আমার ইতিহাসসংস্কৃতি

দ্বিমুখী চৈনিক ও মুসলিম আগ্রাসনে দেব সাম্রাজ্যের পতন –

– শ্রী জ্যোতিষ্মান সরকার

 

 

১৩৩৯ শকাব্দে উৎকীর্ণ একটি মুদ্রা সুন্দরবনের খুলনা অঞ্চল থেকে গবেষক শ্রী সতীশচন্দ্র মিত্র মহাশয় আবিষ্কার করেন ।
মুদ্রাটির পাঠ এইরুপ গোলাকৃতি, ওজন ১৬০ গ্রেণ, পরিধি ৩ ইঞ্চি। প্রথম পৃষ্ঠে ষড়ভুজের মধ্যে বঙ্গাক্ষরে—“শ্রীদনুজমর্দন দেব” ; দ্বিতীয় পৃষ্ঠে – “শ্রীচণ্ডীচরণ-পরায়ণ, শকাব্দা ১৩৩৯, চন্দ্ৰ দ্বীপ ।”

খুব স্বাভাবিক ভাবেই এটি পরিস্কার যে এই মুদ্রাটি চন্দ্রদ্বীপের কোন রাজশক্তির। চন্দ্রদ্বীপ অঞ্চলের বাকলী রাজবংশাবলীতে দনুজমর্দন দেব ও মহেন্দ্র দেবের নাম উল্লেখ পাওয়া যায়। খুব সম্ভবত অনুমান করা যায় এই মুদ্রাটি চন্দ্রদ্বীপের কায়স্থ দেব বংশের। ঐতিহাসিক শ্রী রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এই মতকে সমর্থন করেছিলেন।

দেব বংশের আরো দুটি মুদ্রা গৌড়ের পান্ডুনগর এলাকা থেকে পাওয়া যায়: প্রথমটি মহেন্দ্রদেবের, দ্বিতীয়টি দনুজমর্দনদেবের। অধিকাংশ ঐতিহাসিক সময়কাল দেখে দনুজমর্দনদেবকে রাজা গণেশনারায়ণ বলে ভুল করেন । কিন্তু তৃতীয় মুদ্রাটি খুলনা অঞ্চল থেকে আবিস্কারের পর যাবতীয় ভ্রান্তি দূর হয়েছে। কারণ তৃতীয় মুদ্রাটিতে পরিস্কার চন্দ্রদ্বীপ শব্দটির উল্লেখ রয়েছে।
অন্যদিকে গণেশের রাজধানী ছিল দিনাজপুর পান্ডুয়া অঞ্চলে। সুতরাং দনুজ মর্দনদেব ও গণেশ দুজন ভিন্ন ব্যক্তি ছিলেন।নিম্নবঙ্গ এলাকায় খুব সম্ভবত কোন একটি যুদ্ধের মাধ্যমে দেব সাম্রাজ্যের অধিকারে এসেছিল।

সমকালীন পুঁথিপত্রতেও এরকম একটি উল্লেখ পাওয়া যায়।

“বিহার গুণিশেখরঃ শিখরভূমি বাসস্পৃহাৎ স্ফুবৎসুবতরঙ্গিনী — তটীনবাস পর্যৎসুকঃ ॥
ততো দনুজমর্দন ক্ষিতি পুজ্যপাদঃ ক্রমা
দুবাস নবহট্টকে স কিল পদ্মনাভ কৃতীঃ ॥”‘
লঘু বৈষ্ণবতোষণী। (রচনাকাল ১৪৭৬ খ্রী)

‘রাজা দনুজমর্দন যার পাদপুজা করতেন, সেই গুনীশ্রেষ্ঠ কৃতী পদ্মনাভ শিখরভূমি বাসের স্পৃহা পরিত্যাগ করে গঙ্গাতীরে বাস করতে নবহট্টকে (নৈহাটিতে) বসতি করেছিলেন।
লেখক জীবগোস্বামীর প্রপিতামহ যিনি শিখরভূম রাজসভায় সভাপন্ডিত ছিলেন তিনি নবহট্টে চলে আসেন। নবহট্টের যুদ্ধে খুব সম্ভবত দনুজমর্দনদেব সুলতানী সৈন্যকে পরাজিত করে নবহট্টে শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।
মহেন্দ্র দেবের সাম্রাজ্য ১৩৯১ নাগাদ পূর্ব থেকে পশ্চিমবঙ্গ এমনকি পূর্ব রাঢ়েও সম্প্রসারিত হয়েছিল। সম্ভবত নৈহাটি বা নবহট্ট নগরের পুণর্নির্মান করে দনুজমর্দনদেব দ্বিতীয় রাজধানী স্থাপন করেন।
নবহট্টের যুদ্ধে শিখরভূমের ও সামন্তভূমের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য ছিল।
বিশেষ করে উত্তর হামীর ও তার পুত্র হাম্বীরের ভুমিকা।

