আমার ইতিহাস

কোড়কদী – ২

(পূর্বের অংশের পর)

– শ্রী অলোক ভট্টাচার্য

 

জমি দান করে একে একে নিয়ে এলেন কৃষক, রোজকে (ধোপা), জেলে, কুম্ভকার, পরামানিক পরিবারদের।

মুসলমান ও হিন্দু কৃষকদের জন্য দেওয়া হলো ভিন্ন ভিন্ন গ্রাম। এলেন মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা, নায়েবী করার কায়স্থরা, পালকিবাহকেরা – কিন্তু দূরে দূরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে।

মুর্শিদকুলির মৃত্যুর পর নবাব হলেন তাঁর দৌহিত্র সরফরাজ খাঁ, যাঁকে তিনি নিজের কাছেই রেখেছিলেন। খবর পেয়েই ছুটে এলেন উড়িষ্যাতে নিযুক্ত সরফরাজের পিত ও মুর্শিদকুলি খাঁর দুই কন্যারই স্বামী দেওয়ান সুজাউদ্দিন। সরফরাজ সরে দাঁড়ালেন, নতুন নবাব হলেন সুজাউদ্দিন। মুর্শিদকুলির অন্যতম অমাত্য তথা বিশ্বস্ত রণনায়ক আলীবর্দী, সুজাউদ্দিনের পক্ষে দাঁড়ালেন। সুজাউদ্দিনের ১৭৩৯এ মৃত্যু হলে আবার নবাব হলেন সরফরাজ কিন্তু ১৭৪০ সালের ১০ই এপ্রিল খুন হলেন আলীবর্দী খাঁয়ের হাতে। আলীবর্দী নবাব হতেই কাদাই গ্রামের বেশ কিছু পরিবার চলে এলেন রামচন্দ্রের নতুন আশ্রয়ে। পুত্রহীন আলীবর্দী বছর ১৫ নবাব ছিলেন, মৃত্যু হলে দৌহিত্র সিরাজউদ্দৌলা তরুণ অবস্থায় নবাব হলেন।

সিরাজের যৌবন ও সিংহাসন প্রাপ্তিতে ভট্টাচার্য পরিবারের অধিকাংশই নতুন করে চলে আসেন সেই বাদা জল-জঙ্গলের দেশে। কিন্তু রামচন্দ্র জীবিত নেই তখন। পরিবারের জ্যেষ্ঠপুত্র রামসেবক তখন অভিভাবক। সকলের দায়িত্বই মাথা পেতে গ্রহণ করলেন রামসেবক। বকলমে ইংরেজ শাসন শুরু হলে ১৭৫৭ সাল থেকে, পলাশীর যুদ্ধান্তে। যেটুকু চাষ করে যা ফসল ঘরে আসে তা উদ্বৃত্ত ধন সৃষ্টি হচ্ছে। বর্ষাবহুল দেশে পাকা গৃহের নির্মাণ করা শুরু হল. ছেলে-মেয়েদের বিবাহের মাধ্যমে বরেন্দ্রভূমি থেকে লাহিড়ী ও ভাদুড়ী পদবীর ব্রাহ্মণদের জমি-বাড়ি দিয়ে নিয়ে আসা হল গ্রামে। ভিন্ন ভিন্ন পাড়ায় তাদের আস্তানা হল। গোত্র এক বলে সরাসরি সান্যালদের আনা যায়নি কিন্তু লাহিড়ী ও ভাদুড়ীদের বৈবাহিক সূত্রে তাদেরও এনে ভিন্ন পাড়া বানিয়ে বসানো হল। মূল গ্রামটিকে একটি সম্পূর্ণ বারেন্দ্র ব্রাহ্মণদের গ্রাম রূপে গড়ে তোলা হল। মৈত্র ও চক্রবর্তী পদবীর বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ পরিবারও একইভাবে শরিক হলেন গ্রামে। অনেকে ভেবেছিলেন সোনার ফসল হওয়া এই দ্বীপের মত গ্রাম বলে এর নাম হয়েছিল কনকদ্বীপ। জলবেষ্টিত নেক জায়গাতেই দীঘি, দিয়া, দহ ইত্যাদি নাম দেখা যেত। কনকদ্বীপের কোন সূত্র পাওয়া যায় নি কিন্তু ক্রোপদী নামের উল্লেখ দেখা গিয়েছিল কিছু পুরনো পুঁথিতে। তা থেকেই কঁড়কদী ও শেষে কোড়কদী নাম এই গ্রামটির। আসে পাশের গ্রামের মানুষরা এখনও গ্রামটিকে কুরুপদী বলে থাকেন।

ফরিদপুর জেলার গোয়ালন্দ গমহকুমার বালিয়াকান্দী থানার অন্তর্ভুক্ত ছিল ইংরেজ আমলে। বর্তমানে ফরিদপুর জেলার মধুখালি থানার অন্তর্গত। নিকটবর্তী রেলস্টেশন মধুখালি ও সড়ক পথে বাগাট।

 

(ক্রমশঃ)

Comment here