(নবম পর্বের পর)
লেখকেরা কোথায় না আড্ডা জমান? যেখানেই তাঁদের মন চায় সেখানেই তাঁরা জমে যান আড্ডা দিতে। সময়টা নয়ের দশকের মাঝামাঝি।শিশির মঞ্চে চলছিলো কবি সম্মেলন।বাংলা ভাষার অনেক প্রবীণ ও নবীন কবি উপস্থিত ছিলেন সেই আড্ডায়। শিশির মঞ্চের বাইরে চলছে গল্পগুজব। প্রবীণ কবি শ্রী অরুণ মিত্র বেশ খোশগল্পে মেতেছেন। হঠাৎ এক নবীনতম কবি শ্রী মিত্রর সামনে বললেন,
– অরুণদা আপনি কিন্তু এখন খুব ভালো লিখছেন।
শ্রী অরুণ মিত্র সেই ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলেন – বল কি? তোমার চাইতেও ভালো?
তারপর শ্রী অরুণ মিত্রর সেই একমুখ হাসি।কলকাতা বইমেলার সময় দেখতাম নবীন সাহিত্যিকদের সঙ্গে কোনো লিটল ম্যাগাজিনের স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে আলাপসালাপ করছেন।কখনো কোনো অনুজ কথাকারের হাত ধরে একের পর এক প্যাভিলিয়নে ঢুকছেন।
বইমেলার প্রসঙ্গ যখন এসেই গেলো তখন বইমেলার সময় সাহিত্যিকদের নানারকম আড্ডার কথা উল্লেখ করতেই হয়। একবছর বইমেলায় ন্যাশনাল বুক ট্রাস্টের প্যাভিলিয়নে শিশুদের বইএর জগৎ নিয়ে এক আড্ডা বসেছে।ছোটোদের ভীড়ে ঠাসা সেই আড্ডায় জমিয়ে বসেছিলেন শ্রী,শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, শ্রী মতি নন্দী, শ্রী তারাপদ রায়, শ্রীমতী নবনীতা দেবসেন, শ্রী বুদ্ধদেব গুহ,প্রমুখ। বড়োরাও আছেন সেখানে। হঠাৎ বড়োদের লেখক শ্রী সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় কান মুলতে মুলতে প্রবেশ করলেন।ছোটোদের এই আসরে তিনি অনাহুত হয়েই এসেছেন তিনি।ছোটোদের গল্পের দাদু হয়ে উঠতে খুব বেশি সময় লাগলো না তাঁর। বইমেলায় সেই আড্ডার স্মৃতি ভুলবো না কোনোদিনই।
বইমেলায় এক অন্যতম আকর্ষণ হলো লেখক পাঠক মুখোমুখি অনুষ্ঠান। বাংলার প্রথিতযশা সাহিত্যিকরা বসেন অডিটোরিয়ামের মঞ্চের ওপর। মঞ্চের সামনে বসে থাকা অসংখ্য পাঠকপাঠিকা তাঁদের প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেন। ধৈর্য ধরে তাঁরা সেসব প্রশ্নের উত্তর দেন। কোনো কোনো সাহিত্যিককে দেখেছি পাঠক পাঠিকার উৎসাহ দেখে তাদের সঙ্গে আড্ডা দিতে। কোনো কোনো প্যাভিলিয়নের সামনে প্রথিতযশা সাহিত্যিকরা আমন্ত্রিত হয়ে আসেন। পাঠকপাঠিকার সঙ্গে পরিচিত হন। তাঁদের সদ্যপ্রকাশিত বইতে স্বাক্ষর দেন। মনে আছে এরকমই একবার দেজ পাবলিশিং এর সামনে পাশাপাশি বসে রয়েছেন শ্রী নারায়ণ সান্যাল, শ্রী নিমাই ভট্টাচার্য এবং শ্রী বুদ্ধদেব গুহ। পাঠক পাঠিকারা ভীড় জমিয়েছেন সেখানে। হঠাৎ একজন শ্রী বুদ্ধদেব গুহকে একটি গান শোনাবার জন্য অনুরোধ করলেন। হাসিহাসি মুখে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম বেস্টসেলার লেখক শ্রী বুদ্ধদেব গুহ ধপ্রলেন নিধুবাবুর টপ্পা,’ নানান দেশের নানান ভাষা বিনা স্বদেশি ভাষা মিটে কি আশা’।একাগ্র হয়ে শুনছেন শ্রী নারায়ণ সান্যাল।গান শেষ হলে দেখলাম শ্রী নিমাই ভট্টাচার্যর চোখে জল। বরেণ্য সাহিত্যিকদের সেই মজলিশ আজও যেন স্বপ্ন মনে হয়।
( ক্রমশঃ)
– পেশাগতভাবে সরকারী কর্মী, সাহিত্য সংস্কৃতি নিয়েই বাঁচেন, লেখলেখির মাধ্যমে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাথে যুক্ত।
[…] পর্বের […]