সংস্কৃতি

কলমচিদের আড্ডাখানায় – ১২

(একাদশ পর্বের পর)

ঠিক একইরকম ভাবে পরবর্তীকালে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের দক্ষিণ কলকাতার ফ্ল্যাটে প্রত্যেক রোববার সকালে পাড়ি দিতেন উদীয়মান কবি-সাহিত্যিকরা। রত্নখচিত সেই আড্ডা’র স্মৃতি রোমন্থন করে কলম ধরেছেন অসংখ্য সুনীল অনুরাগী ব্যক্তি। বইমেলায় কৃত্তিবাসের স্টলে আসেন অসংখ্য কবি ও কলমচি। কৃত্তিবাসের আড্ডায় নিয়মিত কবিতা পাঠ ছাড়াও গান গল্প, রসিকতা কিই না থাকে। এইসব আড্ডার নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হতো। মাঝে মাঝে বসতো কবিসভা। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও অন্যান্য কৃত্তিবাসীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৯৮ সাল থেকে কলকাতা বইমেলায় শুরু হয়েছে কৃত্তিবাস পুরস্কার। শান্তিনিকেতনের অধিবাসী কিংবদন্তি আড্ডাবাজ ও প্রকাশক ইন্দ্রনাথ মজুমদারকে সম্বর্ধনা দেওয়া হয় কৃত্তিবাস পত্রিকার তরফে। সেই সংবর্ধনার আমন্ত্রণপত্র খসড়া করেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।সেই খসড়ার বয়ান ছিলো অনন্য।

খসড়াটি নিম্নরূপঃ
কৃত্তিবাস
কমলকুমার মজুমদারের একনিষ্ঠ চ্যালা
বহু দুর্লভ গ্রন্থের ভান্ডারী ও কান্ডারী
অনেক সাহিত্যিকও অসাহিত্যিক আড্ডার অনুঘটক
একেবারে অন্যরকম বাংলা বইয়ের প্রকাশক
ইন্দ্রনাথ মজুমদার কলকাতা ও শান্তিনিকেতনের সুবর্ণরেখায় যাকে
দেখা যায় প্রতিদিন
সেই ইন্দ্রনাথ মজুমদারকে ঘিরে অনুরাগী ও বন্ধু-বান্ধবদের
এক সন্ধ্যার আলাপচারি কৃত্তিবাস পত্রিকার উদ্যোগ
অবনীন্দ্র সভাগৃহ।
কলকাতা তথ্যকেন্দ্র।
২৫ মে ২০০৬ ছটার সময় শুরু। দশ পনেরো মিনিটের বেশি দেরি ঠিক সৌজন্য সম্মত নয়।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাখালদার ক্যান্টিন কলমবাজদের হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে অনেকাংশে উৎসাহ যুগিয়েছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ছাত্র ছাত্রীরা রাখালদার ক্যান্টিনে আড্ডা দিতেন। সমসাময়িক সাহিত্য, চলচ্চিত্র, নাটক কিংবা টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতি- এ সব কিছুর চুলচেরা বিশ্লেষণ হতো সেসব আড্ডায়। আড্ডার সেই নামগুলো খুব অচেনা নয়। অমিয় কুমার বাগচী, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, শিশিরকুমার দাশ, উজ্জ্বল কুমার মজুমদার, সুধীর চক্রবর্তী, তারাপদ রায় প্রমুখ।

আড্ডার প্রসঙ্গ উত্থাপন করলে ৪০বছর আগেকার এক আড্ডার কথা আজও স্মরণ করেন বুদ্ধদেব গুহ। জলপাইগুড়ি রবীন্দ্রভবনে পরপর দু’দিন গল্প পাঠের আসরের বন্দোবস্ত করেন সমরেশ মজুমদার। কলকাতা থেকে সেখানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমরেশ বসু,শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়,সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব গুহ, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়। মনোজ মিত্রও ছিলেন। ছিলেন সমরেশ মজুমদার। সম্ভবত জলপাইগুড়ি অধিবাসীরা ঐদুদিন সাহিত্যের এক অনবদ্য মজলিসের মুখোমুখি হন।

 

(ক্রমশঃ)

Comment here