শ্রী যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি মহাশয়ের প্রদত্ত ছাতনা রাজবংশপরিচয়ের সময়কাল প্রায় মিলে যায়। ছাতনার রাজবংশ পরিচয়ে পাওয়া যায়—

মাসাব্ধি বিশিখ শকে হামির উত্তর লোকে

সামস্তের কন্যা দিয়া রাজ্য দিল দান।

তাহারি সৌভাগ্যক্রমে বাসলী সামস্তভূমে

শিলামূর্তি ধরিয়া হলেন অধিষ্ঠান ।

পাষণ্ড দলন হেতু ভবাব্ধি তরণে সেতু

রচে যবে চণ্ডীদাস রাধাকৃষ্ণলীলা ।

বিদ্যাপতি তদুত্তরে গাইল মিথিলাপুরে

হরিপ্রেম রসগীতি নাহি যার তুলা ।

ব্রহ্মা কাল কৰ্ণ (কর্ম) অরি শকে সিংহাসনোপরি

বসে বীর হাম্বির সে হামিরনন্দন ।

সংগ্রামে যবনে তাড়ি বঙ্গরাজ্য নিল কাড়ি

অভিষেক দিল তার জনৈক ব্রাহ্মণ ।

“মাসাব্ধি বিশিখ” বা ১২৭৫ শকে বা ১৩৫৩ খৃষ্টাব্দে হামির উত্তর ছাতনার রাজা হন। তিনি “ব্রহ্ম কাল কর্ণ অরি” অর্থাৎ ১৩২৬ শকাব্দে বা ১৪০৪ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। এই হামির উত্তরের রাজত্বকালে ছাতনায় বড়ু চণ্ডীদাস জীবিত ছিলেন।
অর্থাৎ ১২৭৫-১৩৫৩ র মধ্যবর্তী সময়ে রাজা উত্তর হামীরের পুত্র হাম্বীর কোন একটি যুদ্ধে। বঙ্গরাজ্যের হয়ে যবণদের পরাজিত করেন।

এখানে তিনটি বিষয় উল্লেখ্য: 

১) যেহেতু পদ্মনাভকে সসম্মানে দনুজমর্দন নবহট্টে আনয়ন করেন। সুতরাং শিখরভুম ও দনুজমর্দনের বাঙ্গালা সাম্রাজ্যের ( দেব সাম্রাজ্য) সুসম্পর্ক ছিল। এবং খুব সম্ভবত একটা শক্তিজোট বঙ্গ ও রাঢ় অঞ্চলের রাজাদের মধ্যে গঠিত হয়েছিল।
শিখরভূমের সৈন্য বাহিনীর পক্ষে খুব সম্ভবত নবহট্টের যুদ্ধে ‘উত্তর হামীরের’ পুত্র হাম্বীর নেতৃত্ব দেন।
২)১৪০৪ খ্রিঃ তে হামিরের রাজ্যাভিষেক হয় যা সম্পন্ন করেন এক জনৈক ব্রাহ্মণ। আচার্য পদ্মনাভের খ্যাতি অনুযায়ী অনুমান করা যায় সম্ভবত তিনিই ছিলেন সেই জনৈক ব্রাহ্মণ।
৩) অনুমান করা যায় ১৩৯৮/৯৭ বা তার আশেপাশে নবহট্ট বিজয় হয়েছিল। কারণ সামন্তভূম শিখরভূমের সামন্ত রাজ্য ছিল তাই যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া খুবই সম্ভব ছিল। এবং হাম্বীরের সিংহাসনে বসার আগেই সম্ভবত যুদ্ধ হয় অর্থাৎ ১৪০৪ র পূর্বে।
● ১৩৯৬ তে তানোরের যুদ্ধের পর গণেশ সিংহাসনারোহন করেন। ১৩৯৮ তে নসরৎ শাহ শ্যামশুদ্দীন,শিহাবউদ্দিন বায়াজিদ শাহ,আলাউদ্দিন ফিরোজ শাহকে পরাজিত করেন। সফিউদ্দিন আবুল মুজাহিদ হামজা সাহকে ১৪০২ তে পরাজিত করেন ।
১৪০৬ তে মুঙ্গেরের যুদ্ধে জৌনপুর সুলতান ইব্রাহিম সার্কিকে পরাজিত করেন গণেশ। এই যুদ্ধে উনার জোট সঙ্গী মিথিলার রাজা শিব সিংহ মারা যান।
[একটি সমসাময়িক আরাকানীয় নথিতে লিপিবদ্ধ রয়েছে যে রাজা গণেশের সেনাবাহিনী, তৎকালীনভাবে পান্ডুয়ার নিয়ন্ত্রণে ছিল এবং যুদ্ধে ইব্রাহিমকে পরাজিত করেছিল। এই নথি অনুসারে, আরাকানের একজন শাসক Min Sow Mon নামের, যিনি ১৪০৪ সালে বার্মিজ আভা বংশের রাজাদের দ্বারা পরাজিত হয়ে পান্ডুয়ায় আশ্রয় নিয়েছিলেন, তিনি রাজা গণেশকে সামরিক সাহায্য ও পরামর্শ দিয়েছিলেন তার কারণে গণেশ নারায়ণ ইব্রাহিম সার্কিকে পরাজিত করতে সক্ষম হন। ]

