ছেন।বা যোগা করে দিচ্ছেন সুস্থতার খোঁজ।
আমার নিজের মাস্টারমশাই শ্রী প্রদীপ দেবনাথ যে কত সুযোগ্য ছাত্র তৈরী করেছেন তার ইয়ত্তা নেই। তবে এইসব মানুষ চান প্রচারের আড়ালে থাকতে। ঝাঁ চকচকে মাল্টিজিম, স্মার্টফোনের হাতছানি থেকে এঁরা সম্পূর্ণ বহির্ভূত। তাঁরা জানেন না স্টেরয়েড, প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট কি। আমি যখন জিমে এখনো যাই দেখি আমার দাদা ( কুশল খাড়া- Mr Bengal) কিভাবে চাকরী করেও পরিশ্রম করছে শরীর টা ভালোবেসে।রোদ ঝড়ে কামাই নেই একদিন। এনারা শুধু জানেন কিভাবে ঘন্টার পর পরিশ্রম করে, ডিসিপ্লিন নিয়ে শরীরকে লোহার মতো গড়ে তুলতে হয়। সুদেহীর সংখ্যা আজকের জগতে প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত অল্প। কিন্তু মূল সমস্যা হল, ব্যায়ামের আকর্ষণ আর নেই মানুষের কাছে অতটা। কারণ তারা মনের অসুখে কাবু, অবসাদে ভোগা দুর্বল চিত্ত।শরীর ও মন যে দুটো একসাথেই জড়িয়ে।মন ছাড়া শরীর হয়না।আবার শরীর সুগঠিত না হলে বাঘ হওয়া যায়না।বাঘের যেমন নিজের লক্ষ্যে স্থির থাকে তেমন থাকে তার বিক্রম।
ব্যায়ামের মূল মন্ত্র হল নৈতিকতা, সততা। ক’জন মানে এইসব কথা? সুন্দর মন, মানসিক সংযম, সদাচার, নিষ্ঠা, সততা নেই বলেই হয়তো আজ ব্যায়াম, শরীরচর্চার সংজ্ঞা পাল্টে গেছে। ব্যায়াম বা যোগ মানে পালোয়ান হওয়া নয়। বরং পূর্ণাঙ্গ মানুষ হওয়া যা তখনকার সব আখড়াতে শেখানো হতো।যোগ মানে ভালোর সাথে ভালোর যোগ।মানুষের মনের সাথে সৌরভের যোগ। মনুষ্যত্ববোধ হল যার প্রথম পাঠ।
পরিশেষে, যারা বলে ব্যায়াম করলে বৌদ্ধিক চর্চার ব্যাঘাত ঘটে তাদের জন্য ছোট্ট Story..
ভাষাচার্য শ্রী সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের হিন্দুস্থান পার্কের বাড়ি সুধর্মায় এসছে এক ছাত্র।কি না তার পড়াশোনার সাহায্য চাই।ভাষাচার্যই তাকে ডেকেছিলেন। শুনে বললেন হ্যাঁ নিশ্চই হবে।কিন্তু তুমি তো বড্ড রোগা হেঃ আমি তো এই বয়সেও রোজ ডন বৈঠক দি রোজ সকালে।খালি হাতে ব্যায়াম করি।অত বই এর ভার তুমি নেবে কিকরে হে? অতবড় মানুষ।যিনি নিজেই সাহিত্যের অথরিটি তিনিও কিন্তু শরীর টাকে সচল থাকার দিকে খেয়াল দিতেন।
৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷ ।সত্যম শিবম সুন্দরম।৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷৷।।।।
তথ্য ঋন: –
প্রবাসী পত্রিকা,শিশুশাথী,শুকতারার নানা সংখ্যা।ব্যায়ামচর্চা পত্রিকা।
“শতবর্ষে ব্যায়ামবীর তাপস ভট্টাচার্য”
An Autobiography of a Yogi
ব্যায়ামে বাঙ্গালী – শ্রী অনিলচন্দ্র ঘোষ…..
প্রথম আলো -সুঃগ, কলকাতা দর্পণ -রাধারমণ মিত্র
The Telegraph India
ছবিঃ- লেখকের সংগ্রহ
হাওড়ার নরসিংহ দত্ত কলেজে ইংরেজী সাহিত্যে স্নাতক পাঠরত।
অবসরে বইপড়া,হাওয়াইন গীটার ও তবলা বাজানো, ও অবশ্যই আখড়ায় ব্যায়াম।
Comment here