বুধসন্ধ্যার পঁচিশ বছর উদযাপন হয় দারুণ আড়ম্বরে।মুক্তধারা আবার অভিনয়ের প্রস্তাব ওঠে।তবে এবার শ্রুতিনাটক হিসেবে।সৌমিত্র মিত্রকে দেওয়া হয় পরিচালনার ভার।নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী,বুদ্ধদেব গুহ,পবিত্র সরকার,শরৎকুমার মুখোপাধ্যায় সমরেন্দ্র সেনগুপ্ত,সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়,স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায় অভিনয় করেন। বুধসন্ধ্যার সর্বশেষ মঞ্চায়ন ‘সাজাহান’ নাটক।এই অভিনয়ের স্মৃতিচারণ নবনীতা দেবসেনের কলমে এইভাবে ধরা পড়েছে, ” সুনীলের শরীর ভালো ছিল না, আমাকে বলে দিয়েছিল স্টেজে তার হাতখানা শক্ত করে ধরে রাখতে,মাথা ঘুরতে পারে( আমারও তো পা টলোমলো!) তা হোক, শক্ত করে সুনীলের হাত ধরে স্টেজ ছেড়ে যাওয়ার আগে এইটে ছিল আমার মুখের শেষ উচ্চারণ।সেটা ৬ অক্টোবর।শক্ত করে সুনীলের হাত আমরা আর ধরে রাখতে পারলুম কই?”
খুব মনে পড়ে কলকাতা বইমেলায় বুধসন্ধ্যার উদ্যোগে মুখে মুখে গল্পবলার অনুষ্ঠানের কথা।অডিটোরিয়ামে সাধারণ মানুষের উপচে পড়া ভিড়ে বাংলা সাহিত্যের সর্বসেরা কলমচিদের সে এক মহাসম্মেলন।
উল্লেখ করতেই হবে শ্রীমতী নবনীতা দেবসেনের উদ্যোগে গড়ে ওঠা ‘সই’ এর। এপার বাংলার তাবৎ মহিলা সাহিত্যিকদের এটি একটি মিলন ক্ষেত্র।প্রতিভা বসু ছিলেন সই এর প্রাণপ্রতিমা।অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে কৃষ্ণা বসু,বাণী বসু,সুচিত্রা ভট্টাচার্য, এষা দে, সুতপা সেনগুপ্ত, ক্ণা বসু মিশ্র,অন্যতম। সইরা প্রত্যেক বছর বইমেলার আয়োজন করেন।কলকাতা বইমেলায় সইএর আড্ডা দর্শকদের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। টুকরো রসিকতা, কবিতা পাঠ, নিজেদের মধ্যে খুনসুটি এবং সর্বোপরি জমজমাট আলাপচারিতায় মগ্ন হন সইরা।
সাহিত্যিকরা আজও আড্ডা মারেন।সেসব আড্ডায় সাম্প্রতিক নানা বিষয় উঠে আসে। একজন সাহিত্যিক অপরজনের সাহিত্যসৃষ্টি নিয়ে আলোচনা করেন।উন্মোচিত হয় বাংলাসাহিত্যের নতুন নতুন দিক।দূরদর্শনের বিভিন্ন চ্যানেলে মাঝে মাঝে কলমচিরা মিলিত হন।কোনো একটি বিষয়ে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেন।কলকাতা বেতারে বিভিন্ন আড্ডার আসরে উপস্থিত থাকেন লেখক লেখিকারা। শ্রোতারা দূরভাষে অংশ নিয়ে থাকেন।সময় থাকে ধরাবাঁধা।আড্ডার আসরে থাকে পেশাদারিত্বের ছোঁয়া।লেখক লেখিকাদের জন্য থাকে পারিশ্রমিকের ব্যবস্থা।
এই স্বল্প পরিসরে সাহিত্যিকদের অনেকধরনের আড্ডার কথা বলা গেল না।বাকি থেকে গেল আড্ডাধারীদের আরও অনেক মজার গল্প।যাই হোক কলমচিদের আড্ডা অপ্রতিরোধ্য। অতএব আড্ডাধারী সাহিত্যিকরা জিন্দাবাদ।
তথ্যসূত্রঃ
১। সুকুমার রায়- লীলা মজুমদার ( মিত্র ও ঘোষ)
২।বাঙালির আড্ডা- লীনা চাকী সম্পাদিত( গাঙচিল)
৩।সারস্বত – বুদ্ধদেব গুহ( সাহিত্যম)
৪।আমার জীবনানন্দ আবিষ্কার ও অন্যান্য- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়( আনন্দ)
৫।চরণ ছুঁয়ে যাই( প্রথম খন্ড)- শংকর( দেজ)
৬।কলেজস্ট্রিটে ৭০ বছর- সবিতেন্দ্রনাথ রায়( দীপশিখা)
৭।রচনা সংগ্রহ- সাগরময় ঘোষ( আনন্দ)
৮।দেশ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সংখ্যা ২ নভেম্বর ২০১২
৯।পরমা ১৫ নভেম্বর ২০১২।১০।রোববার- সংবাদ প্রতিদিন -১১ নভেম্বর ২০১২
১১।কৃত্তিবাস সুনীল স্মরণ কলকাতা বইমেলা ২০১৩
১২।বইএর দেশ জানুয়ারি- মার্চ ২০১৩
এছাড়াও হীরেন্দ্রনাথ দত্ত,মীনাক্ষী দত্ত,অমিতাভ দাসগুপ্ত,দময়ন্তী বসু সিং,তারাপদ রায়ের বিভিন্ন রচনা এবং কলেজ স্ট্রিট বইপাড়ার ছোটো বড়ো নানা সংস্থার প্রকাশনাকর্মীদের স্মৃতিচারণ আমাকে ঋদ্ধ করেছে।
কবে এই রচনার শুরু করেছিলাম তা আজ আর মনে নেই তবে একবছর তো হবেই।আপনারা এই লেখা পড়েছেন।ভালোবেসেছেন। আমি কৃতজ্ঞ। শ্রীমতী দোলন ঘোষের উৎসাহ আমাকে এই লেখা লিখতে প্রাণিত করেছে।সবাই ভালো থাকুন।
বিনীত,
সব্যসাচী বন্দ্যোপাধ্যায়
– পেশাগতভাবে সরকারী কর্মী, সাহিত্য সংস্কৃতি নিয়েই বাঁচেন, লেখলেখির মাধ্যমে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাথে যুক্ত।
Comment here