আরাকানের মিং শাসকদের অনেক আগে থেকেই দেব বংশের সাথে সুসম্পর্ক ছিল। খুব সম্ভবত তিনি প্রথমে চন্দ্রদ্বীপ ও পরে পান্ডুনগরে সাহায্য চাইতে উপস্থিত হন। খুব সম্ভবত তিনি দেব সাম্রাজ্যের সেনাপতি হিসেবে জৌনপুরের সাথে যুদ্ধে সৈন্য পরিচালনা করেন । দেব সাম্রাজ্যের পাশাপাশি মিথিলার ঐনোয়ার রাজ্যের আরেক হিন্দু রাজা শিব সিংহ এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন গণেশ নারায়ণের পক্ষে ।

১৪১২/১৩ অব্দি গণেশ স্বচ্ছন্দে শাসন করে মারা যান । তাঁর পুত্র যদুনারায়ণ সিংহাসনে বসেন ও একটি অঘটন ঘটে যায়।যদুনারায়ণ এক পাঠান মহিলা যিনি মতান্তরে আজিম শাহের কন্যা ছিলেন তার প্রেমে পড়েন। যদুনারায়ণ honey trapped হয়ে আসমানতারাকে বিবাহের চেষ্টা করেন। কিন্তু বরেন্দ্র ব্রাহ্মণ কূল তার এই বিবাহে অসম্মত ছিল। বরেন্দ্র ব্রাহ্মণদের তীব্র বিরোধিতার কারণে যদু ধর্মান্তরিত হয়ে আসমানতারাকে বিবাহ করেন। যদুনারায়ণের এর পূর্বে এক হিন্দু স্ত্রী ও কণ্যা ছিল।

শ্রী অবনীকৃষ্ণ সান্যালের কন্যা নবকিশোরীকে যদু বিবাহ করেছিলেন। ও আসমনতারাকে বিবাহের সময়সেই সময় যদুর পুত্র অরুপনারায়ণ ৫ বছরের ছিল। এই সংবাদ শুনে নবকিশোরী দেবী পান্ডুয়া ত্যাগ করে ভাতুরিয়ায় গিয়ে বসবাস শুরু করেন ।এই ভাতুরিয়ার জমিদারিই পরবর্তীকালে একটাকিয়া জমিদারি নামে প্রসিদ্ধ হয়। পূর্ববর্তী গৌড়ের সুলতানের নির্দেশ অনুযায়ী এই জমিদারির জমিদাররা কেবলমাত্র এক টাকাই সুলতানকে সাম্মানিক কর দিত।

১৪১৪ খ্রিস্টাব্দে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে। ….যদুনারায়ণের ধর্মান্তরকরণের ঘটনায় হিন্দু প্রজা ও সামন্তরা বিক্ষুব্ধ ছিলেন। এই ঘটনার সুযোগ নিয়ে দেব বংশের রাজা মহেন্দ্রদেব আক্রমণ করে পান্ডুনগর দখল করেন। প্রথমদিকে কিছু ঐতিহাসিক দনুজমর্দনদেবকে গণেশ বলে ভুল করেছিলেন। কিন্তু এই মত ভ্রান্ত পরবর্তীতে প্রমাণিত হয়েছে।

ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার পুড্ডাগ্রাম নিবাসী শ্রী ক্ষিতীশচন্দ্র দেব রায় মহাশয়ের নিকট একটি কূলগ্রন্থ পাওয়া গিয়েছিল ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে। ‌

মহামহোপাধ্যায় শ্রী হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, শ্রী নগেন্দ্রনাথ বসু ,ও শ্রী নিখিলনাথ রায় এই পুঁথিটি ২০০ বছর পুরোনো বলে নির্ণয় করেন।শ্রীযুক্ত নিখিল বাবু তাঁর “শাশ্বতী” পত্রিকায় টীকা টিপ্পনী সহ এই গ্রন্থ প্রকাশিত করেছিলেন। ধানি ভট্ট নামক একজন ঘটক দ্বারা সংস্কৃত ভাষায় লিখিত পুঁথির শেষ “শনরপতেরতীতাব্দ সৌরবৈশাখ পঞ্চম দিবসে” বলে লেখা আছে।  তার অর্থ ১৬২২ শকাব্দে এটি লিখিত।

