(পূর্বের অংশের পর)
– শ্রী সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
০৩/০৭/২০১৫
নর্মাল ওয়েদার..সিমলার বাস স্ট্যাণ্ডে পৌঁছতেই পিও যাবার বাস পেয়ে গেলাম ঈশ্বরের কৃপায়। সামনের দুটো সিটও পেলাম। ৭টায় বাস ছেড়েছে..১০.৩০ এ জাবালিতে খাবার খেলাম। ভেজ থালি ৬০টাকা। ১১টায় বাস ছাড়ল.. আমাদের গন্তব্য বুয়ারি..পিও র আগে। যেখানে শতদ্রু নদী পার হতে হয় কাঠের সেতুর ওপর দিয়ে। আকাশ এখন পরিস্কার। কৃষ্ণা দ্বিতীয়ার চাঁদের জ্যোৎস্নায় জঙ্গলে ঢাকা পাহাড়ী পথ মোহময়ী মায়াবী রুপ নিয়েছে যা ভাষায় বোঝানো যাবেনা শুধু অনুভবের বিষয়। শতদ্রু নদী পাশ দিয়ে বইছে। নদী সমতলে বাস চলছে প্রায় ৪০-৪৫কিমি/ঘঃ স্পীডে। অন্ধকার রাতে চাঁদের আলোর বুক চিরে আমাদের বাস চলেছে রামপুরের দিকে। রামপুর হল বীরভদ্র বর্তমানে হিমাচলের মূখ্যমন্ত্রীর জায়গা, ওর বাবা ছিলেন রাজা আর বীরভদ্রও রাজা হয়েছিল। এখানে শতদ্রুর উপর বাঁধ দিয়ে ৪১২ মেগাওয়াট এর একটা জলবিদ্যুৎ প্রজেক্ট হচ্ছে।
সারারাত বাস জার্নি করে ভোর ৫টা নাগাদ রেকং পিও তে এসে পোঁছলাম। এখান থেকে পুহারি যাব যেখানে ঝুলা পুল এ থাংলিন গ্রামে পৌঁছাবো। পুহারিতে বাস নামিয়ে দিল। ঝুলা পুলের সিস্টেম দেখে আমরা হতবাক। শতদ্রু নদীর এপার থেকে একটা লোহার রোপ তাতে একটা দোলনা রোলারের সাথে আটকানো। দুদিকে লোহার আংটায় দড়ি যা টেনে টেনে এপার থেকে ওপারে যেতে হবে। এটা তো পরে বুঝলাম। তার আগে হতভম্ব হয়ে আধঘন্টা দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম কি করবো? এর মধ্যে সিধু জলের বোতলটাকে নিয়ে গিয়ে হাল্কা হয়ে এল। অনেক্ষন পরে ওপার থেকে একটা লোক এল.. আমরা সিস্টেমটা দেখলাম এর মধ্যে সিধু জলের বোতলটাকে নিয়ে গিয়ে হাল্কা হয়ে এল। অনেকক্ষন পরে ওপার থেকে একটা লোক এল.. আমরা সিস্টেমটা দেখলাম। সিধু ভয় পাচ্ছিলো। ওকে সাহস জোগালাম। ও অনেক কষ্টে ওপারে পৌঁছালো, দোলাটাকে টেনে এনে আমিও চড়লাম। মাঝখানে প্রায় ৫০০মিটার চওড়া শতদ্রু, তার উপর একটা রোপের দোলনায় আমি দড়ি টেনে টেনে ওপারে যাচ্ছি। অনেক কষ্টে ওপারে পৌঁছে বুঝলাম আমার ডানা দুটোর (হাত দুটোর কথা বলছি) আর অস্তিত্ব নেই। পুরো অবশ আর বাইসেপ দুটো বিষ ব্যথা। ২৫ মিনিট প্রায় শ্বাস স্বাভাবিক হতে সময় লাগলো। আবার পিঠে স্যাক নিয়ে চলা চায়ের দোকানের সন্ধানে। সামান্য এগিয়ে দোকান পেলাম..একজন নেপালি তামাং ভদ্রমহিলা চালাচ্ছেন।
আলাপ হওয়ার পর উনি চা দিলেন। হাল্কা হওয়ার জন্য এক বোতল জলও দিলেন। নদীর ধারে ওপেন জেনারেল লাইসেন্সের সন্ধানও দিয়ে বললেন-এখানে প্রাকৃতিক কর্ম প্রকৃতির বুকে করাই দস্তুর।অগত্যা….. আসলেথাংলিংএ কোনো হোটেল নেই। অন্যান্য তীর্থস্থানের মত এখানকার মানুষের কোনো আন্তরিকতা বা উৎসাহ কোনোটাই নেই। শতদ্রুর বুকে এত জলবিদ্যুৎ প্রকল্প চলছে যে মানুষরা সেই কাজ করেই ফুরসত পায়না তো শিবজির সেবা!!
যাইহোক, মুখ হাত ধুয়ে ফ্রেশ হওয়ার পর আবার এক প্রস্থ চা। দোকানের মহিলার কথা শুনে বুঝলাম উনি নেপালের তামাং জাতির মহিলা..পুরোনো ভাষা মনে পড়ে গেল..”দিজু” অর্থাৎ দিদি বলে ডাক দিয়ে শুরু করলাম নেপালি ভাষায় কথোপকথন। আর তারপরেই আমাদের সম্পর্কটা হ’ল “আফনু মাঞ্চে জাস্তো” মানে আপন মানুষের মত। দিদিকে বললাম আমাদের প্লেন পরোটা আর আলুর তরকারী বানিয়ে দিতে। খাবার পেয়ে, খেয়ে যে আন্তরিকতার ছোঁয়া পেলাম তা অনুভুতির ব্যাপার, লেখায় প্রকাশ করতে পারবোনা।এক কাপ চা তারপর আমার রোল your own..Princehenry সস্তায় সুস্বাদু ধুম্রপান করে একটা অযাচিত প্রাপ্ত ঘরে অবস্থান ও বিশ্রামের অবসরে হোয়াটসঅ্যাপে আপডেটিং! দুপুরে একটু বিশ্রাম নিয়ে থাংলিংনদীতে স্নান করে এলাম।নদীর উৎস নাকি কিন্নর গ্লেসিয়ারের বরফগলা জল।মারাত্মক ঠাণ্ডা আর খরস্রোতা। একটা মগ নিয়ে গেছিলাম,স্রোতে হাত ফসকে মগটা ভেসে গেল।যাইহোক স্নান করে দেহের ক্লান্তি আর ব্যথা নিমেষে হারিয়ে গেল। এসে গরম ভাত,মুসুরির ডাল আর বাঁধাকপির তরকারী দিয়ে খাওয়াটাও তৃপ্তি দিল।এখন একটা ছোট করে ভাতঘুম দেওয়ার ইচ্ছে। এই সিদ্ধার্থ ওরফে সিধু যার সাথে আমার এই যাত্রা, গত বছর পঞ্চকেদার যাত্রাতে ও আমার সাথে ছিল।আমাদের গাইড কাম পোর্টার ঠিক হ’ল নাম ছবিলাল অধিকারী, নেপালী ছেলে। জুমলায় বাড়ী, এখানে ২০০৯ থেকে আছে, ভাল ছেলে। ও ১৮বার এক একটা সেশনে যায়।
(ক্রমশঃ)
(লেখক পরিচিতি – বিশিষ্ট জ্যোতিষী; একাগ্র পান্থ)
Comment here