সাদাকালো রঙমাখা

সাংসারিক শরৎচন্দ্র

বড়বৌ,

তুমি আমার জন্যে ভেবো না। আমি বেশ ভালো আছি। এই কয়দিনে আমার শরীরের ওজন প্রায় ৬ সের বেড়েছে। আমার যখন খুব শরীর ভালো হয়েছিল তখনকার মতই প্রায় হতে পারে যদি আরও মাসখানেক থাকতে পারি। কিন্তু মাসখানিক থাকতে গেলে আমি দেউলে হয়ে যাবো। আচ্ছা নারায়ণ ঠাকুরকে পাঠিয়েছিলে! দৈনিক খরচের একটা ফর্দ শোনো! আলু আমি ত খাইনে, মৃত্যুঞ্জয়ও না। তবু আলু লাগে রোজ /১।০ পাঁচ পোয়া। এখানে তরি-তরকারি খুব সস্তা তবু বাজার খরচ লাগে এক টাকা অথচ শুনতে পাই এখানে বড় গেরস্তরও ।০ চার আনা বাজার লাগে না। মাছ পাওয়া যায় না — আসেও না। দই লাগে দুজন চাকর-বামুনের /।।০ সের। ঘি লাগে (কেবল আমার জন্যে) /।০ এক পোয়া। ছোট ছোট ৮/১০ খানা লুচি খাই। কাঠকয়লার কুকারে রান্না, চায়ের জল গরম হয়। তবু পাথুরে কয়লা লাগে ৩ দিনে এক মণ। এক হপ্তা দু’মণেও কুলোয় না। মৃত্যুঞ্জয়ের সঙ্গে বামুনের প্রায়ই ঝগড়া হয় – নারাণ বলে বাবু বড় খিচ খিচ করে। তাই আজ থেকে খরচ আমার হাতে নিলাম। দেখি কি হয়। মৃত্যুঞ্জয় বলছিল এ খরচে প্রকান্ড বড় সংসার দেওঘরের মত সস্তা দেশে অনায়াসে চলে।

যাই হোক, বৌ, তোমাকে জিজ্ঞেস করি এভাবে চললে কটা দিন এখানে থাকতে ইচ্ছে করে? যা টাকাকড়ি এনেছিলাম প্রায় সমস্তই ফুরিয়ে এলো।

জীবন চাকরটি চমৎকার। আমার ভারি সেবা করছে আর তেমনি সেবা করছে মৃত্যুঞ্জয়।

বুড়ির চিঠিতে যে লিখেচ পেতলের পিচকিরির জন্যে। মৃত্যুঞ্জয় বলছিল আসবার সময় সে জাল আলমারিতে দেখেছে। যদি না পাওয়া যায় তাকে কিনে দিও। আর কি লিখবো, তোমরা সকলে আমার আশীর্বাদ জেনো এবং তুমি নিজে বিশেষ সাবধানে থাকবে। তোমার জন্যেই আমার যত ভয়। কোনদিন কি অসুখ বিসুখ করবে, আর করলেই ত বাড়াবাড়ি।

প্রকাশের চিঠি পেলাম। হোঁদল বোধকরি ছুটিতে বাড়ী গেছে। সুরেন মামার যাবার কথা কলকাতায়। জানি তাঁর অযত্ন হবে না। ইতি –

-শুভাকাঙ্খী

-শ্রীশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

——————————————————————————–

প্রকাশ – তাঁর ছোট ভাই।

মৃত্যুঞ্জয় – তাঁর এক আত্মীয়তুল্য প্রধান অনুরাগী ছিলেন।

সুরেন মামা – সুরেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলী তাঁর সম্পর্কীয় মামা ছিলেন এবং একজন সাহিত্যিক হিসেবেও তিনি তখন পরিচিত ছিলেন।

[শরৎচন্দ্র যখন একবার কঠিন অসুখের পরে হাওয়া বদল করতে দেওঘরে যান, তখন তাঁর সহধর্মিনী হিরণ্ময়ী দেবীকে লেখা এই দু’খানি চিঠি।-]

প্রকাশকাল: শারদীয়া বসুমতী: ১৩৭৯

Comment here