এই কূলগ্রন্থ অনুসারে দেববংশীয়রা কন্টকদ্বীপ বা কাটোয়ার বন্দ্যোপাধ্যায় বংশের শিষ্য ছিলেন তাই তাঁরা ‘চন্ডীপরায়ণ’ লিখতেন মুদ্রায়।

এই কূলজীর যে শ্লোকটি শ্রী সতীশচন্দ্র মিত্র যশোর খুলনার ইতিহাসে উদ্ধৃত করেন তা হলো –

“যবনাঞ্চ দূরীকৃত্য কংসকুলং নিহত্য চ।
পাণ্ডুয়ায়াং দেবরাজ্যমনেনৈব প্রতিষ্ঠিতম্”

চন্ডীপরায়ণ দেবেন্দ্রের পুত্র সুপ্রসিদ্ধ মহেন্দ্র। তিনি যবনদিগকে দূরীভূত ও কংসকুল নিহত করিয়া পাণ্ডুনগরে দেবরাজ্য স্থাপন করেন। যদুনারায়ণ এই যুদ্ধে মারা যাননি যদিও। খুব সম্ভবত তিনি কোনভাবে পালিয়ে যান । অথবা অন্য কাউকে যদুনারায়ণ ভেবে দেব সৈন্যরা ভ্রমিত হন।যদু সম্ভবত যৌনপুরে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন।

* এই কুলগ্রন্থের আবিষ্কারের পূর্ব্বে শ্রীযুক্ত রাখাল দাস বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় ও অনুমান করেছিলেন যে “রাজা গণেশ বা কংস নারায়ণের মৃত্যুর পর যদু স্বধর্ম্ম পরিত্যাগ করিলে, মহেন্দ্র দেব বিদ্রোহী হইয়া পাণ্ডুনগরে স্বাধীন রাজ্য স্থাপন করেন ও স্বনামে মুদ্রাঙ্কণ আরম্ভ করেন।”

এই দুইটি মুদ্রা এক সাঁওতাল কৃষক হাল চালানোর সময় আবিষ্কার করেন। যেটা পরবর্তীতে কয়েক হাতবদল হয়ে প্রত্নসংগ্রাহক শ্রী রাধেশচন্দ্র শেঠের হাতে আসে।

রাধেশবাবুর আবিষ্কৃত ( ১ ) মহেন্দ্র দেবের মুদ্রা : গোলাকৃতি, ওজন ১৭০ গ্রেণ, পরিধি ৩ ইঞ্চি। উহার প্রথম পৃষ্ঠে বঙ্গাক্ষরে লিখিত আছে—“শ্রীশ্রীমন্মহেন্দ্র দেবস্য”; দ্বিতীয় পৃষ্ঠে—“শ্রীচণ্ডীচরণ-পরায়ণ, পাণ্ডুনগর, শকাব্দ ( ) ৩৩৬ ।”

(২) দনুজমর্দন দেবের মুদ্রা : – আকার প্রায় গোল, ওজন ১৬৭ গ্রেণ, পরিধি ৩ ইঞ্চি । প্রথম পৃষ্ঠে বৃত্তমধ্যে বঙ্গাক্ষরে—“শ্রীশ্রীদনুজমর্দন দেব” ; দ্বিতীয় পৃষ্ঠে চতুষ্কমধ্যে “শ্রীচণ্ডীচরণ-পরায়ণ ; ও উহার বাহিরে “পাণ্ডুনগর, শকাব্দা ( ) ৩৩৯” ।

এই দুইটি মুদ্রাতেই marginal deletion বা পার্শ্বক্ষয়ের জন্য তারিখের সহস্রাঙ্কটি কেটে গেছে এবং তার জন্য মহা অসুবিধা হয়েছিল।

শ্রী সতীশচন্দ্র মিত্রের মুদ্রা আবিষ্কৃত না হলে এই সহস্রাঙ্ক কেটে যাওয়ার কথা সহজে ধরা যেত না ।

সতীশবাবুর আবিষ্কৃত দনুজমর্দন দেবের মুদ্রা :— গোলাকৃতি, ওজন ১৬০ গ্রেণ, পরিধি ৩ ইঞ্চি। প্রথম পৃষ্ঠে ষড়ভুজের মধ্যে বঙ্গাক্ষরে—“শ্রীদনুজমর্দন দেব” ; দ্বিতীয় পৃষ্ঠে – “শ্রীচণ্ডীচরণ-পরায়ণ, শকাব্দা ১৩৩৯, চন্দ্ৰ দ্ব ( ) প ।”

