আমার ইতিহাস

কোড়কদী

শ্রী অলোক ভট্টাচার্য

 

ফিরে দেখা –

 

মুঘল আমল। অষ্টাদশ শতাব্দীর বাংলা। ঔরঙ্গজেব ১৭০০ সালে জাহাঙ্গীরনগরের (এখনকার ঢাকা) দেওয়ান করে পাঠালেন মুর্শিদ কুলি খাঁকে। বাঙ্গলার দেখাশোনার ভার তখন আজিমুস্সামানের হাতে।  তিনি ব্যাপারটি ভালো চোখে দেখলেন না স্বভাবতই কিন্তু মেনে নিতে বাধ্য হলেন। মুর্শিদকুলির জন্ম দাক্ষিণাত্যের এক ব্রাহ্মণ পরিবারে ১৬৬৫ সালে (ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকারের মতে ১৬৭০)।

শিশু অবস্থায় জঠরজ্বালায় তাকে নাকি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল একজন মুঘল আমলার কাছে। সেখান থেকেই ধর্মান্তর ও শাসক সংস্পর্শে বড় হওয়া। অরাজকতার সময়। যখন তখন শাসক বদল, বিদেশী বণিকদের শোষণ, ক্ষমতা দখল ও শত্রু শায়েস্তা করতে রক্তগঙ্গা স্বাভাবিক ঘটনা। দারিদ্র ও আতঙ্ক নিয়ে বেঁচে আছে মানুষ।

১৭০৪ সালে মুর্শিদকুলি হলেন নায়েব-নাজিম এবং কাজের সুবিধা ও ক্ষমতার আরও কাছে থাকতে নিজেকে স্থানান্তরিত করলেন মুকসুদাবাদে (পরবর্তীকালের মুর্শিদাবাদ)। এখানে এসে কঠিন অসুখে পড়লেন যা কোন হেকিম সারাতে ব্যর্থ হলেন। তার অবর্তমানে স্ত্রী (একাধিক নয়) ও দুই কন্যার (অপুত্রক ছিলেন) ভবিষ্যৎ ভেবে চিন্তিত।  তখন ডাক পড়ল কাদাই গ্রামের (পরে বহরমপুর শহরের একটি অঞ্চল) পন্ডিত ও আয়ুর্বেদাচার্য রামচন্দ্র ভট্টাচার্যের। তার ঔষধে মুর্শিদকুলি আরোগ্য লাভ করেন। নবাব তাকে প্রচুর উপঢৌকন ও অর্থ দান করতে চাইলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন কারণ ন্যায্য দক্ষিণার অতিরিক্ত কিছু তিনি নেবেন না।

“রামচন্দ্র নিজেও মনে মনে রাজনীতি – খুনোখুনি বাইরে থেকে শাস্ত্রচর্চা নিয়ে থাকতে চাইতেন। নিজেরও কাঙ্খিত সুযোগ তিনি গ্রহণ করলেন। ১৭১৭ সালে মুর্শিদকুলি হলেন বাংলার নবাব। সরাসরি মুঘলদের হস্তক্ষেপ প্রায় নেই। বছরের নজরানা পাঠিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত। তাই মুর্শিদকুলিকেই বাংলার প্রথম নবাব বলা হয়। ১৭২৭-এ মুর্শিদকুলির মৃত্যু হয়। রামচন্দ্র তখন অনেকটা দূরে নতুন বসতি গড়ায় ব্যস্ত। রামচন্দ্র চেয়েছিলেন তার সব জ্ঞাতি-গুষ্ঠি সহ নতুন বসতিতে আসতে। কিন্তু অনেকেই রাজী হননি অনিশ্চিতের পথে পা বাড়াতে। রাজধানীর কাছাকাছি বাস করার সুবিধা বেশি। সেটা ছেড়ে কে যেতে চায় ভাটির দেশে, জল-জঙ্গলের মাঝে। নিজের পাঁচ জন সহোদর ও তাদের পরিবার নিয়ে ১৭১০ সাল নাগাদ নদীপথে তিনি হাজির হলেন তার নতুন পাওয়া ভূখণ্ডে। রাজধানী দূরে – অশ্বারোহী সেনাদের রাস্তা নেই। নিরাপদ। নদীর তীরেও নয় – জলদস্যুদের তান্ডবের ভয় নেই। নিকটতম নদী চন্দনা অর্ধ ক্রোশ দক্ষিণে।  কিন্তু নীচু অঞ্চল। তাই বাসস্থানগুলি বানাতে হল মাটি কাটিয়ে উঁচু করে ভিটে বানিয়ে। বাস করতে লাগবে চাষ-আবাদ।

(ক্রমশঃ)

Comment here