বিপন্নতার মানব মুখ

হিন্দু হওয়ার জন্য চাকরি গেল বাংলাদেশে –

দুর্গা পুজোর ছুটি চাওয়া এক ক্ষমাহীন অপরাধ!!

 

কথায় বলে, সত্য অপরিবর্তনশীল। বর্তমান বাংলাদেশের হিন্দু নাগরিকবৃন্দের কাছে সত্য একটিই – এক ভয়ঙ্কর আতঙ্ক। এই মুহূর্তে তাঁদের অস্তিত্ব ‘স্বদেশ!!’ – এ কোন মানবেতর পর্যায়ে রয়েছেন তার বহু উদাহরণ রয়েছে। প্রত্যেক দিনের পরিবর্তে প্রায় প্রত্যেক মুহূর্তেই তাঁদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় যে তাঁরা সংখ্যালঘু। কখন কোনখানে কি হয়ে যায়, হয়তো বা একটি ফেসবুক পোস্টই নতুন করে কোন দাবানল সৃষ্টি করে এ নিয়ে তাঁদের আশঙ্কা ও আতঙ্কই জীবনের একমাত্র সত্য।

তবে, তার নিকৃষ্টতম নির্দশনটি দেখা গেল সম্প্রতি যখন সামান্য দুর্গা পুজোর ছুটিকে কেন্দ্র করে এক হিন্দু মহিলাকে তাঁর চাকরি হারাতে হয়। তিনি শ্ৰীমতী শ্যামা সাহা সেন, এবং তাঁর একমাত্র অপরাধ তিনি এক হিন্দু সংখ্যালঘু হয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে দুর্গা পুজোর ছুটির জন্য আবেদন করার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন। সূত্রে প্রকাশ, শ্রীমতী শ্যামা সাহা সেন Boost Education Service – এর Business Development Manager রূপে কর্মরত ছিলেন এবং পূজার জন্য ৩ দিনের ছুটির দরখাস্ত করেছিলেন। উত্তরে তাঁর ছুটির আবেদন শুধু নাকচই হয়নি, তাঁকে Letter of Termination ধরিয়ে চাকরি থেকে বের করে দেওয়াও হয়েছে। উপরন্তু, একজন ধর্মপ্রাণা হিন্দু নারী হওয়ার জন্য তাঁর জুটেছে হিন্দু ধর্ম বিষয়ে উপহাস ও বিদ্রুপও।

এই উপলক্ষে শ্রীমতী সেন social media য় তাঁর Facebook account এ লিখছেন, “একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটানা: পূজা উপলক্ষে আমি যেখানে চাকরি করি ছুটি চেয়ে অ্যাপ্লিকেশন করেছিলাম (বুস্ট এডুকেশন সার্ভিস, এক্স বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার)। আমার অফিস আমাকে জানাল যে তারা ছুটি দিতে পারবে না। পরে আমি এটা নিয়ে যখন কথা বললাম তখন তারা বলে যে আমরা ঈদে অনেক দিন (৪ দিন) ছুটি দেই তাই আর কোনো ছুটি দেই না। আর তাছাড়া আপনারা সংখ্যালঘু, আমাদের তো সরকারই ছুটি দেয় না তাহলে আমরা কেন ছুটি দিব। এসব কথা শোনার পর আমার খুব মেজাজ খারাপ হয়ে যায়, আমি ওইখান থেকে কিছু না বলে চলে আসি। গত বুধবার তারা আমাকে জিজ্ঞাস করে তাহলে পূজায় কী করছেন? তখন আমি বললাম যে, আপনারা ছুটি না দিলেও আসতে পারব না, কারণ আমার ধর্মীয় বিষয় আছে। আমি উপাস রেখে প্রত্যেকদিন পূজা দেই (কিন্তু আমি ছুটি চেয়েছিলাম ৩ দিনের, অন্যদিন ২ দিন আমি উপাস করেই অফিস করতাম)। এ কথা এইচআর শোনার পর চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পর আমাকে তারা টার্মিনেশন লেটার দিয়ে দেয়। আমি যখন তাদের বলি কারণ কী? তখন তারা বলে আমি নাকি তাদের সঙ্গে বেয়াদবি করেছি! আমার ধর্ম পালন করতে চাওয়াটা কি অপরাধ? আর আমার ধর্ম নিয়ে উপহাস করাটা কি তাদের অধিকার আছে? তাছাড়া আমাকে একদিনের নোটিশে বিদায় করে দিয়েছে তার জন্য আমি যখন ক্ষতিপূরণ চাইলাম তখন বলে তাদের নিয়ম নাই, তাহলে ‘লেভার ল’ কি যে যার ইচ্ছামতো বানাতে পারে? আপনাদের কাছে জানতে চাই এখন আমার কী করা উচিত? তাহলে কি আমাদের ধর্ম পালনের কোনো অধিকার নাই? এটাও কি আমাকে মেনে নিতে হবে? এ বিষয়টা শুধু এখানে নয় স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবখানেই এই বিষয়ে প্রতিবাদ করতে করতে আমি ক্লান্ত।’

যদিও তাঁর এই সাহসিকতা ও সংগ্রামী মানসিকতাকে কুর্নিশ জানিয়ে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে বহু মানুষ তাঁকে সমর্থন করে পাশে থাকার অঙ্গীকার জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত একমাত্র রূঢ় সত্য হল – হিন্দু হয়ে পূজার ছুটি পাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশের জন্য তাঁকে চাকরি হারাতে হল। সংখ্যালঘু নির্যাতনের এই ধারাবাহিকতার ইতিহাস মানব জগতে বিরল।

Comment here