৭৬ বছর বয়সে ১৪১৪ খ্রিস্টাব্দে মহেন্দ্র দেবের শাসনকালে তাঁর তার পুত্র দনুজমর্দন পান্ডুয়ানগর অধিকার করেন।১৪১৭ তে মহেন্দ্র দেবের মৃত্যুর পর তার পুত্র দনুজমর্দন দেব সিংহাসনে আরোহণ করেন। সোনারগাঁও, পান্ডুনগর ও নবহট্টে দনুজমর্দনের তিনটি শাসনকেন্দ্র ছিল।

ইহাতে তারিখটি অতি সুস্পষ্ট ভাবে আছে। উহাতে ১৩৩৯ শকাব্দা বা ১৪১৭ খৃষ্টাব্দ হয়। রাধেশ বাবুর মুদ্রায় ১ এই সহস্রাঙ্কটি কেটে গেছে, তা স্বচ্ছন্দে অনুমান করা যায়। তা হলে মহেন্দ্র দেবের মুদ্রায় ১৩৩৬ শকাব্দা বা ১৪১৪ খৃষ্টাব্দ এবং দমুজমদ্দনের অপর মুদ্রায়ও ১৪১৭ খৃষ্টাব্দ হয়। স্বাধীন রাজা না হলে কেউ স্বনামে মুদ্রা প্রচার করেন না। সুতরাং মুদ্রাত্রম্ন হতেই প্রমাণিত হয়
যে মহেন্দ্র দেব পাণ্ডুনগর বা পাণ্ডুয়ার স্বাধীন রাজা ছিলেন, তাঁর রাজত্বের১৪১৪ খৃষ্টাব্দের একটি মুদ্রা পাওয়া যায়। 

 ● দেববংশের শাসন ও অবদান :

বাংলায় দেববংশের অধীনে এক সুশৃঙ্খল শাসনব্যবস্থা স্থাপিত হয় । চতুর্দশ শতকের প্রথমার্ধ থেকেই দেবশাসনে বাংলার সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উন্নতি চরম শিখরে পৌঁছায় । দেব শাসন প্রকৃতপক্ষে ছিল সমৃদ্ধি এবং সৃজনশীলতার শিখরে অবস্থান। তাই এই সময়কালকে মধ্যযুগীয় বাংলার ‘স্বর্ণযুগ’ বলা যায় ।

চন্দ্রদ্বীপের টেরাকোটা পোড়ামাটির শিল্প ও বিষ্ণুমন্দিরের বুনিয়াদের দেওয়ালে প্রাপ্ত ভাস্কর্যযুক্ত ফলকসমূহ দেবযুগের দৈবিক মহিমার উৎকর্ষতা তুলে ধরে । প্রতিনিধিত্ব করে। এটি সর্বজনীন স্বীকৃত যে এই ধ্বংসাবশেষগুলি একটি একক সাংস্কৃতিক যুগের, যা দেববংশীয় শাসনকালের এবং এগুলি বাংলার লোকশিল্পের উন্নত বঙ্গজ শিল্পশৈলীর প্রতিনিধিত্ব করে। স্পষ্টতই, এই সময়ের মধ্যে এটি এই অঞ্চলে উদ্ভূত এবং বিকাশ লাভ করে এবং ধীরে ধীরে দেশের বাকি অংশ এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।

বাণিজ্যব্যবস্থায় সমৃদ্ধি :

দেব রাজবংশের শাসনে বাঙালির বাণিজ্য উন্নতি পুনরায় নতুন উদ্যমে শুরু হয় । 

বস্তুত ত্রয়োদশ শতকে বল্লাল সেন ও বণিক সম্প্রদায়ের বিরোধের কারণজনিত একাধিক যুদ্ধে বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত ভেঙে পড়েছিল । বল্লাল চরিত অনুসারে বল্লাল সেন ওদন্তপুরের যুদ্ধের সময় কোন এক বণিক সামন্ত হতে প্রচুর পরিমাণ অর্থ ঋণ হিসেবে চান। কিন্তু সোনার বণিকরা তা দিতে অস্বীকার করে। রাজারা ভেতরে ভেতরে ক্ষুব্ধ রইলেন বণিকদের প্রতি। মহাভোজের সময় বণিকদের প্রতিনিধিদের প্রতি রাজকুমার ভীমসেন দুর্ব্যবহার করলে ও গালাগালি দিলে বণিকরা আসন পরিত্যাগ করে সভা থেকে বেরিয়ে যায়। রাজার অবমাননার কারণে রাজা তাদের পতিত বলে ঘোষণা করেন।১৩ শতকে এরকম দুরবস্থা হয় যে ‘কপর্দক বা কড়ি’কেও বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে হয় । কিন্তু দেবযুগে বঙ্গজ বণিককুলের বাণিজ্যযাত্রা নতুন পথে শুরু হয় ও নৌবাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার হয় । সেনযুগে সুবর্ণবণিক সম্প্রদায়কে নির্বাসন দেওয়াতে বাণিজ্যের অবস্থা ভেঙে পড়েছিল, কিন্তু দেববংশের শাসনে চতুর্জাতি বণিককুল – সুবর্ণবণিক, গন্ধবণিক, শঙ্খবণিক ও কাংস্যবণিক ‘দের সম্মিলিত বাণিজ্যযাত্রা আবার শুরু হয় ।

চতুর্দশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে সুবর্ণগ্রাম এক সমৃদ্ধশালী বাণিজ্যনগররূপে গড়ে ওঠে। সমুদ্রপথে পশ্চিম এশীয় ও দক্ষিণপূর্ব এশীয় দেশ থেকে বাণিজ্য-তরী সহজেই সোনারগাঁয়ে পৌঁছতে পারত। ইবনে বতুতা (১৩৪৬) তাঁর ‘তারিখ আল হিন্দ’ ভ্রমণবৃত্তান্তে সুবর্ণগ্রামকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর-নগরী রূপে বর্ণনা করেন এবং চীন, ইন্দোনেশিয়া (জাভা) ও মালয় দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে এর সরাসরি বাণিজ্যিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। চীনের পরিব্রাজক মা হুয়ান (১৪০৬) সোনারগাঁওকে একটি বিরাট বাণিজ্যিক শহররূপে প্রত্যক্ষ করেন। হৌ-হিয়েন (১৪১৫) সোনারগাঁওকে বহু পুকুর, পাকা সড়ক ও বাজার সমৃদ্ধ একটি সুরক্ষিত প্রাচীর বেষ্টিত নগর এবং বাণিজ্যকেন্দ্ররূপে উল্লেখ করেন, যেখানে সব ধরনের পণ্যসামগ্রী মজুত ও বিক্রয় করা হতো। সোনারগাঁয়ে প্রস্ত্তত মসলিন, বিশেষত ‘খাস’ নামীয় অত্যুৎকৃষ্ট মসলিন সমগ্র বিশ্বে খ্যাতি অর্জন করে। এসময় যশোর, খুলনা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ সংলগ্ন এক বৃহৎ অঞ্চলে তুলো চাষের উৎপাদন অত্যন্ত বৃদ্ধি হয়, ঢাকা অঞ্চলে উন্নতমানের দীর্ঘ ও সূক্ষ্ম আঁশবিশিষ্ট তুলো উৎপন্ন হতো । ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা ও তাদের শাখানদীগুলির ধারে ধারে প্রচুর কার্পাস চাষ হতো, যা সুবর্ণগ্রামের তন্তুবস্ত্রবয়ন শিল্পের প্রভূত উন্নতি ঘটায় । সুবর্ণগ্রাম, ডুমরোর, তীতবাদী, জঙ্গলবাড়ী, কাপাসিয়া প্রভৃতি বাংলার কার্পাসশিল্পের প্রধান কেন্দ্র ছিল । ঢাকাই মসলিনের রপ্তানি নৌপথে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে যা তৎকালীন বিশ্বের সর্বাধিক কাম্য বস্ত্র হিসেবে পরিগণিত হতো । শঙ্খবণিকদের পৃষ্ঠপোষণায় বিক্রমপুর ও পানাম নগরে শঙ্খশিল্প ও শাঁখার আসবাবপত্র নির্মাণে উন্নতি হয় । দক্ষ কারুশিল্পীর উদ্যোগে বাঁশ-বেত, কাঠ খোদাই, মাটি, জামদানি, নকশিকাঁথা, একতারা, পাট, শঙ্খ, মৃৎশিল্প ও ঝিনুকের সামগ্রী তৈরি হতে থাকে ।

মহানন্দা নদীর তীরে মালদহ অঞ্চলে “মুগা” ও “রেশম” মিশিয়ে ৩০ ধরনের কাপড় প্রস্তুত করা হতো । মালদহ এসময় ক্রমাগত আক্রমণবিধ্বস্ত অঞ্চল হওয়ায় মালদহের তন্তুশিল্পীরা ঢাকায় গিয়ে আশ্রয় নেয়, ঢাকায় এই নতুন ধরনের মিশ্রিত উপাদান বস্ত্রবয়নপ্রণালী সাধারণভাবে “মালদহী” নামে পরিচিত হয় । মালদহের ‘এলাচি’ (দু-পিঠ সমান) ও ‘মশরুর’ (সদর অন্দরপিঠ ওয়ালা) গৌড়নগরে অত্যন্ত প্রসিদ্ধ ছিল, যা ঢাকার খ্যাতি বৃদ্ধি করে । বণিককুলের বহির্বাণিজ্যের উন্নতিতে বাঙ্গালার অর্থনীতি শক্তিশালী হয়, বঙ্গজ মুদ্রার মান উন্নত হয় ও বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে বঙ্গসম্রাটের নামাঙ্কিত রৌপ্যমুদ্রার ব্যবহার শুরু হয় ।

১৪১৮ খ্রিস্টাব্দে, সম্ভবত বৈদেশিক সাহায্য ও জৌনপুরের সহায়তা নিয়ে যদু/ জালালুদ্দিন পান্ডুয়া পূণর্দখল করে।১৪১৮ তে মুদ্রিত জাল্লালুদ্দিনের মুদ্রা পাওয়া যায় পান্ডুয়া থেকে জারি করা। শ্রী রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে ১৪১৮ তে জালাল উদ্দিন পান্ডুয়া পুণর্দখল করে ফেলেন । লাগাতার অভিযান প্রেরণ করতে শুরু করেন বঙ্গ অঞ্চলেও| দেব সৈন্যদের উপর জালাল উদ্দিনের বাহিনী চেপে বসতে শুরু করে। ১৪২৩ নাগাদ বঙ্গের বেশিরভাগ অঞ্চল জালালুদ্দিন দখল করে নেয়। যে সুন্দরবন এলাকায় ২০০ বছরের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করা যায়নি সেখানে একটি যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী সাফল্য লাভ করে।

মুকুট রায় (২য়) কে পরাজিত করে ১৪২৩ তে ফৌজদার খাঁ জাহান আলী পান্ডুয়া সালতানাতের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।শ্রীহট্টও ধীরে ধীরে জালালুদ্দিনের অধিকারে চলে যায়| সম্ভবত ১৪২৭ পর্যন্ত দনুজমর্দনদেব দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাতে নিজের অধিকার বজায় রেখেছিলেন। সম্ভবত যবন আক্রমণ প্রতিরোধ করতে করতেই দনুজমর্দনদেব মারা যান। পরবর্তীতে তাঁর বংশীয়দের সেরকম বীরত্বের ইতিহাস পাওয়া যায় না। সম্ভবত সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব বাঙলা ১৪২৭ নাগাদ জালালুদ্দিনের অধিকারে চলে আসে।

  • দেব সাম্রাজ্যের পতনের কারণ –

১) ইব্রাহিম শাহের সমর্থন: ইব্রাহিম শাহ জালাল উদ্দিন কে সহায়তা করেছিলেন ঠিকই কিন্তু তার সহায়তার উদ্দেশ্য ছিল জালালুদ্দিনকে জৌনপুর সুলতানাতের সামন্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। তাই পরবর্তীতেও ইব্রাহিম সার্কি জালালুদ্দিনের রাজ্য আক্রমণ করে। হেরাতের তিমুর শাসক শাহরুখ,মিসরের মামলুক শাসক আল আসরাফ বার্সাবি ও চিনের মিং শাসক Young Le অনুরোধে পিছু হটেন।

২) বহির্বিশ্বের কূটনৈতিক সমর্থন: জালালুদ্দিন অল্প সময়ের মধ্যেই মিশর হেরাত ও চিনের শাসকদের সাথে সদ্ভাব তৈরি করেন । যে কারণে আরব সাগর ও ভারত মহাসাগরে সপ্তগ্রাম ও সুবর্ণগ্রামের বণিকদের উপর উৎপীড়ন শুরু হয় দেব সাম্রাজ্যের মূল আয়ের উৎস কমে আসে। অর্থনৈতিকভাবে রাষ্ট্র ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে।

বঙ্গীয় শব্দকোষে একটি অত্যন্ত ঋণাত্মক শব্দের জন্ম হল। যার নাম ‘কালাপানি’।

কালাপানি, অর্থাৎ সমুদ্রযাত্রা নিষিদ্ধ। আরব জলদস্যুদের হাত থেকে পরিত্রাণের সংগ্রামী পন্থার উদ্ভব না হওয়ায় সমাজপতিরা বঙ্গবাসীকে রক্ষা করতে কালাপানির কথা বললেন। যে শব্দটি পরবর্তী কালের প্রেক্ষাপটে হিন্দুধর্মের গোঁড়া কুপমন্ডুকতাকে সূচিত করত।

৩) নৌ বন্দরের নাব্যতা হ্রাস: সপ্তগ্রাম ও সোনারগাঁও বন্দরের নাব্যতা হ্রাস একটা কারণ হতে পারে । কারণ সেই সময় থেকেই দুটি বন্দর শুকিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু বিকল্প চট্টগ্রাম ও হুগলী বন্দর তখনো সেই সময় তৈরি হয়নি।

৪) ভূরাজনৈতিক কারণ – Yongle র শাসনকালে চিনা নৌ শক্তি তীব্র শক্তিশালী হয়ে পড়ে(永樂帝) নৌ সেনাপতি Zheng He নৌশক্তি র সহায়তায় জাভা সুমাত্রা মালয় ব্রুনেই আরব উপদ্বীপ এমনকি পূর্ব আফ্রিকার সাহিলি উপকূলেও চৈনিক বণিকরা অবাধ ব্যবসা করতে শুরু করে। প্রতিযোগিতার মুখে দেব সাম্রাজ্যের অর্থনীতি ভেঙে পড়ে।

৫) চিনা নৌসেনার কোট্টে দখল: এমতাবস্থায় বাঙালি বণিকদের একমাত্র ভরসার জায়গা ছিল শ্রীলঙ্কা। বহুকাল ধরে বিজয় সিংহের সময় থেকে শ্রীলঙ্কা বাঙালি বণিকদের ভরসার জায়গা ছিল। তাদের বাঙালি পূর্বপুরুষের যোগের কারণে সিংহলীরা যত বাঙালি বণিকদেরই অগ্রাধিকার দিত। তার প্রমাণ পাওয়া যায় শ্রীলঙ্কায় উত্তম চোলের মুদ্রা বঙ্গলিপিতে উৎকীর্ণ হোয়া দেখে। Zheng He সেখানেও থাবা বসায় Kingdom of Kotte (කෝට්ටේ රාජධානිය) র রাজা ভীরা আলোকেশ্বরা / বিজয়বাহুকে পরাজিত করে । তাকে দড়িতে বেঁধে পিকিং শহরে নিয়ে যায়।

৬) সৈনিক সামন্ত রাজা হিসেবে জালাল উদ্দিন কে প্রতিষ্ঠা: চৈনিক নৌবাহিনীর সরাসরি সোনারগাঁও বন্দরের ওপর নজর ও স্বার্থ দুইই ছিল কিন্তু দেব সাম্রাজ্যের শক্তিশালী নৌ বাহিনীর বিরুদ্ধে তারা টিকতে পারত না। ১৪১৫ তে Zheng He সোনারগাঁও বন্দর ভ্রমণ করেন।

Zheng He সমস্ত রকম কূটনৈতিক সাহায্য জালালুদ্দিনকে করে। পরবর্তীতে জালালুদ্দিন যথার্থই Ming সাম্রাজ্যের অধীনতা স্বীকার করেন। এডমিরাল Ming shi একবার ও Zheng He দুবার পান্ডুয়া ভ্রমণ করে। জালালুদ্দিন চীনা নৌ সেনাপতিদের যথাসাধ্য উৎকোচ প্রদান করেন।

যে রাজারা ওনার অধীনতা স্বীকার করেনি সেরকম ৩০ টি রাজ্যের রাজাকে বন্দি করে Zheng He চিনে নিয়ে যায়।

তারা কেবল মাত্র ২টি শর্তে ছাড়া পান।

১) চৈনিকদের কর প্রদান।

২) চিনা নৌ বণিকদের অবাধ ব্যবসার জন্য বন্দর উন্মুক্তকরণের শর্তে ছাড়া পান।…১৪২৭- ১৪৩৪ পর্যন্ত সোনারগাঁ কার্যত চৈনিক নৌঘাঁটি হিসেবেই ব্যবহৃত হতো।

 

Sources:

১) East Africa and its Invaders p. 37

২) Paranavitana, History of Ceylon, p.299

৩) Ray, Haraprasad (1997). Sino – Indian Commercial and Diplomatic Relations. The Quarterly Review of Historical Studies. Vol. 37. Calcutta: Institute of Historical Studies. p. 114

৪) Coomaraswamy, Ananda Kentish (1915). Vidyāpati: Bangīya Padābali; Songs of the Love of Rādhā and Krishna. London: The Old Bourne Press.

৫) বাঙ্গালার ইতিহাস দ্বিতীয় খন্ড রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ২খন্ড ১৮৭ পৃ

৬) প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড) ৭৬১ পৃ

৭) যশোর খুলনার ইতিহাস সতীশচন্দ্র মিত্র

৮)  গৌড়ের ইতিহাস রজনীকান্ত চক্রবর্তী

৯) Radhakrishna Chaudhary (1976). Mithila in the Age of Vidyapati. Chaukhambha Orientalia. pp. 74–80.

১০) Richard Maxwell Eaton (1993). “The Rise of Islam and the Bengal Frontier, 1204-1760”.pp-53ff, 54ff.

১১) বাঙ্গালার ইতিহাস (রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়) দ্বিতীয় খন্ড ১৫৩

১২) পুরুলিয়া তরুণদেব ভট্টাচার্য ১২৭ পৃ

 

(লেখক পরিচিতি: শ্রী জ্যোতিষ্মান সরকার B.Tech Ceramic Technology তে পাঠরত।)

Comment here